__শক্তি চট্টোপাধ্যায় মনে মনে বহুদূর চলে গেছি – যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়জন্মেই হাঁটতে হয়হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতেএকসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারিপথ তো একটা নয় –তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধানদীর…
Tag: শক্তি চট্টোপাধ্যায়
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
জন্ম তারিখ | ২৫ নভেম্বর ১৯৩৪ |
---|---|
জন্মস্থান | জয়নগর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ২৩ মার্চ ১৯৯৫ |
পাবো প্রেম কান পেতে রেখে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে ব’সে আছো, দেবতা আমার ।শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিনসম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে ;সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে ? যেখানে শুইয়ে গেলে ধীরে-ধীরে কত দূরে আজ !স্মারক বাগানখনি গাছ…
দিন যায়
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছেশীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছেঅর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছেশুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়আকাশমনির । ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয়ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলিচন্দ্রমল্লিকার । জয়দেবের মেলা থেকে গান…
চাবি
– শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে এখনো পড়ে আছেতোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবিকেমন করে তোরংগ আজ খোলো? থুতনিপরে তিল তো তোমার আছেএখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?চিঠি তোমায় হঠাত্ লিখতে হলো । চাবি তোমার পরম যত্নে কাছেরেখেছিলাম, আজই সময় হলো –লিখিও,…
কিছু মায়া রয়ে গেলো
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত…জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতেকিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,শুধু এই –কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানোপৃথিবীকে।মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,শুধু এই – ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু।
এবার হয়েছে সন্ধ্যা
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথরপাহাড়ের কোলেআষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলেতোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠিঅন্যায় হবে না – নাও ছুটিবিদেশেই চলোযে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো। শ্রাবনের মেঘ কি মন্থর!তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে জ্বরছলোছলোযে কথা…
এক অসুখে দুজন অন্ধ
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধদীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করেবালিতে আধ-কোমর বন্ধএই আনন্দময় কবরেআজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ । হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিকউজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু…
আমি যাই
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় যেখানেই থাকোএপথে আসতেই হবেছাড়ান্ নেইসম্বল বলতে সেইদিন কয়েকের গল্পঅল্প অল্পইআমি যাইতোমরা পরে এসোঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়েশাক-সবজি বিলিয়েতোমরা এসো
অবনী বাড়ি আছো
– শক্তি চট্টোপাধ্যায় অবনী বাড়ি আছোঅবনী বাড়ি আছোদুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়াকেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া‘অবনী বাড়ি আছো?’ বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাসএখানে মেঘ গাভীর মতো চরেপরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাসদুয়ার চেপে ধরে–‘অবনী বাড়ি আছো?’ আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামীব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমিসহসা শুনি রাতের…
হেমন্ত যেখানে থাকে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় হেমন্ত যেখানে থাকে, সেখানে কৌতুক থাকে গাছেসাড়া থাকে, সচ্ছলতা থাকে।মানুষের মতো নয়, ভেঙে ভেঙে জোড়ার ক্ষমতাগাছেদের কাছে নেইহেমন্ত বার্ধক্য নিতে আসেখসায় শুকনো ডাল, মড়া পাতা, মর্কুটে বাকলএইসব।হেমন্ত দরোজা ভেঙে নিয়ে আসে সবুজ নিশ্বাস…মানুষের মতো নয় রক্তে পিত্তে সৌভাগ্য…
তোমার হাত
