কাবুলিওয়ালা

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাবুলিওয়ালা– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর                 আমার পাঁচ বছর বয়সের ছোটো মেয়ে মিনি এক দণ্ড কথা না কহিয়া থাকিতে পারে না। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া ভাষা শিক্ষা করিতে সে কেবল একটি বৎসর কাল ব্যয় করিয়াছিল, তাহার পর হইতে যতক্ষণ সে…

বলাই

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলাই– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের…

রামের সুমতি

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রামের সুমতি– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টুবুদ্ধি কম ছিল না। গ্রামের লোকে তাহাকে ভয় করিত। অত্যাচার যে তাহার কখন কোন্‌ দিক দিয়া কিভাবে দেখা দিবে, সে কথা কাহারও অনুমান করিবার জো ছিল না।…

কাশীনাথ

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাশীনাথ– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক রাত্রি চারটার সময় স্নানান্তে পূজাহ্নিক সমাপ্ত করিয়া টিকিটি বেশ উঁচু করিয়া বাঁধিয়া কাশীনাথ যখন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের টোল-ঘরের বারান্দায় বসিয়া দর্শনের সূত্র ও ভাষ্য গুনগুন স্বরে কণ্ঠস্থ করিত, তখন তাহার বাহ্য-জগতের কথা আর মনে…

পুরস্কার

– সত্যজিৎ রায় পুরস্কার– সত্যজিৎ রায় বয়স চব্বিশ, লম্বা, রোগাটে। হাত-পা রোগা, মুখখানা শীর্ণ, পকেটের দশা আরও কাহিল। লোকটি একজন শিল্পী। গল্পের সূচনায় তাকে তেপায়া একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যেভাবে বসে আছে, তাতে মনে হয়, নড়াচড়া করবার উদ্যমটুকু…

বর্ণান্ধ

– সত্যজিৎ রায় বর্ণান্ধ– সত্যজিৎ রায় দুষ্প্রাপ্য বইখানাকে বগলে গুঁজে পুরনো বইয়ের দোকানের ভ্যাপসা মলিন পরিবেশ থেকে আমি বাইরের রাস্তায় বেরিয়ে এলাম। অগস্ট মাস। বিষণ্ণ গুমোট সন্ধেগুলি যেন এই সময়ে একটা ভারী বোঝার মতো মানুষের বুকের উপরে চেপে বসে। কিন্তু…

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

– সত্যজিৎ রায় বঙ্কুবাবুর বন্ধু– সত্যজিৎ রায় বঙ্কুবাবুকে বুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা…

টেরোড্যাকটিলের ডিম

– সত্যজিৎ রায় টেরোড্যাকটিলের ডিম– সত্যজিৎ রায় বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফিরতেন। এখন ট্রামের…

সেপ্টোপাসের খিদে

– সত্যজিৎ রায় সেপ্টোপাসের খিদে– সত্যজিৎ রায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই।…

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প

– নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প লবণ দিয়ে খাই হোজ্জা আর তার এক বন্ধু একবার এক হোটেলে ঢুকল কিছু খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে হিসাব করে দেখল যে, দুই গ্লাস দুধ খাওয়ার মতো টাকা ওদের হাতে নেই। তাই দুজনের জন্য…

বেঁচে থাকো সর্দি কাশি

– সৈয়দ মুজতবা আলী গল্প: বেঁচে থাকো সর্দি কাশিলেখক: সৈয়দ মুজতবা আলী ভয়ঙ্কর সর্দি হয়েছে। নাক দিয়ে যা জল বেরচ্ছে তা সামলানো রুমালের কর্ম নয়। ডবল সাইজের বিছানার চাদর নিয়ে আগুনের কাছে বসেছি। হাঁচছি আর নাক ঝাড়ছি, নাক ঝাড়ছি, আর…

কাঞ্চনমালা আর কাঁকনমালা

-কাঞ্চনমালা আর কাঁকনমালা কাঞ্চনমালা আর কাঁকনমালা অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার একটাই পুত্র। রাজপুত্রের সঙ্গে সেই রাজ্যের রাখাল ছেলের খুব ভাব। দুই বন্ধু পরস্পরকে খুব ভালোবাসে। রাখাল মাঠে গরু চরায়, রাজপুত্র গাছতলায় বসে তার জন্য…

