ইহাদেরই কানে

__জীবনানন্দ দাশ একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে –একবার বেদনার পানেঅনেক কবিতা লিখে চলে গেলযুবকের দল;পৃথিবীর পথে পথে সুন্দরীরা মুর্খসসম্মানেশুনিল আধেক কথা – এই সব বধিরনিশ্চলসোনার পিত্তল মূর্তি: তবু, আহা,ইহাদেরই কানেঅনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেলযুবকের দল:একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে –একবার বেদনার পানে।

হৈমন্তী

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে। মেয়ের…

অচল প্রেমের পদ্য – ১২

__হেলাল হাফিজ নখের নিচেরেখেছিলামতোমার জন্য প্রেম,কাটতে কাটতেসব খোয়ালামবললে না তো, – ‘শ্যাম,এই তো আমি তোমার ভূমিভালোবাসার খালা,আঙুল ধরোলাঙ্গল চষোপরাও প্রণয় মালা’।

অচল প্রেমের পদ্য – ১১

__হেলাল হাফিজ যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে,কবি কিংবা যে কোনো আধুনিক মানুষের কাছেসেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়। হয় তো এখন আমি তেমনি এক নিয়ন্ত্রনহীননাজুক পরিস্থিতির মুখোমুখি,নইলে এতদিন তোমাকে একটি চিঠিও লিখতেনা পারার কষ্ট…

অচল প্রেমের পদ্য – ০৯

__হেলাল হাফিজ আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছেমানুষের কাছে এওতো আমার এক ধরনের ঋণ।এমনই কপাল আমারঅপরিশোধ্য এই ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

অচল প্রেমের পদ্য – ০৮

__হেলাল হাফিজ তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?চিনি, খুব জানিতুমি যার তার, যে কেউ তোমার,তোমাকে দিলাম না – ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার।

অচল প্রেমের পদ্য – ০৭

__হেলাল হাফিজ আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,দেখি দেখিবাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;ইস্‌! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেইএন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই।

অচল প্রেমের পদ্য – ০৫

__হেলাল হাফিজ তোমার হাতে দিয়েছিলাম অথৈ সম্ভাবনাতুমি কি আর অসাধারণ? তোমার যে যন্ত্রনাখুব মামুলী, বেশ করেছো চতুর সুদর্শনাআমার সাথে চুকিয়ে ফেলে চিকন বিড়ম্বনা।

সুন্দরের গান

__হেলাল হাফিজ হলো না, হলো না।শৈশব হলো না, কৈশোর হলো নানা দিয়ে যৌবন শুরু, কার যেনবিনা দোষে শুরুটা হলো না।হলো না, হলো না।দিবস হলো না, রজনীও নাসংসার হলো না, সন্ন্যাস হলো না, কার যেনএসব হলো না, ওসব আরও না।হলো না,…

হৃদয়ের ঋণ

– হেলাল হাফিজ আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলেকলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলেবেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাতগচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমিকাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাতঅযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী, একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদিঅমার্জনীয় অপরাধ হয়…

হিরণবালা

__হেলাল হাফিজ হিরণবালা তোমার কাছে দারুন ঋণী সারা জীবনযেমন ঋণী আব্বা এবং মায়ের কাছে। ফুলের কাছে মৌমাছিরাবায়ুর কাছে নদীর বুকে জলের খেলা যেমন ঋণীখোদার কসম হিরণবালাতোমার কাছে আমিও ঠিক তেমনি ঋণী। তোমার বুকে বুক রেখেছি বলেই আমি পবিত্র আজতোমার জলে…

হিজলতলীর সুখ

__হেলাল হাফিজ বলাই বাহুল্য আমি রাজনীতিবিদ নই, সুবক্তাও নইতবু আজ এই সমাবেশে বলবো কয়েক কথাসকলের অনুমতি পেলে।–’বলুন, বলুন’।রঙিন বেলুন দিয়ে মন ভোলানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই,উপস্থিত সুধী, কেউ ভুলে মনেও করবেন না আমিপারমিট, পেঁয়াজ আর পারফিউম ন্যায্যমূল্যে দেবো।–’পেঁয়াজটা পেলে ভালো…

সম্প্রদান

__হেলাল হাফিজ ভাদ্রের বর্ধিত আষাঢ়ে সখ্য হয়েছিলো।সে প্রথম, সে আমার শেষ। পথে ও প্রান্তরে, ঘরে,দিতে রাতে, মাসে ও বছরেসমস্ত সাম্রাজ্য জুড়েসে আষাঢ় অতোটা ভেজাবে আমি ভাবিনি কসম। আমার সকল শ্রমে, মেধা ও মননেনিদারুণ নম্র খননেকী নিপুণ ক্ষত দেখো বানিয়েছে চতুর…

