– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমি ভীষণ ভালবাসতাম আমার মা-কে-কখনও মুখ ফুটে বলি নি।টিফিনের পয়সা বাঁচিয়েকখনও কখনও কিনে আনতাম কমলালেবু-শুয়ে শুয়ে মা-র চোখ জলে ভ’রে উঠতআমার ভালাবাসার কথামা-কে কখনও আমি মুখ ফুটে বলতে পারি নি। হে দেশ, হে আমার জননী-কেমন ক’রে তোমাকে…
Tag: সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সুভাষ মুখোপাধ্যায়
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বাঙালি কবি ও গদ্যকার। কবিতা তার প্রধান সাহিত্যক্ষেত্র হলেও ছড়া, রিপোর্টাজ, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য সকল প্রকার রচনাতেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তার অমর পঙ্ক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য। পরিণত বয়সে গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা, মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ, চোখে চশমা, বামে চশমার নিচে বড় একটা আঁচিল – কলকাতার প্রতিবেশে এরকম একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
জীবন
প্রাথমিক জীবন
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মামাবাড়িতে। তার পিতার নাম ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মা যামিনী দেবী। পিতা ছিলেন সরকারি আবগারি বিভাগের কর্মচারী; তার বদলির চাকরির সুবাদে কবির ছেলেবেলা কেটেছিল পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। তার ছেলেবেলার প্রথম দিকটা, যখন তার বয়স তিন-চার, সে সময়টা কেটেছে কলকাতায়, ৫০ নম্বর নেবুতলা লেনে। একটা ভাড়াবাড়ির দোতলায় যৌথ পরিবারের ভিড়ের মধ্যে। প্রথমে নওগাঁর স্কুলে এবং পরে কলকাতার মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন ও সত্যভামা ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন। ভবানীপুরের মিত্র স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে সক্রিয় রাজনীতি করার মানসে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।
রাজনৈতিক ও কর্মজীবন
১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিশোর ছাত্রদল-এর সক্রিয় সদস্যরূপে যোগ দেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এই সময় কবি সমর সেন তাকে দেন হ্যান্ডবুক অব মার্কসিজম নামে একটি গ্রন্থ। এটি পড়ে মার্কসীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন কবি। ১৯৩৯ সালে লেবার পার্টির সঙ্গে সংযোগ হয় তার। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদাতিক। পরে ছাত্রনেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্ররোচনায় লেবার পার্টি ত্যাগ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪২ সালে পান পার্টির সদস্যপদ। এই সময় সদ্যগঠিত ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের সাংগঠনিক কমিটিতে কবি বিষ্ণু দে-র সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তারপর মাসিক ১৫ টাকা ভাতায় সর্বক্ষণের কর্মীরূপে যোগ দেন পার্টির জনযুদ্ধ পত্রিকায়। ১৯৪৬ সালে দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে যোগ দেন কবি। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে বহু কমিউনিস্ট বন্দীর সঙ্গে দু-বার কারাবরণ করেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও। এই সময় তিনি সামিল হন দমদম জেলের অনশন ধর্মঘটে। ১৯৫০ সালের নভেম্বর মাসে পান মুক্তি।
শেষজীবন
বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে শেষ জীবনে। কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে হন বিতর্কিত।
সম্মাননা
