__নির্মলেন্দু গুণ যতক্ষণ তুমি কৃষকের পাশে আছো,যতক্ষণ তুমি শ্রমিকের পাশে আছো,আমি আছি তোমার পাশেই।যতক্ষণ তুমি মানুষের শ্রমে শ্রদ্ধাশীলযতক্ষণ তুমি পাহাড়ী নদীর মতো খরস্রোতাযতক্ষণ তুমি পলিমৃত্তিকার মতো শস্যময়ততক্ষণ আমিও তোমার।এই যে কৃষক বৃষ্টিজলে ভিজে করছে রচনাসবুজ শস্যের এক শিল্পময় মাঠ,এই যে…
Tag: নির্মলেন্দু গুণ
নির্মলেন্দু গুণ
জন্ম তারিখ | ২১ জুন ১৯৪৫ |
---|---|
জন্মস্থান | বারহাট্টা, নেত্রকোণা, বাংলাদেশ |
বর্তমান নিবাস | ঢাকা, বাংলাদেশ |
কবির পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। ১৯৪৫ সালের ২১শে জুন (৭ই আষাঢ় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) তিনি নেত্রকোনার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক কবি হিসাবে খ্যাতিমান হলেও কবিতার পাশাপাশি চিত্রশিল্প, গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীতেও তিনি স্বকীয় অবদান রেখেছেন। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ “প্রেমাংশুর রক্ত চাই” প্রকাশিত হবার পর থেকেই তিনি তীব্র জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর কবিতায় প্রেম ও নারীর পাশাপাশি স্বৈরাচার বিরোধিতা ও শ্রেণীসংগ্রামের বার্তা ওঠে এসেছে বার বার। তাঁর বহুল আবৃত্ত কবিতা সমূহের মধ্যে হুলিয়া, মানুষ, আফ্রিকার প্রেমের কবিতা, একটি অসমাপ্ত কবিতা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মানুষের হৃদয়ে ফুটেছি
__নির্মলেন্দু গুণ গতকাল ছিল কালো-লালে মেশাএকটি অদ্ভুত টুনটুনি ।লাফাচ্ছিল ডাল থেকে ডালে,পাতার আড়ালে, ফুল থেকে ফুলে । তার সোনামুখী ঠোঁট, যেনকলমের ডগায় বসানো একরত্তি হীরে ।প্রতিটি আঁচড়ে কেটে ভাগ করছিলফুল থেকে মধু, মধু থেকে ফুল;আমার সমস্ত কলতল ভেসে যাচ্ছিলরক্তকরবীর মধুস্রোতে…
প্রশ্নাবলী
__নির্মলেন্দু গুণ কী ক’রে এমন তীক্ষ্ণ বানালে আখিঁ,কী ক’রে এমন সাজালে সুতনু শিখা?যেদিকে ফেরাও সেদিকে পৃথিবী পোড়ে ।সোনার কাঁকন যখন যেখানে রাখো,সেখানে শিহরে, ঝংকার ওঠে সুরে । সুঠাম সবুজ মরাল বাঁশের গ্রীবাকঠিন হাতের কোমল পরশে জাগে,চুম্বন ছাড়া কখনো বাঁচে না…
আত্মকেন্দ্রিক স্বপ্ন
__নির্মলেন্দু গুণ প্রাণে জ্বলে ওঠে গগনচুম্বীবাসনা ঢেউ,তোমাকে পাবে না পরান ভরিয়াআমি ছাড়া কেউ । তাই বুঝি এই ঘটনাটি কতধ্রুব, অবশ্য;আমাকেও দ্রুত হতে হবে জানিদৃঢ়, স্ববশ্য । আমি চলে যাব পার হয়ে নদীথামব না মোটে,দেখবে তোমার আকাশে তখনকত তারা ফোটে-হলুদ-সবুজ, কালো-লাল…
সেই প্রজাপতি
__নির্মলেন্দু গুণ ফুলের মতো দেয়ালটাতেএকটি প্রজাপতি,দুঃসাহসে বসলো এসেআলোর মুখোমুখি;চিত্রিত নয় কালো রঙেরপাখনা দু’টি মেলে ।এবার বুঝি এলে ? দেয়াল জুড়ে লাগল তারঘরে ফেরার কাঁপন,প্রাণের মাছে ফিরল বুঝিচিরকালের আপন । ভালোবাসার অর্ঘ্য দিয়েমৃত্যুখানি কেনা,শেষ করেছি প্রথম দিনেহয়নি শুধু চেনা! চোখের পাশে…
বসন্ত বন্দনা
– নির্মলেন্দু গুণ হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরেবনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখিতবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক । এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,মন যেন…
বউ
__নির্মলেন্দু গুণ কে কবে বলেছে হবে না? হবে,বউ থেকে হবে ।একদিন আমিও বলেছিঃ ‘ওসবে হবে না ।’বাজে কথা। আজ বলি, হবে, বউ থেকে হবে ।বউ থেকে হয় মানুষের পুনর্জন্ম, মাটি,লোহা,সোনার কবিতা, —কী সে নয়? গোলাপ, শেফালি, যুঁই, ভোরের আকাশে প্রজাপতি,ভালোবাসা,…
তোমার চোখ এতো লাল কেন?
