– শেখ ফজলুল করিম কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর ?মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক, –মানুষেতে সুরাসুর !রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়,আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন…
Tag: শেখ ফজলুল করিম
শেখ ফজলল করিম
শেখ ফজলল করিম (৯ এপ্রিল ১৮৮২/বাংলা ৩০শে চৈত্র ১২৮৯ – ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৬) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তাঁর লেখা কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি:
কোথায় স্বর্গ?
কোথায় নরক?
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক
মানুষেতে সুরাসুরশৈশব
শেখ ফজলল করিম ১২৮৯ বঙ্গাব্দের (১৮৮২ সাল) ৩০ই চৈত্র বর্তমান লালমনিরহাট জেলারকালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজার গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাম আমিরউল্লাহ সরদার এবং মাতার নাম কোকিলা বিবি। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফজলল করিম ছিলেন দ্বিতীয়। তার পারিবারিক ডাক নাম ছিল মোনা।
সাহিত্য চর্চা
কবির প্রথম বই সরল পদ্য বিকাশ তার ১২ বছর বয়সেই হাতে লিখে প্রকাশিত হয়েছিল। রংপুর জেলা স্কুলে পড়ালেখায় মন বসাতে না পেরে তখন তিনি প্রচুর এবং বিভিন্ন রকমের বই পড়তে শুরু করেন। পড়াশোনা ছাড়ার পর পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা, সংবাদপত্র পাঠে তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। এ সময় আধ্যাতিক ও সাহিত্যচিন্তা তাকে গভীরভাবে দোলা দিতে থাকে। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে তিনি নানা পত্রপত্রিকা, পুস্তক সংগ্রহ করতেন। সে সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে তিন ১৮৯৬ সালে নিজ বাড়িতেই করিম আহামদিয়া লাইব্রেরী নামে একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরি করেন। এভাবে সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে তিনি অনেক ঠাট্টা উপহাসের শিকার হন কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির কারণে দূর্বার গতিতে চলতে থাকে তার সাহিত্য চর্চা।
কর্মজীবন
সাহিত্যের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহের কারণে কর্মজীবন ফজলল করিমকে তেমন ভাবে আকর্ষণ করতে পারে নি। ছোটবেলাতেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আয়ত্ত করেছিলেন যা তিনি কাজে লাগাতেন গ্রামের দরিদ্র মানুষের সেবায়। তিনি বাড়িতে বসেই দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। সাহিত্য সৃষ্টি, প্রকাশনা ও সাধনার প্রতি ফজলল করিমের প্রচন্ড ইচ্ছা এবং আগ্রহ থেকে তিনি নিজ বাড়ীতে আর পীরের নামানুসারেসাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
সাহিত্যকর্ম
শেখ ফজলল করিমের পরিচিত মূলত কবি হিসেবে হলেও তার জীবনী ও প্রকাশনা অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তিনি কবিতা বা কাব্য ছাড়াও বহু প্রবন্ধ, নাট্যকাব্য, জীবনগ্রন্থ, ইতিহাস, গবেষণামূলক নিবন্ধ, সমাজ গঠনমূলক ও তত্ত্বকথা গল্প, শিশুতোষ সাহিত্য, নীতি কথা চরিত গ্রন্থ এবং অন্যান্য সমালোচনামূলক রচনা লিখেছেন। পুঁথি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও তার পরিচিত পাওয়া যায়। তার প্রকাশিত অপ্রকাশিত প্রায় ৫৫টি গ্রন্থ রয়েছে।
