– তসলিমা নাসরিন আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর নাআর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছেকোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ…
Tag: তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট ১৯৬২) বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক ও বিতর্কিত সাহিত্যিক । বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে একজন উদীয়মান কবি হিসেবে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করে তসলিমা এই শতকের শেষের দিকে নারীবাদী ও ধর্মীয় সমালোচনামূলক রচনার কারণে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি তার রচনা ও ভাষণের মাধ্যমে লিঙ্গসমতা, মুক্তচিন্তা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচার করায় ইসলামপন্থীদের রোষানলে পড়েন ও তাদের নিকট হতে হত্যার হুমকি পেতে থাকায় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে বাধ্য হন।তিনি কিছুকাল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন।এরপর তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতে অজ্ঞাতবাসে অবস্থানের সুযোগ পান।বর্তমানে তিনি দিল্লিতে বসবাস করছেন।
প্রথম জীবন
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ময়মনসিংহ শহরে তসলিমা নাসরিনের জন্ম হয়। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার মাতা ঈদুল ওয়ারা গৃহিণী এবং পিতা রজব আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সরকারী গ্রামীণ হাসপাতালে এবং ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মিটফোর্ড হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকহা) তে অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাহিত্য জীবন
তেরো বছর বয়স থেকে তসলিমা কবিতা লেখা শুরু করেন। কলেজে পড়ার সময় ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেঁজুতি নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তসলিমার কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা নামক তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে ও ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে আমার কিছু যায় আসে না কাব্যগ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয়। এই সময় তসলিমা ঢাকা হতে প্রকাশিত নঈমুল ইসলাম খান দ্বারা সম্পাদিত খবরের কাগজ নামক রাজনৈতিক সাপ্তাহিকীতে নারী অধিকার বিষয়ে লেখা শুরু করেন। তার কাব্যগ্রন্থ ও সংবাদপত্রের কলামে নারীদের প্রতি ইসলামপন্থীদের শোষণের অভিযোগ করায় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের একদল ইসলামপন্থী এই পত্রিকার অফিস ভাঙচুর করে। এই সময় নির্বাচিত কলাম নামক তার বিখ্যাত প্রবন্ধসংকলন প্রকাশিত হয়, যার জন্য ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে অতলে অন্তরীণ, বালিকার গোল্লাছুট ও বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা নামক আরো তিনটি কাব্যগ্রন্থ; যাবো না কেন? যাব ও নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প নামক আরো দুইটি প্রবন্ধসংকলন এবং অপরপক্ষ, শোধ, নিমন্ত্রণ ও ফেরা নামক চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
দেশত্যাগ