– নির্মলেন্দু গুণ আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাইকেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত । আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাইকেউ আমাকে…
ফুলদানি
__নির্মলেন্দু গুণ যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল,যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভুতোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায়সাজাবার সুজোগ পেতাম–; তাহলে দেখতে লীলা,তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরাউদ্বেল হৃদয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায়বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেইঃ‘খোঁপার…
আগ্নেয়াস্ত্র
__নির্মলেন্দু গুণ পুলিশ স্টেশনে ভিড়,আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরেরসন্দিগ্ধ সৈনিক। সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষেরশটগান, রাইফেল, পিস্তল এবং কার্তুজ, যেন দরগারস্বীকৃত মানৎ; টেবিলে ফুলের মতো মস্তানের হাত। আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছিকোমল বিদ্রোহী, প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরেঅথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের…
হুলিয়া
__নির্মলেন্দু গুণ আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীনএকটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকেআগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেইআমাকে জাপটে…
যুদ্ধ
__নির্মলেন্দু গুণ যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা,যুদ্ধ মানেইআমার প্রতি তোমার অবহেলা৷
মানুষ
__নির্মলেন্দু গুণ আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় । আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই…
নাস্তিক
__নির্মলেন্দু গুণ নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়,অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷ চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে,তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষশুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷ আমার জগত্ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা,তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয়…
উপেক্ষা
__নির্মলেন্দু গুণ অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারিসমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাওভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷ আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে?
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
– নির্মলেন্দু গুণ একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়েলক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছেভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’ এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,এই…
ওটা কিছু নয়
– নির্মলেন্দু গুণ এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?তেমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার । ওটা নয়, ওটা চুল…
যাত্রা-ভঙ্গ
– নির্মলেন্দু গুণ হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,মন বাড়িয়ে ছুঁই,দুইকে আমি এক করি নাএক কে করি দুই৷ হেমের মাঝে শুই না যবে,প্রেমের মাঝে শুইতুই কেমন করে যাবি?পা বাড়ালেই পায়ের ছায়াআমাকেই তুই পাবি৷ তবুও তুই বলিস যদি যাই,দেখবি তোর সমুখে পথ…
এবারই প্রথম তুমি
– নির্মলেন্দু গুণ ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলেমনে করো এই বিশ্ব নিখিলেএবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কোথাও ছিলে নাছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসেছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে৷এবারই প্রথম তুমি৷ এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না৷ফুলেও ছিলে না, ফলেও…
দাসবংশ
__নির্মলেন্দু গুণ কোনো কাজকর্ম তো নাই, খাচ্ছেন দাচ্ছেন, আরযখন যা চাচ্ছেন হাতের কাছে তাই পেয়ে যাচ্ছেন।স্প্যানিশ অলিভ অয়েল মালিশ করে পালিশ করছেনবেগম সাহেবার পাছা, আর নিজের বীচির চামড়া।আর আমরা আমাগো হুগায় মাখছি ভেরেণ্ডার তেল। আপনগো দিন যায় মহানন্দে, ভিসিআরে, টিভির…
সে যেন আমার চেয়ে বেশিদিন বাঁচে
কবিতা: সে যেন আমার চেয়ে বেশিদিন বাঁচে সাবানে জড়ানো দীর্ঘ কালো চুলতুমি ভুল করে রেখে গিয়েছিলে।খুলতে গিয়েও আমি তা খুলিনি।এই হোক বিহঙ্গের শেষ-আলিঙ্গন।বাথটাবে জলপদ্ম ভাসে।বুঝি ওটা জলপদ্ম নয়–,তোমার অবর্তমানেতোমার প্রণয়চিহ্ন হাসে।পুরুষের চোখে জল আসে!দেখি বেসিনে ফুলের মতোতোমার হারানো মুখফুটে আছে…