– কুসুমকুমারী দাশ সোনার ছেলে খোকামণি, তিনটি বিড়াল তার,একডণ্ড নাহি তাদের করবে চোখের আড় |খেতে শুতে সকল সময় থাকবে তারা কাছে,না হ’লে কি খোকামণির খাওয়া দাওয়া আছে?এত আদর পেয়ে বিড়াছানাগুলি,দাদা, দিদি, মাসি, পিসি সকল গেছে ভুলি |সোনামুখী, সোহাগিনী, চাঁদের কণা…
Tag: কুসুমকুমারী দাশ
কুসুমকুমারী দাশ
কুসুমকুমারী দাশ (২১ সেপ্টেম্বর ১৮৭৫ – ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৮) একজন বাঙালি মহিলা কবি। তার রচিত “আদর্শ ছেলে”, যার প্রথম চরণ “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে”, বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্র জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় কবি।
জন্ম ও পরিবার
কবি কুসুমকুমারী দাশ বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে সেপ্টেম্বর এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাশ এবং মাতা ধনমাণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় গৈলা গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন।
শিক্ষাজীবন
কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তার বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন। প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তার বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাশের সঙ্গে। তারই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন। তিনি বরিশাল মহিলা সভার সম্পাদক ছিলেন (Barishal Women Society)।
সাহিত্যকর্ম
ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল। তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন “ব্রহ্মবাদী” পত্রিকায়। তার অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে “প্রবাসী” ও “মুকুল” পত্রিকায়।তিনি নিয়মিত পত্রিকা রাখতেন। কিন্তু অধিকাংশই পাওয়া যায়নি কারণ হয় সেগুলো হয় হারিয়ে গেছে নতুবা তিনি সেগুলো নষ্ট করেছেন।তার কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কবিতা মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন।
সম্মাননা
“নারীত্বের আদর্শ” এক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন। তার পুত্র কবি জীবনানন্দ লিখেছেন-
“সাহিত্য পড়ায় ও আলোচনায় মাকে বিশেষ অংশ নিতে দেখেছি। দেশি বিদেশি কোনো কোনো কবি ও ঔপন্যাসিকের কোথায় কি ভাল,কি বিশেষ তাঁরা দিয়ে গেছেন- এ সবের প্রায় প্রথম পাঠ তাঁর কাছ থেকে নিয়েছি। তাঁর স্বাভাবিক কবিমনকে তিনি শিক্ষিত ও স্বতন্ত্র করে তোলবার অবসর পেয়েছিলেন। কিন্তু বেশি কিছু লিখবার সুযোগ পেলেন না।…. তখনকার দিনের সেই অসচ্ছল সংসারের একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হল না।”
মৃত্যু
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
দাদার চিঠি
– কুসুমকুমারী দাশ আয়রে মনা, ভুতো, বুলী আয়রে তাড়াতাড়ি,দাদার চিঠি এসেছে আজ, শুনাই তোদের পড়ি |“কলকাতাতে এসেছি ভাই কালকে সকাল বেলা,হেথায় কত গাড়ি, ঘোড়া, কত লোকের মেলা | পথের পাশে সারি সারি দু’কাতারে বাড়িদিন রাত্তির হুস্ হুস্ করে ছুটেছে রেল…
