__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১মরুভূমি মাঝে যেন, একই কুসুম,পূর্ণিত সুবাসে।বরষার রাত্রে যেন, একই নক্ষত্র,আঁধার আকাশে ||নিদাঘ সন্তাপে যেন, একই সরসী,বিশাল প্রান্তরে।রতন শোভিত যেন, একই তরণী,অনন্ত সাগরে।তেমনি আমার তুমি, প্রিয়ে, সংসার-ভিতরে || ২চিরদরিদ্রের যেন, একই রতন,অমূল্য, অতুল।চিরবিরহীর যেন, দিনেক মিলন,বিধি অনুকূল ||চিরবিদেশীর যেন,…
Tag: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে, সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়।এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।
বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
জীবনী
জন্ম ও বংশপরিচয়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্বপুরুষ রামজীবন চট্টোপাধ্যায় কাঁঠালপাড়ার রঘুদেব ঘোষালের কন্যাকে বিবাহ করেন৷ রামজীবনের পুত্র তথা বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র,মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী,বঙ্কিমের পূর্বে তার আরও দুই পুত্রের জন্ম হয় – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
শিক্ষা
জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁঠালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।” যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যান নি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা থেকে মনে হয় তিনি রামপ্রাণের শিক্ষা থেকে বিশেষ উপকৃত হন নি।তিনি লিখেছেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুর গেলাম।”
বিবাহ
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর। নারায়নপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু চাকুরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
কর্মজীবন
তার কর্মজীবনের সংক্ষেপিত তালিকা:
- যশোর – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – যোগদানের তারিখ: ১৮৫৮, ৭ আগস্ট
- নেগুয়া (মেদিনীপুর) – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – যোগদানের সাল: ১৮৬০, ৯ ফেব্রুয়ারি
- খুলনা – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – যোগদানের সাল: ১৮৬০, ৯ নভেম্বর
- বারুইপুর (২৪ পরগনা) – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – যোগদানের সাল: ১৮৬৪, ৫ মার্চ
- মুর্শিদাবাদ – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – উচ্চতর কার্যভার গ্রহণের তারিখ: ১৮৬৯, ১৫ ডিসেম্বর।
- মুর্শিদাবাদ – কালেক্টর – পদোন্নতির তারিখ: ১৮৭১, ১০ জুন।
- কলিকাতা – বেঙ্গল গভর্নমেন্টের অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি – যোগদানের তারিখ: ১৮৮১, ৪ সেপ্টেম্বর।
- আলিপুর – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – ১৮৮২, ২৬ জানুয়ারি।
- জাজপুর (কটক) – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – ১৮৮৩, ৮ আগস্ট।
- হাওড়া – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – ১৮৮৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি।
- ঝিনাইদহ – ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর – ১৮৮৫, ১ জুলাই।
- অবসরগ্রহণের তারিখ: ১৮৯১, ১৪ সেপ্টেম্বর।
মৃত্যু
শেষ জীবনে তার স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তার বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তার মৃত্যু হয়, এপ্রিল ৮, ১৮৯৪ (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)।
সাহিত্যে অবদান
বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দুর্গেশনন্দিনী ছিলো প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস যেটা বাংলা সাহিত্যের দ্বার উন্মোচন করেছিলো। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন এবং এর মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাস ছিলো। বঙ্কিমই বাংলা ভাষাকে প্রথম সত্যিকারের মর্যাদা দিয়েছিলেন। তার রচনা ‘বঙ্কিমী শৈলী’ বা ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে পরিচিত।
গ্রন্থ তালিকা
উপন্যাস
(ইন্দিরা,যুগলাঙ্গুরীয় ও রাধারানী ত্রয়ী সংগ্রহ) (দেবী চৌধুরানী, আনন্দমঠ, সীতারাম ত্রয়ী উপন্যাস)
|
প্রবন্ধ গ্রন্থ
|
সাবিত্রী
