– আল মাহমুদ ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখদুপুর বেলার অক্তবৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?বরকতের রক্ত। হাজার যুগের সূর্যতাপেজ্বলবে এমন লাল যে,সেই লোহিতেই লাল হয়েছেকৃষ্ণচূড়ার ডাল যে ! প্রভাতফেরীর মিছিল যাবেছড়াও ফুলের বন্যাবিষাদগীতি গাইছে পথেতিতুমীরের কন্যা। চিনতে না কি সোনার ছেলেক্ষুদিরামকে চিনতে ?রুদ্ধশ্বাসে…
Tag: আল মাহমুদ
আল মাহমুদ
মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)যিনি আল মাহমুদ নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক ছিলেন।বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে।তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ (১৯৭২-১৯৭৪) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতৃপ্রদত্ত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর।তার দাদার নাম আব্দুল ওহাব মোল্লা; যিনি হবিগঞ্জ জেলায় জমিদার ছিলেন।
কর্মজীবন
সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে মাহমুদ ঢাকা আগমন করেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলা পত্রিকার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
সাহিত্যজীবন
১৯৫৪ সাল অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স থেকে তার কবিতা প্রকাশ পেতে থাকে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ ও কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম পরিচিত হয়ে ওঠে এবং তাকে নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর (১৯৬৩) সর্বপ্রথম তাকে স্বনামধন্য কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস (১৯৬৬), সোনালি কাবিন (১৯৭৩), মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৭৬) কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।
উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ
- লোক লোকান্তর (১৯৬৩)
- কালের কলস (১৯৬৬)
- সোনালী কাবিন (১৯৭৩)
- মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬)
- আরব্য রজনীর রাজহাঁস
- বখতিয়ারের ঘোড়া
- অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না
- Selected Poems – Al Mahmud (১৯৮১)
- দিনযাপন
- দ্বিতীয় ভাঙ্গন
- একটি পাখি লেজ ঝোলা
- পাখির কাছে ফুলের কাছে
- আল মাহমুদের গল্প
- গল্পসমগ্র
- প্রেমের গল্প
- যেভাবে বেড়ে উঠি
- কিশোর সমগ্র
- কবির আত্নবিশ্বাস
- কবিতাসমগ্র
- কবিতাসমগ্র-২
- পানকৌড়ির রক্ত
- সৌরভের কাছে পরাজিত
- গন্ধ বণিক
- ময়ূরীর মুখ
- না কোন শূন্যতা মানি না
- নদীর ভেতরের নদী
- পাখির কাছে , ফুলের কাছে
- প্রেম ও ভালোবাসার কবিতা
- প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা
- প্রেমের কবিতা সমগ্র
- উপমহাদেশ
- বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ
- উপন্যাস সমগ্র-১
- উপন্যাস সমগ্র-২
- উপন্যাস সমগ্র-৩
- তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে (২০১৫)
- ছায়ায় ঢাকা মায়ার পাহাড় (রূপকথা)
- ত্রিশেরা
- উড়াল কাব্য
- এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না (মহাকাব্য)
- একচক্ষু হরিণ
ব্যক্তিগত জীবন
আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।
২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে ঢাকায় ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮)
- জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭২)
- হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২)
- জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭২)
- কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৬)
- কবি জসীম উদ্দিন পুরস্কার
- ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬)
- একুশে পদক (১৯৮৬)
- নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০)
- ভানুসিংহ সম্মাননা পদক (২০০৪)
- লালন পুরস্কার (২০১১)
- বাসাসপ কাব্যরত্ন (২০১৭)
সমালোচনা
অনেকেই সমালোচনা করেন যে, আল মাহমুদ ১৯৯০’র দশকে ইসলামী ধর্মীয় বোধের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার কবিতায় ইসলামী চেতনার প্রতিফলন ঘটতে থাকে।যদিও তিনি বিভিন্ন সময় তা অস্বীকার করেছেন।
আল মাহমুদকে নিয়ে গবেষণা
- কবি খোরশেদ মুকুল আল মাহমুদকে নিয়ে লিখেছেন গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘দ্রোহের কবি আল মাহমুদ’।
- কমরুদ্দিন আহমেদ প্রকাশ করেছেন গবেষণামূলক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘আল মাহমুদ : কবি ও কথাশিল্পী’
হায়রে মানুষ
-আল মাহমুদ একটু ছিল বয়েস যখন ছোট্ট ছিলাম আমিআমার কাছে খেলাই ছিল কাজের চেয়ে দামি।উঠোন জুড়ে ফুল ফুটেছে আকাশ ভরা তারাতারার দেশে উড়তো আমার পরাণ আত্মহারা।জোছনা রাতে বুড়িগঙ্গা তুলতো যখন ঢেউআমার পিঠে পরীর ডানা পরিয়ে দিতো কেউ।দেহ থাকতো এই শহরে…
ঊনসত্তরের ছড়া- ১
-আল মাহমুদ ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !শুয়োরমুখো ট্রাক আসবেদুয়োর বেঁধে রাখ।কেন বাঁধবো দোর জানালাতুলবো কেন খিল ?আসাদ গেছে মিছিল নিয়েফিরবে সে মিছিল।ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !ট্রাকের মুখে আগুন দিতেমতিয়ুরকে ডাক।কোথায় পাবো মতিয়ুরকেঘুমিয়ে আছে সে !তোরাই তবে সোনামানিকআগুন জ্বেলে…
পাখির মতো
– আল মাহমুদ আম্মা বলেন, পড়রে সোনাআব্বা বলেন, মন দে;পাঠে আমার মন বসে নাকাঁঠালচাঁপার গন্ধে।আমার কেবল ইচ্ছে জাগেনদীর কাছে থাকতে,বকুল ডালে লুকিয়ে থেকেপাখির মতো ডাকতে।সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েকর্ণফুলীর কূলটায়,দুধভরা ঐ চাঁদের বাটিফেরেস্তারা উল্টায়।তখন কেবল ভাবতে থাকিকেমন করে উড়বো,কেমন করে শহর…
নোলক
– আল মাহমুদ আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষেহেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে?-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকেশাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে…
কদম ফুলের ইতিবৃত্ত
– আল মাহমুদ আমি তোমাকে কতবার বলেছি আমি বৃক্ষের মতো অনড় নইতুমি যতবার ফিরে এসেছ ততবারই ভেবেছআমি কদমবৃক্ষ হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবকিন্তু এখন দেখ আমি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেওহয়ে গিয়েছি বৃক্ষের অধিক এক কম্পমান সত্তাবাঁশি বাজিয়ে ফুঁ ধরেছি আর চতুর্দিক…
আমি আর আসবো না বলে
– আল মাহমুদ আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সরচামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়াযেন সাদা স্বপ্নের চাদরবিছিয়েছে পৃথিবীতে।কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে?যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশেলিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানাসমস্ত কিছুর।প্রতিটি…
মাতৃছায়া
– আল মাহমুদ হারিয়ে কানের সোনা এ-বিপাকে কাঁদো কি কাতরা?বাইরে দারুন ঝড়ে নুরে পড়ে আনাজের ডাল,তস্করের হাত থেকে জেয়র কি পাওয়া যায় ত্বরা –সে কানেট পরে আছে হয়তো বা চোরের ছিনাল !পোকায় ধরেছে আজ এ দেশের ললিত বিবেকেমগজ বিকিয়ে দিয়ে…
গৃহলতা
