ফেরদৌসী খানম রীনা
কদমতলা, ঢাকা।
গল্প: মেঘের পর রোদ
রমিজের ছোট্ট সুখের সংসার
বাবার জমিতে ফসল ফলায়। যা ফসল হয় তা দিয়ে সংসার চলে যায়, দিনে ক্ষেতে কাজ করে রাতে ঘুমায়।
সংসারে তার একটি ছেলে একটি মেয়ে। ছেলে শামীম দশম শ্রেনীতে পড়ে। মেয়ে ছন্দা পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে। রমিজের বউ খুব লক্ষী। সংসারে সে স্বামীর সাথে সাথে সব কাজ করে। ১৯৭১ যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়। চারিদিকে যুদ্ধ। তাই তারা সব সময় অাতঙ্কে থাকে। কখন কি হয়!! এ সময় বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে অস্থিরতা বিরাজ করতো। যুদ্ধের কারণে সব সময় রমিজ মিয়ার পরিবারও থাকতো উদ্বিগ্ন। দেশের জন্য রমিজ মিয়ার সব সময় মন কাঁদে। কিন্তু এই ঘর সংসার ছেড়ে বউ ছেলে মেয়ে কোথায় কার কাছে রেখে যাবে এই চিন্তা করে যাই যাই করে অাজও যুদ্ধে যায়নি। নিজের দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর ঐ ভায়ানক অত্যাচার সে সহ্য করতে চায় না। তাদের উচিত শিক্ষা দিতে পারলে তার মন শান্তি পেত। কয়েকদিন অাগে তার ছোটবেলার বন্ধুকে নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে। প্রতিদিনের মত রমিজ ক্ষেতে কাজ করে রাতের খাবার খেয়ে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে অাছে। হঠাৎ শুনতে পেল দরজার খটখট শব্দ।
রমিজ ঘুমের ঘোরে অাতঙ্কিত হলো। কারা এলো!! যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ঘরে ঘরে যেয়ে নিরীহ মানুষ মারতো। তাই ভয়ে ভয়ে রমিজ অাস্তে অাস্তে দরজা খুললো।
দেখলো তাদের এলাকার কিছু ছেলে যুদ্ধ থেকে এসেছে। দশ মাইল হেঁটে, তাই খুব ক্লান্ত, সামনে তাদের বাড়ি দেখে ঢুকেছে পানি খাবার জন্য। রমিজ তাদের দেখে খুশি হলো, নিজে যুদ্ধে যেতে পারেনি তাই তাদের যদি একটু উপকার করতে পারে তবে মনে অনেক শান্তি পাবে। রমিজ বলল, “তোমারা খেয়েছ ভাই?” তারা বলল, “অাজ দুদিন ঘর থেকে বের হয়েছি পথে যা জুটেছে তাই খেয়েছি”। তাদের কথা শুনে রমিজের চোখে পানি এসে গেল। দেশের জন্য তারা কত ত্যাগ স্বীকার করছে। সে অাজো কিছু করতে পারলো না ।সে রাতে বউকে নিয়ে রান্না করে তাদের খাইয়ে দিলো। অাবার যাবার সময় সাথে মুড়ি অার গুড় দিয়ে দিলো। রমিজের বাড়ি থেকে কিছু দূরে কাদেরের বাড়ি। ছেলেগুলো যাওয়ার সময় কাদের তাদের দেখে ফেললো। তার সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর যোগাযোগ ছিলো। সে ছেলেদের কথা পাকিস্তানিদের জানালো। তারা সন্দেহ করলো রমিজ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। তাদের বাসায় মুক্তিবাহিনীরা অাসা যাওয়া করে। সাত,অাট দিন পর একদিন রাতে কাদের পাকিস্তানি বাহিনীদের নিয়ে রমিজের বাড়িতে অাসলো। এসে রমিজের কাছে সেই ছেলেদের তথ্য চাইলো। রমিজ বলল, “অামি তাদের চিনি না। তাদের সাথে অামার কোন সম্পর্ক নেই”। তারা বিশ্বাস করে না। রমিজ কে তারা বেঁধে ফেললো। বউ অার মেয়েকে বেঁধে রাখলো অন্য ঘরে। পাকিস্তানী বাহিনী যখন দরজায় কড়া নাড়ছিল তখন রমিজের ছেলে অন্য ঘরে ছিলো। লুকিয়ে লুকিয়ে সে সব কিছু দেখছিলো। পাকিস্তানি বাহিনী রমিজের কাছে ঐ ছেলেদের তথ্য চাইলো। রমিজ অাল্লাহর দোহাই দিয়ে বলল, অামি তাদের চিনি না। তবু তারা বিশ্বাস করে না। তারা রমিজকে অনেক মারল। ছেলে বাবাকে মারতে দেখে মুখ টিপে ভীষণ কাঁদতে ছিল। তবু মুখে কোন অাওয়াজ করেনি। