__আসাদ চৌধুরী প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চলবেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরমআমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনেবৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনেতৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখেশুধু মুখ টিপে হাসে।প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়েকোঁচরে ভরেন…
Tag: আসাদ চৌধুরী
আসাদ চৌধুরী
আসাদ চৌধুরী (জন্ম: ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩) বাংলাদেশের একজন কবি ও সাহিত্যিক। কবিতা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী ইত্যাদি রচনা করেছেন। কিছু অনুবাদকর্মও তিনি সম্পাদন করেছেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তার রচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
জন্ম ও বংশ
আসাদ চৌধুরী ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দের তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া জমিদার বাড়িতে একটি সম্ভ্রান্ত বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যারা উলানিয়ার চৌধুরী বংশ হিসাবে পরিচিত। তাঁর পূর্বপুরুষ শায়খ মহম্মদ আসাদ আলী পারস্য থেকে ভারতবর্ষের অযোধ্যা শহরে আসেন। তারপর সেখান থেকে বাংলার মুর্শিদাবাদে আসেন। শায়খ মহম্মদ আসাদ আলীর নাতির ঘরের নাতির ছেলে মহম্মদ হানিফ ছিলেন সুবাহদার শায়েস্তা খাঁর অন্যতম সেনানায়ক, যিনি মগ–পর্তুগিজ জলদস্যু দমনে কর্মরত এবং গোবিন্দপুরের সংগ্রাম কেল্লার জমাদার ছিলেন। হানিফ বৃহত্তর বরিশালের তেতুলিয়া গাঁওয়ে বসবাস শুরু করেন। এই বংশের মহম্মদ তকি তেঁতুলিয়া জমাদার বাড়ি ছেড়ে উলানিয়ায় বসতি স্থাপন করেন। তাঁর ছেলে হাসন রাজা হলেন আসাদ চৌধুরীর পরদাদা এবং তিনি তাঁর দুই ভাই কালা রাজা ও নয়া রাজার সাথে সুপারি, লবণ, চালের ব্যবসা করে কলকাতার মারোয়াড়িদের বিখ্যাত বণিক হুকুম চাঁদের সাথে মিত্রতা লাভ করেন। তিন পরদাদারা লালগঞ্জ, আলিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রচুর ফুলুস জমা করে ইদিলপুর জমিদারী স্থাপন করেন। আসাদ চৌধুরীর বংশলতিকা হচ্ছে: আসাদ চৌধুরী ইবনে মহম্মদ আরিফ চৌধুরী ইবনে এছলাম চৌধুরী ইবনে মজিদ চৌধুরী ইবনে হাসন রাজা ইবনে মহম্মদ তকি।
আসাদ চৌধুরীর মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম সাহানা বেগম।
শিক্ষাজীবন
আসাদ চৌধুরী আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে আসাদ চৌধুরীর চাকুরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ভয়েজ অব জার্মানীর বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকুরীর পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
- তবক দেওয়া পান (১৯৭৫);
- বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬);
- প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬);
- জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২);
- যে পারে পারুক (১৯৮৩);
- মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪);
- মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫);
- আমার কবিতা (১৯৮৫);
- ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫);
- প্রেমের কবিতা (১৯৮৫);
- দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭);
- নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২);
- টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭);
- বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮);
- বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮);
- কবিতা-সমগ্র (২০০২);
- কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩);
- ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)।
প্রবন্ধ-গবেষণা
- কোন অলকার ফুল (১৯৮২)
শিশুসাহিত্য
- রাজার নতুন জামা (রূপান্তর, ১৯৭৯);
- রাজা বাদশার গল্প (১৯৮০);
- গ্রাম বাংলার গল্প (১৯৮০);
- ছোট্ট রাজপুত্র (অনুবাদ : ১৯৮২);
