নিশা লাগিল রে

– হাসন রাজা নিশা লাগিল রে, নিশা লাগিল রে,বাঁকা দুই নয়নে নিশা লাগিল রে।হাসন রাজার পিয়ারীর প্রেমে মজিল রে।।ছটফট করে হাসন রাজা দেখিয়া চাঁন মুখহাসন জানের মুখ দেখিয়া জন্মের গেল দুখ।।হাসন জানের রূপটা দেখি ফালদি ফালদি উঠেচিড়া বাড়া হাসন রাজার…

সোনা বন্ধে আমারে

– হাসন রাজা সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইলোসোনা বন্ধে আমারে পাগল করিল।আরে না জানি কি মন্ত্র করি জাদু করিল।।রূপের ঝলক দেখিয়া তার আমি হইলাম কানাসেই অবধি লাগল আমার শ্যাম পিরিতির টানা।।হাসন রাজা হইল পাগল লোকের হইল জানানাচে নাচে পালায় পালায়…

পরানের গহীন ভিতর-১২

__সৈয়দ শামসুল হক উঠানের সেই দিকে আন্ধারের ইয়া লম্বা লাশ,শিমের মাচার নিচে জোছনার সাপের ছলম,পরীরা সন্ধান করে যুবতীর ফুলের কলম,তারার ভিতরে এক ধুনকার ধুনায় কাপাশ,আকাশে দোলায় কার বিবাহের রুপার বাসন,গাবের বাবরি চুল আলখেল্লা পরা বয়াতির,গাভির ওলান দিয়া ক্ষীণ ধারে পড়তাছে…

পরানের গহীর ভিতর-১১

__সৈয়দ শামসুল হক কি আছে তোমার দ্যাশে? নদী আছে? আছে নাকি ঘর?ঘরের ভিতরে আছে পরানের নিকটে যে থাকে?উত্তর সিথানে গাছ, সেই গাছে পাখির কোটরআছে নাকি? পাখিরা কি মানুষের গলা নিয়া ডাকে?যখন তোমার দ্যাখা জানা নাই পাবো কি পাবো না,যখন গাছের…

পরানের গহীন ভিতর-১০

__সৈয়দ শামসুল হক কে য্যান কানতে আছে- তার শব্দ পাওয়া যায় কানে,নদীও শুকায়া যায়, আকালের বাতাস ফোঁপায়,মানুষেরা বাড়িঘর বানায় না আর এই খানে,গোক্ষুর লতায়া ওঠে যুবতীর চুলের খোঁপায়।বুকের ভিতর থিকা লাফ দিয়া ওঠে যে চিক্কুর,আমি তার সাথে দেই শিমুলের ফুলের…

পরানের গহীন ভিতর-৯

__সৈয়দ শামসুল হক একবার চাই এক চিক্কুর দিবার, দিমু তয়?জিগাই কিসের সুখে দুঃখ নিয়া তুমি কর ঘর?আঙিনার পাড়ে ফুলগাছ দিলে কি সোন্দর হয়,দুঃখের কুসুম ঘিরা থাকে যার, জীয়ন্তে কবর।পাথারে বৃক্ষের তরে ঘন ছায়া জুড়ায় পরান,গাঙের ভিতরে মাছ সারাদিন সাঁতরায় সুখে,বাসরের…

পরানের গহীন ভিতর-৮

__সৈয়দ শামসুল হক আমারে তলব দিও দ্যাখো যদি দুঃখের কাফনতোমারে পিন্ধায়া কেউ অন্যখানে যাইবার চায়মানুষ কি জানে ক্যান মোচড়ায় মানুষের মন,অহেতুক দুঃখ দিয়া কেউ ক্যান এত সুখ পায়?নদীরে জীবন কই, সেই নদী জল্লাদের মতোক্যান শস্য বাড়িঘর জননীর শিশুরে ডুবায়?যে তারে…

পরানের গহীন ভিতর-৭

__সৈয়দ শামসুল হক নদীর কিনারে গিয়া দেখি নাও নিয়া গ্যাছে কেউঅথচ এই তো বান্ধা আছিল সে বিকাল বেলায়।আমার অস্থির করে বুঝি না কে এমন খেলায়,আমার বেবাক নিয়া শান্তি নাই, পাচে পাছে ফেউ।পানির ভিতরে য্যান ঘুন্নি দিয়া খিলখিল হাসেযত চোর যুবতীরা,…

পরানের গহীন ভিতর-৬

__সৈয়দ শামসুল হক তোমার খামাচির দাগ এখনো কি টকটাকা লাল,এখনো জ্বলন তার চোৎরার পাতার লাহান।শয়তান, দ্যাখো না করছ কি তুমি কি সোন্দর গাল,না হয় দুপুর বেলা একবার দিছিলাম টান?না হয় উঠানে ছিল লোকজন কামের মানুষ,চুলায় আছিল ভাত, পোলাপান পিছের বাগানে,তোমারে…