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসলামি ধর্মীয় আইন শরিয়া অবলুপ্তির মাধ্যমে কুরআন সংশোধনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর ফলে ইসলামপন্থীরা তার ফাঁসির দাবি জানাতে শুরু করে। তিন লাখ ইসলামপন্থীদের একটি জমায়েতে তাকে ইসলামের অবমাননাকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দালালরূপে অভিহিত করে। দেশ জুড়ে তার শাস্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়। হাবিবুর রহমান সিলেটে একটি সমাবেশে তার মাথার দাম ৫০ লাখ টাকা ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে জনগণের ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয় এবং জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেসময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম সহ বিভিন্ন জনের আশ্রয়ে তিনি দুই মাস লুকিয়ে থাকার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার জামিন মঞ্জুর করা হয় এবং তসলিমা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
নির্বাসিত জীবন
বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেনে ও ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জার্মানিতে বসবাস করেন।১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুইডেন ফিরে গেলে রাজনৈতিক নির্বাসিত হিসেবে জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি লাভ করেন। এই সময় তিনি সুইডেনের নাগরিকত্ব লাভ করেন ও সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এই সময় তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিকট দেশে ফেরার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হলে তিনি জাতিসংঘের ভ্রমণ নথি ত্যাগ করে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের নিকট হতে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফেরত পান ও বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে পুনরায় জামিন-অযোগ্য গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রুজু হলে তিনি পুনরায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন।
বৈবাহিক জীবন
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তসলিমা কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র প্রেমে পড়েন এবং গোপনে বিয়ে করেন।১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সাথে তার বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তার সম্পাদক মিনার মাহমুদকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। তসলিমার কোন সন্তানাদি নেই।
সমালোচনা
নানান সময়ে তসলিমা নাসরিন সমালোচিত হয়েছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে ইংরেজ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে টুইট করেন। তিনি বলেন, ‘মঈন আলী ক্রিকেট না খেললে সিরিয়াতে গিয়ে আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগ দিত।’ তার এই টুইটের ফলে আরো অনেক ক্রিকেটার এর বিরোধিতা করেন। ইংরেজ জাতীয় দলের পেসার আর্চার রি-টুইট করে লিখেছেন, “আপনি কি সুস্থ? আমার মনে হয় না।” তবে, তোপের মুখে এবং বিরোধিতার মুখে তসলিমা নাসরিন তার এই টুইট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।এছাড়াও আরো কিছু ইংরেজ ক্রিকেটার স্যাম বিলিংস ও বেন ডাকেট টুইটারে তসলিমা নাসরিনের আইডিটিকে রিপোর্ট করার জন্য আহবান জানান। তসলিমা নাসরিন পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি মূলত মঈন আলীকে নির্দেশ করে টুইটটি করেন নি। তিনি “কট্টর ইসলাম”কে নির্দেশ করে টুইটটি করেছেন। এবং এই টুইটের কারণে তার মাঝে কোন অনুশোচনা নেই। তাকে নিয়ে ইংরেজ ক্রিকেটারদের বিরোধিতা নিয়ে তিনি বলেন, “তারা তাদের সতীর্থকে সমর্থন করছে ভালো কথা। তারা বলেছে বলে আমি টুইটটি মুছে দিয়েছি, কিন্তু তারা আমার সম্পর্কে কতদূর জানে?”
