– সিকান্দার আবু জাফর আমার জবাব পেলাম।তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি কিনা?না! আমরা যে সমাজের জীবতারই ধারায় তুমি ভাসমান তৃণ।ইতিহাস পরিবর্তনের দিন এলেহৃদয় নিয়ে তুমি খেলবেনা,আমি জানি।
Tag: সিকান্দার আবু জাফর
সিকান্দার আবু জাফর
সিকান্দার আবু জাফর (১৯ মার্চ ১৯১৮/১৯১৯ – ৫ আগস্ট ১৯৭৫) একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক। তিনি ভারত বিভাগোত্তর কালে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা সমকাল সম্পাদনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তার একটি বিখ্যাত কবিতা হলো
জন্ম ও পরিবার
সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন খুলনা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেম। পেশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। পিতৃব্য সৈয়দ জালালুদ্দীন হাশেম।
শিক্ষা ও কর্মজীবন
স্থানীয় স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি কলকাতার রিপন কলেজে পড়েন। ১৯৪১ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের নবযুগ পত্রিকায় যোগ দেন। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত-এ চাকরি করতেন। আমাদের সংগ্রাম চলবেই তার রচনা বিখ্যাত গান।[২] দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পঞ্চাশের দশকে রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাহিত্য পত্রিকা ‘সমকাল’-এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট সিকান্দার আবু জাফর মৃত্যুবরণ করেন।
সমকাল প্রকাশ ও সম্পাদনা
একজন সাহিত্যিক হিসেবে সিকানদার আবু জাফরের যে খ্যাতি তার চেয়েও অনেক বেশি প্রসিদ্ধি সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে। সাহিত্য পত্রিকা সমকাল সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনা তার জীবনের একটি তাৎপর্যময় ঘটনা। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ‘সমকালে’র প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে পূর্ব বঙ্গের সাহিত্য আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেছিলেন। এ পত্রিকায় ষাটের দশকের নামী-দামী সকল কবি-লেখকের রচনা প্রকাশিত হয়েছে। লেখার সাবধানী ও নৈর্ব্যক্তিক নির্বাচন, প্রতিভাবান নতুন লেখকদের মর্যাদা প্রদান, মনোযোগী সম্পাদনা এবং মুদ্রণ পরিপাট্যের জন্য সমকাল সকল কবি-লেখকের জন্য স্বপ্নের পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে এটি প্রগতিশীল বাংলা সাহিত্যধারার অগ্রগামী সাহিত্য পত্রে পরিণত হয়েছিল।[৩] তাঁর নিজরেও প্রচুর লেখা এ পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেছিলেন যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত বাংলা ছাড় কবিতাটি:
রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো।রচনাবলি
কাব্যগ্রন্থ
- প্রসন্ন প্রহর (১৯৬৫)
- বৈরী বৃষ্টিতে (১৯৬৫)
- তিমিরান্তিক (১৯৬৫)
- বৃশ্চিক লগ্ন (১৯৭১)
- বাংলা ছাড়
নাটক
- সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫)
- মহাকবি আলাওল (১৯৬৬)
- শকুন্ত উপাখ্যান (১৯৫২)
- মাকড়সা (১৯৬০)
উপন্যাস
- মাটি আর অশ্রু
- পূরবী
- নতুন সকাল
- জয়ের পথ
কিশোর উপন্যাস
- জয়ের পথে
- নবী কাহিনী
অনুবাদ
- রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম
- সেন্ট লুইয়ের সেতু
- বারনাড মালামুডের যাদুর কলস
গান
- মালব কৌশিক
পুরস্কার ও সম্মাননা
তিনি ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার-এ ভূষিত হন এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।
সংগ্রাম চলবেই
– সিকান্দার আবু জাফর জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই। হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানেবাঁচবার অধিকার কাড়তেদাস্যের নির্মোক ছাড়তেঅগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধচলবেই চলবেই,আমাদের সংগ্রাম চলবেই। প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপেহ’ক না আঁধার নিশ্ছিদ্রআমরা তো সময়ের সারথীনিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র। দিয়েছি তো শান্তি আরও…
সংগ্রাম চলবেই
– সিকান্দার আবু জাফর রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলোআজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরিকাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপিআমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবিতুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়াতুমি বাংলা ছাড়ো…
মানা
– সিকান্দার আবু জাফর হাটে-মাঠে-গঞ্জে-ঘাটে সুদূর গাঁয়ের পথেনদীর তীরে, বালুর চরে, সমুদ্র সৈকতেছড়িয়ে আছে জীবন যেন আনন্দে আটখানাতুমিই যে তার ভাগ নেবে না তোমার শুধু মানা।ও-জঙ্গলে দোয়েল নাচে, শালিক ডাকে গাছেঘুঘুর ছানা মিটমিটিয়ে হয়তো চেয়ে আছেবুলবুলিটার লাল টুপিটা দেখার নেশায়…