আলাউদ্দিনের চেরাগ

– হুমায়ূন আহমেদ আলাউদ্দিনের চেরাগ– হুমায়ুন আহমেদ নান্দিনা পাইলট হাইস্কুলের অঙ্ক শিক্ষক নিশানাথ বাবু কিছুদিন হলো রিটায়ার করেছেন। আরো বছরখানেক চাকরি করতে পারতেন, কিন্তু করলেন না। কারণ দুটো চোখেই ছানি পড়েছে। পরিষ্কার কিছু দেখেন না। ব্ল্যাক বোর্ডে নিজের লেখা নিজেই…

একজন ক্রীতদাস

– হুমায়ূন আহমেদ একজন ক্রীতদাস– হুমায়ূন আহমেদ কথা ছিল পারুল নটার মধ্যে আসবে। কিন্তু এল না। বারােটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলাম একা একা । চোখে জল আসবার মতাে কষ্ট হতে লাগল আমার। মেয়েগুলি বড় খেয়ালী হয়। বাসায় এসে দেখি ছােট্ট চিরকুট…

নিয়তি

– হুমায়ূন আহমেদ নিয়তি– হুমায়ূন আহমেদ আমার শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছে জগদলে। জগদলের দিন আনন্দময় হবার অনেকগুলো কারণের প্রধান কারণ স্কুলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। সেখানে কোনো স্কুল নেই। কাজেই পড়ালেখার যন্ত্রণা নেই। মুক্তি মহানন্দ। আমরা থাকি এক মহারাজার বসতবাড়িতে,…

বাসরবাসর

__হুমায়ূন আহমেদ কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা ।লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর ।বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই ।ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে ।নামছে আর উঠছে ।মানুষ ক্লান্ত হয় –এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই।এ রকম একটা ঘরেই বোধহয়…

রাশান রোলেট

__হুমায়ূন আহমেদ টেবিলের চারপাশে আমরা ছ’জনচারজন চারদিকে ; দু’জন কোনাকুনিদাবার বোড়ের মতখেলা শুরু হলেই একজন আরেকজনকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত ।আমরা চারজন শান্ত, শুধু দু’জন নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে আছে ।তাদের স্নায়ু টানটান।বেড়ালের নখের মত তাদের হৃদয় থেকেবেরিয়ে আসবে তীক্ষ্ম নখ…

বাবার চিঠি

__হুমায়ূন আহমেদ আমি যাচ্ছি নাখালপাড়ায়।আমার বৃদ্ধ পিতা আমাকে পাঠাচ্ছেন তাঁরপ্রথম প্রেমিকার কাছে।আমার প্যান্টের পকেটে সাদা খামে মোড়া বাবার লেখা দীর্ঘ পত্র।খুব যত্নে খামের উপর তিনি তাঁর প্রণয়িনীর নাম লিখেছেন।কে জানে চিঠিতে কি লেখা – ?তাঁর শরীরের সাম্প্রতিক অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা…

কাচপোকা

__হুমায়ূন আহমেদ একটা ঝকঝকে রঙিন কাচপোকাহাঁটতে হাঁটতে এক ঝলক রোদের মধ্যে পড়ে গেল।ঝিকমিকিয়ে উঠল তার নকশাকাটা লাল নীল সবুজ শরীর।বিরক্ত হয়ে বলল,রোদ কেন?আমি চাই অন্ধকার ।চির অন্ধকারআমার ষোলটা পায়ে একটা ভারি শরীর বয়ে নিয়ে যাচ্ছি-অন্ধকার দেখব বলে।আমি চাই অন্ধকার ।চির…

তিনি

__হুমায়ূন আহমেদ এক জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ছিলেন নিজ মনেআপন ভুবনে।জরার কারণে তিনি পুরোপুরি বৃক্ষ এক।বাতাসে বৃক্ষের পাতা কাঁপেতাঁর কাঁপে হাতের আঙ্গুল।বৃদ্ধের সহযাত্রী জবুথবু-পা নেই,শুধু পায়ের স্মৃতি পড়ে আছে।সেই স্মৃতি ঢাকা থাকে খয়েরি চাদরে।জরাগ্রস্থ বৃদ্ধ ভাবে চাদরের রঙটা নীল হলে ভাল ছিল।স্মৃতির…

কব্বর

__হুমায়ূন আহমেদ তিনি শায়িত ছিলেন গাঢ় কব্বরেযার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বেঁধে দেয়া,গভীরতা নয়।কব্বরে শুয়ে তাঁর হাত কাঁপে পা কাঁপেগভীর বিস্ময়বোধ হয়।মনে জাগে নানা সংশয়।মৃত্যু তো এসে গেছে, শুয়ে আছে পাশেতবু কেন কাটে না এ বেহুদা সংশয়?

সংসার 

__হুমায়ূন আহমেদ শোন মিলি।দুঃখ তার বিষমাখা তীরে তোকেবিঁধে বারংবার।তবুও নিশ্চিত জানি,একদিন হবে তোরসোনার সংসার ।।উঠোনে পড়বে এসে একফালি রোদতার পাশে শিশু গুটিকয়তাহাদের ধুলোমাখা হাতে – ধরা দেবেপৃথিবীর সকল বিস্ময়।

অশ্রু 

__হুমায়ূন আহমেদ আমার বন্ধুর বিয়েউপহার বগলে নিয়েআমি আর আতাহার,মৌচাক মোড়ে এসে বাস থেকে নামলামদু’সেকেন্ড থামলাম।।টিপটিপ ঝিপঝিপবৃষ্টি কি পড়ছে?আকাশের অশ্রু ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে? আমি আর আতাহারবলুন কি করি আর?উপহার বগলে নিয়ে আকাশের অশ্রুসারা গায়ে মাখলাম।।হি হি করে হাসলাম।।

গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না

 – হুমায়ূন আহমেদ প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাইগৃহত্যাগী হবার মত জ্যোৎস্না কি উঠেছে ?বালিকা ভুলানো জ্যোৎস্না নয়।যে জ্যোৎস্নায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে-ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ !নবদম্পতির জ্যোৎস্নাও নয়।যে জ্যোৎস্না দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে…

আমি খুব অল্প কিছু চাই

– হুমায়ুন আহমেদ আমাকে ভালবাসতে হবে না,ভালবাসি বলতে হবে না.মাঝে মাঝে গভীর আবেগনিয়ে আমার ঠোঁটদুটো ছুয়ে দিতে হবে না.কিংবা আমার জন্য রাতজাগা পাখিওহতে হবে না.অন্য সবার মত আমারসাথে রুটিন মেনে দেখাকরতে হবে না. কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাওখেতে হবে না. এতঅসীম…

যদি মন কাঁদে

– হুমায়ূন আহমেদ যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসোচলে এসো এক বরষায়এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে জল ভরা দৃষ্টিতেএসো কমলো শ্যামলো ছায়চলে এসো এক বরষায় যদিও তখনো আকাশ থাকবে বৈরিকদমও গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরীউতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালোঝলকে ঝলকে…