গ্রন্থ তালিকা
- কবিতা
- শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা, ১৯৮১
- নির্বাসিত বাহিরে অন্তরে, ১৯৮৯
- আমার কিছু যায় আসে না , ১৯৯০
- অতলে অন্তরীণ, ১৯৯১
- বালিকার গোল্লাছুট, ১৯৯২
- বেহুলা একা ভাসিয়েছিল ভেলা, ১৯৯৩
- আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেবো মেপে, ১৯৯৪
- নির্বাসিত নারীর কবিতা, ১৯৯৬
- জলপদ্য, ২০০০
- খালি খালি লাগে, ২০০৪
- কিছুক্ষণ থাকো, ২০০৫
- ভালোবাসো? ছাই বাসো!, ২০০৭
- বন্দিনী, ২০০৮
- প্রবন্ধ সংকলন
- নির্বাচিত কলাম, ১৯৯০
- যাবো না কেন? যাব, ১৯৯১
- নষ্ট মেয়ের নষ্ট গল্প, ১৯৯২
- ছোট ছোট দুঃখ কথা, ১৯৯৪
- নারীর কোন দেশ নেই, ২০০৭
- নিষিদ্ধ, ২০১৪
- তসলিমা নাসরিনের গদ্য পদ্য, ২০১৫
- উপন্যাস
- অপরপক্ষ ১৯৯২
- শোধ, ১৯৯২
- নিমন্ত্রণ, ১৯৯৩
- ফেরা , ১৯৯৩
- লজ্জা, ১৯৯৩
- ভ্রমর কইও গিয়া, ১৯৯৪
- ফরাসি প্রেমিক ,২০০২
- শরম,২০০৯
- ছোট গল্প
- দু:খবতী মেয়ে, ১৯৯৪
- মিনু, ২০০৭
- আত্মজীবনী
- আমার মেয়েবেলা, ১৯৯৯
- উতাল হাওয়া, ২০০২
- ক, ২০০৩; (পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত নামে প্রকাশিত, ২০০৩)
- সেই সব অন্ধকার, ২০০৪
- আমি ভালো নেই, তুমি ভালো থেকো প্রিয় দেশ, ২০০৬
- নেই, কিছু নেই, ২০১০
- নির্বাসন, ২০১২
চলচ্চিত্র
তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র নির্বাসিত ২০১৪ সালে মুম্বাই চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পায়।২০১৫ সালে এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র বিভাগে ৬২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
তসলিমা তার উদার ও মুক্তচিন্তার মতবাদ প্রকাশ করায় দেশ-বিদেশ থেকে একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। সেগুলো হলো –
- আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ এবং ২০০০।
- নাট্যসভা পুরস্কার, বাংলাদেশ, ১৯৯২
- ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট কর্তৃক শাখারভ পুরস্কার, ১৯৯৪
- ফ্রান্স সরকার প্রদত্ত মানবাধিকার পুরস্কার, ১৯৯৪
- ফ্রান্সের এডিক্ট অব নান্তেস পুরস্কার, ১৯৯৪
- সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল পেন কর্তৃক কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার, ১৯৯৪
- যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ কর্তৃক হেলম্যান-হ্যামেট গ্রান্ট সম্মাননা, ১৯৯৪
- নরওয়েভিত্তিক হিউম্যান-এটিস্ক ফরবান্ড কর্তৃক মানবতাবাদী পুরস্কার, ১৯৯৪
নষ্ট মেয়ে
__তসলিমা নাসরিন ওরা কারো কথায় কান দেয় না, যা ইচ্ছে তাই করে,কারও আদেশ উপদেশের তোয়াককা করে না,গলা ফাটিয়ে হাসে, চেঁচায়, যাকে তাকে ধমক দেয়নীতি রীতির বালাই নেই, সবাই একদিকে যায়, ওরা যায় উল্টোদিকেএকদম পাগল!কাউকে পছন্দ হচ্ছে তো চুমু খাচ্ছে, পছন্দ…
ফেস অফ