শামুক

__হেলাল হাফিজ ‘অদ্ভুত, অদ্ভুত’ বলেসমস্বরে চিৎকার করে উঠলেন কিছু লোক।আমি নগরের জ্যেষ্ঠ শামুকএকবার একটু নড়েই নতুন ভঙ্গিতে ঠিক গুটিয়ে গেলাম,জলে দ্রাঘিমা জুড়েযে রকম গুটানো ছিলাম,ছিমছাম একা একা ভেতরে ছিলাম,মানুষের কাছে এসেনতুন মুদ্রায় আমি নির্জন হলাম,একাই ছিলাম আমি পুনরায় একলা হলাম।

লাবণ্যের লতা

__হেলাল হাফিজ দুরভিসন্ধির খেলা শেষ হয়ে কোনোদিনদিন যদি আসে,এই দেশে ভালোবেসে বলবে মানুষ,অনন্বিত অসন্তোষ অজারকতার কালে এসেলাবন্যের লকলকে লতা এক খুব কায়ক্লেশেএকদিন তুলেছিলো বিনয়াবনত মাথাএতোটুকু ছিলো না দীনতা। অকুলীন এই দিন শেষ হয়ে কোনোদিনদিন যদি আসে,শুভ্রতায় স্নিগ্ধতায় সমুজ্জল মানুষ এদেশেবলবে…

রাডার

__হেলাল হাফিজ একটা কিছু করুন। এভাবে আর কদিন চলে দিন ফুরালে হাসবে লোকেদুঃসময়ে আপনি কিছু বলুনএকটা কিছু করুন। চতুর্দিকে ভালোবাসার দারুণ আকালখেলছে সবাই বেসুর-বেতালকালো-কঠিন-মর্মান্তিক নষ্ট খেলা,আত্মঘাতী অবহেলো নগর ও গ্রাম গেরস্থালিবনভূমি পাখপাখালি সব পোড়াবে,সময় বড়ো দ্রুত যাচ্ছেভাল্লাগে না ভাবটা ছেড়ে…

রাখাল

__হেলাল হাফিজ আমি কোনো পোষা পাখি নাকি?যেমন শেখাবে বুলিসেভাবেই ঠোঁট নেড়ে যাবো, অথবা প্রত্যহমনোরঞ্জনের গান ব্যাকুল আগ্রহে গেয়েঅনুগত ভঙ্গিমায় অনুকূলে খেলাবো আকাশ,আমি কোনো সে রকম পোষা পাখি নাকি? আমার তেমন কিছু বাণিজ্যিক ঋণ নেই,কিংবা সজ্ঞানে এ বাগানে নির্মোহ ভ্রমণেকোনোদিন ভণিতা…

যেভাবে সে এলো

__হেলাল হাফিজ অসম্ভব ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছিলো,সামনে যা পেলো খেলো,যেন মন্বন্তরে কেটে যাওয়া রজতজয়ন্তী শেষেএসেছে সে, সবকিছু উপাদেয় মুখে। গাভিন ক্ষেতের সব ঘ্রাণ টেনে নিলো,করুণ কার্নিশ ঘেঁষে বেড়ে ওঠা লকলকে লতাটিও খেলো,দুধাল গাভীটি খেলোখেলো সব জলের কলস। শানে বাধা ঘাট…

যুগল জীবনী

__হেলাল হাফিজ আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।বলে,–’কি নাগরএতো সহজেই যদি চলে যাবেতবে কেন ঘর বেঁধেছিলে উদ্ধাস্তু ঘর,কেন করেছিলে চারু বেদনার এতো আয়োজন।শৈশব কৈশোর থেকে যৌবনের কতো প্রয়োজনউপেক্ষার ‘ডাস্টবিনে’ ফেলেমনে আছে সে-ই কবেচাদরের মতো করে নির্দ্বিধায় আমাকে জড়ালে,আমি বাল্য-বিবাহিতা…

যার যেখানে জায়গা

__হেলাল হাফিজ ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠাগাইবেন মানুষভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়। কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে,–’ভাইআইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,নগরের ধাপ্‌পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি…

যাতায়াত

– হেলাল হাফিজ কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো। কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে নারাত কাটে তো ভোর দেখি নাকেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা। নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলামপেছন থেকে…

মানবানল

– হেলাল হাফিজ আগুন আর কতোটুকু পোড়ে ?সীমাবদ্ধ ক্ষয় তার সীমিত বিনাশ,মানুষের মতো আর অতো নয় আগুনের সোনালি সন্ত্রাস। আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখেকিছু থাকে,হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে নাকিচ্ছু থাকে না,খাঁ খাঁ বিরান, আমার…

Posts navigation