এক বছরের রাজা

– সুকুমার রায় এক বছরের রাজালেখক- সুকুমার রায় এক ছিলেন সওদাগর- তাঁর একটি সামান্য ক্রীতদাস তার একমাত্র ছেলেকে জল থেকে বাঁচায়। সওদাগর খুশি হয়ে তাকে মুক্তি তো দিলেনই, তা ছাড়া জাহাজ বােঝাই করে নানা রকম বাণিজ্যের জিনিস তাকে বকশিশ দিয়ে…

উকিলের বুদ্ধি

– সুকুমার রায় উকিলের বুদ্ধি– সুকুমার রায় গরিব চাষা, তার নামে মহাজন নালিশ করেছে। বেচারা কবে তার কাছে পঁচিশ টাকা নিয়েছিল, সুদে-আসলে তাই এখন পাঁচশো টাকায় দাঁড়িয়েছে। চাষা অনেক কষ্টে একশো টাকা যোগাড় করেছে; কিন্তু মহাজন বলছে, “পাঁচশো টাকার এক…

ব্যাঙের সমুদ্র দেখা

– সুকুমার রায় ব্যাঙের সমুদ্র দেখা– সুকুমার রায় (জাপানী গল্প) গ্রামের ধারে কবেকার পুরান এক পাতকুয়োর ফাটলের মধ্যে কোলাব্যাং তার পরিবার নিয়ে থাকত। গ্রামের মেয়েরা সেখানে জল তুলতে এসে যেসব কথাবার্তা বলত কোলাব্যাং তার ছেলেদের সেইসব কথা বুঝিয়ে দিত—আর ছেলেরা…

ওয়াসিলিসা

– সুকুমার রায় ওয়াসিলিসা– সুকুমার রায় ওয়াসিলিসা এক সওদাগরের মেয়ে। তার মা ছিল না, কেউ ছিল না— ছিল খালি এক দুষ্টু সৎমা আর ছিল সে সৎমার দুটো ডাইনীর মত মেয়ে। ওয়াসিলিসার মা যখন মারা যান, তখন তিনি তাকে একটা কাঠের…

অর্ফিয়ুস

– সুকুমার রায় অর্ফিয়ুস– সুকুমার রায় নয়টি বোন ছিলেন, তাঁহারা ছন্দের দেবী। গানের ছন্দ, কবিতার ছন্দ, নৃত্যের ছন্দ, সঙ্গীতের ছন্দ—সকলরকম ছন্দকলায় তাঁহাদের সমান কেহই ছিল না। তাঁহাদেরই একজন, দেবরাজ জুপিটারের পুত্র আপোলোকে বিবাহ করেন। আপোলো ছিলেন সৌন্দর্যের দেবতা, শিল্প ও…

অসিলক্ষণ পন্ডিত

– সুকুমার রায় অসিলক্ষণ পন্ডিত– সুকুমার রায় রাজার সভায় মোটা মোটা মাইনেওয়ালা অনেকগুলি কর্মচারী। তাদের মধ্যে সকলেই যে খুব কাজের লোক, তা নয়। দ’চারজন খেটেখুটে কাজ করে আর বাকি সবাই বসে বসে মাইনে খায়। যারা ফাঁকি দিয়ে রোজগার করে, তাদের…

জীবনের হিসাব

– সুকুমার রায় বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটেমাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে?চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফেলফেলিয়ে হাসে,বাবু বলেন, “সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!”…

সৎপাত্র

– সুকুমার রায় শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?মন্দ নয় সে পাত্র ভালোরঙ যদিও বেজায় কালো ;তার উপরে মুখের গঠনঅনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়…

মনের মতন

– সুকুমার রায় কান্না হাসির পোঁটলা বেঁধে, বর্ষভরা পুঁজি,বৃদ্ধ বছর উধাও হ’ল ভূতের মুলুক খুঁজি।নূতন বছর এগিয়ে এসে হাত পাতে ঐ দ্বারে,বল্‌ দেখি মন মনের মতন কি দিবি তুই তারে?আর কি দিব?- মুখের হাসি, ভরসাভরা প্রাণ,সুখের মাঝে দুখের মাঝে আনন্দময়…

মেঘের খেয়াল

– সুকুমার রায় আকাশের ময়দানে বাতাসের ভরে,ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে।কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানাহেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা।কোথা হতে কোথা যায় কোন্‌ তালে চলে,বাতাসের কানে কানে কত কথা বলে।বুড়ো বুড়ো ধাড়ি মেঘ ঢিপি হয়ে…

ভূতুড়ে খেলা

– সুকুমার রায় পরশু রাতে পষ্ট চোখে দেখনু বিনা চশমাতে,পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা করছে খেলা জোছনাতে৷কচ্ছে খেলা মায়ের কোলে হাত পা নেড়ে উল্লাসে,আহলাদেতে ধুপধুপিয়ে কচ্ছে কেমন হল্লা সে৷শুনতে পেলাম ভূতের মায়ের মুচকি হাসি কট্‌কটে—দেখছে নেড়ে ঝুন্‌টি ধ’রে বাচ্চা কেমন চট্‌পটে৷উঠছে তাদের…

মূর্খ মাছি

__সুকুমার রায় মাকড়সাসান্‌-বাঁধা মোর আঙিনাতেজাল বুনেছি কালকে রাতে,ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা।আয় না মাছি আমার ঘরে,আরাম পাবি বসলে পরে,ফরাশ পাতা দেখবি কেমন খাসা! মাছিথাক্‌ থাক্‌ থাক্‌ আর বলে না,আন্‌কথাতে মন গলে না-ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা।ঢুক্‌লে তোমার জালের ঘেরেকেউ…