__তসলিমা নাসরিন মেয়েটি আসছেমুখটি পোড়ামুখটি এখন আর মুখের মত দেখতে নয়,এক তাল কাদার ওপর দিয়ে যেন দৈত্য হেঁটে গেল,বীভৎস মুখটি। মুখ বলতে আসলে কিছু আর নেই।সে কোনও অ্যাসিড হাতে নিয়ে আসছে না,কোনও অ্যাসিড সে ছুঁড়বে না তোমার মুখে,সে এত নিষ্ঠুর…
মন উঠো
__তসলিমা নাসরিন মন তুমি ওঠো, ওঠো তুমি, তুমি ওঠো মন,মন মন মন ওঠো মন ওঠো মন তুমি ওঠো ওঠো মনমন ওঠো তুমিওঠো তুমি মনমন মন মনওঠো, লক্ষ্মী মন, তুমি ওঠো এবার,ওঠো ওই পুরুষ থেকে, মন ওঠো,ওঠো তুমি, শেকল ছিঁড়ে ওঠো,…
নারী-জন্ম
__তসলিমা নাসরিন তাদের জন্য আমার করুণা হয় যারা নারী নয়দুর্ভাগাদের জন্য আমার দুঃখ হয়, যারা নারী নয়।অবিশ্বাস্য এই শিল্প, অতুলনীয় শিল্প এই নারী, বিশ্বের বিস্ময়, বিচিত্রিতা।আমি নারী, বারবার চাই, শতবার চাই নারী হতে, নারী হয়ে জন্ম নিতে। সহস্র জন্ম চাই…
পদ্মাবতী
__তসলিমা নাসরিন স্বাতী আর শাশ্বতী ছিল, ওদের মধ্যে কী করে যেন চলে এলো পদ্মাবতী, স্বর্গ থেকে উড়েএল, কোনও হাওয়া তাকে এনে দিল, স্বপ্ন তাকে এনে দিল নাকি এ পাশের বাড়ির বউকেউ কিচ্ছু জানে না।ফিনফিনে শাড়িটি আর ছোটখাটো যা ছিল গাএ,…
যা ইচ্ছে তাই
__তসলিমা নাসরিন ‘শিউলি মেয়েটি এমন মিষ্টি করে হাসে আবার এমন কঠিন করে তাকায় যে না পারি চোখসরাতে, না পারি রাখতে।’ অরুণ বোধহয় বলল, নাকি সন্দীপ বলল,দুজনের মধ্যে কেউ একজন বলেছে। এমনও হতে পারে কেউ বলেনি, আমার মনবলেছে। আমাদের জাহাজটি বিদ্যাসাগর…
ও মেয়ে শোনো
__তসলিমা নাসরিন তোমাকে বলেছে –আস্তে, বলেছে –ধীরে.বলেছে –কথা না,বলেছে –চুপ।বলেছে– বসে থাকো,বলেছে– মাথা নোয়াও,বলেছে — কাঁদো। তুমি কি করবে জানো?তুমি এখন উঠে দাঁড়াবেপিঠটা টান টান করে, মাথাটা উঁচু করে দাঁড়াবে,তুমি কথা বলবে, অনর্গল বলবে, যা ইচ্ছে তাই বলবে,জোরে বলবে,চিৎকার করে…
তিন চার পাঁচ
__তসলিমা নাসরিন লোকটি বেরোলো ঘর থেকে, মুখে স্মিত হাসি,পাড়ায় বলাবলি হয়, হাসিটি বেশ মানায় ও মুখে,বয়স ষাট পেরিয়েছে কেউ বলবে না, স্ত্রীটিরও বেশ চোখ কাড়া রূপ।আজ দুপুরবেলা লোকটি একাই বেরোলো,একাই সে ভাবলো আজ ও বাড়িতে যাবে, ও বাড়ির যুবতীটিকদিন ধরে…
লজ্জা, ২০০২
__তসলিমা নাসরিন প্রথমে মেয়েটির পেটের বাচ্চাটি বের করে নিল পেট কেটে, খুব ধারালো ছুরিতে কেটে,এরপর বাচ্চাটির গলা কাটল তারা, মাথাটি ছুঁড়ে ফেললো মেয়েটির পায়ের কাছে, ধড়টিমাথার কাছে। ছুঁড়ে ফেলে বেদম হাসতে লাগল তারা। কারা তারা?তারা হিন্দু, সম্ভাব্য হিন্দুরাজ্যের দেশপ্রেমিক নাগরিক।মেয়েটি…
লজ্জা ২০০০
__তসলিমা নাসরিন পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করছে এগারোটি মুসলমান পুরুষ, ভর দুপুরে।ধর্ষণ করছে কারণ পূর্ণিমা মেয়েটি হিন্দু।পূর্ণিমাকে পূর্ণিমার বাড়ির উঠোনে ফেলে ধর্ষণ করছে তারা।পূর্ণিমার মাকে তারা ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রেখেছে,চোখদুটো খোলা মার, তিনি দেখতে পাচ্ছেন তার কিশোরী কন্যার বিস্ফারিত চোখ,যন্ত্রণায় কাতর শরীর।পূর্ণিমার…
শেখো
__তসলিমা নাসরিন দুদিনের জীবন নিয়ে আমাদের কত রকম ঢঙকিছুক্ষণ পরই তো ঢঙ ঢঙ ঘণ্টা বাজবে!চোখে তখন আর রঙ নেই, সব সাদা কালো,জঙ ধরা ত্বকে জাঁকালোঅসুখ হাঁটবে, অসুখ তো নয়, সঙ।কিছুতে কি আর ফিরে পাবো চোখে, চোখের আলো!বাদ দাও না ওইসব…
জীবনের কথা
__তসলিমা নাসরিন জীবন এত ছোট কেন! এত ছোট কেন জীবন!ছোট কেন এত!জীবনের ওপর প্রচণ্ড রাগ হয়,হলিই যদি, এত ছোট হলি কেন!এর রূপ রস গন্ধ ঘ্রাণউপভোগ করতে দে, দিলিই যদি জগতকে হাতে।ভালোবাসা যদি শেখালিই, তবে পেতে দিস না কেন,দিতে দিস না…
কারো কারো জন্য এমন লাগে কেন!