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতেএই দেশে বসতি করে শান্তি শান্তি শান্তিতোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতেসফলতার দীর্ঘ সিঁড়ি, তার নিচে ভুল-ভ্রান্তিকিছুই জানতে পারিনি আজ, কাল যা-কিছু আনতেতার মাঝে কি থাকতো মিশে সেই আমাদের ক্লান্তিরদু-জন দু-হাত…
ভয় আমার পিছু নিয়েছে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় জঙ্গলে গিয়েছো তুমি একা একা, জঙ্গলে যেও নাতুমি, মানে তুমি, মানে তুমি, ভুল বৃদ্ধ–ওহে তুমিজঙ্গলে গিয়েছো একা? হারিয়েছো পথ?সর্বস্ব হারিয়ে কোনো অন্নপূর্ণা গাছ ধরে জড়িয়ে কেঁদেছো?পাতা চেয়ে ফুলে চেয়ে রস-আঠা চেয়েদাঁড়িয়েছো? ঠায় গাছ যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে বহুদিন ধরেএকা,…
স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ ধ’রে ক্রমাগতসাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান…শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলিযেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলেযেন তুমি, আলস্যে এলে না কাছে, নিছক সুদূরহয়ে থাকলে নিরাত্মীয় ; কিন্তু কেন? কেন,…
মুহূর্তে শতাব্দী
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ওই বাড়ি, শিরীষের পাতায় আহত…এ-সত্য মৃত্যুর হিম ছোঁয়া দিয়ে তাকেব’লে যাবে, আজই নয়, কিন্তু কাল তোরমসৃণ চূড়াটি ভাঙবো, পলেস্তরা খশাবো পীযূষেভাঙবো, ভেঙে টুকরো করবো ইট কাঠ পাথর প্রতিমাশব্দের…শিরীষ তাই ছুঁয়ে গেলো মহিমা দুপুরেচুল-নাড়া খুশকি যেন, বালক বোকার পচা…
সুখে থাকো
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় চক্রাকারে বসেছি পাঁচজনেমাঠে, পিছনের পর্চে আলোঅন্ধকার সন্ধ্যা নামে বিড়ালের মতো ধীর পায়েতুমি এসে বসেছো আসনে অকস্মাৎ।হঠাৎই পথে ঘুরতে-ঘুরতে কীভাবে এসেছোএকেবারে পাশে,তোমার গায়ের গন্ধ নাকে এসে লাগেবৃদ্ধের রোমাঞ্চ হয়!খুব ভালো আছো?অন্তত এখন, তুমি?তুমি ঠিক আছো?না থাকার মানে হয়বিশেষত যখন…
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো। এতো কালো মেখেছি দু হাতেএতোকাল ধরে!কখনো তোমার ক’রে, তোমাকে ভাবিনি। এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালেচাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালেচিতাকাঠ ডাকে : আয় আয় যেতে পারিযে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে…
বাগানে তার ফুল ফুটেছে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ওইখানে ওই বাগানে তার ফুল ফুটেছে কতোজানতে পারি, ওর মধ্যে কি একটি দেবার মতো?একটি কিম্বা দুটির ইচ্ছে আসতে আমার কাছেতাহার পদলেহন করতে সমস্ত ফুল আছে।সব ফুলই কি গোষ্ঠীগত, সব ফুলই কি চাঁদেরএকটি দুটি আমায় চিনুক, বাদবাকি সব তাঁদেরগাছ…
ছড়ার আমি ছড়ার তুমি
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছড়া এক্কে ছড়া, ছড়া দুগুণে দুইছড়ার বুকের মদ্দিখানে পান্সি পেতে শুই।ধানের ছড়া গানের ছড়া ছড়ার শতেক ভাইছড়ার রাজা রবিন ঠাকুর, আর রাজা মিঠাই।আরেক রাজা রায় সুকুমার, আছেন তো স্মরণে?আর ছড়াকার ঘুমিয়ে আছেন সব শিশুদের মনে।ছড়ার আমি ছড়ার তুমি…
একটি মানুষ
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় একটি মানুষ দেখেছিলাম, দাঁড়িয়েছিলেন একাহঠাৎ পথে দেখা আমার, হঠাৎ পথে দেখাসবাই তাঁকে দেখতে পায় নাসবাই তাঁকে দেখতে পায় নাকিন্তু, তিনি দেখেন–কোথায় তোমার দুঃখ কষ্ট, কোথায় তোমার জ্বালাআমায় বলো, আমারই ডালপালাতোমার এবং তোমার, তুমি যেমন ভাবেই কাটোআমি একটু বৃহৎ,…
পোড়ামাটি
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় দূরে যাওথেকো না এখানেচিরদিন উড়ন্ত শাম্পানেছন্নছাড়াচিঠি তো পুড়েছে একতাড়াআগুনে পুড়েছে শত পাড়া দূরে যাওথেকো না এখানেদূরে যাওথেকো না এখানেকাকে পাও?
ভাত নেই, পাথর রয়েছে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় বছর-বিয়োনী মেঘ বৃষ্টি দেয়, বজ্রপাত দেয়–ডোবা’র রহস্য বাড়ে, পদ্মপাতা দীঘিতে তছনছ।শিকড়, কেঁচোর মত, জীবনের অনুগ্রহ পায়,পায় না মাথায় ছাতা, এত হাতা ভাতের মানুষও! মানুষ বারুদ খুবই ভালোবাসে, ধূপগন্ধ যেন আকাশপিদ্দিম গেঁথে মন্ত্রী যায় সানাই বাজাতে,পুলিস-মেথর যায় ঝাঁটা হাতে…
বিবাদ
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ভালোবাসা নিয়ে কত বিবাদ করেছো! এখন, টেবিল জোড়া নিবন্ত লণ্ঠনওসহনীয়।অনুভূতি। সবজির মতনবিকোয় না হাটে।হাত কাটে,না রক্ত পড়ে না।বিভীষিকা!দুচোখের পক্ষেও নড়ে না।প্রজড় পিণ্ডের মতো আছো–আজইবিবাদ করেছো।ভালোবাসা নিয়ে কিছু বিবাদ করেছো,কাতর পাথর মিছু বিবাদ করেছো!
