__পূর্ণেন্দু পত্রী বিরক্ত নদীর মতো ভুরু কুঁচকে বসে আছে আমাদের কাল।যাচ্ছি যাব, যাচ্ছি যাব এই গড়িমসি করে চূড়ো ভাঙা চাকা ভাঙা রথযে রকম ঘাড় গুজে ধুলোয় কাতর, সে রকমই শুয়ে বসে আছে।খেয়াঘাটে পারাপার ভুলে-যাওয়া, নৌকার মতন, সময় এখন। মনে হয়…
Tag: পূর্ণেন্দু পত্রী
পূর্ণেন্দু পত্রী
পূর্ণেন্দুশেখর পত্রী (ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৩১ – মার্চ ১৯, ১৯৯৭) (পূর্ণেন্দু পত্রী নামে সর্বাধিক পরিচিত; ছদ্মনাম সমুদ্রগুপ্ত) একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, কলকাতা গবেষক, চিত্র-পরিচালক ও প্রচ্ছদশিল্পী।
জন্ম, শিক্ষা
পূর্ণেন্দু পত্রীর জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শ্যামপুরের নাকোলে। পিতা পুলিনবিহারী পত্রী, মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পারিবারিক কলহের কারণে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৯ সালে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ভর্তি হন বাণিজ্যিক শিল্পকলা বা কমার্শিয়াল আর্টের ছাত্র হিসেবে। যদিও নানা কারণে এই পাঠক্রম শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ছেলেবেলায় বাগনানের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা অমল গাঙ্গুলির সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট পার্টির নানান সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কলকাতায় অভিভাবক কাকা নিকুঞ্জবিহারী পত্রীর চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘চিত্রিতা’ ও সাহিত্যপত্র দীপালি-তে তার আঁকা ও লেখার সূচনা হয়। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়ে পড়লে রাজনীতি ও সাহিত্যচর্চা উভয়েই একসঙ্গে চালাতে থাকেন।
প্রকাশনা
১৯৫১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একমুঠো রোদ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস দাঁড়ের ময়না মানিক পুরস্কার লাভ করে। তার অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল শব্দের ঠিকানা (১৯৭৫), সূর্যোদয় তুমি এলে (১৯৭৬) আমাদের তুমুল হৈ-হল্লা (১৯৮০) ও গভীর রাতের ট্রাঙ্ককল (১৯৮১), আমিই কচ আমিই দেবযানী ইত্যাদি। সাহিত্য গবেষক শিশির কুমার দাশ তার কাব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ছন্দের কৌশল, প্রতিমা গঠনের স্পষ্টতা এবং কথনভঙ্গির ঘরোয়া চাল তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। পূর্ণেন্দু পত্রীর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোমরাগুড়ি, মালতীমঙ্গল ইত্যাদি। রূপসী বাংলার দুই কবি তার একটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ। পূর্ণেন্দু পত্রী কলকাতা সম্বন্ধে প্রায় এক ডজন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহর কলকাতার আদি পর্ব, বঙ্গভঙ্গ, কি করে কলকাতা হল, ছড়ায় মোড়া কলকাতা, কলকাতার রাজকাহিনী, এক যে ছিল কলকাতা ইত্যাদি। জীবনের শেষপর্বে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে এক বিশাল গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম খণ্ড বঙ্কিম যুগ প্রকাশিত হয়। শিশুসাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় লেখক। ছোটোদের জন্য লিখেছেন আলটুং ফালটুং, ম্যাকের বাবা খ্যাঁক, ইল্লীবিল্লী, দুষ্টুর রামায়ণ, জুনিয়র ব্যোমকেশ, জাম্বো দি জিনিয়াস, প্রভৃতি হাসির বই। আমার ছেলেবেলা নামে তার একটি স্মৃতিকথাও রয়েছে। সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিত করেন।
চলচ্চিত্র
১৯৬৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প অবলম্বনে তার প্রথম চলচ্চিত্র স্বপ্ন নিয়ে মুক্তি পায়। এরপর রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে স্ত্রীর পত্র ও মালঞ্চ সহ পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়াও নির্মাণ করেন সাতটি তথ্যচিত্র। স্ত্রীর পত্র চলচ্চিত্রটির জন্য তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চিত্রনির্মাতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত তার ছেঁড়া তমসুক চলচ্চিত্রটিও একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছিল।
প্রচ্ছদশিল্পী
সাহিত্য ও চিত্র-পরিচালনা ছাড়াও পূর্ণেন্দু পত্রীর অন্যতম পরিচয় প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে। বাংলা সাহিত্যের শতাধিক ধ্রুপদী গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছিলেন তিনি। তার অঙ্কিত প্রচ্ছদচিত্রগুলি গুণমানে ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বিশেষ স্বাতন্ত্র্যের দাবিদার।
চলচ্চিত্রায়ণ
পরিচালনা:
- স্বপ্ন নিয়ে (১৯৬৬)
- স্ত্রীর পত্র (১৯৭২)
- ছেঁড়া তমসুক (১৯৭৪)
- অবনীন্দ্রনাথ (১৯৭৬)
- পটচিত্র (তথ্যচিত্র, ১৯৭৭)
- মালঞ্চ (১৯৭৯)
- কালীঘাট (তথ্যচিত্র, ১৯৮১)
- গীতগোবিন্দম্ (১৯৮১)
- ছোটো বকুলপুরের যাত্রী (১৯৮১)
- ক্ষীরের পুতুল (তথ্যচিত্র, ১৯৮২)
চিত্রনাট্য:
- স্ত্রীর পত্র (১৯৭২)
স্রোতস্বিনী আছে, সেতু নেই
__পূর্ণেন্দু পত্রী তুমি বললে, রৌদ্র যাও, রৌদ্রে তো গেলামতুমি বললে, অগ্নিকুণ্ড জ্বালো, জ্বালালাম।সমস্ত জমানো সুখ-তুমি বললে, বেচে দেওয়া ভালোডেকেছি নীলাম।তবু আমি একা।আমাকে করেছ তুমি একা।একাকিত্বটুকুতেও ভেঙে চুরে শত টুকরো করেবীজ বপনের মতো ছড়িয়ে দিয়েছ জলে-স্থলে।তুমি বলেছিলে বলে সাজসজ্জা ছেড়েছি, ছুঁড়েছি।যে…
সেই সবও তুমি