গদ্য ও পদ্য উভয় শাখায় তার সমুজ্জল উপস্থিতি। ভাবের গভীরতাকে সরলভাবে উপস্থাপন করা ফযলল করিমের লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে কাজ করে গেছেন।
শেখ ফজলল করিম রচিত উল্লেখযোগ্য পদ্য
- সরল পদ্য বিকাশ
- পরিত্রাণ কাব্য
- চিন্তার চাষ
- পথ পাথেয়
- গাঁথা
- ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি
পুরস্কার
জীবনকালেই তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। বাসনা সম্পাদনার সময় রোমিও-জুলিয়েট সম্পর্কিত তার একটি কবিতা পাঠ করে তৎকালীন হিন্দু সাহিত্যিকেরা তাকে বাংলার শেক্সপিয়ার আখ্যা দেন। পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা তাকে সাহিত্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। চিন্তার চাষ গ্রন্থের জন্য তিনি নীতিভূষণ, কাশ্মীর শ্রীভারত ধর্ম মহামন্ডল তাকে রৌপ্যপদকে ভূষিত করে। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, ইত্যাদি উপাধিত ও সম্মানে ভূষিত করে।
মৃত্যু
১৯৩৬ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তুলনা
– শেখ ফজলুল করিম সাত শত ক্রোশ করিয়া ভ্রমণ জ্ঞানীর অন্বেষণে,সহসা একদা পেল সে প্রবীণ কোনো এক মহাজনে।শুধাল, ”হে জ্ঞানী! আকাশের চেয়ে উচ্চতা বেশি কার?”জ্ঞানী বলে, ”বাছা, সত্যের চেয়ে উঁচু নাহি কিছু আর।”পুনঃ সে কহিল, ”পৃথিবীর চেয়ে ওজনে ভারী কি…
গাঁয়ের ডাক
– শেখ ফজলুল করিম ধানের ক্ষেতে বাতাস নেচে যায়দামাল ছেলের মতোডাক দে বলে, আয়রে তোরা আয়ডাকব তোদের কত! মুক্ত মাঠের মিষ্টি হাওয়াজোটে না যা ভাগ্যে পাওয়াহারাসনে ভাই অবহেলায় রেদিন যে হলো গত। ছোট্ট নদী কোন সুদূরে ধায়বক্ষে রজত-ধারাডাক দে বলে,…
এপিটাফ
– শেখ ফজলল করিম আর্দ্র মহীতলে হেথা চির নিদ্রাগতব্যথাতুর দীন কবি, অফুরন্ত সাধভুলে যাও একটি তার জনমের মতোহয়তো সে করিয়াছে শত অপরাধপান্থপদ রেণুপুত এ শেষ ভবনহতে পারে তার ভাগ্যে সুখের নন্দন।
বিশ্বদর্শন
– শেখ ফজলুল করিম জিব্রাইল জিজ্ঞাসিল নূহ পয়গাম্বরে‘বলো, বলো বর্ষীয়ান, দয়া করে মোরেএত বর্ষ আয়ু তব হলো বসুধারকেমন দেখিলে তুমি বলো না ইহার?’নূহ বলে, ‘মহাত্মন, কী বলিব আরদেখিলাম, এক গৃহ, তার দুটি দ্বার,এক দ্বার দিয়া জীব প্রবেশ করিয়াঅন্য দ্বারপথে সবে…
সাধন-সৌধ
– শেখ ফজলুল করিম প্রতিবেশীগণ প্রবীর খৃস্টে কহিল মিনতি করি,তোমার লাগিয়া দিতে চাই প্রভু, সাধন-সৌধ গড়ি।খৃস্ট কহেন, গড়ে দাও তবে স্রোতের উপরে ঘরলোকে বলে, উহা হয় কি কখনো? অসম্ভব ঘোরতর।মিষ্ট মধুর হাসিয়া প্রেমিক কহিল, বন্ধুগণসংসার সুখ-বাসনা পুষিয়া অন্তরে কোন জনভজনা…
তুলনায় সমালোচনা
– শেখ ফজলুল করিম শত শত ক্রোশ করিয়া ভ্রমণ জ্ঞানীর অন্বেষণেসহসা একদা পেল সে প্রবীণ কোনো এক মহাজনে।সুধালো, হে জ্ঞানী, আকাশের চেয়ে উচ্চতা বেশি কার?জ্ঞানী বলে, বাছা, সত্যের চেয়ে উঁচু নাই কিছু আর।পুনঃ সে কহিল, পৃথিবীর চেয়ে ওজনে ভারি কি…