প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় বার বার নষ্ট হয়ে যাইপ্রভু, তুমি আমাকে পবিত্রকরো, যাতে লোকে খাঁচাটাইকেনে, প্রভু নষ্ট হয়ে যাইবার বার নষ্ট হয়ে যাইএকবার আমাকে পবিত্রকরো প্রভু, যদি বাঁচাটাইমুখ্য, প্রভু, নষ্ট হয়ে যাই!
আতাচোরা
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় আতাচোরা পাখিরেকোন তুলিতে আঁকি রেহলুদ ?বাঁশ বাগানে যাইনেফুল তুলিতে পাইনেকলুদহলুদ বনের কলুদ ফুলবটের শিরা জবার মূলপাইতেদুধের পাহাড় কুলের বনপেরিয়ে গিরি গোবর্ধননাইতেঝুমরি তিলাইয়ার কাছেযে নদিটি থমকে আছেতাইতেআতাচোরা পাখিরেকোন তুলিতে আঁকি রে—হলুদ ?
তুচ্ছ, তুচ্ছ এইসব
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় তুচ্ছ এইসব–এই জানালা কপাট গোরস্থানতুচ্ছ, তুচ্ছ এইসব, ভালোবাসা, ভালো-মন্দে বাসাতুচ্ছ, তুচ্ছ, এইসব জানালা কপাট গোরস্থান… তারপর, কে আছো মন্দিরে?মন্দিরে ভিতে কি ফড়িং?ভালোবাসা মানে এক হিমঅন্ধকার খুঁজে নিয়ে পুঁতে ফেলা অশ্লীল ডালিম তারপর, কে আছো মন্দিরে?আমি যাই ভিত্তি খুঁড়ে…
একবার তুমি
– শক্তি চট্টোপাধ্যায় একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা কর–দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছেপাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জলনীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীলএকবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা কর । বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল–ধ্বনি দিলে…
আপন মনে
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমার ভিতর ঘর করেছে লক্ষ জনায়–এবং আমায় পর করেছে লক্ষ জনেএখন আমার একটি ইচ্ছে, তার বেশি নয়স্বস্তিতে আজ থাকতে দে না আপন মনে। লক্ষ জনে আমার ভিতর ঘর করেছে, লক্ষ জনে পর করেছে।আমার একটি ইচ্ছা, স্বগতোক্তির মতো–আপন মনে…
ছিন্নবিচ্ছিন্ন
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় তুমুল বৃষ্টিতে সব পাতা ভিজে গেলোএখনই শুকাতে হবে রোদ্দুর কোথায়?তিজেলে চড়াতে হবে অন্ন, তা কোথায়?মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে শুকাতেও জানে।এই অন্ন, পাতা-পত্র, এর অন্য মানে।
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন – ০১
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছোট্ট হয়েই আছেআমার, না হয় তোমার, না হয় তাহার বুকের কাছেদুঃখ নিবিড় একটি ফোঁটায় – দুঃখ চোখের জলেদুঃখ থাকে ভিখারিনীর একমুঠি সম্বলে।ছোট্ট হয়েই আছেএকের, না হয় বহুর, না হয় ভিড়ের বুকের কাছে।একটি ঝিনুক তাকেজন্ম থেকেই, একটু-আধটু, বাইরে ফেলে…
সেই হাত
__শক্তি চট্টোপাধ্যায় অভিনব দুটি হাতে দেয়াল দরোজা খুলে দাও।ততক্ষণে রোদ্দুর পৌচেছেগোটারাত ঘুরে ঘুরে রোদ্দুর পৌঁচেছেঘরে।কিছুটা নড়বড়েছিলো ঘর।এককোণে পাথরতেমন সন্তুষ্ট নয়, ‘দখল দখল শব্দ করে।দাবি তার ঘরটি ভরাবেমানুষের মাথায় চড়াবেতার ভার।আরযদি পারেগিলে খাবে মানুষের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচাঅন্ধকারে!তা কি হয়?রোদ্দুরের ফুল ফোটেঘরে…