__পূর্ণেন্দু পত্রী তোমাকেই দৃশ্য মনে হয়।তোমার ভিতরে সব দৃশ্য ঢুকে গেছে।কাচের আলমারি যেন, থাকে থাকে, পরতে পরতেশরতের, হেমন্তের, বসন্তের শাড়ি গয়না দুল,নদীর নবীন বাঁকা, বৃষ্টির নুপুর, জল, জলদ উদ্ভিদ। সাঁচীস্তুপে, কোনারকে যায় যারা, গিয়ে ফিরে আসেদুধ জ্বাল দিয়ে দিয়ে ক্ষীর…
সরোদ বাজাতে জানলে
__পূর্ণেন্দু পত্রী আমার এমন কিছু দুঃখ আছে যার নাম তিলক কামোদএমন কিছু স্মৃতি যা সিন্ধুভৈরবীজয়জয়ন্তীর মতো বহু ক্ষত রয়ে গেছে ভিতর দেয়ালেকিছু কিচু অভিমানইমনকল্যাণ।সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভালো হতো।পুরুষ কিভাবে কাঁদে সেই শুধু জানে। কার্পেটে সাজানো প্রিয় অন্তঃপুরে ঢুকে গেছে…
মাঝে মাঝে লোডশেডিং
__পূর্ণেন্দু পত্রী মাঝে মাঝে লোডশেডিং হোক।আকাশে জ্বলুক শুধু ঈশ্বরের সাতকোটি চোখবাকী সব আলকাতরা মাখুক।আমরা নিমগ্ন হয়ে নিজস্ব চশমায় আর দেখি না কিছুইসকলে যা দেখে তাই দেখি।আকাশের রঙ তাই হয়ে গেছে চিরকালে নীল।বাতাস কি শাড়ি পরে কারো জানা নেই। মাঝে মাঝে…
বুকের মধ্যে বাহান্নটা আলমারি
– পূর্ণেন্দু পত্রী বুকের মধ্যে বাহান্নটা মেহগনি কাঠের আলমারি।আমার যা কিছু প্রিয় জিনিস, সব সেইখানে।সেই সব হাসি, যা আকাশময় সোনালী ডানার ওড়াওড়িসেই সব চোখ, যার নীল জলে কেবল ডুবে মরবার ঢেউসেই সব স্পর্ম, যা সুইচ টিপলে আলোর জ্বলে ওঠার মতোসব…
প্রজাপতি ঢুকেছে ভিতরে
__পূর্ণেন্দু পত্রী সেই কবে বাল্যকালে বৃষ্টি হয়েছিলসেই কবে বৃষ্টিজলে ভিজেছিল লাজুক কদমসেই কবে কদমের ডালে এক পাখি বসেছিলসেই পাখি বলেছিলপৃথিবীর ভিতরে আরেকগর্ভকেশরের মতো গোপনীর পৃথিবী রয়েছেসেই পৃথিবীর খোঁজে চাঁদ সদাগরঝড়ে-জলে ডুবে যাবে জেনেও নিজের নৌবহরসমুদ্রে ভাসিয়েছিল, ঘর পোড়া আগুনের মতো…
জ্বর
__পূর্ণেন্দু পত্রী স্মৃতিতে সর্বাঙ্গ জ্বলেএকশ পাঁচ ডিগ্রী ঘোর জ্বর।টালমাটাল ঝড়ঘুষি মারে হাড়ে মাসে ব্রক্ষ্মতালু রক্তকণিকায়যেন তাকে ছিড়েখুড়ে অন্য কিছু বানাবে এখুনি।হঠাৎ হরিণ হয়ে হয়তো সে ছুটে যাবে বহুদূর বাঘ-ডোরা বনেতুমুল আগুন জ্বেলে পলাশ যেখানে যজ্ঞ করে।নিজের বিবিধ টুকরো জুড়ে জাড়ে…
জেনে রাখা ভালো
__পূর্ণেন্দু পত্রী জলের মাছের মতো অনায়াস হবে ভেবেছিলেসব হাঁটাহাঁটি?ভেবেছিলে ধোঁয়া, ধুলো, থুতু, কফ পেঁজা তুলো হয়েউড়ে যাবে অন্য দিকে, তোমাকে ছাড়িয়ে?ভেবেছিলে পাট-ভাঙা জামায় লাগবে নাপেট্রোলের, পাঁঠা-কাটা রক্তের বা নর্দমার দাগ?ভেবেছিলে টিকটিকির মতো রয়ে যাবেআজীবন মসৃণ দেয়ালে? সময়ের কারখানায় কেবল তোমারই…
গাছ অথবা সাপের গল্প