– আল মাহমুদ ঈদের দিনে জিদ ধরি না আরকানে আমার বাজে না সেইমায়ের অলঙ্কার।কেউ বলে না খাওপাতের ভেতর ঠাণ্ডা হলোকোর্মা ও পোলাও।কোথায় যেন মন চলে যায়মেঘের ওপর ভেসেদুয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছেমাতৃছায়া এসে।ছায়া কেবল ছায়াছায়ার ভেতর বসত করেচিরকালের মায়া।মায়ার মোহে মুগ্ধ…
বর্ষামঙ্গল নৃত্যমুখর বর্ষণ
– আল মাহমুদ বৃষ্টির ছাঁটে শিহরিত হয় দেহকেউ বলে আমি কবি কি না সন্দেহতবু তো কবিতা আমাকে ঘিরেই নাচেনাচুনে মেয়ের মতোই সেও কি বাঁচে?বৃষ্টির কণা ফণা ধরে আছে পথেপথ কই বলো রথ থেমে আছে ঘাটেএ খেলার মাঠে সূর্য নেমেছে পাটে।কেবল…
পাখির কথায় পাখা মেললাম
– আল মাহমুদ ভয়ের ডানায় বাতাস লেগেছে মুখেশীতল সবুজ থরথর করে বুকেকাঁপছে আত্মা, আত্মার পাখি এক‘ঝাপটানি তুলে নিজের কথাই লেখ’পাখির কথায় পাখা মেললাম নীলেনীল এসে বুঝি আমাকেই ফেলে গিলেনীল ছাড়া দেখি চারিদিকে কিছু নেইতুমি ছাড়া, তুমি-তুমি পুরাতন সেই।চির পুরাতন কিন্তু…
ভর দুপুরে
– আল মাহমুদ মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসেমেঘের মত পাল উড়িয়ে কী ভাসে!মাছের মত দেখতে এ কোন পাটুনিভর দুপুরে খাটছে সখের খাটুনি।ওমা এ-যে কাজল বিলের বোয়ালেপালের দড়ি আটকে আছে চোয়ালেআসছে ধেয়ে লম্বা দাড়ি নাড়িয়ে,ঢেউয়ের বাড়ি নাওয়ের সারি ছাড়িয়ে।কোথায় যাবে কোন…
অবুঝের সমীকরণ
– আল মাহমুদ কবিতা বোঝে না এই বাংলার কেউ আরদেশের অগণ্য চাষী, চাপরাশীডাক্তার উকিল মোক্তারপুলিস দারোগা ছাত্র অধ্যাপক সবকাব্যের ব্যাপারে নীরব!স্মাগলার আলোচক সম্পাদক তরুণীর দলকবিতা বোঝে না কোনো সঙঅভিনেত্রী নটী নারী নাটের মহলকার মনে কাতোটুকু রঙ?ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনাসারা অঙ্গে…
হারানো ছেলের গীত
– আল মাহমুদ কথা বলি আমি ঝরে যায় ঝরাপাতাহাওয়ায় উড়ছে তোমাদের হালখাতা।তোমাদের সাথে ব্যবধান চিরদিনহিসেব নিকেশ মেলে না তো কোনো দিন।সামনে কেবল খোলা আছে এক পথএই পথে কবে চলে গেছে সেই রথ।রথের মেলায় এসেছিল এক ছেলেবিস্ময়ভরা চোখের পাপড়ি মেলে।ওই সেই…
কাঁপুনি
– আল মাহমুদ শেষ হয়নি কি, আমাদের দেয়া-নেয়া?হাত তুলে আছে, পাড়ানি মেয়েটিবিদায়ের শেষ খেয়া,ডাকছে আমাকে হাঁকছে আমাকেআমিই শেষের লোক।শ্লোক শেষ হলো, অন্ত-মিলেরও শেষ।কাঁপছে নায়ের পাটাতন বুঝিছেড়ে যেতে উৎসুক।আমি চলে গেলে এ পারে আঁধারে কেউ থাকবেনা আরসব ভেসে গেছে এবার তবে…
রবীন্দ্রনাথ
– আল মাহমুদ এ কেমন অন্ধকার বঙ্গদেশ উত্থান রহিতনৈশব্দের মন্ত্রে যেন ডালে আর পাখিও বসে না।নদীগুলো দুঃখময়, নির্পতগ মাটিতে জন্মায়কেবল ব্যাঙের ছাতা, অন্যকোন শ্যামলতা নেই।বুঝি না, রবীন্দ্রনাথ কী ভেবে যে বাংলাদেশে ফেরবৃক্ষ হয়ে জন্মাবার অসম্ভব বাসনা রাখতেন।গাছ নেই নদী নেই…
প্রত্যাবর্তনের লজ্জা
– আল মাহমুদ শেষ ট্রেন ধরবো বলে এক রকম ছুটতে ছুটতে স্টেশনে পৌঁছে দেখিনীলবর্ণ আলোর সংকেত। হতাশার মতোন হঠাৎদারুণ হুইসেল দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।যাদের সাথে শহরে যাবার কথা ছিল তাদের উৎকণ্ঠিত মুখজানালায় উবুড় হয়ে আমাকে দেখছে। হাত নেড়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে।আসার…
না ঘুমানোর দল
– আল মাহমুদ নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কালডাবের মতো চাদঁ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল।ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে এলেম ঘরঘুমন্ত এই মস্ত শহর করছিলো থরথ ।মিনারটাকে দেখছি যেন দাড়িয়ে আছেন কেউ,পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ ?চৌকিদারের হাক শুনে…
সোনালী কাবিন -৫
