__মহাদেব সাহা সব তো আমারই স্বপ্ন মাথার উপরে এই যে কখনোউঠে আসে মরমী আকাশ কিংবা স্মৃতি ভারাতুর চাঁদমেলে ধরে রূপকাহিনীর গাঢ় পাতা। কোনো এককিশোর রাখাল কী করে একদা দেখা পেয়ে গেলোসেই রাজকুমারীর আর পরস্পর ভাসালো গন্ডোলা।সেও তো আমারই স্বপ্ন রূপময়…
Tag: মহাদেব সাহা
মহাদেব সাহা
মহাদেব সাহা (জন্ম: ৫ আগস্ট ১৯৪৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের একজন অন্যতম প্রধান কবি। তিনি তার সাহিত্যিক অবদান দিয়ে সব ধরনের পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তিনি রোম্যান্টিক গীতিকবিতার জন্য জনপ্রিয়। তার কবিতা অপরিশ্রুত আবেগের ঘনীভূত প্রকাশে তীব্র। তিনি জীবিকাসূত্রে একজন সাংবাদিক ছিলেন, এবং দীর্ঘকাল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ থেকে তিনি কানাডা প্রবাসী।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
মহাদেব সাহা ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রামে পৈতৃক বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী সাহা। সাহিত্যানুরাগী পিতা গদাধর সাহার বাড়িতে আসত মাসিক বসুমতী সংবাদ, দৈনিক লোকসেবক, বাই উইকলি অমৃতবাজার পত্রিকা। কলকাতা থেকে আনা হতো পিএম. বাগচী ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা।
শিক্ষা জীবন
মহাদেব সাহা বগুড়ার ধুনট হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। উচ্চমাধ্যমিকে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি আজিজুল হক কলেজে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে অনার্স শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে অনার্স পাস করে রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএ পাসের পর তিনি কিছুদিন ইংরেজি বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত হন কিন্তু কবিতা লেখার অদম্য আগ্রহ তাকে গবেষণা শেষ করার আগেই ঢাকায় নিয়ে যায়। তিনি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের সহায়তায় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় যোগদান করেন।
কর্ম জীবন
সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালে মহাদেব সাহার কর্মজীবন শুরু হয়। জীবনব্যাপী তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্য কর্ম
তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯৩ টি।
কাব্যগ্রন্থ
- এই গৃহ এই সন্ন্যাস (১৯৭২)
- মানব এসেছি কাছে (১৯৭৩)
- চাই বিষ অমরতা (১৯৭৫)
- কী সুন্দর অন্ধ (১৯৭৮)
- তোমার পায়ের শব্দ (১৯৮২)
- ধুলোমাটির মানুষ (১৯৮২)
- ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস (১৯৮৪)
- লাজুক লিরিক (১৯৮৪)