নতুনদা

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নতুনদা– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দাঁড় বাধিয়া পাল খাটাইয়া ঠিক হইয়া বসিয়াছি। অনেক বিলম্বে ইন্দ্রের নতুনদা আসিয়া ঘাটে পোঁছিলেন। চাঁদের আলোতে তাহাকে দেখিয়া ভয় পাইয়া গেলাম। কলকাতার বাবু অর্থাৎ ভয়ংকর বাবু। সিষ্কের মোজা, চ্কচকে পাম্প–সু, আগাগোড়া ওভারকোটে মোড়া, গলায় গলাবন্ধ,…

লালু : ১

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লালু : ১– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছেলেবেলায় আমার এক বন্ধু ছিল তার নাম লালু। অর্ধ শতাব্দী পূর্বে—অর্থাৎ, সে এতকাল পূর্বে যে, তোমরা ঠিকমত ধারণা করতে পারবে না—আমরা একটি ছোট বাঙলা ইস্কুলের এক ক্লাসে পড়তাম। আমাদের বয়স তখন দশ-এগারো।…

লালু : ২

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লালু : ২– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ডাকনাম ছিল লালু। ভাল নাম অবশ্য একটা ছিলই, কিন্তু মনে নেই। জানো বোধ হয়, হিন্দীতে ‘লাল’ শব্দটার অর্থ হচ্ছে—প্রিয়। এ-নাম কে তারে দিয়েছিল জানিনে, কিন্তু মানুষের সঙ্গে নামের এমন সঙ্গতি কদাচিৎ…

লালু : ৩

– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লালু : ৩– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের শহরে তখন শীত পড়েছে, হঠাৎ কলেরা দেখা দিলে। তখনকার দিনে ওলাউঠার নামে মানুষে ভয়ে হতজ্ঞান হতো। কারও কলেরা হয়েছে শুনতে পেলে সে-পাড়ায় মানুষ থাকতো না। মারা গেলে দাহ করার লোক মেলা…

এক ছিল জোলা 

– রুহুল আমিন বাবুল এক ছিল জোলা– রুহুল আমিন বাবুল জঙ্গলবাড়ি নামে এক রাজ্য ছিল। সে রাজ্যের এক পাশে বাস করত এক জোলা আর তার বউ। জোলা ছিল বোকার হদ্দ আর কুঁড়ের একশেষ। রাতে ঘুম আর দিনের বেলায় টো-টো করে ঘুরে…

ইঁদুরের ভোজ

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইঁদুরের ভোজ– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছেলেরা বললে, ভারি অন্যায়, আমরা নতুন পণ্ডিতের কাছে কিছুতেই পড়ব না৷ নতুন পণ্ডিতমশায় যিনি আসছেন তাঁর নাম কালীকুমার তর্কালঙ্কার৷ ছুটির পরে ছেলেরা রেলগাড়িতে যে যার বাড়ি থেকে ফিরে আসছে ইস্কুলে৷ ওদের মধ্যে একজন…

সম্পত্তি সমর্পণ

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পত্তি সমর্পণলেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম পরিচ্ছেদ বৃন্দাবন কুণ্ড মহাক্রুদ্ধ হইয়া আসিয়া তাহার বাপকে কহিল, “আমি এখনই চলিলাম।” বাপ যজ্ঞনাথ কুণ্ড কহিলেন, “বেটা অকৃতজ্ঞ, ছেলেবেলা হইতে তোকে খাওয়াইতে পরাইতে যে ব্যয় হইয়াছে তাহার পরিশোধ করিবার নাম নাই, আবার…

গোপ্যার বউ

– জসীম উদ্দীন গল্প: গোপ্যার বউলেখক: জসীম উদ্দীন গোপ্যাকে লইয়া পাড়ার লোকের হাসি-তামাশার আর শেষ নাই। কেহ তাহার মাথায় কেরাসিন তৈল মালিশ করিতে ছুটিয়া আসে, কেহ তাহার গায়ে ধূলি দেয়। তবু তার গপ্প থামে না। জোয়ারের পানির মতো তাহার মুখ…

আয়না

– জসীম উদ্দীন গল্প: আয়নালেখক: জসীম উদ্দীন এক চাষী খেতে ধান কাটিতে কাটিতে একখানা আয়না কুড়াইয়া পাইল। তখন এদেশে আয়নার চলন হয় নাই। কাহারও বাড়িতে একখানা আয়না কেহ দেখে নাই। এক কাবুলিওলার ঝুলি হইতে কি করিয়া আয়নাখানা মাঠের মাঝে পড়িয়া…