– আল মাহমুদ আমার ঘরের পাশে ফেটেছে কি কার্পাশের ফল?গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শবরী,কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতলনিয়ে এসো চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি।ব্যাধির আদিম সাজে কে বলে যে তোমাকে চিনবো নানিষাদ কি কোনদিন পক্ষিণীর গোত্র ভুল…
সোনালী কাবিন – ১
– আল মাহমুদ সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়না হরিণীযদি নাও দিতে পারি কাবিনবিহীন হাত দুটি,আত্মবিক্রয়ের স্বর্ন কোনোকালে সঞ্চয় করিনিআহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;ভালবাসা দাও যদি আমি দেব আমার চুম্বন,ছলনা জানিনা বলে আর কোনো ব্যাবসা শিখিনিদেহ দিলে দেহ পাবে দেহের…
ভয়ের চোটে
– আল মাহমুদ অঙ্ক নিয়ে বসলে আমার কখন কী যে হয়টেবিলটাও পর হয়ে যায় বইগুলো সব ভয়।ভয়ের চোটে ভাবতে থাকি শহর ভেঙে কেউদালান কোঠা বিছিয়ে দিয়ে তোলে খেতের ঢেউ।রাস্তাগুলো নদী এবং গলিরা সব খালইলেকট্রিকের খাম্বাগুলো পাল্টে হলো তাল।মোটরগাড়ি গরুর পালে…
কালের কলস
– আল মাহমুদ অনিচ্ছায় কতকাল মেলে রাখি দৃশ্যপায়ী তৃষ্ণার লোচনক্লান্ত হয়ে আসে সব, নিসর্গও ঝরে যায় বহুদূর অতল আঁধারেআর কী থাকলো তবে হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠনআমার কাফন আমি চাদরের মতো পরে কতদিন আন্দোলিত হবোকতকাল কতযুগ ধরেদেখবো, দেখার ভারে বৃষের স্কন্ধের…
বাতাসের ফেনা
– আল মাহমুদ কিছুই থাকে না দেখো, পত্র পুষ্প গ্রামের বৃদ্ধরানদীর নাচের ভঙ্গি, পিতলের ঘড়া আর হুকোর আগুনউঠতি মেয়ের ঝাঁক একে একে কমে আসে ইলিশের মৌসুমের মতোহাওয়ায় হলুদ পাতা বৃষ্টিহীন মাটিতে প্রান্তরেশব্দ করে ঝরে যায়। ভিনদেশী হাঁসেরাও যায়তাদের শরীর যেন…
কবিতা এমন
– আল মাহমুদ কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লানআমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটিপাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোনআব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া–আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট!কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার…
ত্যাগে দুঃখে
– আল মাহমুদ আজকাল চোখে আর অন্য কোনো স্বপ্নই জাগেনা।কবিতার কথা বুঝি, কবিতার জন্য বহুদূর একাকী গিয়েছিপদচারণার স্মৃতি সারাদিন দুঃখবোধ ঐকান্তিক সখ্যতা ভেঙেছেত্যাগে দুঃখে ভরে আছে সামান্য পড়ার ঘরসন্তানসহ দুঃখী সঙ্গিনীর মুখ।অবোধ বাল্যেও নাকি একটা ছোট কাপও ভাঙিনি–আমার আম্মা প্রায়ই…
স্মৃতির মেঘলাভোরে
– আল মাহমুদ কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারেমৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ;অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারেভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ।ফেলে যাচ্ছি খড়কুটো, পরিধেয়, আহার, মৈথুন–নিরুপায় কিছু নাম, কিছু স্মৃতি কিংবা কিছু নয়;অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে…
লোকে যাকে প্রেম নাম কহে
– আল মাহমুদ এই গতির মধ্যে মনে হয় কি যেন একটা স্থির হয়ে থাকে।আমাদের চারিদিকে যখন কোনো গতিকেই আমরা থামাতে পারছি না।সবকিছুই, না কলম না চিন্তা, এমন কি দীর্ঘজীবী বিপ্লবওমুখ থুবড়ে দ্রুত পেছনে হটে গিয়ে ক্রেনের আংটাকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে–মহামতি…
জেলগেটে দেখা
– আল মাহমুদ সেলের তালা খোলা মাত্রই এক টুকরো রোদ এসে পড়লো ঘরের মধ্যেআজ তুমি আসবে ।সারা ঘরে আনন্দের শিহরণ খেলছে । যদিও উত্তরের বাতাসহাড়েঁ কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে বইছে , তবু আমিঠান্ডা পানিতেহাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পাহারাদার সেন্ট্রিকে ডেকে বললাম,আজ…