পরানের গহীন ভিতর-৫

__সৈয়দ শামসুল হক তোমার দ্যাশের দিকে ইস্টিশানে গেলেই তো গাড়িসকাল বিকাল আসে, এক দন্ড খাড়ায়া চম্পট,কত লোক কত কামে দূরে যায়, ফিরা আসে বাড়ি-আমার আসন নাই, যাওনেরও দারুন সংকট।আসুম? আসার মতো আমি কোনো ঘর দেখি নাই।যামু যে? কোথায় যামু, বদলায়া…

পরানের গহীন ভিতর-৪

__সৈয়দ শামসুল হক আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,ঘরের বিছান নিয়া ক্যান অন্য ধানখ্যাত রোয়?অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,বাঁশির লহরে ডোবা পরানের…

পরানের গহীন ভিতর-৩

__সৈয়দ শামসুল হক সে কোন বাটিতে কও দিয়াছিলা এমন চুমুকনীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট, হাত পাও শরীল অবশ,অথচ চাও না তুমি এই ব্যাধি কখনো সারুক।আমার জানতে সাধ, ছিল কোন পাতার সে রস?সে পাতা পানের পাতা মানুষের হিয়ার আকার?নাকি সে আমের পাতা…

পরানের গহীন ভিতর-২

__সৈয়দ শামসুল হক আন্ধার তোরঙ্গে তুমি সারাদিন কর কি তালাশ?মেঘের ভিতর তুমি দ্যাখ কোন পাখির চক্কর?এমন সরল পথ তবু ক্যান পাথরে টক্কর?সোনার সংসার থুয়া পাথারের পরে কর বাস?কি কামে তোমার মন লাগে না এ বাণিজ্যের হাটে?তোমার সাক্ষাৎ পাই যেইখানে দারুণ…

পরানের গহীর ভিতর-১

__সৈয়দ শামসুল হক জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুককেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,নিজেই তাজ্জব তুমি – একদিকে যাইবার…

আমি একটুখানি দাঁড়াব

__সৈয়দ শামসুল হক আমি একটুখানি দাঁড়াব এবং দাঁড়িয়ে চলে যাব;শুধু একটু থেমেই আমি আবার এগিয়ে যাব;না, আমি থেকে যেতে আসিনি;এ আমার গন্তব্য নয়;আমি এই একটুখানি দাঁড়িয়েইএখান থেকেচলে যাব।আমি চলে যাবতোমাদের এই শহরের ভেতর দিয়ে খুব তাড়াতাড়িএর মার্চপাস্টের যে সমীকরণএবং এর…

এখন মধ্যরাত

__সৈয়দ শামসুল হক এখন মধ্যরাত।তখন দুপুরে রাজপথে ছিলো মানুষের পদপাত।মিছিলে মিছিলে টলমল ছিলো সারাদিন রাজধানী।এখন কেবল জননকূল ছল বুড়িগঙ্গার পানিশান্ত নীরবনিদ্রিত সব।ওই একজন জানালায় রাখে তার বিনিদ্র হাতছিলো একদিন তারউজ্জ্বল দিন, ছিলো যৌবন ছিলো বহু চাইবার।সারা রাত চষে ফিরেছে শহর…

তুমিই শুধু তুমি

__সৈয়দ শামসুল হক তোমার দেহে লতিয়ে ওঠা ঘন সবুজ শাড়ি।কপালে ওই টকটকে লাল টিপ।আমি কি আর তোমাকে ছেড়েকোথাও যেতে পারি?তুমি আমার পতাকা, আমার কৃষির বদ্বীপ। বুকে তোমার দুধের নদী সংখ্যা তেরো শত।পাহাড় থেকে সমতলে যে নামি− নতুন চরের মতো তোমার…

জননী জন্মভূমি

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।টিফিনের পয়সা বাঁচিয়েকখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠতআমার ভালাবাসার কথামা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি। হে দেশ, হে আমার জননী-কেমন ক’রে তোমাকে…

মে-দিনের কবিতা

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্যধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্যকাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্যজীবনকে চায় ভালবাসতে। প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,মারণের পণ নখদন্তে;বন্ধন ঘুচে…

ফুল ফুটুক না ফুটুক

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় ফুল ফুটুক না ফুটুকআজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাথেপাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছকচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়েহাসছে। ফুল ফুটুক না ফুটুকআজ বসন্ত। আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়েতারপর খুলে –মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়েতারপর তুলে –যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে…

তোমাকে বলি নি

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আকাশে তুলকালাম মেঘেযেন বাজি ফোটানোর আওয়াজেকালতোমার জন্মদিন গেল।ঘরে বৃষ্টির ছাট এলেওজানালাগুলো বন্ধ করি নি—আলো-নেভানো অন্ধকারেথেকে থেকে ঝিলিক-দেওয়া বিদ্যুতেআমি দেখতে পাচ্ছিলাম তোমার মুখ।আর মাঝে মাঝেহাওয়া এসে নড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিলতোমাকে ভালবেসে দেওয়াটেবিলে রাখাগুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।কাল কেন আমি ঘুমোতে পারি…

