– বিনয় মজুমদার আর যদি নাই আসো,ফুটন্ত জলের নভোচারীবাষ্পের সহিত যদি বাতাসের মতো না-ই মেশো,সেও এক অভিজ্ঞতা ; অগণন কুসুমের দেশেনীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতোতোমার অভাব বুঝি ; কে জানে হয়তো অবশেষেবিগলিত হতে পারো ; আশ্চর্য দর্শনবহু আছেনিজের চুলের…
Tag: বিনয় মজুমদার
বিনয় মজুমদার
বিনয় মজুমদার বা মংটু (জন্ম : ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪- মৃত্যু : ১১ ডিসেম্বর, ২০০৬) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও ইঞ্জিনিয়ার।
জীবনী
কবি বিনয় মজুমদার মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বিপিনবিহারী মজুমদার, মায়ের নাম বিনোদিনী। তারা ছিলেন ছয় ভাই-বোন এবং তিনি ছিলেন সবার ছোট। তার ডাক নাম মংটু। “ফিরে এসো চাকা” ছিল তার অতি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ।
শিক্ষা জীবন
১৯৪২ সালে তাকে বাংলাদেশের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তাকে বৌলতলী উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় তারা সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন। এখানে, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে ক্রিক রো-রতে অবস্থিত মেট্রপলিটন ইনস্টিটিউট (বউবাজার ব্রাঞ্চ)-এ নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবার পরে, ১৯৫১ সালে আইএসসি (গণিত) পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে পাশ করেন। শোনা যায়, তার পাওয়া নম্বর আজও কেউ নাকি ভাঙতে পারেন নি। ১৯৫৭ সালে শিবপুর বি.ই.কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন সমাপ্ত হবার কয়েকমাস পরেই এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয় “অতীতের পৃথিবী” নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। এই বছরেই গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘নক্ষত্রের আলোয়’। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত রুশ ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করে কিছু রুশ সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।
কর্মজীবন
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর চাকরি করেছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
কবি জীবন
বৌলতলি হাই-ইংলিশ স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে অল্পকিছুদিন শিক্ষকতা করার পর স্থির করেন শুধুই কবিতা লিখবেন। লেখা শুরু করেন ‘ফিরে এসো চাকা’। এই সময় তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টেও কিছুদিন কাজ করেন। তখন থেকেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন ‘আঘ্রানের অনুভূতিমালা’ ও ‘ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ’। বিশটি কাছাকাছি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। যার মধ্যে “ফিরে এসো চাকা” তাকে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি দিয়েছে। এছাড়াও নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, অধিকন্তু,ঈশ্বরীর,বাল্মীকির কবিতা, আমাদের বাগানে, আমি এই সভায়, এক পংক্তির কবিতা, আমাকেও মনে রেখো-ইত্যাদি রচনা করেছিলেন। রহস্যময়তা, প্রতীকের সন্ধান, জড় ও প্রাণের সম্পর্কে ব্যাখ্যা ছিল তার কবিতার মর্মবস্তু। এরসাথে মৌলিক প্রতিমা নির্মাণ,বিশিষ্ট অন্বয় এবং ভাবের ও আবেগের তীব্রতা নিবিড়তা স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।