– চণ্ডীদাস এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা,কেমনে আইল বাটে?আঙ্গিনার কোণে তিতিছে বঁধুয়া,দেখিয়া পরাণ ফাটে।সই, কি আর বলিব তোরে,বহু পুণ্যফলে সে-হেন বঁধুয়াআসিয়া মিলল মোরে।ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ,বিলম্বে বাহির হৈনু –আহা মরি মরি, সংকেত করিয়া
Tag: চণ্ডীদাস
চণ্ডীদাস
চণ্ডীদাস (১৩৭০-১৪৩০),মধ্যযুগের চতুর্দশ শতকের বাঙালি কবি। তিনি চৈতন্য-পূর্ব বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলী রচয়িতা হিসেবে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। চৈতন্যের জন্মের আগে থেকেই চণ্ডীদাসের নামোল্লেখিত বহু গীতিপদ মানুষের মুখে মুখে ফিরত। চৈতন্য নিজে তার পদ আস্বাদন করতেন। শ্রুতি আছে, রজকিনী রামী তার সহজসাধনের সঙ্গিনী ছিলেন।
চণ্ডীদাস-সমস্যা
বাংলাদেশের মাগুরা জেলা সদর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের শতখালী গ্রামের ধোপাখালী পাড়া তে জন্ম নেন চণ্ডিদাস।
বাংলা ভাষায় রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত প্রায় ১২৫০ টির অধিক কাব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে রচয়িতা হিসেবে বড়ু চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও দ্বিজ চণ্ডীদাস তিনটি ভিন্ন নামের উল্লেখ রয়েছে আবার কোনোটিতে রচয়িতার নামের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় নি। এ কাব্যগুলো ভণিতা নামে পরিচিত। ভণিতা একই ব্যক্তি কর্তৃক রচিত কিনা তা পরিষ্কার করে জানা যায় না। আধুনিক পণ্ডিতরা ধারণা করে থাকেন, বর্তমান যে সকল কবিতা চণ্ডীদাসের নামে রয়েছে তা অন্তত চারজন ভিন্ন চণ্ডীদাস কর্তৃক রচিত হয়েছে। ভণিতা কাব্যের রচনাশৈলী অনুযায়ী তাদের পৃথক করা যায়।
বড়ু চণ্ডীদাস
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা বড়ুচণ্ডীদাস। যদিও তার আত্মপরিচয় বা জীবনকথা জাতীয় কিছু পাওয়া যায় না বলে তার প্রকৃত পরিচয় কিছুটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। কাব্যে তার তিনটি ভণিতা পাওয়া যায় – ‘বড়ুচণ্ডীদাস’, ‘চণ্ডীদাস’ ও ‘অনন্ত বড়ুচণ্ডীদাস’। এর মধ্যে ‘বড়ুচণ্ডীদাস’ ভণিতা মিলেছে ২৯৮টি স্থানে ও ‘চণ্ডীদাস’ ভণিতা মিলেছে ১০৭ বার। ৭টি পদে ব্যবহৃত ‘আনন্ত’ শব্দটি প্রক্ষিপ্ত বলেই মনে করা হয়। ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা মনে করেন, চণ্ডীদাস তার নাম এবং বড়ু প্রকৃতপক্ষে তার কৌলিক উপাধি বাঁড়ুজ্যে বা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপভ্রংশ। কবি চৈতন্যপূর্ববর্তীকালের মানুষ। সম্ভবত পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তিনি জীবিত ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে চণ্ডীদাস সমস্যা এবং পদাবলির চণ্ডীদাসকে নিয়ে বাঁকুড়া ও বীরভূমের মধ্যে যত বিবাদই বিদ্যমান থাকুক না কেন, ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা ভাষাতাত্ত্বিক তথ্যপ্রমাণের সাহায্যে প্রমাণ করেছেন, ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ রচয়িতা বড়ুচণ্ডীদাস বাঁকুড়া জেলার সদর মহকুমাস্থ ছাতনার অধিবাসী ছিলেন।বড়ুচণ্ডীদাস বাসলী দেবীর উপাসক ছিলেন এবং দেবীমন্দিরের নিকটবর্তী স্থানে তার ‘চিত্রনাটগীতি’ পরিবেশনের নাট্যশালা ছিল। এই বাসলী দেবী প্রকৃতপক্ষে শক্তিদেবী চণ্ডী অথবা মনসার অপর নাম। সম্ভবত বাসলী দেবীর বাৎসরিক পূজায় গীত হওয়ার উদ্দেশ্যে দেবীর স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে কবি কর্তৃক এই কাব্য রচিত হয়েছিল।
মানবিক প্রেমের কয়েকটি পদ
– চণ্ডীদাস “ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আছয়ে যে জন, কেহ না জানয়ে তারে।প্রেমের আরতি যে জন জানয়ে সেই সে চিনিতে পারে।।” “মরম না জানে, মরম বাথানে, এমন আছয়ে যারা।কাজ নাই সখি, তাদের কথায়, বাহিরে রহুন তারা।আমার বাহির দুয়ারে কপাট লেগেছে – ভিতর…