- আমি ছিন্নভিন্ন (১৯৮৬)
- মানুষ বড়ো ক্রন্দন জানে না (১৯৮৯)
- প্রথম পয়ার ১৯৯০
- কোথা সেই প্রেম, কোথা সে বিদ্রোহ ১৯৯০
- অস্তমিত কালের গৌরব ১৯৯২
- আমূল বদলে দাও আমার জীবন ১৯৯৩
- একা হয়ে যাও ১৯৯৩
- যদুবংশ ধ্বংসের আগে ১৯৯৪
- কোথায় যাই, কার কাছে যাই ১৯৯৪
- সুন্দরের হাতে আজ হাতকড়া, গোলাপের বিরুদ্ধে হুলিয়া ১৯৯৫
- এসো তুমি পুরাণের পাখি ১৯৯৫
- বেঁচে আছি স্বপ্নমানুষ ১৯৯৫
- বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই ১৯৯৬
- তোমার জন্য অন্ত্যমিল ১৯৯৬
- আকাশের আদ্যোপান্ত ১৯৯৬
- ভুলি নাই তোমাকে রুমাল ১৯৯৬
- তুমিই অনন্ত উৎস ১৯৯৬
- কেউ ভালোবাসে না ১৯৯৭
- কাকে এই মনের কথা বলি ১৯৯৭
- অন্তহীন নৃত্যের মহড়া ১৯৯৭
- একবার নিজের কাছে যাই ১৯৯৭
- পাতার ঘোমটা-পরা বাড়ি ১৯৯৭
- মন কেন কাঁদে ১৯৯৮
- এ বড়ো আনন্দ এ বড়ো বেদনা ১৯৯৮
- স্বপ্নে অাঁকি সুন্দরের মুখ ১৯৯৮
- ভালোবাসি হে বিরহী বাঁশি ১৯৯৮
- বহুদিন ভালোবাসাহীন ১৯৯৮
- কে তুমি বিষণ্ন ফুল ১৯৯৯
- অপরূপ অশ্রুজল ১৯৯৯
- কোনোখানে কোনো একদিন ১৯৯৯
- কেন সুন্দর ব্যথিত এতো ১৯৯৯
- ভালোবেসে ছুঁয়েছি আকাশ ১৯৯৯
- অনেক দিনের বিষাদ আছে মনে ২০০০
- সব দুঃখ ভুলে যাই প্রেমের গৌরবে ২০০০
- ভালোবাসা, প্রিয় ঝরাপাতা ২০০০
- কেন মোহে, কেনবা বিরহে ২০০০
- শূন্যতা আমার সঙ্গী ২০০০
- আমার ভিতরে যতো অন্ধকার, আমার ভিতরে যতো আলো ২০০১
- তবু স্বপ্ন দেখি ২০০১
- সোনালি ডানার মেঘ ২০০১
- পৃথিবী, তোমাকে আমি ভালোবাসি ২০০১
- কে পেয়েছে সব সুখ, সবটুকু মধু ২০০১
- শুকনো পাতার স্বপ্নগাঁথা ২০০৩
- দুঃসময়ের সঙ্গে হেঁটে যাই ২০০৩
- দুঃখ কোনও শেষ কথা নয় ২০০৪
- ভালোবাসা কেন এতো আলো অন্ধকারময় ২০০৫
- লাজুক লিরিক-২ ২০০৬
- দূর বংশীধ্বনি ২০০৬
- অর্ধেক ডুবেছি প্রেমে, অর্ধেক বিরহে ২০০৭
- কালো মেঘের ওপারে পূর্ণিমা ২০০৮
- সন্ধ্যার লিরিক ২০০৮
- অন্ধের আঙুলে এতো জাদু ২০০৯
- অক্ষরে বোনা স্বপ্ন ২০০৯
- আদম হাওয়ার অশ্রুবিন্দু ২০১১
- মাটির মলাট ২০১১
কবিতা সংকলন
- মহাদেব সাহার রাজনৈতিক কবিতা
- মহাদেব সাহার প্রেমের কবিতা
- মহাদেব সাহার শ্রেষ্ঠ কবিতা
- প্রেম ও ভালবাসার কবিতা
- নির্বাচিত ১০০ কবিতা
- প্রকৃতি ও প্রেমের কবিতা
- মহাদেব সাহার কাব্যসমগ্র [১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম খণ্ড]
প্রবন্ধ
- গরিমাহীন গদ্য ২০০৯
- আনন্দের মৃত্যু নেই ২০১১
- মহাদেব সাহার কলাম
- কবির দেশ ও অন্যান্য ভাবনা ২০১১
- ভাবনার ভিন্নতা ২০১১
- মহাদেব সাহার নির্বাচিত কলাম
শিশুসাহিত্য
- টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর
- ছবি আঁকা পাখির পাখা
- আকাশে ওড়া মাটির ঘোড়া
- সরষে ফুলের নদী
- ”আকাশে সোনার থালা
- মহাদেব সাহার কিশোর কবিতা (সংকলন)