১৯৬২-৬৩ সালে বিনয় মজুমদার হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন এবং তার কয়েকটি কবিতা হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে, অর্থাৎ ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করে কলকাতা কফিহাউসে বিলি করার পর হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন।
কাব্যগ্রন্থ সমূহ
- নক্ষত্রের আলোয় (১৯৫৮)
- গায়ত্রীকে (১৯৬১)
- ফিরে এসো চাকা (১৯৬২)
- ঈশ্বরীর (১৯৬৪)
- অধিকন্তু (১৯৭২)
- অঘ্রাণের অনুভূতিমালা (১৯৭৪)
- বাল্মীকির কবিতা (১৯৭৬)
- শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮২)
- আমাদের বাগানে (১৯৮৫)
- আমি এই সভায় (১৯৮৫)
- এক পঙক্তির কবিতা (১৯৮৮)
- কাব্যসমগ্র (১ম) (১৯৯৩)
- আমাদের মনে রেখো (১৯৯৫)
- আমিই গণিতের শূন্য (১৯৯৬)
- স্বনির্বাচিত ১৬ (১৯৯৭)
- এখন দ্বিতীয় শৈশবে (১৯৯৯)
- কবিতা বুঝিনি আমি (২০০১)
- কাব্যসমগ্র (২য়) [২০০২]
- হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ (২০০৩, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত গ্রন্থ-২০০৫)
- সমান সমগ্র সীমাহীন (২০০৪)
- শিমুলপুরে লেখা কবিতা (২০০৫)
- পৃথিবীর মানচিত্র (২০০৬)
- বিনোদিনী কুঠী (২০০৬)
- একা একা কথা বলি (২০০৬)
- নির্বাচিত কবিতা (২০০৬)
- ছোটো ছোটো গদ্য ও পদ্য (২০০৬)
- আকাশে চাঁদ নেই অথচ আজিকে পূর্ণিমা [যুগ্ম প্রেমের কবিতা গ্রন্থ] (২০০৬)
- দুপুরে রচিত কবিতা (২০০৬)
- নির্মাণের খসড়া (২০১৭)
মৃত্যু
কবিতার জগতে তার স্বকীয়তা এবং বিজ্ঞানে, বিশেষত গণিতে প্রগাঢ় আগ্রহ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রথা ভেঙ্গে এগোচ্ছিলেন তিনি। ফলে সমকালীন কাব্যজগত হতে পৃথক জায়গায় ছিলেন। এর সাথে তার নিজের কিছুটা অসুস্থতা ,কিছুটা সচেতন বিচ্ছিন্নতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে একা থাকতেন। ১৯৮৭ সাল নাগাদ বিনয় মানসিক ব্যাধির কারণে দীর্ঘ দিন কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন।অনটনে ভুগেছেন। প্রতিবেশীরাই তার দেখাশোনা করতেন। শেষে তিনি দীর্ঘ দিন রোগেভোগের পর ২০০৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পুরস্কার
তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাকে দুটি বড় পুরস্কার দেওয়া হয়, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার।
তার সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পদক তার বাসভবনের পাশে বিনয় মজুমদার স্মৃতি রক্ষা কমিটি গ্রন্থাগারে রাখা ছিল। সেখান থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চুরি হয়ে যায় পদকটি। এখনও এটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ফিরে এসো, চাকা-৫৫
– বিনয় মজুমদার হৃদয়, নিঃশব্দে বাজো; তারকা, কুসুম, অঙ্গুরীয়—এদের কখনো আরো সরব সংগীত শোনাবো না।বধির স্বস্থানে আছে; অথবা নিজের রূপে ভুলেপ্রেমিকের তৃষ্ণা দ্যাখে, পৃথিবীর বিপণিতে থেকে।কবিতা লিখেছি কবে, দু-জনে চকিত চেতনায়।অবশেষে ফুল ঝ’রে, অশ্রু ঝ’রে আছে শুধু সুর।কবিতা বা গান……