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বঞ্চনা ও অসম্মান অনেক জুটলেও সাহিত্যের অঙ্গনে সম্মানিতই হয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার পান ১৯৬৪ সালে; ১৯৭৭ সালে অ্যাফ্রো-এশিয়ান লোটাস প্রাইজ; ১৯৮২ সালে কুমারন আসান পুরস্কার; ১৯৮২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রদত্ত মির্জো টারসান জেড পুরস্কার; ১৯৮৪ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ওই বছরেই পান সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার ও ১৯৯২ সালে ভারতীয় জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। ১৯৯৬ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপ পান সুভাষ মুখোপাধ্যায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত করেছিল তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম দ্বারা।
এছাড়াও প্রগ্রেসিভ রাইটার্স ইউনিয়নের ডেপুটি সেক্রেটারি ও ১৯৮৩ সালে অ্যাফ্রো-এশীয় লেখক সংঘের সাধারণ সংগঠক নির্বাচিত হন কবি। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি ছিলেন সাহিত্য অকাদেমির একজিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য।
গ্রন্থাবলি
কাব্যগ্রন্থ
পদাতিক (১৯৪০), অগ্নিকোণ (১৯৪৮), চিরকুট (১৯৫০), ফুল ফুটুক (১৯৫৭), যত দূরেই যাই (১৯৬২), কাল মধুমাস (১৯৬৬), এই ভাই (১৯৭১), ছেলে গেছে বনে (১৯৭২), একটু পা চালিয়ে ভাই (১৯৭৯), জল সইতে (১৯৮১), চইচই চইচই (১৯৮৩), বাঘ ডেকেছিল (১৯৮৫), যা রে কাগজের নৌকা (১৯৮৯), ধর্মের কল (১৯৯১)।
কবিতা সংকলন
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা (১৩৬৪ বঙ্গাব্দ), সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭০), সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যসংগ্রহ, প্রথম খণ্ড (১৩৭৯ বঙ্গাব্দ), সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যসংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড (১৩৮১ বঙ্গাব্দ), কবিতাসংগ্রহ ১ম খণ্ড (১৯৯২), কবিতাসংগ্রহ ২য় খণ্ড (১৯৯৩), কবিতাসংগ্রহ ৩য় খণ্ড (১৯৯৪), কবিতাসংগ্রহ ৪র্থ খণ্ড (১৯৯৪)।
অনুবাদ কবিতা
নাজিম হিকমতের কবিতা (১৯৫২), দিন আসবে (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ, নিকোলো ভাপৎসারভের কবিতা), পাবলো নেরুদার কবিতাগুচ্ছ (১৩৮০ বঙ্গাব্দ), ওলঝাস সুলেমেনভ-এর রোগা ঈগল (১৯৮১ বঙ্গাব্দ), নাজিম হিকমতের আরো কবিতা (১৩৮৬ বঙ্গাব্দ), পাবলো নেরুদার আরো কবিতা (১৩৮৭ বঙ্গাব্দ), হাফিজের কবিতা (১৯৮৬), চর্যাপদ (১৯৮৬), অমরুশতক (১৯৮৮)।
ছড়া
মিউ-এর জন্য ছড়ানো ছিটানো (১৯৮০)।
কবিতা সম্পর্কিত গদ্যরচনা
কবিতার বোঝাপড়া, টানাপোড়েনের মাঝখানে।
রিপোর্টাজ ও ভ্রমণসাহিত্য
আমার বাংলা (১৯৫১), যেখানে যখন (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), ডাকবাংলার ডায়েরী (১৯৬৫), নারদের ডায়েরী (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), যেতে যেতে দেখা (১৩৭৬ বঙ্গাব্দ), ক্ষমা নেই (১৩৭৮ বঙ্গাব্দ), ভিয়েতনামে কিছুদিন (১৯৭৪), আবার ডাকবাংলার ডাকে (১৯৮৪), টো টো কোম্পানী (১৯৮৪), এখন এখানে (১৯৮৬), খোলা হাতে খোলা মনে (১৯৮৭)।
অর্থনৈতিক রচনা
ভূতের বেগার (১৯৫৪, কার্ল মার্ক্স রচিত ওয়েজ লেবার অ্যান্ড ক্যাপিটাল অবলম্বনের)।
অনুবাদ রচনা
মত ক্ষুধা (১৯৫৩, ভবানী ভট্টাচার্যের সো মেনি হাঙ্গার্স উপন্যাসের অনুবাদ), রোজেনবার্গ পত্রগুচ্ছ (১৯৫৪), ব্যাঘ্রকেতন (নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন ও কর্মভিত্তিক একটি অনুবাদ), রুশ গল্প সঞ্চয়ন (১৯৬৮), ইভান দেনিসোভিচের জীবনের একদিন (১৯৬৮), চে গেভারার ডায়েরী (১৯৭৭), ডোরাকাটার অভিসারে (১৯৬৯, শের জঙ্গের ট্রায়াস্ট উইথ টাইগার্স অবলম্বনে), আনাফ্রাঙ্কের ডায়েরী (১৯৮২), তমস (১৩৯৫ বঙ্গাব্দ, ভীষ্ম সাহানীর উপন্যাসের অনুবাদ)।