__পূর্ণেন্দু পত্রী তোমাকে যেন কিসের গল্প বলবো বলেছিলাম?গাছের, না মানুষের?মানুষের, না সাপের?ওঃ, হ্যাঁ মনে পড়েছে।গাছের মতো একটা মানুষ।আর সাপের মতো একটা নারীকুয়াশা যেমন খামচা মেরে জড়িয়ে ধরে কখনো কখনোদুধকুমারী আকাশকেসাপটা তেমনি সাতপাকে জড়িয়ে ধরেছিল গাছটাকে।আর গাছটাও বেহায়া।লাজ-লজ্জা, লোক-লৌকিকতা ভুলে গিয়েনৌকা…
কোনো কোনো যুবক যুবতী
__পূর্ণেন্দু পত্রী একালের কোনো কোনো যুবক বা যুবতীর মুখেসেকালের মোমমাখা ঝাড়লন্ঠনস্তম্ভ ও গম্বুজ দেখা যায়।দেখে হিংসা জাগে। মানুষ এখন যেন কোনো এক বড় উনোনেরভাত-ডাল-তরকারির তলপেটে ডাইনীর চুলেরআগুনকে অহরহ জ্বালিয়ে রাখারচেলা কাঠ, কাঠ-কয়লা-ঘুটে। মানুষ এখন তার আগেকার মানুষ-জন্মেরকবচ, কুণ্ডল, হার, শিরস্ত্রাণ,…
একমুঠো জোনাকী
__পূর্ণেন্দু পত্রী একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়েফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।একমুঠো জোনাকীর আলো পেয়েএক একটা যুবক হয়ে যাচ্ছে জলটুঙি পাহাড়যুবতীরা সুবর্ণরেখা।সাপুড়ের ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকীপুজো সংখ্যা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী।একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়েফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার।ময়দানের মঞ্চে…
সোনার মেডেল
__পূর্ণেন্দু পত্রী বাবুমশাইরাগাঁগেরাম থেকে ধুলোমাটি ঘসটে ঘসটেআপনাদের কাছে এয়েচি।কি চাকচিকন শহর বানিয়েছেন গো বাবুরারোদ পড়লে জোছনা লাগলে মনে হয়কাল-কেউটের গা থেকে খসেপড়ারুপোর তৈরি একখান্ লম্বা খোলস।মনের উনোনে ভাতের হাঁড়ি হাঁ হয়ে আছে খিদেয়চালডাল তরিতরকারি শাকপাতা কিছু নেইকিন্তু জল ফুটছে টগবগিয়ে।…
তোমার মধ্যে
__পূর্ণেন্দু পত্রী তোমার মধ্যে নিষ্ঠুরতা ছিলএনভেলাপে ভূল ঠিকানা তাইতোমার মধ্যে ভালোবাসাও ছিলতারই আগুন জ্বালাচ্ছে দেশলাই। তোমর মধ্যে ভালোবাসাও ছিললাল হয়েছে ছুরির নীল ধারতোমার মধ্যে নিষ্ঠুরতাও ছিলউপড়ে দিলে টেলিফোনের তার।
কথা ছিল না
__পূর্ণেন্দু পত্রী কাল রাত্তিরেসূর্যের মুখে ফুটে উঠেছিলহো চি-মিনের হাসি।অথচ কাল রাত্তিরেসূর্য ওঠার কথা ছিল না। পরশু বিকেলেসাত বছরের কালো গোলাপটাথেতলে গেলইস্পাতের লরীতে।অথচ কালো গোলাপটারফুটপাথে ফোটার কথা ছিল না। আজ সকালেবন্দুকের শব্দে সাদা হয়ে গেলসবুজ বন।অথচ মানুষের মুঠোয়বন্দুক থাকার কথা ছিল…
যখন তোমার ফুলবাগানে
__পূর্ণেন্দু পত্রী কালকে তোমার ডাল ভেঙেছি, ফুল ছিঁড়েছি।অপরাধের হাওয়ায় ছিল ত্বরিৎগতিসেই কাঁপুনি ঝাউ পাতাতে, ক্ষয়ক্ষতি যার গায়ের ধুলোএমন মাদল, যার ডাকে বন আপনি দোলেপাহাড় ঠেলে পরাণ-সখা বন্ধু আসে আলিঙ্গনেসমস্ত রাত পায়ে পরায় সর্বস্বান্ত নাচের নেশা।দস্যু যেমন হাতড়ে খোঁজে বাউটি বালা…
বিষন্ন জাহাজ