– তসলিমা নাসরিন জানি না কেন হঠাৎ কোনও কারণ নেই, কিছু নেই, কারও কারও জন্য খুবঅন্যরকম লাগেঅন্য রকম লাগে,কোনও কারণ নেই, তারপরও বুকের মধ্যে চিনচিনে কষ্ট হতে থাকে,কারুকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয়, পেতে ইচ্ছে হয়, কারুর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েবসতে…
হিসেব
– তসলিমা নাসরিন কতটুকু ভালোবাসা দিলে,ক তোড়া গোলাপ দিলে,কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,কটি নির্ঘুম রাত দিলে, ক ফোঁটা জল দিলে চোখের — সব যেদিন ভীষণ আবেগেশোনাচ্ছিলে আমাকে, বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো, আমি বুঝে নিলাম তুমিআমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসো…
ব্যস্ততা
__তসলিমা নাসরিন তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,যা কিছুই অর্জন-উপার্জন !এখন দেখ না ভিখিরির মতো কেমন বসে থাকি !কেউ ফিরে তাকায় না।তোমার কেন সময় হবে তাকাবার ! কত রকম কাজ তোমার !আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।সেদিন দেখলাম সেই…
পাখিটা
__তসলিমা নাসরিন তোমার হৃদয়টা জমে পাথর হয়ে আছে,পাথরটা দাও আমাকে, স্পর্শ করি,ওকে গলতে দাও।ভালোবাসা নামের পাখিটাকে তোমার বন্ধ খাঁচা থেকে উড়তে দাও,নাহলে ও তো মরে যাবে।
ব্যক্তিগত ব্যাপার
__তসলিমা নাসরিন ভুলে গেছো যাও,এরকম ভুলে যে কেউ যেতে পারে,এমন কোনও অসম্ভব কীর্তি তুমি করোনি,ফিরে আর তাকিও না আমার দিকে, আমার শূন্যতার দিকে।আমি যেভাবেই আছি, যেভাবেই থাকি এ আমার জীবন, তুমি এইজীবনের দিকে আর করুণ করুণ চোখে তাকিয়ে না কোনওদিন।ভুলে…
সময়
__তসলিমা নাসরিন সময় চলে যাচ্ছে– এই বীভৎস ব্যাপারটি দেখতে ইচ্ছে করে নাতাই অনেককাল ঘড়ির দিকে তাকাইনি,অনেককাল হাতে আমি ঘড়ি পরি না,আর যেই না তুমি বলছো সোয়া দশটায় কোথাও দেখা হবে কী দেড়টায় বাড়িতে আসবেকী সাতটায় থিয়েটারে,অমনি তড়িঘড়ি ঘড়ি খুঁজে হাতে…
যখন নেই, তখন থাকো
__তসলিমা নাসরিন যখন আমার সঙ্গে নেই তুমি,আমার সঙ্গে তুমি তখন সবচেয়ে বেশি থাকো।আমি হাঁটি, পাশাপাশি মনে হয় তুমিও হাঁটছো,তোমাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যাই,যা যা খেতে পছন্দ করো, কিনি, তুমি নেই জেনেও কিনি।রাঁধি যখন, দরজায় যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছো,মনে মনে…
তোমার জন্য
__তসলিমা নাসরিন আমি ঘুম থেকে জেগে উঠছি, তোমার জন্য উঠছি,শুয়ে আছি অনেকক্ষণ বিছানায়, তোমার জন্য,মনে মনে আমি তুমি হয়ে আমাকে দেখছি,তুমি আমাকে এরকম শুয়ে থাকতে দেখতে পছন্দ করছো হয়ত,শুয়ে থেকে তোমাকে ভাবছি, তোমাকে কাছে চাইছি,হয়ত তুমি পছন্দ করছো আমি যে…
কোথাও কেউ