পুরস্কার ও সম্মাননা
মহাদেব সাহা তার কাব্য প্রতিভার জন্য অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মননার মধ্যে ১৯৯৫ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার, ২০০২ সালে খালেকদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার অন্যতম।২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস
__মহাদেব সাহা কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাসনিয়ে বেড়ায়-কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস যেন একখানিঅন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!পাতায় পাতায় চোখের জল সেখানে লিপিবদ্ধআর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট;মানুষের বুকে…
ভালোবাসা আমি তোমার জন্য
__মহাদেব সাহা ভালোবাসা আমি তোমাকে নিয়েইসবচেয়ে বেশি বিব্রত আজতেমাকে নিয়েই এমন আহতএতো অপরাধী, এতো অসহায়!তোমাকে নিয়েই পালিয়ে বেড়াইতোমাকে নিয়েই ব্যাকুল ফেরারী।ভালোবাসা তুমি ফুল হলে তারফুলদানি পেতে অভাব ছিলো না,মেঘ হলে তুমি সুদূর নীলিমাতোমাকে দিতাম উড়ে বেড়াবার;জল হলে তুমি সমুদ্র ছিলোতোমারই…
ভালোবাসা
__মহাদেব সাহা ভালোবাসা তুমি এমনি সুদূরস্বপ্নের চে’ও দূরে,সুনীল সাগরে তোমাকে পাবে নাআকাশে ক্লান্ত উড়ে!ভালোবাসা তুমি এমনি উধাওএমনি কি অগোচরতোমার ঠিকানা মানচিত্রেরউড়ন্ত ডাকঘরসেও কি জানে না? এমনি নিখোঁজএমনি নিরুদ্দেশপাবে না তোমাকে মেধা ও মননকিংবা অভিনিবেশ?তুমি কি তাহলে অদৃশ্য এতোএতোই লোকোত্তর,সব প্রশ্নের…
ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই
__মহাদেব সাহা ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই চেয়ে দেখোআমার ভিতরে কোথায় নেমেছে ধস,কোথায় নেমেছে ঘোর কালো!দেখো আমার ভেতরে এখন প্রবল গ্রীষ্মকালখরা আর খাদ্যের অভাব; ভালো করে চেয়ে দেখোআমার ভিতরে সমস্ত কেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন, ভগ্ন ও ব্যথিতঠিক যে আঁধার তাও নয়…
বেশিদিন থাকবো না আর
__মহাদেব সাহা বেশিদিন থাকবো না আর চলে যাবো গোলাপেরগাঢ় গিঁট খুলেচলে যাবো পিঁড়ির গহন স্নেহ ভেঙে, চলে যাবে,অনেক বসেছিবেশি তো থাকবো না আর চলে যাবো মেঘ রেখে,মমতাও রেখেমন্ময় কাঁথাটি রেখে চলে যাবো বেশি দেরি নেই!কুশন ও কার্পেটের নিবিড় গোধূলি ফেলে…
তোমার বর্ণনা
__মহাদেব সাহা তোমাকে বিশদ ব্যাখ্যা করবো কি বর্ণনায়ই বুঝেছি অক্ষমনাই সে কিঞ্চিৎ ভাষাজ্ঞান, মাত্রাবোধ এমনকি শব্দেরওশৃঙ্খলাসে-বিদ্যা আয়ত্তে নাই অনায়াসে পাঠ করি তোমার চিবুককিংবা ধরো প্রসিদ্ধ নগর দেখে দেয় কেউ যে-রকম গাঢ়বিবরণ,দর্শনীয় বস্তু আর সুপ্রাচীন স্থানের তালিকা, সে-রকমতোমার বিশদ ব্যাখ্যা জানি…
তোমার দূরত্ব