- গর্ব আমার অনেক কিছুর (১৯৯৬);
- ভিন দেশের মজার লোককাহিনী (১৯৯৯);
- তিন রসরাজের আড্ডা (১৯৯৯)
- কেশবতী রাজকন্যা (২০০০);
- গ্রাম বাংলা আরো গল্প (২০০০)
- তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (জীবনী, ২০০০);
- জন হেনরি (আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১);
- মিকালেঞ্জেনো (জীবনী, ২০০১)
- ছোটদের মজার গল্প (২০০১);
- সোনার খড়ম (২০০৬);
- মুচি-ভ’তের গল্প (২০০৬)।
জীবনী
- সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু (১৯৮৩);
- রজনীকান্ত সেন (১৯৮৯);
- স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী (২০০১)।
ইতিহাস
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৩)।
অনুবাদ
- বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০);
- প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫)।
সম্পাদনা
- যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ (১৯৯১ যুগ্মভাবে);
- ছয়টি রূপকথা (১৯৭৯)।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫);
- অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২);
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭);
- শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক (১৯৯৯);
- ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার,
- বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক,
- অশ্বনী কুমার পদক (২০০১);
- জীবনানন্দ দাশ পদক;
- অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক;
- জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬)।
- বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮
- একুশে পদক, (২০১৩)
- শব্দভূমি আজীবন সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮)
বারবারা বিডলারকে
__আসাদ চৌধুরী বারবারাভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি-তোমার হৃদয়ের সুবাতাসআমার গিলে-করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিলপ্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোরজন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছিআশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন…
শহীদদের প্রতি
__আসাদ চৌধুরী তোমাদের যা বলার ছিলবলছে কি তা বাংলাদেশ ?শেষ কথাটি সুখের ছিল ?ঘৃণার ছিল ?নাকি ক্রোধের,প্রতিশোধের,কোনটা ছিল ?নাকি কোনো সুখেরনাকি মনে তৃপ্তি ছিলএই যাওয়াটাই সুখের।তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়গভীর নদী যেমন বাঁকাস্রোতটিকে লুকায়যেমন পাখির ডানার ঝলকগগনে মিলায়।সাঁঝে যখন কোকিল…
প্রথম কবি তুমি, প্রথম বিদ্রোহী
__আসাদ চৌধুরী মাত্র পা রেখেছ কলেজে সেই বার,শব্দ দিয়ে গাঁথো পূর্ব সীমান্তেসাহসী ‘সীমান্ত’।দ্বিজাতিতত্ত্বের লোমশ কালো থাবাশ্যামল সুন্দর সোনার বাংলাকেকরেছে তছনছ, গ্রাম ও জনপদেভীতির সংসার, কেবল হাহাকার।টেবিলে মোমবাতি কোমল কাঁপা আলোবাহিরে বৃষ্টির সুরেলা রিমঝিম_স্মৃতির জানালায় তোমার মৃদু টোকা।রূপার সংসারে অতিথি সজ্জনশিল্পী…
তখন সত্যি মানুষ ছিলাম
__আসাদ চৌধুরী নদীর জলে আগুন ছিলোআগুন ছিলো বৃষ্টিতেআগুন ছিলো বীরাঙ্গনারউদাস-করা দৃষ্টিতে। আগুন ছিলো গানের সুরেআগুন ছিলো কাব্যে,মরার চোখে আগুন ছিলোএ-কথা কে ভাববে? কুকুর-বেড়াল থাবা হাঁকায়ফোসে সাপের ফণাশিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায়জ্বলে বালির কণা। আগুন ছিলো মুক্তি সেনারস্বপ্ন-ঢলের বন্যায়-প্রতিবাদের প্রবল ঝড়েকাঁপছিলো…
সত্য ফেরারী
__আসাদ চৌধুরী কোথায় পালালো সত্য?দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তোরেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে,গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে,নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো। গুড়ের কলসি, বিষের কৌটো,চিনির বয়াম, বাজারের ব্যাগ,সিগারেট কেস, পানের ডিব্বা,জর্দার শিশি, লক্ষ্মীর সরা,নকশী পাতিল, চৌকির তলা,সবি খুঁজলাম, খুঁজে…