রিপোর্ট ১৯৭১

 __আসাদ চৌধুরী প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চলবেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরমআমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনেবৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনেতৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখেশুধু মুখ টিপে হাসে।প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়েকোঁচরে ভরেন…

বারবারা বিডলারকে

__আসাদ চৌধুরী বারবারাভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি-তোমার হৃদয়ের সুবাতাসআমার গিলে-করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিলপ্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোরজন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছিআশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন…

শহীদদের প্রতি 

 __আসাদ চৌধুরী তোমাদের যা বলার ছিলবলছে কি তা বাংলাদেশ ?শেষ কথাটি সুখের ছিল ?ঘৃণার ছিল ?নাকি ক্রোধের,প্রতিশোধের,কোনটা ছিল ?নাকি কোনো সুখেরনাকি মনে তৃপ্তি ছিলএই যাওয়াটাই সুখের।তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়গভীর নদী যেমন বাঁকাস্রোতটিকে লুকায়যেমন পাখির ডানার ঝলকগগনে মিলায়।সাঁঝে যখন কোকিল…

প্রথম কবি তুমি, প্রথম বিদ্রোহী

__আসাদ চৌধুরী মাত্র পা রেখেছ কলেজে সেই বার,শব্দ দিয়ে গাঁথো পূর্ব সীমান্তেসাহসী ‘সীমান্ত’।দ্বিজাতিতত্ত্বের লোমশ কালো থাবাশ্যামল সুন্দর সোনার বাংলাকেকরেছে তছনছ, গ্রাম ও জনপদেভীতির সংসার, কেবল হাহাকার।টেবিলে মোমবাতি কোমল কাঁপা আলোবাহিরে বৃষ্টির সুরেলা রিমঝিম_স্মৃতির জানালায় তোমার মৃদু টোকা।রূপার সংসারে অতিথি সজ্জনশিল্পী…

তখন সত্যি মানুষ ছিলাম

 __আসাদ চৌধুরী নদীর জলে আগুন ছিলোআগুন ছিলো বৃষ্টিতেআগুন ছিলো বীরাঙ্গনারউদাস-করা দৃষ্টিতে। আগুন ছিলো গানের সুরেআগুন ছিলো কাব্যে,মরার চোখে আগুন ছিলোএ-কথা কে ভাববে? কুকুর-বেড়াল থাবা হাঁকায়ফোসে সাপের ফণাশিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায়জ্বলে বালির কণা। আগুন ছিলো মুক্তি সেনারস্বপ্ন-ঢলের বন্যায়-প্রতিবাদের প্রবল ঝড়েকাঁপছিলো…

সত্য ফেরারী 

__আসাদ চৌধুরী কোথায় পালালো সত্য?দুধের বোতলে, ভাতের হাঁড়িতে! নেই তোরেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে,গ্রন্থাগারের গভীর গন্ধে,টেলিভিশনে বা সিনেমা, বেতারে,নৌকার খোলে, সাপের ঝাঁপিতে নেই তো। গুড়ের কলসি, বিষের কৌটো,চিনির বয়াম, বাজারের ব্যাগ,সিগারেট কেস, পানের ডিব্বা,জর্দার শিশি, লক্ষ্মীর সরা,নকশী পাতিল, চৌকির তলা,সবি খুঁজলাম, খুঁজে…