-প্রেমেন্দ্র মিত্র তারপরও কথা থাকে;বৃষ্টি হয়ে গেলে পরভিজে ঠাণ্ডা বাতাসের মাটি-মাখা গন্ধের মতনআবছায়া মেঘ মেঘ কথা;কে জানে তা কথা কিংবাকেঁপে ওঠা রঙিন স্তব্ধতা।সে কথা হবে না বলা তাকে:শুধু প্রাণ ধারণের প্রতিজ্ঞা ও প্রয়াসেরফাঁকে ফাঁকেঅবাক হৃদয়আপনার সঙ্গে একা-একাসেই সব কুয়াশার মত…
Tag: প্রেমেন্দ্র মিত্র
প্রেমেন্দ্র মিত্র
প্রেমেন্দ্র মিত্র (ইংরেজি: Premendra Mitra) (৪ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ – ৩ মে ১৯৮৮) কল্লোল যুগের একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাঙালি কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং চিত্রপরিচালক। বাংলা সাহিত্যে তার সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্রগুলি হল ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজকর্তা এবং মামাবাবু।
জন্ম ও বংশ-পরিচয়
প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তার পিতার কর্মস্থল বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার রাজপুরে৷তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের সম্ভ্রান্ত মিত্র বংশের সন্তান৷তার পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র এবং তার মাতার নাম সুহাসিনী দেবী৷ খুব অল্প বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন৷
সাহিত্যকর্ম
প্রেমেন্দ্র মিত্র এক সময় কলকাতার ২৮ নম্বর গোবিন্দ ঘোষাল লেনের মেসবাড়িতে বাস করতেন৷ পরবর্তীকালে পড়াশোনার জন্য তিনি ঢাকাতে থাকতে শুরু করেন৷ একবার ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে এসে ওই মেসবাড়ির ঘরের জানলার ফাঁকে একটি পোস্টকার্ড আবিষ্কার করেন। চিঠিটা পড়তে পড়তে তার মনে দুটো গল্প আসে। সেই রাতেই গল্পদুটো লিখে পরদিন পাঠিয়ে দেন জনপ্রিয় পত্রিকা প্রবাসীতে। ১৯২৪ সালের মার্চে প্রবাসীতে ‘শুধু কেরানী’ আর এপ্রিল মাসে ‘গোপনচারিণী’ প্রকাশিত হয়, যদিও সেখানে তার নাম উল্লেখ করা ছিল না। সেই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘সংক্রান্তি’ নামে একটি গল্প বেরোয়। এরপর তার মিছিল(১৯২৮) এবং পাঁক(১৯২৬) নামে দুটি উপন্যাস বেরোয়। পরের বছর বিজলী পত্রিকায় গদ্যছন্দে লেখেন ‘আজ এই রাস্তার গান গাইব’ কবিতাটি।
ঘনাদা ও পরাশর
প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র ঘনাদা, গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজো সব বয়েসের পাঠকদের কাছে প্রিয়। তার এই অমর চরিত্র ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির বাসিন্দা ঘনাদা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে। এছাড়াও তিনি অনেকগুলি ছোট গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা, যে পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি। তার সৃষ্ট চরিত্র মামাবাবুকে তিনি বহু এডভেঞ্চার উপন্যাস ও ছোটগল্পে এনেছেন যেগুলি কিশোরদের ভেতর জনপ্রিয় ছিল।
কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য
প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ সালে। রামধনু পত্রিকায় ক্ষিতীন্দ্রনারায়ণ ভট্টাচার্য তাকে ছোটদের জন্যে লিখতে অনুরোধ করলে ‘পিঁপড়ে পুরাণ’ কাহিনীটি লেখেন।এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা। ‘কুহকের দেশে’ গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে ‘ড্র্যাগনের নিঃশ্বাস’ বের হলে মামাবাবু পাঠক মহলে জনপ্রিয় হন। তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাসের নাম নিচে দেওয়া হল:
- ছোটোগল্প: “কালাপানির অতলে”, “দুঃস্বপ্নের দ্বীপ“, “যুদ্ধ কেন থামল”, “মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী”, “হিমালয়ের চূড়ায়”, “আকাশের আতঙ্ক”, “অবিশ্বাস্য”, “লাইট হাউসে”, “পৃথিবীর শত্রু”, “মহাকাশের অতিথি”, “শমনের রং সাদা“।