বলছিলাম কী

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলছিলাম–না, থাক্ গে।যা হচ্ছে হোক, কে খণ্ডাবেলেখা থাকলে ভাগ্যে।পাকানো জট,হারানো খেই,চতুর্দিকের দৃষ্যপটএখনও সে-ই–শক্ত করে আঁকড়ে-ধরাচেয়ারের সেই হাতল।বিষম ভয়, কখন হয়ক্ষমতার হাতবদল।বলছিলাম–না, থাক্ গে!কী আসে যায় হাতে নাতেপ্রমাণ এবং সাক্ষ্যে।মোড়লেরা ব্যস্ত বেজায়যে যার কোলে ঝোল টানতে।সারটা দেশ হাপিত্যেশে,পান্তা…

লোকটা জানলই না

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতেহায়! হায় ! লোকটার ইহকাল পরকাল গেল !অথচ আর একটু নীচে হাত দিলেইসে পেতো আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপ,তার হৃদয় !লোকটা জানলোই না !তার কড়ি গাছে কড়ি হল ।লক্ষ্মী এল রণ-পায়েদেয়াল দিল পাহাড়াছোটলোক হাওয়া…

কেন এল না

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় সারাটা দিন ছেলেটা নেচে নেচে বেড়িয়েছে।রাস্তায় আলো জ্বলছে অনেকক্ষণ এখনওবাবা কেন এল না, মা?বলে গেলমাইনে নিয়ে সকাল- সকাল ফিরবে।পুজোর যা কেনাকাটাএইবেলা সেরে ফেলতে হবে।বলে গেল।সেই মানুষ এখনও এলো না।কড়ার গায়ে খুন্তিটাআজ একটু বেশি রকম নড়ছে।ফ্যান গালতে গিয়েপা-টা…

যত দূরেই যাই

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমি যত দূরেই যাইআমার সংগে যায়ঢেউয়ের মালা-গাঁথাএক নদীর নাম_ আমি যত দূরেই যাই। আমার চোখের পাতায় লেগে থাকেনিকোনো উঠোনেসারি সারিলক্ষ্মীর পাআমি যত দূরেই যাই।

পায়ে পায়ে

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় সারাক্ষণসে আমার পায়ে পায়েসারাক্ষণপায়ে পায়েঘুরঘুর করে। তাকে বলিঃ তোমাকে নিয়ে থাকারসময় নেই-হে বিষাদ, তুমি যাওএখন সময় নেইতুমি যাও। গাছের গুঁড়িতে বুক-পিঠ এক করেযৌবনে পা দিয়ে রয়েছেএকটি উলঙ্গ মৃত্যু-আমি এখুনি দেখে আসছিঃ পৃথিবীতে গাঁক-গাঁক করে ফিরছেযে দাঁত-খিঁচানো ভয়,আমি…

প্রস্তাব ১৯৪০

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রভু, যদি বলো অমুক রাজার সাথে লড়াইকোনো দ্বিরুক্তি করব না, নেব তীরধনুক।এমনি বেকার, মৃত্যুকে ভয় করি থোড়াই,দেহ না চললে, চলবে তোমার কড়া চাবুক। হা-ঘরে আমরা, মুক্ত আকাশ ঘর-বাহির।হে প্রভু, তুমিই শেখালে পৃথিবী মায়া কেবল-তাই তো আজকে নিয়েছি…

হিংসে

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় যাবার আগে মিটিয়ে নেবযার যার সঙ্গে আড়ি উঠলে ঝড় ছুটব বাইরেতারপরে তো বাড়ি ঠিক করি নি কিসে যাবহেঁটে না সাইকেলে ঝনঝনালে পকেটে পয়সামাটিতে দেব ফেলে মাটি কাঁপছে, কাঁপুক।চল্‌ রে ঘোড়া!হাতে তুলেছি চাবুক মুখপুড়িটা তাকাচ্ছে, দ্যাখ।বলছে, আ মর…

চিরকুট

– সুভাষ মুখোপাধ্যায় শতকোটি প্রণামান্তেহুজুরে নিবেদন এই_মাপ করবেন খাজনা এ সনছিটেফোঁটাও ধান নেই। মাঠেঘাটে কপাল ফাটেদৃষ্টি চলে যত দূরখাল শুক্‌নো বিল শুক্‌নোচোখের কোলে সমুদ্দুর। হাত পাতব কার কাছে কেগাঁয়ে সবার দশা একতিন সন্ধে উপোস দিয়েখাচ্ছি আজ বুনো শাক। পরনে যা…

কী বললেন, বিশ্বায়ন?

– সুবোধ সরকার আমি আমেরিকায় গিয়ে শুনে এলামলোকে ওখানেও বলছে:দিনকাল যা পড়েছেতুমি তোমার খাবারের কাছে ঠিক সময়েপৌঁছতে না পারলেঅন্য একজন পৌঁছে যাবে।আরে, এ তো আমাদের দেশেগরিব লোকেরা করত।এখন বছরে তিনবার ধান হয় বলেএকজন ভিখিরি, একজন পাগলের খাবারকেড়ে নেওয়ার আগে দুবার…

Posts navigation