তারাপদ রায়
তারাপদ রায় (১৭ নভেম্বর, ১৯৩৬ – ২৫ আগস্ট, ২০০৭) বাংলার প্রসিদ্ধ কবি, ছোটগল্পকার ও প্রাবন্ধিক। বাংলা সাহিত্যে হালকা হাস্যরসের সাথে পরিমিত তিক্তরস মিশ্রণের পারঙ্গম স্রষ্টা তিনি।
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
তারাপদ রায়ের জন্ম ১৯৩৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখে অবিভক্ত বাংলায় বর্তমান বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। সেখানকার বিন্দুবাসিনী হাই ইংলিশ স্কুল হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় কলেজে পড়তে আসেন। মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে পড়াশোনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। ওই সময়েই কলকাতার কৃত্তিবাস পত্রিকাগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ কবি হিসাবে পরিচিতির সাথে অজস্র গদ্য রচনাও লিখেছেন।
কর্মজীবন
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুদিন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় শিক্ষকতা করেন। তারপরে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নেন। সম্পাদনা করেছেন দুটি লিটল ম্যাগাজিন- ‘পূর্ব মেঘ’ ও ‘কয়েকজন’।
সাহিত্য রচনা
বাল্য অবস্থা থেকেই কবিতা রচনা করে গেছেন তিনি। তার প্রথম কবিতার বই ‘তোমার প্রতিমা’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে। তার প্রকাশিত কবিতা সহস্রাধিক। কবিতার পাশাপাশি লিখতেন রম্যরচনা। তাছাড়াও লিখেছেন অজস্র গল্প, ছোট উপন্যাস ও শিশু সাহিত্য। তিনি রসসাহিত্যে ও শিশু সাহিত্যে বেশ গতিশীল ছিলেন। তার ‘ডোডো-তাতাই’ বিখ্যাত শিশু চরিত্র। বাংলা সাহিত্যে সার্থক রম্যরচয়িতাদের মধ্যে পাঠক পাঠিকাদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি নক্ষত্র রায় এবং ‘গ্রন্থকীট ছদ্মনামেও লিখতেন। সরকারি অতিথি হয়ে ঘুরেছেন ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বহু দেশে। শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।
উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ
কবিতার বই
সম্মাননা
তারাপদ রায় শিরোমণি পুরস্কার ও কথা পুরস্কার (১৯৯৫) এ ভূষিত হয়েছেন।
মৃত্যু
তিনি ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে প্রয়াত হন।
– তারাপদ রায় সত্য বই মিথ্যা বলিব না।হুজুর, ধর্মাবতার,প্রয়াতা শান্তিলতার সঙ্গে মদীয়েরকোনো রকম থারাপ সম্পর্ক ছিলো নাইহা সত্য যে, একবার মৌরিগ্রাম হইতেতাহাকে থলকমলের চারা আনিয়া দেই।আমাদের বংশে স্থলপদ্ম, বকফুল ইত্যাদিকিছু কিছু গাছ লাগানোর আস্য নাই।হুজুর, ধর্মাবতার,আস্য কথাটির অর্থ বলা কঠিন,সোজা…
– তারাপদ রায় শেষবার নামার আগে সমস্ত জিনিস পত্রগুলিতালিকা মিলিয়ে নিতে হবে, এবার ভ্রমণকালেপ্রচুর সংগ্রহ হ’লো, মিনে-করা আগ্রার ফুলদানি।জরির চপ্পল, দ্রুতগামী মেল ট্রেনে সচকিতভ্রূ-পল্লব, কী-কী ফেলে গেলে বাড়ি ফিরে দু:খ হবে?যে আমগাছের ছায়া সঙ্গে নিয়ে আসা অসম্ভবতা-ও বুঝি অজানিত হোল্ড-অলে…
– তারাপদ রায় বোলতা, ভিমরুল এবং মৌমাছিদের সঙ্গেকাঠপিঁপড়ে, ডেয়োপিঁপড়ে এবং লালপিঁপড়েদেরসন্ধিচুক্তি যেদিন স্বাক্ষরিত হল,কেউ মাথা ঘামায় নি।শুধু কালোপিঁপড়েরা বলেছিল,“আমাদের কিছুই বলার নেই।আমরা কাউকে কামড়াই নাশুধু সুড়সুড়ি দিই।’
– তারাপদ রায় কোনটা যে চন্দ্রমল্লিকার ফুলআর কোনতা যে সূর্যমুখী –বারবার দেখেওআমার ভুল হয়ে যায়,আমি আলাদা করতে পারি না৷ওলকপি এবং শালগম,মৃগেলের বাচ্চা এবং বাটামাছ,মানুষ এবং মানুষের মত মানুষ –বারবার দেখেওআমার ভুল হয়ে যায়,আমি আলাদা করতে পারি না৷বই এবং পড়ার মত…
– তারাপদ রায় আমি জানি গাব্বু ছাড়া আর কেউ লেখেনা কবিতা।আমি জানি গাব্বু ছাড়া আর কেউ পড়েনা কবিতা।আমি জানি গাব্বু ছাড়া আর কেউ বোঝেনা কবিতা।আমি জানি গাব্বু ছাড়া আর কেউ শোনেনা কবিতা।গাব্বুই গাব্বুর জন্য লিখে যায় গাব্বু-গাব্বু অসংখ্য কবিতা।গাব্বুই গাব্বুর…
– তারাপদ রায় আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই,আমরা যারা হাজার হাজার দিন খেয়ে ফেলেছি,বৃষ্টির দিন, মেঘলা দিন, কুয়াশা ঘেরা দিন,স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অধীর প্রতীক্ষারত দিন,অপমানে মাথা নিচু করে চোরের মত চলে যাওয়া দিন,খালি পেট, ছেঁড়া চটি, ঘামে ভেজা দিন,নীল পাহাড়ের…
– তারাপদ রায় সব কথা তোমাকে জানাবো ভেবেছিলামকিনে এনেছিলাম আকাশী রঙের বিলিতি হাওয়াই চিঠিসে চিঠির অক্ষরে অক্ষরে লেখা যেতকেন তোমাকে এখনো চিঠি লেখার কথা ভাবিলেখা যেতআমাদের উঠোনে কামিনী ফুলগাছেএবার বর্ষায় ফুলের ছড়াছড়িতুমি আরেকটু কাছে থাকলেইবৃষ্টিভেজা বাতাসে সে সৌরভ তোমার কাছে…
– তারাপদ রায় জয়দেবের কথা মনে রেখেতোমারই জন্য দারোয়ান রাখবো বাড়িতে।তুমি যাই করো, ঈশ্বর,আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে,আমার ছদ্মবেশেআমার কবিতা সম্পূর্ণ করতে এসো না।
– তারাপদ রায় স্মাইল প্লিজ, আপনারা প্রত্যেকেই একটু হাসুন,দয়া করে তাড়াতাড়ি, তা না হলে রোদ পড়ে গেলেআপনারা যে রকম চাইছেন তেমন হবে না,তেমন উঠবে না ছবি। আপনার ঘড়িটা ডানদিকেআর একটু, একটু সোজা করে প্লিজ, আপনি কি বলছেনঘাড়-টাড় সোজা করে দাঁড়ানো…