ফিরে এসো, চাকা-৩৩
– বিনয় মজুমদার রোমাঞ্চ কি রয়ে গেছে; গ্রামে অন্ধকারে ঘুম ভেঙেদেহের উপর দিয়ে শীতল সাপের চলা বুঝেযে-রোমাঞ্চ নেমে এলো, রুদ্ধশ্বাসস্বেদে ভিজে-ভিজে।সর্পিনী, বোঝনি তুমি, দেহ কিনা, কার দেহ, প্রাণ।সহসা উদিত হয় সাগরহংসীর শুভ্র গান।স্বর-সুর এক হয়ে কাঁপে বায়ু, যেন তুষত শীতে,কেঁদে…
অনেক কিছুই তবু
– বিনয় মজুমদার অনেক কিছুই তবু বিশুদ্ধ গণিত শাস্ত্র নয়লিখিত বিশ্লিষ্ট রূপ গণিতের অআকখময়হয় না, সে সব ক্ষেত্রে উপযুক্ত গণিতসূত্রেরনির্যাস দর্শনটুকু প্রয়োগ ক’রেই বিশ্লেষণকরা একমাত্র পথ, গণিতশাস্ত্রীয় দর্শনেরবহির্ভূত অতিরিক্ত দর্শন সম্ভবপর নয়।সেহেতু ঈশ্বরী, দ্যাখো গণিতের ইউনিটপাউন্ড সেকেন্ড ফুট থেমে থাকে…
একটি গান
– বিনয় মজুমদার X=0এবং Y=0বা X=0=Yবা X=Yশূন্য 0 থেকে প্রানী X ও Y সৃষ্টি হলোএই ভাবে বিশ্ব সৃষতি শুরু হয়েছিলো।
শিমুল গাছের নিচে
– বিনয় মজুমদার শিমুল গাছের নিচে গম ক্ষেত দেখলাম আজ।পুরো গম ক্ষেতটিই বাদামি রঙের, তাতে অন্য রঙ নেইদেখে দেখে মনে হয় ক্ষেতে গম পেকে গেছে প্রায়।আমিও পথের মাঝে থেমে প’ড়ে গম গাছগুলি দেখলাম।বুঝলাম ইউরোপে এবং আমেরিকায় শস্যক্ষেতগুলি এ প্রকার।আমাদের বাঙলায়…
বর্ষাকালে
– বিনয় মজুমদার বর্ষাকালে আমাদের পুকুরে শাপলা হয়, শীত গ্রীষ্মে এইপুকুর সম্পূর্ণ শুশক হয়ে যায় পুকুরের নিচে ঘাস গিজায়,তখন–পুকুরে শাপলা আর থাকে না, আবার সেই বর্ষাকাল আসেতখন পুকুরটিতে জল জমে পুনরায় শাপলা গজায়।এই হলো শাপলার কাহিনী, শাপলা ফুল শাপলার পাতাছন্দে…
২২ জুন, ১৯৬২-ফিরে এসো,চাকা
– বিনয় মজুমদার যাক, তবে জ’লে যাক, জলস্তম্ভ, ছেঁড়া ঘা হৃদয়।সব শান্তি দূরে থাক, সব তৃপ্তি, সব ভুলে যাই।শুধু তার যন্ত্রণায় ভ’রে থাক হৃদয় শরীর।তার তরণির মতো দীর্ঘ চোখে ছিলো সাগরেরগভীর আহ্বান, ছায়া, মেঘ, ঝঞ্ঝা, আকাশ, বাতাস।কাঁটার আঘাতদায়ী কুসুমের স্মৃতির…
করবী তরুতে
– বিনয় মজুমদার করবী তরুতে সেই আকাঙ্ক্ষিত গোলাপ ফোটে নি ।এই শোকে ক্ষিপ্ত আমি ; নাকি ভ্রান্তি হয়েছে কোথাও?অবশ্য অপর কেউ, মনে হয়, মুগ্ধ হয়েছিল,সন্ধানপর্বেও দীর্ঘ, নির্নিমেষ জ্যোৎস্না দিয়ে গেছে ।আমার নিদ্রার মাঝে, স্তন্যপান করার মতনব্যবহার ক’রে বলেশিহরিত হৃদয়ে জেগেছি…
কবিতা বুঝিনি আমি
– বিনয় মজুমদার কবিতা বুঝিনি আমি ; অন্ধকারে একটি জোনাকিযত্সামান্য আলো দেয়, নিরুত্তাপ, কোমল আলোক ।এই অন্ধকারে এই দৃষ্টিগম্য আকাশের পারেঅধিক নীলাভ সেই প্রকৃত আকাশ প’ড়ে আছে—এই বোধ সুগভীরে কখন আকৃষ্ট ক’রে নিয়েযুগ যুগ আমাদের অগ্রসর হয়ে যেতে বলে,তারকা, জোনাকি—সব…
তুমি যেন ফিরে
– বিনয় মজুমদার তুমি যেন ফিরে এসে পুনরায় কুণ্ঠিত শিশুকেকরাঘাত ক’রে ক’রে ঘুম পাড়াবার সাধ ক’রেআড়ালে যেও না ; আমি এত দিনে চিনেছি কেবলঅপার ক্ষমতাময়ী হাত দুটি, ক্ষিপ্র হাত দুটি—ক্ষণিক নিস্তারলাভে একা একা ব্যর্থ বারিপাত ।কবিতা সমাপ্ত হতে দেবে নাকি?…
একটি উজ্জ্বল মাছ
– বিনয় মজুমদার একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়েদৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলেপুনরায় ডুবে গেলো — এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়েবেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল |বিপন্ন মরাল ওড়ে, অবিরাম পলায়ন করে,যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচেরয়েছে…