উপন্যাস
হাংরাস (১৯৭৩), কে কোথায় যায় (১৯৭৬)।
জীবনী
জগদীশচন্দ্র (১৯৭৮), আমাদের সবার আপন ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন (১৯৮৭), ঢোলগোবিন্দের এই ছিল মনে।
শিশু ও কিশোর সাহিত্য
নীহাররঞ্জন রায় রচিত বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থের কিশোর সংস্করণ (১৯৫২), অক্ষরে অক্ষরে আদি পর্ব (১৯৫৪), কথার কথা (১৯৫৫), দেশবিদেশের রূপকথা (১৯৫৫), বাংলা সাহিত্যের সেকাল ও একাল (১৯৬৭), ইয়াসিনের কলকাতা (১৯৭৮)।
সম্পাদিত গ্রন্থ
কেন লিখি (১৯৪৫, বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিকদের জবানবন্দী, হিরণকুমার সান্যালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রচিত), একসূত্র (১৯৫৫, ফ্যাসিবিরোধী কবিতা সংকলন, গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনা), ছোটদের পুজো সংকলন – পাতাবাহার, বার্ষিক আগামী ইত্যাদি।
সংকলন
গদ্যসংগ্রহ (১৯৯৪) by Rupam Ghosh
মে-দিনের কবিতা
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্যধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্যকাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া। চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্যজীবনকে চায় ভালবাসতে। প্রণয়ের যৌতুক দাও প্রতিবন্ধে,মারণের পণ নখদন্তে;বন্ধন ঘুচে…
ফুল ফুটুক না ফুটুক
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় ফুল ফুটুক না ফুটুকআজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাথেপাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছকচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়েহাসছে। ফুল ফুটুক না ফুটুকআজ বসন্ত। আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়েতারপর খুলে –মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়েতারপর তুলে –যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে…
তোমাকে বলি নি
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আকাশে তুলকালাম মেঘেযেন বাজি ফোটানোর আওয়াজেকালতোমার জন্মদিন গেল।ঘরে বৃষ্টির ছাট এলেওজানালাগুলো বন্ধ করি নি—আলো-নেভানো অন্ধকারেথেকে থেকে ঝিলিক-দেওয়া বিদ্যুতেআমি দেখতে পাচ্ছিলাম তোমার মুখ।আর মাঝে মাঝেহাওয়া এসে নড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছিলতোমাকে ভালবেসে দেওয়াটেবিলে রাখাগুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।কাল কেন আমি ঘুমোতে পারি…
বলছিলাম কী
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলছিলাম–না, থাক্ গে।যা হচ্ছে হোক, কে খণ্ডাবেলেখা থাকলে ভাগ্যে।পাকানো জট,হারানো খেই,চতুর্দিকের দৃষ্যপটএখনও সে-ই–শক্ত করে আঁকড়ে-ধরাচেয়ারের সেই হাতল।বিষম ভয়, কখন হয়ক্ষমতার হাতবদল।বলছিলাম–না, থাক্ গে!কী আসে যায় হাতে নাতেপ্রমাণ এবং সাক্ষ্যে।মোড়লেরা ব্যস্ত বেজায়যে যার কোলে ঝোল টানতে।সারটা দেশ হাপিত্যেশে,পান্তা…
লোকটা জানলই না
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতেহায়! হায় ! লোকটার ইহকাল পরকাল গেল !অথচ আর একটু নীচে হাত দিলেইসে পেতো আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপ,তার হৃদয় !লোকটা জানলোই না !তার কড়ি গাছে কড়ি হল ।লক্ষ্মী এল রণ-পায়েদেয়াল দিল পাহাড়াছোটলোক হাওয়া…
কেন এল না
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় সারাটা দিন ছেলেটা নেচে নেচে বেড়িয়েছে।রাস্তায় আলো জ্বলছে অনেকক্ষণ এখনওবাবা কেন এল না, মা?বলে গেলমাইনে নিয়ে সকাল- সকাল ফিরবে।পুজোর যা কেনাকাটাএইবেলা সেরে ফেলতে হবে।বলে গেল।সেই মানুষ এখনও এলো না।কড়ার গায়ে খুন্তিটাআজ একটু বেশি রকম নড়ছে।ফ্যান গালতে গিয়েপা-টা…