__মহাদেব সাহা তোমার ভালোবাসার দূরত্বের চেয়ে এমন আর কিদূরত্ব আছে আমার, এমন আর কিমাইল মাইল দূরত্ব সে তো একখানি মাত্র টিকিটের ব্যবধানতারপরই উষ্ণ অভর্থ্যনা, তোমার আঁচলে ঘাম মুছে ফেলা।সে-কথা জানি বলেই তো তোমার ভালোবাসার দূরত্বকেইকেবল বলি বিচ্ছেদ।না হলে যতো দূরেই…
কোনো তরুণ প্রেমিকের প্রতি
__মহাদেব সাহা তরুণ প্রেমিক তুমি তো জানো না তোমার উতল আলুথালু প্রেমএকদিন ছিলো আমারই আকাশে উদাসীন মেঘ, মাতাল নৌকা-সারারাত বেয়ে জ্যোৎস্নার খেয়া ভোরবেলা হাতে ব্যর্থ কুয়াশাতুমি তো জানো না এসব কাহিনী ঝরে গেছে কতো যামিনীর চাঁদ,তবু যে প্রেমিক আজো খুঁজে…
কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই
__মহাদেব সাহা তোমার দুঃখের সাতমহল বাড়ির পুরনো বাসিন্দা বলেইআমি হৈচৈ শামিয়ানার নিচে যাই না,ভালোবাসার জন্য ব্যাকুলতা আছে বলেই তোরঙিন কুয়াশা কুড়াতে যাই না কোথাও-ঝরা বকুলের জন্য ব্যাকুল হয়েছি বহুবার কিন্তু বিদেশীখেলনার দিকে ছুটিনিনক্ষত্রপুঞ্জকে ডলার ভেবেছি বলেই আমি বসে আছি এমনতোমার…
কোথাও পাই না দেখা
__মহাদেব সাহা কেবল তোমারই দেখা পাই না কোথাও। যেন তুমিঅদৃশ্য অলীক কিছু; স্বপ্নও জানে না কোনো খোঁজতারও রুপালি পর্দায় কখনো ওঠে না ভেসে তোমার ইমেজতুমি আছো এতোদূরে স্পর্শগন্ধহীন স্বপ্নেরাও সূক্ষ্ম অগোচরেকেবল তোমারই দেখা পাই না এখন। জনারণ্যে এভেন্যুরউদ্দীপনাময় ভিড়ে কোথাও…
আমার সমুদ্র দেখা, আমার পাহাড় দেখা
__মহাদেব সাহা আমার কোনোদিন সমুদ্রদর্শন হয়নি, পাহাড় দেখাও নাকেন যে সমুদ্র বা পাহাড় আমাকে এমন বিমুখ করেছেসমুদ্র আমাকে দর্শন দেননি কখনোপাহাড় আমাকে সান্নিধ্য,বাল্টিকের তীরে দাঁড়িয়ে আমি যেমন ধু-ধু জলরাশি ছাড়াকোনো সমুদ্রই দেখতে পাইনি আরতেমনি ময়নামতির পাহাড়েও প্রস্তরীভুত নিস্তব্ধতা,এই আমার পাহাড়…
অসুস্থতা আমার নির্জন শিল্প
__মহাদেব সাহা অসুস্থতা আমার নির্জন শিল্প, আমি তাকেদুঃখভরা নকশীকাঁথার মতো আমার শরীরেকরেছি সেলাই,বড়োই যাতনাময় তবু তার নিবিড় সান্নিধ্যে থেকে আমিবুঝেছি কেমন এই প্রবাহিত তোমাদের অটুট জীবনচারধারে, কেমন সুস্থতাতার মাঝে ক্রমাগত অন্তঃসারশূন্যতার কী গভীর ধস ও ফাটল!অসুস্থতা আমার নির্জন শিল্প তার…
যেতে যেতে অরণ্যকে বলি
__মহাদেব সাহা এমনও অরণ্য তাকে উদ্দাম মর্মর মূর্তি ধরে নেয়া যায়,বাতাসের অতি দম্ভ বৃক্ষের সমান উঁচু মেঘ, আরো উঁচুঅরণ্যের সীমাএও শুধু অরণ্যেরই শোভা পায় এতো উঁচু এমন বিশালতাই তো মর্মরমূর্তি অরণ্যকে নিঃশব্দ প্রস্তর বলে ভ্রম হয়, মনে হয়এ নৈঃশব্দ্য প্রস্তরেরই…
তোমরা কেমন আছো
__মহাদেব সাহা তোমরা কেমন আছো হে আমার গভীর রাতের আহত করিয়াতোমরা কেমন আছোকেমন আছো আমার ফেলে আসা কবিতা তুমি কেমন আছো, কেমনআছো তোমরা সুখ দুঃখ, তোমরা তোমরা?আমি বহুদিন তোমাদের ফেলে এসেছি, মধ্যরাতের চাঁদ তোমাদেরতোমরা কেমন আছো, সবাই কেমন আছো, তোমরা…
তুমি