__পূর্ণেন্দু পত্রী আমরা যেখানে বসেছিলামতার পায়ের তলায় ছিল নদীনদীতে ছিল নৌকাআর দূরে একটা বিষন্ন জাহাজ।আমি যখন তোমারতুমি যখন আমার ঠোঁটে বুনে দিচ্ছিলেযাবজ্জীবনের সুখঠিক সেই সময়ে ডুকরে কেঁদে উঠল জাহাজটাভোঁ বাজিয়ে।তারপর থেকে রোজআমাদের যাবজ্জীবন সুখের ভিতরেএকটু একটু করে ঢুকে পড়ছে সেই…
আমিই কচ আমিই দেবযানী
__পূর্ণেন্দু পত্রী একটা দিকে খাট পালঙ্ক, আরেকদিকে ঘামমধ্যিখানে যজ্ঞে জলে কাঠএক পা ছেঅটে ভুবন জুড়ে দিগ্নজয়ী ঘোড়াআরেক পায়ে জড়ানো চৌকাঠ।তুলতে যাই ভোরের ফুল শিশিরকণাসহঅগ্নিকণা লাফিয়ে ওঠে হাতেফর্সা রোদে শুকোতে চাই ময়লা বালুচরিহৃদয় ভেজে অকাল বৃষ্টিপাতে।শিরীষশাখা শান্তি দেবে, এলাম তপোবনেহিংসা হানে…
যে টেলিফোন আসার কথা
– পূর্ণেন্দু পত্রী যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতেসূর্য ডোবে রক্তপাতেসব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূণ্য বিছানাতে।একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি। অপেক্ষমান বুকের ভিতর কাঁসন ঘন্টা শাঁখের উলুএকশ বনেরবাতাস এস একটা গাছে হুলুস্থুলুআজ বুঝি…
পাওয়া না-পাওয়ার কানামাছি
__পূর্ণেন্দু পত্রী রঙীন রুমালে চোখ দুটো বাঁধানিজের সঙ্গে নিজের অষ্টপ্রহর- কানামাছি খেলাভারী চমৎকার ধাঁধা।যাকে ছোঁবার তাকে না ছুঁয়েআকাশ ধরতে হাত বাড়িয়ে আমি ধুলো মাটির ভূয়ে।হাত বাড়ালে হাতে জলের বদলে শামুকঅথচ ভেতরটা পরাগসুদ্ধ ফুলের জন্যে আপাদমস্তক কামুক।সিদুর রঙের কিছু দেখলেই মন…
তাজমহল ১৯৭৫
__পূর্ণেন্দু পত্রী বহুদিন একভাবে শুয়ে আছো, ভারতসম্রাট।বহুদিন মণিমুক্তো, মহফিল, তাজা ঘোড়া, তরুণ গোলাপএবং স্থাপত্য নিয়ে ভাঙাগড়া সব ভুলে আছো।সর্বান্তঃকরণ প্রেম, যা তোমার সর্বোচ্ছ মুকুট, তাও ভুলে গেছো নাকি?পাথরের ঢাকনা খুলে কখনো কি পাশে এসে মমতাজ বসে কোনোদিন?সুগন্ধী স্নানের সব পুরাতন…
কেবল আমি হাত বাড়ালেই
__পূর্ণেন্দু পত্রী হাওয়া তোমার আঁচল নিয়ে ধিঙ্গীনাচন করলো খেলাসকাল বিকেল সন্ধেবেলাচোখের খিদের আশ মেটালো লস্পটে রোদ রাস্তা ঘাটেযখন হাঁটো সঙ্গে হাঁটেবনের পথে হাঁটলে যখন কাঁটাগাছে টানলে কাপড়চ্যাংড়া ছোঁড়ার ফাজলামিকে ভেবেছিলাম মারবে থাপড়।একটা নদীর লক্ষটা হাত, ভাসিয়ে দিলে সর্বশরীরলুটপাটেতে ছিনিয়ে নিলে…
সেই গল্পটা
– পূর্ণেন্দু পত্রী আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।শোনো।পাহাড়টা, আগেই বলেছিভালোবেসেছিল মেঘকেআর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকেবানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরাসে তো আগেই শুনেছো। সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।পাহাড় মেঘেকে বললেআজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।মেঘ পাহাড়কে বললেআজ তোমাকে স্মান…