যত দূরেই যাই
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমি যত দূরেই যাইআমার সংগে যায়ঢেউয়ের মালা-গাঁথাএক নদীর নাম_ আমি যত দূরেই যাই। আমার চোখের পাতায় লেগে থাকেনিকোনো উঠোনেসারি সারিলক্ষ্মীর পাআমি যত দূরেই যাই।
পায়ে পায়ে
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় সারাক্ষণসে আমার পায়ে পায়েসারাক্ষণপায়ে পায়েঘুরঘুর করে। তাকে বলিঃ তোমাকে নিয়ে থাকারসময় নেই-হে বিষাদ, তুমি যাওএখন সময় নেইতুমি যাও। গাছের গুঁড়িতে বুক-পিঠ এক করেযৌবনে পা দিয়ে রয়েছেএকটি উলঙ্গ মৃত্যু-আমি এখুনি দেখে আসছিঃ পৃথিবীতে গাঁক-গাঁক করে ফিরছেযে দাঁত-খিঁচানো ভয়,আমি…
প্রস্তাব ১৯৪০
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রভু, যদি বলো অমুক রাজার সাথে লড়াইকোনো দ্বিরুক্তি করব না, নেব তীরধনুক।এমনি বেকার, মৃত্যুকে ভয় করি থোড়াই,দেহ না চললে, চলবে তোমার কড়া চাবুক। হা-ঘরে আমরা, মুক্ত আকাশ ঘর-বাহির।হে প্রভু, তুমিই শেখালে পৃথিবী মায়া কেবল-তাই তো আজকে নিয়েছি…
হিংসে
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় যাবার আগে মিটিয়ে নেবযার যার সঙ্গে আড়ি উঠলে ঝড় ছুটব বাইরেতারপরে তো বাড়ি ঠিক করি নি কিসে যাবহেঁটে না সাইকেলে ঝনঝনালে পকেটে পয়সামাটিতে দেব ফেলে মাটি কাঁপছে, কাঁপুক।চল্ রে ঘোড়া!হাতে তুলেছি চাবুক মুখপুড়িটা তাকাচ্ছে, দ্যাখ।বলছে, আ মর…
চিরকুট
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় শতকোটি প্রণামান্তেহুজুরে নিবেদন এই_মাপ করবেন খাজনা এ সনছিটেফোঁটাও ধান নেই। মাঠেঘাটে কপাল ফাটেদৃষ্টি চলে যত দূরখাল শুক্নো বিল শুক্নোচোখের কোলে সমুদ্দুর। হাত পাতব কার কাছে কেগাঁয়ে সবার দশা একতিন সন্ধে উপোস দিয়েখাচ্ছি আজ বুনো শাক। পরনে যা…
এখন ভাবনা
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় ১.এখন একটু চোখে চোখে রাখো-দিনগুলো ভারি দামালো;দেখো,যেন আমাদরে অসাবধানেএই দামালো দিনগুলোগড়াতে গড়াতেগড়াতে গড়াতেআগুনের মধ্যে না পড়ে। আমার ভালোবাসাগুলোকে নিয়েইআমার ভাবনা।এখন সেই বয়স, যখনদূরেরটা বিলক্ষণ স্পষ্ট–শুধু কাছেরটাই ঝাপসা দেখায়। এখন সেই বয়েস, যখনআচমকা মাটিতেপ’ড়ে যেতে যেতে মনে হয়হাতে…
পরপার
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমরা যেন বাংলাদেশেরচোখের দুটি তারা।মাঝখানে নাক উঁচিয়ে আছে_থাকুক গে পাহারা। দুয়োরে খিল।টান দিয়ে তাইখুলে দিলাম জানলা। ওপারে যে বাংলাদেশএপারেও সেই বাংলা।।
সকলের গান
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় কমরেড, আজ নতুন নবযুগ আনবে না?কুয়াশাকঠিন বাসর যে সম্মুখে।লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা-দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না? আকাশের চাঁদ দেয় বুঝি হাতছানি?ওসব কেবল বুর্জোয়াদের মায়া-আমরা তো নই প্রজাপতি- সন্ধানী!অন্তত, আজ মাড়াই না তার ছায়া। কুঁজো…
আলালের ঘরের দুলাল
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় বুলবুলিতে ধান খেয়েছেখাজনা দেব কিসেপায়ে শিকল দিয়ে কোকিলমরছে কেশে কেশে এ গাঁয়েতে বান তোও গাঁয়েতে খরাযে করে হোক আখেরে ভোটভাতের টোপে ধরা নীচেয় থাকে হাবা বোবাওপরতলায় কালাকাজের জন্যে মানুষ হন্যেদরজাগুলোয় তালা এই এটাকে চেয়ারে বসাওই ওটাকে হটাসামনে…
একটি সংলাপ
– সুভাষ মুখোপাধ্যায় মেয়ে: তুমি কি চাও আমার ভালবাসা ?ছেলে: হ্যাঁ, চাই !মেয়ে: গায়ে কিন্তু তার কাদা মাখা !ছেলে: যেমন তেমনিভাবেই চাই ।মেয়ে: আমার আখেরে কী হবে বলা হোক ।ছেলে: বেশ!মেয়ে: আর আমি জিগ্যেস করতে চাই ।ছেলে: করো ।মেয়ে: ধরো’…