__মহাদেব সাহা তোমাকেই আজো মনে মনে করি উপাসনা ভাবি স্মরণযোগ্যবহু বেদনায় বহু ব্যবধানে তোমাকেই আজো অসময়ে খুঁজি,তুমি ছাড়া কোনো স্মরণযোগ্য নারী নেই আর নাম নেই আরতোমার প্রতিভা এই শতাব্দী তারও বেশিকাল পাবে প্রাধান্যআমাদের ঢের বয়সের বেশি তবু আমাদের বয়সের চেয়ে…
তাকেই বলি প্রকৃতি
__মহাদেব সাহা ভিতর থেকে হয়ে উঠছে তাকেই বলি প্রকৃতি। বাইরে মেঘবৃষ্টিঝড়ো হাওয়াকেমন শিশুর হাতে কাদামাটিতে গড়া, তার কোনো গ্রহস্ত চেহারা সেইতারই এক ডাকে কেন আমি এমন ঘর ছেড়ে আসবো!আমি এখনো মাঝে মাঝেই তৃষ্ণার্ত, নদীর কাছে করুণা চাইতে যাই,ব্যথিত আমি পাহাড়ের…
আমার হাতে দুঃখ পাচ্ছো
__মহাদেব সাহা আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, আঘাত দেওয়ারকথা ছিলো না, কথা ছিলো না, কথা ছিলো না,তোমাকে আমার আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, গোলাপ তোমারখুনখারাবি, হত্যাকাণ্ড এসব আমার একটু সয় নাগোলাপ তোমায় আঘাত দেওয়ার নিষ্ঠুরতা ঠিকই আমি করতেচাইনিআমি…
আমার হাতে দুঃখ পাচ্ছো
__মহাদেব সাহা আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, আঘাত দেওয়ারকথা ছিলো না, কথা ছিলো না, কথা ছিলো না,তোমাকে আমার আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, গোলাপ তোমারখুনখারাবি, হত্যাকাণ্ড এসব আমার একটু সয় নাগোলাপ তোমায় আঘাত দেওয়ার নিষ্ঠুরতা ঠিকই আমি করতেচাইনিআমি…
চিঠি দিও
– মহাদেব সাহা করুণা করে হলে চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিওআঙুলের মিহিন সেলাইভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতোঅক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাওসমুদ্র…
একেক সময় মানুষ এতো অসহায়
__মহাদেব সাহা এই মানুষকে ছাড়া আর কাউকে কখনো আমিএতো অসহায় হয়েছে দেখিনিশীতে ভিজে প্রাণিকুল, পাখিরাও কাঁপেকিন্তু মনস্তাপে শুধু জ্বলে ভগবান, তোমার মানুষ!আর কেউ কখনো এমন গভীর কুয়াশা পিঠে চেপেএকা ঘরে ফেরে নাই মানুষের মতো!কিংবা তাদের বেদনা আমি কতোখানি জানি, এই…
বন্ধুর জন্য বিজ্ঞাপন
__মহাদেব সাহা আমি একটি বন্ধু খুঁজছিলাম যে আমারপিতৃশোক ভাগ করে নেবে, নেবেআমার ফুসফূস থেকে দুষিত বাতাস ;বেড়ে গেলে শহরময় শীতের প্রকোপতার মুখ মনে হবে সবুজ চয়ের প্যাকেট, এখানেওখানে দেখা দিলে সংক্রামক রোগ,ক্ষয়কাশ উইয়ে-খাওয়া কারেন্সি নোটের মতো আমার ফুসফুসটিকেতীক্ষ্ণ দাঁতে ছিদ্র…
তোমাকে ছাড়া