- বড়ো গল্প ও উপন্যাস: পিঁপড়ে পুরাণ, পাতালে পাঁচ বছর, ময়দানবের দ্বীপ, শুক্রে যারা গিয়েছিল, মনুদ্বাদশ, সূর্য যেখানে নীল।
এছাড়া আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত “সবুজ মানুষ” নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। অবশিষ্ট তিনটি অধ্যায় লিখেছিলেন অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায়।
চলচ্চিত্র জগৎ
পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, চুপি চুপি আসে, কালোছায়া, কুয়াশা, হানাবাড়ী, তার পরিচালিত ছবি। এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন।
গ্রন্থ তালিকা
কাব্যগ্রন্থ
উপন্যাস
- পাঁক (প্রকাশ – ১৯২৬)
- মিছিল
- উপনয়ন
- আগামীকাল
- প্রতিশোধ
- কুয়াশা
- পথ ভুলে
- যখন বাতাসে নেশা
- হৃদয় দিয়ে গড়া
- জড়ানো মালা
- পথের দিশা
- পা বাড়ালেই রাস্তা
- হানাবাড়ি
- মনুদ্বাদশ
- সূর্য কাঁদলে সোনা
- বিসর্পিল
ছোট গল্পসমগ্র
- পঞ্চসর(১৯৩৪)
- বেনামী বন্দর
- পুতুল ও প্রতিমা(১৯৩১)
- মৃত্তিকা(১৯৩৫)
- অফুরন্ত(১৯৩২)
- ধুলি ধূসর(১৯৩৮)
- মহানগর(১৯৩৭)
- জলপায়রা(১৯৫৭)
- শ্রেষ্ঠ গল্প
- নানা রঙে বোনা(১৯৬০)
- “পুন্নাম”
- “তেলেনাপোতা আবিষ্কার”
- নির্বাচিত
নিরুদ্দেশ
পুরস্কার
- রবীন্দ্র পুরস্কার
- সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার
- শরৎস্মৃতি
- রবীন্দ্র
- পদ্মশ্রী
- ভুবনে সরণী
- আনন্দ পুরস্কার
- সোভিয়েত দেশের পুরস্কার
- হরলাল ঘোষ পদক
- জগত্তারিণী স্বর্ণপদক
- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি
মৃত্যু
১৯৮৮ সালের ৩ মে পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে অসুস্থ হয়ে কলকাতায় মারা যান। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়েও তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন।
জং
– প্রেমেন্দ্র মিত্র হাওয়া বয় সনসনতারারা কাঁপে ।হৃদয়ে কি জং ধরেপুরনো খাপে ! কার চুল এলোমেলোকিবা তাতে আসে গেল!কার চোখে কত জলকেবা তা মাপে? দিনগুলো কুড়াতেকত কি তো হারালব্যথা কই সেই ফলা-রবিধেঁছে যা ধারালো! হাওয়া বয় সনসনতারারা কাঁপে ।জেনে কিবা…
ফ্যান
– প্রেমেন্দ্র মিত্র নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভুত এক জীবঠিক মানুষের মতোকিংবা ঠিক নয়,যেন তার ব্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত !তবু তারা নড়ে চড়ে কথা বলে, আরজঞ্জালের মত জমে রাস্তায়-রাস্তায়।উচ্ছিষ্টের আস্তাকূড়ে ব’সে ব’সে ধোঁকেআর ফ্যান চায়। রক্ত নয়, মাংস নয়,নয় কোন পাথরের মতো…
পাখিদের মন
– প্রেমেন্দ্র মিত্র নির্জন প্রান্তরে ঘুরে হঠাত্ কখন,হয়তো পেতেও পারি পাখিদের মন।আর শুধু মাটি নয় শ্স্য নয়,নয় শুধু ভার,আর-এক বিদ্রোহী ধিক্কার–পৃথিবী-পরাস্ত-করা উজ্জল উত্ ক্ষেপ।আজো এরা মাঠে-ঘাটে মাটি খুঁটে খায়,মেনে নেয় সব কিছু দায় ;তবু এক সুনীল শপথতাদের বুকের রক্ত তপ্ত…
সাপ
– প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম সাপটা দেখবে নিথর পাথর সন্মোহিত,কোন সে আদিম অন্ধ অঘোর অন্বেষণের দ্বিধাআঁধার-ছোঁয়ানো ছায়া-বিদ্যুত হেনে খোলে কুণ্ডলী! তারপর সাপ অনেক দেখবেকেঁপে-ওঠা শরবন।কাঁটা-দেওয়া ঘাস সভয়ে শুনবেগোপন সঞ্চারণ,—শোনা না-শোনার সীমানার শুধু স্তব্ ধতা শিহরিত | সব শেষে এক সাহসী সকালগহন…
কাগজ বিক্রী
– প্রেমেন্দ্র মিত্র হাঁকে ফিরিওলা— কাগজ বিক্রী,পুরানো কাগজ চাই!ঘরের কোণেতে সঞ্চিত যততাড়াগুলি হাতড়াই |পুরানো কাগজ চাই |বহুদিন ধরে জঞ্জাল বাড়েসের দরে বেচি তাই |কেমন করিয়া একটি তাহারহঠাত্ নজরে পড়ে,দেখি সমুদ্রে যাত্রী-জাহাজকোথাও ডুবিল ঝড়ে |হঠাত্ নজরে পড়ে,আবার কোথায় মানুষের মাথা,বিকাল খুলির…