আষাঢ়ের এক রাতে

– হালিমা খাতুন আষাঢ়ের এক রাতে– হালিমা খাতুন একবার দাদার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে আবু বিশাল একটা বোয়াল মাছ ধরেছিল। খালি আষাঢ় মাস। ঝরঝর বৃষ্টি পড়ছিল থেকে থেকে। আর বিদ্যুতের ঝলক আকাশের ওপরে সােনার দাগ কেটে পালিয়ে যাচ্ছিল মাঝে মাঝে।…

মানুষের মন

– বনফুল মানুষের মন– বনফুল নরেশ ও পরেশ। দুইজনে সহোদর ভাই। কিন্তু এক বৃন্তে দুইটি ফুল- এ উপমা ইহাদের সম্বন্ধে খাটে না। আকৃতি ও প্রকৃতি – উভয় দিক দিয়াই ইহাদের মিলের অপেক্ষা অমিলই বেশি। নরেশের চেহারার মোটামুটি বর্ণনাটা এইরূপ :…

অলক্ষুণে জুতো

– মোহাম্মদ নাসির আলী অলক্ষুণে জুতো– মোহাম্মদ নাসির আলী অনেক কাল আগের কথা। আলী আবু আম্মুরী নামে একজন ধনীলোক বাস করত বাগদাদ শহরে। শহরের ওপরে তার যেমন ছিল একখানা চমৎকার বাড়ি, তেমনি ছিল যথেষ্ট টাকা-পয়সা। শহরে সবাই তাকে ধনী বলে…

বিচার নেই

– আমীরুল ইসলাম বিচার নেই– আমীরুল ইসলাম বাদশাহর কঠিন অসুখ। সারাদিন তিনি বিছানায় শুয়ে থাকেন। শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হচ্ছে। মনে কোনো সুখ নেই। কাজকর্ম করতে পারেন না। বেঁচে থাকার আর কোনো আশা নেই তাঁর। বাদশাহ বুঝলেন, মৃত্যু…

রিপভ্যান উইংকল

– ফখরুজ্জামান চৌধুরী রিপভ্যান উইংকল– ফখরুজ্জামান চৌধুরী[ওয়াশিংটন আরভিং রচিত ‘রিপভ্যান উইংকল’ অবলম্বনে] হাডসন নদীর ওপর দিয়ে জাহাজে করে যারা গেছে তাদের সবারই দৃষ্টি কেড়েছে ক্যাটসাকিল পাহাড়গুলো। নদীর পশ্চিম দিকে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এ পাহাড়শ্রেণি। এসব রূপকথার পাহাড়ের নিচে আছে এক…

দুই মুসাফির

– শওকত ওসমান দুই মুসাফির– শওকত ওসমান গ্রীষ্মের দুপুর প্রায় শেষ। অড়হর খেতে ছায়া পড়ছে। ক্রমশ দীর্ঘতর। কুষ্টিয়া জেলাবোর্ডের সড়ক পথে একজন পথিক হাঁটছিলেন। পরনে গেরুয়া তহবন্দ, গায়ে গেুরুয়া আলখেল্লা। লম্বাটে মুখবোঝাই সাদা দাড়ি। হাতে একটা একতারা। পথিক ঘর্মক্লান্ত। তবু…

অপূর্ব ক্ষমা

– মীর মশাররফ হোসেন অপূর্ব ক্ষমা– মীর মশাররফ হোসেন অনুজের হস্ত ধরিয়া হাসান নিজ শয্যার উপরে বসাইয়া মুখে বারবার চুম্বন দিয়া বলিতে লাগিলেন, ভাই, আমি যে কষ্ট পাইতেছি তাহা মুখে বলিবার শক্তি নাই। পূর্ব আঘাত, পূর্ব পীড়া এই উপস্থিত যন্ত্রণায়…

আদুভাই

– আবুল মনসুর আহমদ আদুভাই– আবুল মনসুর আহমদ এক আদুভাই ক্লাস সেভেনে পড়তেন। ঠিক পড়তেন না বলে পড়ে থাকতেন বলাই ভালো। কারণ ঐ বিশেষ শ্রেণী ব্যতীত আর কোনো শ্রেণীতে তিনি কখনো পড়েছেন কিনা, পড়ে থাকলে ঠিক কবে পড়েছেন, সে-কথা ছাত্ররা…

জলপরী ও কাঠুরের গল্প

– ঈশপ জলপরী ও কাঠুরের গল্প– ঈশপ কোনো এক বনে এক কাঠুরিয়া রোজ কাঠ কাটতে যেত। ভারি গরিব সে। দৈনিক কাঠ বিক্রি করে যা রোজগার করত তাই দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে-পরে দিন চলত। একদিন এক নদীর ধারে সে গেল কাঠ কাটতে। সেখানে…

Posts navigation