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে অাসছিল। পাকিস্তানী বাহিনী রমিজের মুখ থেকে কোন তথ্য পেল না। তারা বলল, “তুমি তাদের কথা গোপন করছ।” রমিজ অাল্লাহর দোহাই দিয়ে বলল তবুও বিশ্বাস করল না। মারতে মারতে রমিজকে অাধমরা বানিয়ে ফেলল। পরে রাইফেল দিয়ে পাঁচটি গুলি করে চলে গেল। রক্তে রমিজের ঘর ভেসে গেল। রমিজের নিথর দেহ খানি পড়ে রইলো। একজন নিরাপরাধ লোককে তারা এভাবে সন্দেহ করে মেরে ফেললো। পাকিস্তানি বাহিনী চলে গেলে রমিজের ছেলে বের হয়ে বাবার মৃতদেহে নিয়ে অঝরে কাদঁতে লাগলো। চোখের সামনে বাবাকে মারতে দেখেও কিছু করতে পারল না। দশ জন সৈনিক প্রত্যেকের হাতে রাইফেল। বের হলে তাকেও মেরে ফেলত। পরে মা-বোনের হাত-পা খুলে দিল। মা ও বোন তাদের বাবার নিথর দেহ দেখে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো। শামীমের তাদেরকে বোঝানোর মত ভাষা নেই। সেদিন বাবার লাশ নিয়ে প্রতিজ্ঞা করল, একদিন ঐ পাষন্ড বাহিনীদের নিজের হাতে শিক্ষা দিবে, বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিবে। সে প্রতিজ্ঞা করলো যুদ্ধে যাবে। মাকে বলল,”মা অামি যুদ্ধে যাব।বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিব।” মা বলল, “না বাবা তোর বাবাকে হারিয়েছি অামি তোকে ছাড়া বাঁচবো না।” তুমি যদি যুদ্ধে যাও বাবা অামি কাকে নিয়ে থাকবো। তুমি এতটুকু ছেলে কি করে যুদ্ধ করবা?” শামীম সাহসী ছেলে, বলল, “অামি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিব, তারাই সব শিখিয়ে দেবে। তুমি শুধু অনুমতি দাও।” রমিজের কথা চিন্তা করে রমিজের বউ রাজি হলো। রমিজের ছেলে শামীম যুদ্ধে যোগ দিল। বাড়িতে রইলো মা ও বোন। ছেলে যুদ্ধে গেছে মা উদাস মনে চেয়ে থাকে। নিরাপরাধী স্বামীকে মেরে ফেলছে ঘাতক বাহিনী। দুঃখে, শোকে তার চোখের পানি ঝরে অবিরত। ছেলের জন্য সব সময় ভয়ে থাকে। ছেলের খোঁজ রাখে বন্ধুদের কাছে। যুদ্ধ চলছে। শামীম যে বাহিনীতে যোগ দিল তারা তাকে যুদ্ধের কৌশল সব শিখালো। অাজ একটা অপারেশনে যাবে পাকিস্তানি একটা ঘাঁটিতে বোমা মারতে হবে। শামীম বলল অামি মারবো। সে পাকিস্তানি ঘাঁটির কিছু দূরে অবস্থান করে পর পর তিনটি বোমা মারলো। পাকিস্তানি ঘাটি ধ্বংস হয়ে গেল। এভাবে সে অারো পাঁচটি পাকিস্তানি ঘাঁটিধ্বংস করলো। যখনি সে যুদ্ধে যায়,সেদিনের বাবার দৃশ্যগুলি তার চোখে ভাসে তখন সে অার ঠিক থাকতে পারে না। এভাবে অনেক কষ্টের মাঝে যুদ্ধ শেষ হলো, দেশ স্বাধীন হলো। চারিদিকে বিজয়ের পতাকা উড়ছে। শামীম দেশে ফিরে গেল বিজয়ীর বেশে। মা শামীমকে পেয়ে বুকে টেনে নিল, অাদরে অাদরে তার সারা মুখ ভরে দিল। দুপুরে ভালো ভালো রান্না করে তাকে খেতে দিল। সবাই খেতে বসলো। শামীম কিসের যেন একটা অভাব অনুভব করলো। পাশে চেয়ে দেখলো বাবা নেই। রোজ দুপুরে সে অার বাবা এক সাথে ভাত খেত। বাবা তাকে ছাড়া খেতে বসতো না। সে কথা মনে করে তার খুব খারাপ লাগলো। সে খাবার রেখে উঠে গেল। মা বলল,”কি হয়েছে?”শামীম মাকে কিছু বললো না। শুধু বলল,কেন জানি খেতে ইচ্ছে করছে না। যুদ্ধের কারনে শামীমের লেখা পড়া হয়নি। এখন বাবা নেই তাই সংসারের সব দায়িত্ব শামীমকেই নিতে হবে। শামীম চিন্তা করলো লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারও দেখবে অার বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার বানাবে। এটা তার বাবার শেষ ইচ্ছা।
অচিনপুর.কম/ শারমীন সুলতানা ববি
517325 640868An interesting discussion is worth comment. I do think which you really should write read much more about this subject, it will not be considered a taboo topic but typically everybody is too couple of to communicate in on such topics. To another. Cheers 213647
135076 665598Youre so cool! I dont suppose Ive read anything such as this before. So good to get somebody with some original thoughts on this topic. realy we appreciate you starting this up. this fabulous site are some things that is required on the internet, somebody with slightly originality. beneficial work for bringing a new challenge on the world wide internet! 128454