__তসলিমা নাসরিন কোথাও না কোথাও বসে ভাবছো আমাকে, আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার,মনে মনে আমাকে দেখছো, কথা বলছো,হাঁটছো আমার সঙ্গে, হাত ধরছো,হাসছো।এমন যখন ভাবি, এত একা আমি, আমার একা লাগে না,ঘাসগুলোকে আগের চেয়ে আরও সবুজ লাগে,গোলাপকে আরও লাল,স্যাঁতস্যাঁতে দিনগুলোকেও…
বাঁচা
__তসলিমা নাসরিন আমার ভালোবাসা থেকে তুমি বাঁচতে চাইছো,দৌড়োচ্ছে! যেন তোমাকে ছুঁতে না পারি,দৌড়োচ্ছে! আর বলছো যে তুমি কচি খোকা নও,কিশোর নও, যুবক নও, তোমার অনেক বয়স এখন,তুমি এখন বৃদ্ধ, ধীশক্তি দৃষ্টিশক্তি কমছে, তুমি চাওনা ভালোবাসা এসে তোমারহৃদপিণ্ডটাকে এখন মারুক, তোমার…
রাত
__তসলিমা নাসরিন কত কত রাত কেটে যাচ্ছে একা বিছানায়,রাতগুলো ঘুমিয়ে, না ঘুমিয়ে, একাস্বপ্নে, না স্বপ্নে, একাএকাকীত্বে একাপিপাসায় তৃষ্ণায়বিছানার এক কিনারে আমি, বাকিটা ফাঁকা, অসভ্যের মত ফাঁকা।তাকে পেতে ইচ্ছে করে আমার, আমার বাঁ পাশে, আমার ডানে,আমার ওপরে, আমার নীচে। একজনকে এনে…
যদি বাসোই
– তসলিমা নাসরিন তুমি যদি ভালোই বাসো আমাকে, ভালোই যদি বাসো,তবে বলছো না কেন যে ভালো বাসো! কেন সব্বাইকে জানিয়ে দিচ্ছ না যে ভালোবাসো!আমার কানের কাছেই যত তোমার দুঃসাহস! যদি ভালোবাসো, ওই জুঁইফুলটি কেন জানে না যে ভালোবাসো!ফুলটির দিকে এত…
এ প্রেম নয়
– তসলিমা নাসরিন সারাক্ষণ তোমাকে মনে পড়েতোমাকে সারাক্ষণ মনে পড়েমনে পড়ে সারাক্ষণ।তুমি বলবে আমি ভালোবাসি তোমাকে, তাই।কিন্তু এর নাম কি ভালোবাসা?নিতান্তই ভালোবাসা? যে ভালোবাসা হাটে মাঠে না চাইতেই মেলে!ভালো তো আমি বাসিই কত কাউকে, এরকম তো মরে যাই মরে যাই…
নিঃস্ব
__তসলিমা নাসরিন শরীর তোকে শর্তহীন দিয়েই দিলাম,যা ইচ্ছে তাই কর,মাচায় তুলে রাখ বা মশলা মেখে খাকী যায় আসে আমার তাতে, কিছু কি আর আমার আছে!সেদিন থেকে আমার কিছু আমার নেই, যেদিন থেকে মন পেলি তুই,সবই তোকে দিয়ে থুয়ে নিঃস্ব হয়ে…
এমন ভেঙ্গে চুরে ভালো কেউ বাসেনি আগে
– তসলিমা নাসরিন কী হচ্ছে আমার এসব!যেন তুমি ছাড়া জগতে কোনও মানুষ নেই, কোনও কবি নেই, কোনও পুরুষ নেই, কোনওপ্রেমিক নেই, কোনও হৃদয় নেই!আমার বুঝি খুব মন বসছে সংসারকাজে?বুঝি মন বসছে লেখায় পড়ায়?আমার বুঝি ইচ্ছে হচ্ছে হাজারটা পড়ে থাকা কাজগুলোর…
শুয়ে শুয়ে
__তসলিমা নাসরিন আমার সঙ্গে শোবে এসো,তোমার উরুতে আমি আমার মাথাটি রাখছি,আর আমার কাত হয়ে শোওয়া কোমরের খাঁজে তোমার বাহু রাখো,এভাবে ভাই বোনের মত, বোন বোনের মত, টোনাটুনির মত, সুকসারীর মত,পেঙ্গুইন দম্পতির মত চলো শুয়ে থাকি।শুয়ে শুয়ে কবে কোন শিশুকালে দুপুরের…
আরও প্রেম দিও
__তসলিমা নাসরিন আরও প্রেম দিও আমাকে, এত অল্প প্রেমে আমার হয় না, আমি পারি না।আরও প্রেম দিও, বেশি বেশি প্রেম দিওযেন আমি রেখে কুলিয়ে উঠতে না পারি,যেন চোখ ভরে,হৃদয়ের সবকটি ঘর যেন ভরে যায়যেন শরীর ভরে, এই তৃষ্ণার্ত শরীর।প্রেম দিতে…