সময়ের সাথে এক বাজি ধরে
– বিনয় মজুমদার সময়ের সাথে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি ।ব্যর্থ আকাঙ্খায়, স্বপ্নে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে যেখানেএকদিন জল জমে, আকাশ বিস্বিত হয়ে আসেসেখানে সত্বর দেখি ,মশা জন্মে; অমল প্রতূষেঘুম ভেঙ্গে দেখা যায় ; আমাদের মুখের ভিতরস্বাদ ছিল, তৃপ্তি ছিল জে…
মুকুরে প্রতিফলিত
– বিনয় মজুমদার মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে |শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারুজিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণাকী ছড়ায়, কে ছড়ায় ; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো‘কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা,এই যে এখানে জন্ম, একি সেই…
কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে
– বিনয় মজুমদার কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে সকালে জেগেছি সবিনয়ে।কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভাউদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।সময়ে ভেবেছিলাম সম্মিলিত চায়ের ভাবনা,বায়ুসেবনের কথা, চিরন্তন শিখরের বায়ু।দৃষ্টিবিভ্রমের মতো কাল্পনিক বলে মনে হয়তোমাকে অস্তিত্বহীনা, অথবা হয়তো লুপ্ত, মৃত।অথবা করেছে ত্যাগ, অবৈধ পুত্রের…
সন্তপ্ত কুসুম ফুটে
– বিনয় মজুমদার সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হেতরু,তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না।কে ক্থোয় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি।নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পঙক্তি আরমনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট…
চাদেঁর গুহার দিকে
– বিনয় মজুমদার চাদেঁর গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, মেঝের উপরেদাড়িয়েঁ রয়েছে চাঁদ, প্রকাশ্য দিনের বেলা, স্পষ্ট দেখা যায়চাদেঁর গুহার দিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি, ঘাসগুল ছোট করে ছাঁটা।ঘাসের ভিতর দিয়ে দেখা যায় গুহার উপরকার ভাঁজ।গুহার লুকোনো মুখ থেকে শুরু হয়ে…
মুকুট
– বিনয় মজুমদার এখন পাকুড়গাছে সম্পূর্ণ নূতন পাতা, তার সঙ্গে বিবাহিত এইবটগাছে লাল লাল ফল ফলে আছে।চারিদিকে চিরকাল আকাশ থাকার কথা,আছে কিনা আমি দেখে নিই।অনেক শালিক পাখি আসে রোজ এই গাছে,বট ফলগুলিতারা খুটেঁ খুটেঁ খায় বসন্তের হাওয়া বয়, শালিকের ডাকএবং…
আমার বাড়ির থেকে
– বিনয় মজুমদার আমার বাড়ির থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি অগণিত যুবতী চলেছে।এইসব বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা যুবতীদিগের প্রত্যেকেরঅন্তরে জয়পতাকা কিভাবে থাকে আমি সু ন্দর নিখুঁতভাবে দেখিতাকিয়ে তাকিয়ে ওরা যখন হাঁটেঁ বাবসে থাকে।প্রত্যেকটি যুবতীর অন্তরে জয়পতাকা প্রবেশ করেছে বহুবার,নিজের অন্তরে ঢোকা জয়পতাকাকে…
আমার শোবার ঘর ছেড়ে
