অস্তিত্ব

শারমিন সুলতানা চৌধুরী
নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।

ছোট গল্প: অস্তিত্ব

ভাল লাগছে না প্রিয়মের, জানে না কেন এত অস্থিরতা আজ…মাঝে মাঝে এই অদ্ভুতুড়ে অনুভূতিটা যে কেন হয়! কেমন একটা হাহাকার বুকের মাঝে, কোন ব্যাখ্যা নেই… না, ব্যাখ্যা আছে, কাল হঠাৎ রূপন্তির একটা ভয়েস মেসেজ খুঁজে পেলো, কোথায় যে লুকিয়ে ছিলো! জানে না সে। তারপর থেকেই সে এলোমেলো, অফিসে যাবার সময় ভুল করে মোবাইল ফেলে গেল, নয়না ফোন করে বলাতে আবারও ফিরতে হলো বাসায়। নয়না, প্রিয়মের স্ত্রী, চার বছরের সংসার, তারা নতুন অতিথির অপেক্ষায়, বেশ তো ছিল, কেন আবারও রূপন্তি!!

অন্যরকম একটা মেয়ে রূপন্তি, গল্পের মতো, যে গল্প টা পড়তে ইচ্ছে করে শুধু, মন চায় কখনো শেষ না হোক, ঝড়ের মত জীবনে এলো, চলেও গেল, অভিমানী, সামান্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে কেউ হারিয়ে যায় এমন! তাও চিরতরে…

তাদের ছ’বছরের সম্পর্ক, তারা তিনজন, প্রিয়ম, রূপন্তি আর নয়না। নয়না পাশে না থাকলে প্রিয়ম অনেক আগেই হেরে যেত। অনেক গোছানো একটা মেয়ে, চাকরী করছে, দিব্যি সংসারও আগলে রাখছে, প্রিয়ম তো এলোমেলো, ভাগ্যিস নয়না ছিলো!

২৫ আগস্ট, ভুলতে পারবে না প্রিয়ম নয়নার সাথে, আর রাতেই শুনলো রূপন্তি নেই!সেচ্ছায় নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। রূপন্তি! অাত্মহত্যা!!না, আর কিছু সে মনে করতে পারে না, নয়না পাশে না থাকলে হয়ত সেও, অফিসের ডেস্ক ক্যালেন্ডারে ২৫ তারিখটা ছূয়ে দিল প্রিয়ম…

বাসা থেকে বের হচ্ছিলো নয়না, চোখ পড়লো ক্যালেন্ডারের দিকে, ২৫তারিখ, আগস্ট, মার্কারটা বের করে ক্রস চিন্হ দিলো তারিখ টার উপর! রূপন্ত টা চলে গিয়েও দুজনের মাঝে রয়ে গেছে, ওকে সরাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি নয়না কে, রূপন্তির বাসায় জানানো, ব্ল্যান্ক কল করে যাওয়া, বিয়ের প্ল্যান করা, দুজনকে দুই কাজী অফিসে পাঠানো, রূপন্তির মোবাইল সরিয়ে ফেলা, আর সবশেষে রূপন্তিকে জানানো, প্রিয়ম তাকে বিয়ে করে ফেলেছে। অভিমানী অনেক মেয়েটা, ভাবলোও না, প্রিয়ম তো এমন নয়…

হাসল নয়না, পৃথিবীটা বোকা মানুষে ভরা! শুধু অবাক লাগছে, সে তো প্রিয়মের কাছ থেকে রূপন্তির সব স্মৃতি সরিয়ে ফেলেছে, তাহলে এই ভয়েস মেসেজ কিভাবে এলো! প্রিয়ম তাকে বলেনি, কিন্তু নয়না ওকে দেখেই বুঝে গিয়েছিল, আর মোবাইলটা হাতে নিয়েই ও ভয় পেয়ে গেল, আর কি অদ্ভুত! মেসেজটা ডিলিটও হচ্ছে না…

কি আশ্চর্য! অদ্ভুত মেসেজ, সে অপেক্ষায় আছে…কিসের?

অচিনপুর ডেস্ক/ এসএসববি

Post navigation