বসন্তে
– কুসুমকুমারী দাশ উত্সব গান, মধুময় তানআকাশ ধরণী-তলেকুঞ্জে কুঞ্জে বিহগ কণ্ঠেলতায় পাতায় ফুলে |হৃদয়ে সবার দিয়েছে রে দোলনাচিয়া উঠিছে প্রাণ,(এ যে) নূতন দেশের মোহন ঝঙ্কারনূতন দেশের গান |এ বসন্ত কার, দিতেছে বাহারচেতনার ঢেউ খুলিকেবা আপনার, কেবা পর আরব্যবধান গেছে খুলিআজ…
মায়ের প্রতি
– কুসুমকুমারী দাশ তোমার বন্দিনী মূর্তি ফুটিল যখন,দীপ্ত দিবালোকে,সহস্র ভায়ের প্রাণ উঠিল শিহরি,ঘৃণা, লজ্জা, শোকে |পবিত্র বন্দনমন্ত্রে কম্পিত বাংলাদূর আর্য ভূমি!মুক্তকণ্ঠে যুক্তকরে ডাকিছে তোমায়,হে লজ্জাবারিণী— |সাধনার ধন তুমি ভারতবাসীর,—সহস্র পীড়নে,উপবাসে, অনশনে ভোলে নাই তোমা |দুর্বল সন্তানেদিব্য মন্ত্রে দিব্য স্নেহে দাও…
বন্দনা
– কুসুমকুমারী দাশ বিশ্ব আঁধার ভেদিয়া করে বন্দনানবীন রক্ত তপন মহান আলোকে |গরজি গভীর স্বননে ধায় পারাবারচুমিতে চরণতল অতুল পুলকে!বনে উপবনে ফোটে কত ফুলশিশিরসিক্ত নব-লাবণ্যে ভরিয়াপরিমল শোভা সকলি বিকশি উঠেতব মধুর পরশ লাগিয়াদিগ্ দিগন্তে চুমিয়া বহে সমীরণকাহারে খুঁজিছে সে দিশেহারা…
আদর্শ ছেলে
-কুসুমকুমারী দাশ আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবেকথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন“মানুষ হইতে হবে” — এই তার পণ,বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ?হাত, পা সবারই…
উদ্বোধন
– কুসুমকুমারী দাশ বঙ্গের ছেলে-মেয়ে জাগো, জাগো, জাগো,পরের করুণা কেন শুধু মাগো—আপনারে বলে নির্ভর রাখোহবে জয় নিশ্চয়—চারিদিকে হেরো কী দুঃখ-দুর্দিন,কত ভাই বোন অন্ন-বস্ত্র-হীন,সোনার বাংলা হয়েছে মলিনকী দীরুণ বেদনায়—তোমরা জাগিয়া দুঃখ ঘুচালে,সকলের ব্যথা সকলে বুঝিলেত্যাগ, একতায় জাগিয়া উঠিলে,তবে বঙ্গ রক্ষা পায়…
সাধন পথে
– কুসুমকুমারী দাশ এক বিন্দু অমৃতের লাগিকি আকুল পিপাসিত হিয়া,এক বিন্দু শান্তির লাগিয়াকর্মক্লান্ত দুটি বাহু দিয়া—কাজ শুধু করে যায়অন্তরেতে দুরন্ত সাধনা,তুমি তার দীর্ঘ পথেহবে সাথী একান্ত ভাবনা |সে জানে এ আরাধনাকবে তার হইবে সফল ;তব বাণী যেই দিন তারিভাষা হয়ে…
অরূপের রূপ
– কুসুমকুমারী দাশ রূপসিন্ধু মাঝে হেরি অরূপ তোমায়,হৃদয় ভরিয়া গেল সুধার ধারায়!কোন্ মৃত্তিকায় খুঁজি কোন তীর্থ-নীরে,স্ব-প্রকাশ বিরাজিত বিশ্বের মন্দিরে—উদার আকাশ তল, সিন্ধুর সুনীল জল,ওই গিরি নির্ঝরিনী অশ্রান্ত উচ্ছল |প্রান্তর দিগন্ত-লীন শ্যামা মধুরিমা,প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে কার এ সুষমা?হায়রে সম্বলহীন, কুণ্ঠা ছিল…
মনুষ্যত্ব
– কুসুমকুমারী দাশ একদিন লিখেছিনু আদর্শ যে হবে“কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে” |আজ লিখিতেছি বড় দুঃখ লয়ে প্রাণেতোমরা মানুষ হবে কাহার কল্যাণে ?মানুষ গড়িয়া ওঠে কোন্ উপাদানে ;বাঙালি বোঝেনি তাহা এখনো জীবনে—পুঁথি হাতে পাঠ শেখা—দু-চারটে পাশআজিকার দিনে তাহে…