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১ তমিস্রা রজনী ব্যাপিল ধরণী,দেখি মনে মনে পরমাদ গণি,বনে একাকিনী বসিলা রমণীকোলেতে করিয়া স্বামীর দেহ।আঁধার গগন ভুবন আঁধার,অন্ধকার গিরি বিকট আকারদুর্গম কান্তার ঘোর অন্ধকার,চলে না ফেরে না নড়ে না কেহ || ২ কে শুনেছে হেথা মানবের রব?কেবল গরজে…
অধঃপতন সঙ্গীত
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১ বাগানে যাবি রে ভাই? চল সবে মিলে যাই,যথা হর্ম্ম্য সুশোভন, সরোবরতীরে।যথা ফুটে পাঁতি পাঁতি, গোলাব মল্লিকা জাতি,বিগ্নোনিয়া লতা দোলে মৃদুল সমীরে ||নারিকেল বৃক্ষরাজি, চাঁদের কিরণে সাজি,নাচিছে দোলায় মাথা ঠমকে ঠমকে।চন্দ্রকরলেখা তাহে, বিজলি চমকে || ২ চল যথা…
আকাঙ্ক্ষা
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সুন্দরী) ১ কেন না হইলি তুই, যমুনার জল,রে প্রাণবল্লভ!কিবা দিবা কিবা রাতি, কূলেতে আঁচল পাতিশুইতাম শুনিবারে, তোর মৃদুরব ||রে প্রাণবল্লভ! ২ কেন না হইলি তুই, যমুনাতরঙ্গ,মোর শ্যামধন!দিবারাতি জলে পশি, থাকিতাম কালো শশি,করিবারে নিত্য তোর, নৃত্য দরশন ||ওহে শ্যামধন!…
রাজার উপর রাজা
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গাছ পুঁতিলাম ফলের আশায়,পেলাম কেবল কাঁটা।সুখের আশায় বিবাহ করিলামপেলাম কেবল ঝাঁটা ||বাসের জন্য ঘর করিলামঘর গেল পুড়ে।বুড়ো বয়সের জন্য পুঁজি করিলামসব গেল উড়ে ||চাকুরির জন্যে বিদ্যা করিলাম,ঘটিল উমেদারি।যশের জন্য কীর্ত্তি করিলাম,ঘটিল টিটকারী ||সুদের জন্য কর্জ্জ দিলাম,আসল গেল মারা।প্রীতির…
দুর্গোৎসব
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুর্গোৎসব 5 ১ বর্ষে বর্ষে এসো যাও এ বাঙ্গালা ধামেকে তুমি ষোড়শী কন্যা, মৃগেন্দ্রবাহিনি?চিনিয়াছি তোরে দুর্গে, তুমি নাকি ভব দুর্গে,দুর্গতির একমাত্র সংহারকারিণী ||মাটি দিয়ে গড়িয়াছি, কত গেল খড় কাছি,সৃজিবারে জগতের সৃজনকারিণী।গড়ে পিটে হলো খাড়া, বাজা ভাই ঢোল কাড়া,কুমারের…
ভাই ভাই
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (সমবেত বাঙ্গালিদিগের সভা দেখিয়া) ১এক বঙ্গভূমে জনম সবার,এক বিদ্যালয়ে জ্ঞানের সঞ্চার,এক দুঃখে সবে করি হাহাকার,ভাই ভাই সবে, কাঁদ রে ভাই।এক শোকে শীর্ণ সবার শরীর,এক শোকে বয় নয়নের নীর,এক অপমানে সবে নতশির,অধম বাঙ্গালি মোরা সবাই || ২নাহি ইতিবৃত্ত নাহিক…
জলে ফুলে
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১ কে ভাসাল জলে তোরে কানন-সুন্দরী!বসিয়া পল্লবাসনে, ফুটেছিলে কোন্ বনেনাচিতে পবন সনে, কোন্ বৃক্ষোপরি?কে ছিঁড়িল শাখা হতে শাখার মঞ্জরী? ২ কে আনিল তোরে ফুল তরঙ্গিণী-তীরে?কাহার কুলের বালা, আনিয়া ফুলের ডালা,ফুলের আঙ্গুলে তুলে ফুল দিল নীরে?ফুল হতে ফুল খসি,…
মন এবং সুখ
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই মধুমাসে, মধুর বাতাসে,শোন লো মধুর বাঁশী।এই মধু বনে, শ্রীমধুসূদনে,দেখ লো সকলে আসি ||মধুর সে গায়, মধুর বাজায়,মধুর মধুর ভাষে।মধুর আদরে, মধুর অধরে,মধুর মধুর হাসে ||মধুর শ্যামল, বদন কমল,মধুর চাহনি তায়। ।কনক নূপুর, মধুকর যেন,মধুর বাজিছে পায় ||মধুর…
আকবর শাহের খোষ রোজ
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১ রাজপুরী মাঝে কি সুন্দর আজি।বসেছে বাজার, রসের ঠাট,রমণীতে বেচে রমণীতে কিনেলেগেছে রমণীরূপের হাট ||বিশালা সে পুরী নবমীর চাঁদ,লাখে লাখে দীপ উজলি জ্বলে।দোকানে দোকানে কুলবালাগণেখরিদদার ডাকে, হাসিয়া ছলে ||ফুলের তোরণ, ফুল আবরণফুলের স্তম্ভেতে ফুলের মালা।ফুলের দোকান, ফুলের নিসান,ফুলের…
বায়ু
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১জন্ম মম সূর্য্য-তেজে, আকাশ মণ্ডলে।যথা ডাকে মেঘরাশি,হাসিয়া বিকট হাসি,বিজলি উজলে ||কেবা মম সম বলে,হুহুঙ্কার করি যবে, নামি রণস্থলে।কানন ফেলি উপাড়ি,গুঁড়াইয়া ফেলি বাড়ী,হাসিয়া ভাঙ্গিয়া পাড়ি,অটল অচলে।হাহাকার শব্দ তুলি এ সুখ অবনীতলে || ২পর্ব্বতশিখরে নাচি, বিষম তরসে,মাতিয়া মেঘের সনে,পিঠে করি…
সংযুক্তা
__বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংযুক্তা1 ১। স্বপ্ন ১ নিশীথে শুইয়া, রজত পালঙ্কেপুষ্পগন্ধি শির, রাখি রামা অঙ্কে,দেখিয়া স্বপন, শিহরে সশঙ্কে,মহিষীর কোলে, শিহরে রায়।চমকি সুন্দরী, নৃপে জাগাইল,বলে প্রাণনাথ, এ বা কি হইল,লক্ষ যোধ রণে, যে না চমকিলমহিষীর কোলে সে ভয় পায়! ২ উঠিয়া নৃপতি…