দুঃখ দিয়েছিলে তুমি
__পূর্ণেন্দু পত্রী দুঃখ দিয়েছিলে তুমিআবার লাইটারও দিয়েছিলে।বোতাম ছিড়ে আমাকে লগ্ন করেছোতুমি আবার বুনে দিয়েছো নাইলনের সবুজ জামা।কমলালেবু নিংড়ে নিংড়ে বানানো সরবৎভিতরে মিশিয়ে দিলে গোপন কান্নাকাটিস্মৃতির পেস্তা-বাদামসেই সরবৎ খেতে হবে এখন প্রত্যহবাইশ বছরের যুবকটা যতদিন আমারচুলের ভিতরে আঁচড়াবেআগুন রঙের চিরুনি।
অনেক বছর পরে
__পূর্ণেন্দু পত্রী অনেক বছর পরে তোর কাছে এসেছি, মল্লিকা!বহুদিন আপিসের কাজে-কন্মে ডুবুরির মতোবহুদি মেশিনের যন্ত্রপাতি হয়েবহুদিন বাবুদের গাড়ির টায়ার হয়ে সুদুরে ছিলাম। তোর পাশে চাঁপা ছিল, টগর, ঝুমকো-জবা ছিল।তারা কই ? মারা গেছে ? সে কি ? কবে ? সাতাত্তর…
পাহাড় গন্তব্য ছিল
__পূর্ণেন্দু পত্রী বইয়ের উপর থেকে ধুলো মুছে নিলেআরো ধুলো রয়ে যায় অক্ষরের স্থাপত্যকে ঘিরে।ফলে ব্যাঙই সাপ খায় গিলে। মানুষ যেযার মতো চোখে-ধুলো ব্যাখ্যা দিতে জানে,সূর্য, শিল্প, শ্রম, শান্তি, শস্য বা সংহতিআগুন-বীজের মতো এইসব মহাপ্রাণ শব্দেরও সহজতর মানে। মঞ্চ থেকে যে-মুহূর্তে…
নতুন শব্দ : সফদার হাসমি
__পূর্ণেন্দু পত্রী এই মৃত্যুশোককাঁধ থেকে নামানো যাবে না কোনোদিন।আর বর্বরতা কি নির্বোধ।যেন মৃত্যু হলেই মুছে যায়প্রতিজ্ঞার প্রাণ।আক্রমণ কোনো নতুন শব্দ নয়।হিংসা কোনো নতুন শব্দ নয়।নতুন শব্দ-সফদার হাসমি। সফদার হাসমি মানে জাগা,জেগে থাকা,জাগানো।
স্বরচিত নির্জনতা
__পূর্ণেন্দু পত্রী স্বরচিত নির্জনতা, সযত্ন-সৃজিত নির্জনতাতুমি আছ পার্শ্ববর্তী,কী অপুর্ব সুখ।বাইরে ভুলের হাওয়া বইছে বহুক।পল্লবেরা মরে শুধু পল্লবেরা অবেলায় ঝরেপল্লবেরা কাঁপে গায়ে হতাশার জরবনস’লী ভুলে গেছে নিজস্ব মর্মর। আদিম চীৎকার তুলেকাপালিক মগ্ন মন্ত্র পাঠেঅশ্রুধ্বনি নাভীমূলেঅবনত শোকে যারা হাঁটে। কেউ যদি চায়বিশ্বটাকে…
স্বপ্নের বিছানা
__পূর্ণেন্দু পত্রী রাত্রিবেলা বুকের মধ্যে একগোছা বৈদ্যুতিক তারআর নীল রঙের একটা বালব টাঙিয়ে রাখা ভালো।অন্ধকারে গায়ে নীল রঙের জামা পরিয়ে দিলেস্বপ্ন দেখার দরজা খুলে দেয় সে। মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক খাটেস্বপ্ন দেখার আলাদা কোনো বিছানা-বালিশ নেই।অবিকল স্বপ্নের মতো নারীরও শুয়ে নেই কোনো…
যূথী ও তার প্রেমিকেরা
__পূর্ণেন্দু পত্রী আকাশে বাতাসে তুমুল দ্বন্দ্বকে আগে কাড়বে যূথীর গন্ধকার হাতে বড় নখ।স্বর্গে মর্তে যে যার গর্তেযূথীকে গলার মালায় পরতেভীষণ উত্তেজক।। মেঘের ভঙ্গী গোঁয়ার মহিষরোদ রাগী ঘোড়া, সুর্ঘ সহিস,বজ্র বানায় বোমা। বিদ্যুৎ চায় বিদীর্ণ মাটিগাছে গাছে খাড়া সড়কি ও লাঠিনদী…