– বিনয় মজুমদার আমার শোবার ঘর ছেড়ে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।বারান্দার পাশ দিয়ে একটি মুকুট হেঁটে চলে গেল অতিশয় ধীরে,আমি মনোযোগ দিয়ে তার বস্তাবৃত অঙ্গ দেখলাম।এ মুকুট প্রৌঢ়া ফলে মুকুটের ফুল দুটি বেশ ঝুলে পড়েছে নিশ্চয়,আরো এ বয়সে ফুলে অনেক…
আমার আশ্চর্য ফুল
– বিনয় মজুমদার আমার আশ্চর্য ফুল, যেন চকোলেট, নিমিষেইগলাধঃকরণ তাকে না ক’রে ক্রমশ রস নিয়েতৃপ্ত হই, দীর্ঘ তৃষ্ণা ভুলে থাকি আবিষ্কারে, প্রেমে।অনেক ভেবেছি আমি, অনেক ছোবল নিয়ে প্রাণেজেনেছি বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে, কাকে বলে নীল-আকাশের হৃদয়ের; কাকে বলে নির্বিকার পাখি।অথবা…
আমরা দুজনে মিলে
– বিনয় মজুমদার আমরা দুজনে মিলে জিতে গেছি বহুদিন হলো ।তোমার গায়ের রঙ এখনো আগের মতো , তবেতুমি আর হিন্দু নেই , খৃষ্টান হয়েছো ।তুমি আর আমি কিন্তু দুজনেই বুড়ো হয়ে গেছি ।আমার মাথার চুল যেরকম ছোটো করে ছেঁটেছি এখনতোমার…
মানুষ
– বিনয় মজুমদার দেবভাষার ব্যাকরণ অনুসারে মানুষসৃষ্টি করা হয় । দেবভাষার ব্যাকরণ একখানা ‘সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী’ । পাঠক দেখুন দেবভাষায় একটি শব্দ নেই ‘মনোলীন’ শব্দটি নেই । শব্দরা সব দেবদেবী । দেবভাষায় মনোলীন শব্দদেবতাটি নেই । এইবার আমি মনোলীন শব্দটি…
পাখি
– বিনয় মজুমদার পাঠক মুখ দিয়ে উচ্চারণ করুন ‘নিড়িহা’ । দেখুন মাথার উপর দিয়ে একটি পাখি উড়ে যাচ্ছে । এই নিড়িহা পাখিটি আমি বানিয়েছি । বহুদিন আগে ছাপা হয়ে গেছে । কবি অজয় নাগ মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ‘দাদা , এমন…
সৃষ্টির উপায়
– বিনয় মজুমদার শব্দ ব্রহ্ম । অর্থাৎ শব্দের আকার আছে । ‘সফেদা’ একটি শব্দ- ধ্বনি । এই শব্দের আকার সফেদা ফলটি যেমনি ঠিক তেমনি । এর শব্দতাতিবক প্রমাণ আছে । ‘আতা’ একটি শব্দ- ধ্বনি । আতা শব্দটির চেহারা ঠিক আতা…
ঘুমোবার আগে
– বিনয় মজুমদার তপ্ত লৌহদণ্ড জল ডোবাতে এবং সেই জল খেত নরনারীগণ,তার ফলে মানুষের রক্তাল্পতা দুর্বলতা জনিত অসুখ সেরে যেত।এইভাবে এককালে বাঁচতাম মানুষেরাএই পৃথিবীতে।তবে সবই ঠিক আছে, ঘুমোবার আগে মনেপড়ে সারা দিনের ঘটনা।মাঝরাতে বিছানায় চাঁদের জ্যোৎস্না এসে পড়ে দূর থেকে।শুধু…
কুঁড়ি
– বিনয় মজুমদার পদ্মপাতার প’রে জল টলমল করে; কাছেকোনো ফুল তো দেখিনা,সাধ জাগে, – বড়ো সাধ জাগে –ডুব দিয়ে দেখে আসি নধর জলে নিচেআকাশের অভিমুখী উন্মুখ কুঁড়ি আছে কিনা।হয়তো সে কুঁড়িফোটবার ইচ্ছায় থেকে থেকে – থেকে থেকেকোন কালে হয়ে গেছে…
আমাকে ও মনে রেখো
– বিনয় মজুমদার পৃথিবী,সূর্য ও চাঁদ এরা জ্যোতিস্ক এবংআকাশের তারাদের কাছে চলে যাবো ।আমাকে ও মনে রেখো পৃথিবীর লোকআমি খুব বেশী দেশে থাকি নি কখনো ।আসলে তিনটি মাত্র দেশে আমি থেকেছি,এখনআমি থাকি বঙ্গদেশে,আমাকেও মনে রেখো বঙ্গদেশ তুমি ।
২৬ অগাষ্ট ১৯৬০ – ফিরে এসোচাকা
– বিনয় মজুমদার মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে |শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারুজিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণাকী ছড়ায়, কে ছড়ায় ; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো‘কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা,এই যে এখানে জন্ম, একি সেই…