আড়ি

__সুকুমার রায় কিসে কিসে ভাব নেই? ভক্ষক ও ভক্ষ্যে-বাঘে ছাগে মিল হলে আর নেই রক্ষে। শেয়ালের সাড়া পেলে কুকুরেরা তৈরি,সাপে আর নেউলে ত চিরকাল বৈরী! আদা আর কাঁচকলা মেলে কোনোদিন্ সে?কোকিলের ডাক শুনে কাক জ্বলে হিংসেয়। তেলে দেওয়া বেগুনের ঝগড়াটা…

আহ্লাদী

__সুকুমার রায় হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহ্লাদী,তিন জনেতে জট্লা ক’রে ফোক্‌লা হাসির পাল্লা দি।হাসতে হাসতে আসছে দাদা ,আসছি আমি, আসছে ভাই,হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।ভাবছি মনে, হাসছি কেন? থাকব হাসি ত্যাগ করে,ভাবতে গিয়ে ফিকফিকিয়ে…

আবোল তাবোল – ৩

__সুকুমার রায় এক যে ছিল রাজা- (থুড়ি,রাজা নয় সে ডাইনি বুড়ি) !তার যে ছিল ময়ূর- (না না,ময়ূর কিসের ? ছাগল ছানা) ।উঠানে তার থাক্‌ত পোঁতা–(বাড়িই নেই, তার উঠান কোথা) ?শুনেছি তাত পিশতুতো ভাই–(ভাই নয়ত, মামা-গোঁসাই ) ।বল্‌ত সে তার শিষ্যটিরে–(জন্ম-বোবা…

আবোল তাবোল – ২

 __সুকুমার রায় মেঘ মুলুকে ঝাপ‌্সা রাতে,রামধনুকের আবছায়াতে,তাল বেতালে খেয়াল সুরে,তান ধরেছি কন্ঠ পুরে।হেথায় নিষেধ নাইরে দাদা,নাইরে বাঁধন নাইরে বাধা।হেথায় রঙিন্ আকাশতলেস্বপন দোলা হাওয়ায় দোলে,সুরের নেশায় ঝরনা ছোটে,আকাশ কুসুম আপনি ফোটে,রঙিয়ে আকাশ, রঙিয়ে মনচমক জাগে ক্ষণে ক্ষণ।আজকে দাদা যাবার আগেবল্‌ব যা…

আবোল তাবোল – ১

__সুকুমার রায় আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলাস্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,আয়রে পাগল আবোল তাবোলমত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানেনাইকো মানে নাইকো সুর।আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়মন ভেসে যায় কোন সুদূর।আয় ক্ষ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধনজাগিয়ে নাচন তাধিন্‌ ধিন্‌,আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়ানিয়মহারা হিসাবহীন।আজগুবি চাল বেঠিক বেতালমাতবি মাতাল রঙ্গেতে–আয়রে…

আনন্দ

__সুকুমার রায় যে আনন্দ ফুলের বাসে,যে আনন্দ পাখির গানে,যে আনন্দ অরুণ আলোয়,যে আনন্দ শিশুর প্রাণে,যে আনন্দ বাতাস বহে,যে আনন্দ সাগরজলে,যে আনন্দ ধুলির কণায়,যে আনন্দ তৃণের দলে,যে আনন্দ আকাশ ভরা,যে আনন্দ তারায় তারায়,যে আনন্দ সকল সুখে,যে আনন্দ রক্তধারায়সে আনন্দ মধুর হয়েতোমার…

আদুরে পুতুল

__সুকুমার রায় যাদুরে আমার আদুরে গোপাল, নাকটি নাদুস থোপ্‌না গাল,ঝিকিমিকি চোখ মিটমিটি চায় ঠোঁট দুটি তায় টাট্‌কা লাল।মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক দাঁত মেলে আর চুল খুলে-টিনের পুতুল চীনের পুতুল কেউ কি এমন তুলতুলে?গোব্‌দা গড়ন এম্‌নি ধরন আব্‌দারে কেউ ঠোট ফুলোয়?মখমলি…

অন্ধ মেয়ে

 __সুকুমার রায় গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!গবুজ ঘাসে রোদের পাশে আলোর কেরামতিরঙিন্ বেশে রঙিন্ ফুলে রঙিন্ প্রজাপতি! অন্ধ মেয়ে দেখ্ছে না তা – নাইবা যদি দেখে-শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে…

‘ভাল ছেলের’ নালিশ

__সুকুমার রায় মাগো!প্রসন্নটা দুষ্টু এমন! খাচ্ছিল সে পরোটাগুড় মাখিয়ে আরাম ক’রে বসে –আমায় দেখে একটা দিল ,নয়কো তাও বড়টা,দুইখানা সেই আপনি খেল ক’ষে!তাইতে আমি কান ধরে তার একটুখানি পেঁচিয়েকিল মেরেছি ‘হ্যাংলা ছেলে’ বলে-অম্‌নি কিনা মিথ্যা করে ষাঁড়ের মত চেচিয়েগেল সে…

বাবুরাম সাপুড়ে

বাবুরাম সাপুড়ে – সুকুমার রায় বাবুরাম সাপুড়ে,কোথা যাস্‌ বাপুরে?আয় বাবা দেখে যা,দুটো সাপ রেখে যা—যে সাপের চোখ্‌ নেই,শিং নেই নোখ্‌ নেই,ছোটে না কি হাঁটে না,কাউকে যে কাটে না,করে নাকো ফোঁস্‌ফাঁস্‌,মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,নেই কোন উৎপাত,খায় শুধু দুধ ভাত—সেই সাপ জ্যান্তগোটা দুই…