– ফররুখ আহমদ সকল রুদ্ধ ঝরোকা খুলে দাওখুলে দাও সকল রুদ্ধ দরোজা।আসুক সাত আকাশের মুক্ত আলোআর উচ্ছল আনন্দের মতবাগে এরেমের এক ঝাঁক মৌমাছি .. ..যেন এই সব পাথরের ফুলের মাঝখান থেকেআমি চিনে নিতে পারিরক্তমনির চেয়েও লাল সুনভিতএকটি তাজা রক্ত গোলাপ;আমার…
Tag: ফররুখ আহমদ
ফররুখ আহমদ
সৈয়দ ফররুখ আহমদ (জুন ১০, ১৯১৮ – অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী কবি। এই বাঙালি কবি ‘মুসলিম রেনেসাঁর কবি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার কবিতায় বাংলার অধঃপতিত মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণের অনুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে।বিংশ শতাব্দীর এই কবি ইসলামি ভাবধারার বাহক হলেও তার কবিতা প্রকরণকৌশল, শব্দচয়ন এবং বাক্প্রতিমার অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। আধুনিকতার সকল লক্ষণ তার কবিতায় পরিব্যাপ্ত। তার কবিতায় রোমান্টিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের ধারাবাহিকতা পরিস্ফুট। “সাত সাগরের মাঝি” কাব্যগ্রন্থে তিনি যে-কাব্যভাষার সৃষ্টি করেছেন তা স্বতন্ত্র এবং এ-গ্রন্থ তার এক অমর সৃষ্টি।
জন্ম ও পরিবার
সৈয়দ ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামের সৈয়দ বংশে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।
শিক্ষাজীবন
ফররুখ আহমদ খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থী রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। তবে চল্লিশ-এর দশকে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। তিনি ভারত বিভাগ তথা পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেন।
কর্মজীবন
ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক মোহাম্মদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে ফররুখ আহমদ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এসে ঢাকা বেতারে যোগ দেন। এখানেই প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।ফররুখ আহমদ মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর, সন্ধেবেলা ঢাকায়।
কাব্যগ্রন্থ
- সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
- সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
- নৌফেল ও হাতেম (জুন, ১৯৬১)-কাব্যনাট্য
- মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩)
- ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি, ১৯৬৩)
- হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬)-কাহিনীকাব্য
- নতুন লেখা (১৯৬৯)
- কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
- হাবিদা মরুর কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
- সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
- দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)
শিশুতোষ গ্রন্থ
- পাখির বাসা (১৯৬৫)
- হরফের ছড়া (১৯৭০)
- চাঁদের আসর (১৯৭০)
- ছড়ার আসর (১৯৭০)
- ফুলের জলসা (ডিসেম্বর, ১৯৮৫)
পুরস্কার
১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক প্রাইড অব পারফরমেন্স এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকদেওয়া হয়।
বৃষ্টির ছড়া
– ফররুখ আহমদ বৃষ্টি এল কাশ বনেজাগল সাড়া ঘাস বনে,বকের সারি কোথা রেলুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।নদীতে নাই খেয়া যে,ডাকল দূরে দেয়া যে,কোন সে বনের আড়ালেফুটল আবার কেয়া যে।গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,বিষটি বাদল দেয় দোলা,রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।মেঘের আঁধার মন…
পাঞ্জেরি
– ফররুখ আহমদ রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষেকোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?এ কী ঘন-সিয়া…
সাত সাগরের মাঝি
– ফররুখ আহমদ কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা ।নারঙ্গি বনে কাঁপছে সবুজ পাতা ।দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা।তবু জাগলে না ? তবু, তুমি জাগলে না ?সাত সাগরের মাঝি চেয়ে দেখো দুয়ারে ডাকো জাহাজ,অচল…