– শহীদ কাদরী ভয় নেইআমি এমনব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনীগোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়েমার্চপাস্ট করে চলে যাবেএবং স্যালুট করবেকেবল তোমাকে প্রিয়তমা।ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবোবন-বাদাড় ডিঙ্গিয়েকাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেকরণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়েআর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবেভায়োলিন বোঝাই করেকেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।ভয় নেই, আমি…
Tag: শহীদ কাদরী
শহীদ কাদরী
শহীদ কাদরী (১৪ আগস্ট ১৯৪২ – ২৮ আগস্ট ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশী কবি ও লেখক। তিনি ১৯৪৭-পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিনি নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করেছিলেন। তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ববোধ এবং প্রকৃতি ও নগর জীবনের অভিব্যক্তি তার কবিতার ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যেকে বৈশিষ্ট্যায়িত করেছে। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে তিনি ব্যবহার করেছেন তার কাব্যে। তার কবিতায় অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্ণতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট।
তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ চারটি।১৯৭৩ সালে বাংলা কবিতায় অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।
প্রাথমিক জীবন
শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ভারত) রাজধানী কলিকাতা শহরের পার্ক সার্কাসে জন্ম নেন এবং কলিকাতা শহরে তার শৈশব কাটান। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের দিকে দশ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর প্রায় তিন দশক তিনি ঢাকা শহরে অবস্থান করেন এবং ১৯৭৮ সাল থেকে প্রবাসজীবন শুরু করেন।তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন।
সাহিত্য জীবন
এগারো বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে তিনি ‘পরিক্রমা’ শিরোনােম তার প্রথম কবিতা রচনা করেন যা মহিউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘স্পন্দন’ কাগজে ছাপা হয়েছিল। এরপর ‘জলকন্যার জন্য’ শিরোনামে কবিতা লিখেন, এবং একই কাগজে ছাপতে দেন। এভাবে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে তার কবিতা লেখা চলতে থাকে। পঁচিশ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে ছাপা হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উত্তরাধিকার। এরপর ১৯৭৪ সালে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে রচিত কবিতা নিয়ে ২০০৯ সালে কাব্যগ্রন্থ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও প্রকাশিত হয়।
তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা চারটি এবং এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতার সংখ্যা ১২২টি। পরবর্তীতে তিনি আরও চারটি কবিতা লিখেন যার তিনটি ছাপা হয় কালি ও কলম সাহত্যি পত্রিকায় আর একটি প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায়; এবং সব মিলিয়ে তার কবিতা সংখ্যা ১২৬টি।
গ্রন্থতালিকা
কাব্য
- উত্তরাধিকার (১৯৬৭)
- তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা (১৯৭৪)
- কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮)
- আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও (২০০৯)
সংকলন
- শহীদ কাদরীর কবিতা
- তোমার জন্যে
মৃত্যু
২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সঙ্গতি
– শহীদ কাদরী বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদামাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদাঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচপ্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ইকিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরেশূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরতশাদা ভাত…
কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না
– শহীদ কাদরী একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতোহেলায়-ফেলায় পড়ে থাকেকোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না; কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে…
স্মৃতি : কৈশোরিক
– শহীদ কাদরী অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুনরাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপরযেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনিছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলামঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতরযেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথাজন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরেঅপেমান…
মাংস, মাংস, মাংস…
– শহীদ কাদরী আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপকখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা তবে হাত রাখবো…
বাংলা কবিতার ধারা
– শহীদ কাদরী কে যেন চিৎকার করছে প্রাণপণে `গোলাপ! গোলাপ!’ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে তার সুমসৃণ লালা,`প্রেম, প্রেম’ বলে এক চশমা-পরা চিকণ যুবকসাইকেল-রিকশায় চেপে মাঝরাতে ফিরছে বাড়ীতে,`নীলিমা, নিসর্গ, নারী’- সম্মিলিত মুখের ফেনায়পরস্পর বদলে নিলো স্থানকাল, দিবস শর্বরী হলোসফেদ পদ্মের মতো সূর্য…