– মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন। তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥ ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক। মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’
Tag: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগের বাঙালি কবি। ধারণা করা হয় তার জন্ম ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে। তার বিখ্যাত কাব্য চণ্ডীমঙ্গলকাব্য প্রাচীন পাঁচালী রচনার মধ্যে শ্রেষ্ঠ । এর রচনাকাল ১৫৪৪ খ্রীস্টাব্দের কাছাকাছি সময় বলে বিবেচনা করা হয়।
জন্ম ও বংশবৃত্তান্ত
মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর (আনুমানিক ১৫৪০-১৬৬০) পিতা হৃদয় মিশ্র এবং মাতা দৈবকী। তার পৈতৃক নিবাস বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে। ডিহিদার মামুদ শরিফের অত্যচারে উৎখাত হয়ে আনুমানিক ১৫৭৫ খ্রিষ্ট্রাব্দে মুকুুন্দরাম পৈতৃক নিবাস ত্যাগ করে মেদিনীপুর জেলার আড়রা গ্রামে আশ্রয় নেন,সে খানে গ্রাম্য জমিদার বাঁঁকুড়া রায়ের দ্বারস্থ হন।
খ্যাতি
তিনি রাজা রঘুনাথের সমসাময়িক ছিলেন। মুকুন্দরাম তার চন্ডীমঙ্গল কাব্যের নামকরণ করেন অভয়ামঙ্গল ও অন্বিকামঙ্গল । গণজীবনের করুণ চিত্র তার কাব্যে তুলে ধরেন। কবির প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ রাজা রঘুনাথ তাকে কবি কঙ্কণ উপাধি প্রদান করেন। তার পূর্ণ নাম হচ্ছে কবি কঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তবে এই রচনাকে কেউ কেউ ‘ কবিকঙ্কণ চন্ডী’ও বলেছেন। ‘কবিকঙ্কণ’ কথার মানে যে কবি হাতে অথবা পায়ে ঘুঙুর পরে গান করতেন। অর্থাৎ মঙ্গলকাব্যের পেশাদার গায়ক।
মুকুন্দরামের কাব্যের সমালোচনা
তিনি তার কাব্যে উপন্যাসের বীজ বপন করেছেন। আধুনিক যুগের সাহিত্য সমালোচকগণ তার সম্পর্কে বলেছেন – ‘ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী মধ্যযুগে জন্মগ্রহণ না করে আধুনিক যুগে জন্মগ্রহণ করলে কাব্য না লিখে উপন্যাস লিখতেন’। যদি এমন কোন গ্রন্থের নাম করতে হয় যাতে আধুনিক কালের, উপন্যাসের,রস কিছু পরিমাণে মেলে যেমন- নিপুণ পর্যবেক্ষণ, সহৃদয়তা, জীবনে আস্থা, ব্যাপক অভিজ্ঞতা সবই যথোচিত পরিমাণে বর্তমান। মুকুন্দরাম শুদ্ধাচারী বামুন-পণ্ডিতঘরের ছেলে, আজন্ম দেববিগ্রহ সেবক। কিন্তু তার সহানুভূতি থেকে কেউই বঞ্চিত হয়নি – না বনের তুচ্ছতম পশু, না জনপদের দুর্গততম মানুষ। সংস্কৃত অলঙ্কার প্রয়োগের পাশাপাশি লোক-ব্যবহার, ছেলে-ভোলানো, ছেলেখেলা, মেয়েলি ক্রিয়া-কান্ড, ঘরকন্নার ব্যবস্থা, রান্না-বাড়া ইত্যাদি অনপেক্ষিত সামাজিক ও সাংসারিক ব্যাপারেও বিস্ময়কর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।
কালকেতুর ভোজন
– মুকুন্দরাম চক্রবর্তী দূর হৈতে ফুল্লরা বীরের পাল্য সাড়া |সম্ভ্রমে বসিতে দিল হরিণের ছড়া ||বোঁচা নারিকেলের পুরিয়া দিল জল |করিল ফুল্লরা তবে ভোজনের স্থল |চরণ পাখালি বীর জল দিল মুখে |ভোজন করিতে বৈসে মনের কৌতুকে ||সম্ভ্রমে ফুল্লরা পাতে মাটিয়া পাথরা…