__মহাদেব সাহা তুমি যখন আমার কাছে ছিলেতখন গাছের কাছে গেলে আমার ভীষণ আনন্দ বোধ হতোলতাপাতার উৎসাহ দেখে আমি সারাদিন তার কাছে ঘুরে বেড়াতামকোনো কোনো দেন পাখিদেরবাষভূমিতে আমার অনেক উপাখ্যান শোনা হতোতুমি যখন আমার কাছে ছিলেতখন প্রত্যহ সূর্যোদয় দেখতে যেতাম তোমাদের…
স্পর্শ
__মহাদেব সাহা তোমার শরীরে হাত আকাশ নীলিমা স্পর্শ করেভূমণ্ডল ছেয়ে যায় মধ্যরাতে বৃষ্টির মতনমুহূর্তে মিলায় দুঃখ, দুঃখ আমাকে মিলায়জলের অতল থেকে জেগে ওঠে মগ্ন চরাচরদেশ হয় দেশ, নদী হয় পূনর্বার নদীনৈঃশব্দ্য নিরুণ হাতে করতালি দেয়নিসর্গ উন্মুক্ত করে সারাদেহে নগ্ন শরীরকোন…
মানুষের মধ্যে কিছু অভিমান থাকে
__মহাদেব সাহা সব মানুষেরই মধ্যে কিছু অভিমান থাকে,এইটুকু থাক, এইটুকু থাকা ভালোএই অভিমান জমে জমে মানুষের বুকে হবে নক্ষত্রের জল।মমতা মমতা বলো অভিমান তারই তো আকারতারই সে চোখের আঠালো টিপ, জড়োয়া কাতান,মমতা মমতা বলো অভিমান তারই একনামএকদিন অভিমান জমে জমেসব…
ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রীষ্মকালে
__মহাদেব সাহা ভালোবাসা মরে গেছে গত গ্রীষ্মকালেউদ্যত বাহুর চাপে, ধুলোমাটি কাদা লেগে গায়েশীতেতাপে ঝরে গেছে তার বর্ণ, মেধাস্পর্শ করে আশি এই প্রেমহীন নারীর শরীরমৃত চুল, উত্তাপবিহীন কিছু বয়সের ধুলো,নীলাঞ্জনশোভিত নারীর মুখফিকে থির পলকবিহীনদুই চোখ খেয়ে গেছে পৌষের দুই বুড়ো কাকতাহাকেই…
মানুষের সাথে থাকো
__মহাদেব সাহা যতোই ব্যথিত হও মানুষের সান্নিধ্য ছেড়ো নামানুষের সাথে থাকো সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে,যতোই আঘাত পাও মানুষকে কিছুতে ছেড়ো নাযখন কিচুই নেই মনে রেখো,তখনো সর্বশেষ আশা এই মানুষ;সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও তোমার পাশে এসে মানুষইদাঁড়াবেফুল যখন ফুটবে না,…
মানুষ সহজে ভুলে যায়
__মহাদেব সাহা মানুষ সহজে ভুলে যায়, আমি ভুলতে পারি নাএখনো শিশির দেখে অশ্রুভেজা চোখ মনে পড়ে,সবুজ অরণ্য দেখে মনে পড়ে স্নেহের আঁচলভোরের শিউলি দেখে শৈশবের স্মৃতি চোখে ভাসে।মানুষের মতো আমি এতো বেশি স্বাভাবিক নইআমার নিশ্বয় কিছু স্নেহমায়া, পিছুটান আছে,শোকদুঃখ, ভালোবাসা…
আমি যখন বলি ভালোবাসি
__মহাদেব সাহা আমি যখন বলি ভালোবাসি তখন শুদ্ধ হয় জীবনতখন ভাঙা ঘর আবার জোড়া লাগে,শিশুদের কচি মুখের ঘ্রাণে বাতাস ভরে যায়হলুদ চোখ সব সবুজ দেখতে শুরু করেনদীতীরে জেগে ওঠে নতুন চর;খরাশেষে বৃষ্টি নামে, আমি যখন বলি ভালোবাসি।আমি যখন বলি ভালোবাসি…
বর্ষার কবিতা, প্রেমের কবিতা
__মহাদেব সাহা বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি।শুনাই দুজনে বিদ্যাপতির বিষণ্ন পদাবলী,বর্ষার কথা থাক, বকুলের কথা বলি।ঝরা বকুলেই ভরে রাখি এই প্রশস্ত অঞ্জলি।আকাশের কথা থাক, হৃদয়ের কথা শুনি।যদিও বিরহ তবু মিলনের স্বপ্নজালই বুনি,অশ্রুর কথা থাক, আবেগের কথা শুনি-সহস্র রাত কেটে…