– আবদুল গাফফার চৌধুরী আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিআমি কি ভুলিতে পারিছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্রুয়ারিআমি কি ভুলিতে পারিআমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিআমি কি ভুলিতে পারি।। জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরাশিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ…
Tag: আবদুল গাফফার চৌধুরী
আবদুল গাফফার চৌধুরী
আবদুল গাফফার চৌধুরী (১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ — ১৯ মে ২০২২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী গ্রন্থকার, কলাম লেখক। তিনি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো-এর রচয়িতা। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয়বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক ও ২০০৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
জন্ম ও বংশ[সম্পাদনা]
আব্দুল গাফফার চৌধুরী ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ খ্রীষ্টাব্দের তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ মহকুমার উলানিয়া জমিদার বাড়িতে একটি বাঙ্গালী মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যারা উলানিয়ার চৌধুরী বংশ হিসাবে পরিচিত। তাঁর পূর্বপুরুষ শায়খ মহম্মদ আসাদ আলী পারস্য থেকে ভারতবর্ষের অযোধ্যা শহরে আসেন তারপর চলে যান বাংলার মুর্শিদাবাদে।তাঁর নাতির ঘরের নাতির ছেলে মহম্মদ হানিফ ছিলেন সুবাহদার শায়েস্তা খাঁর অন্যতম সেনানায়ক হিসাবে মগ–পর্তুগিজ জলদস্যু দমনে কর্মরত এবং গোবিন্দপুরের সংগ্রাম কেল্লার জমাদার ছিলেন। তাঁর বাদে হানিফ বৃহত্তর বরিশালের তেতুলিয়া গাঁওয়ে বসবাস শুরু করেন। এই বংশের মহম্মদ তকি তেঁতুলিয়া জমাদার বাড়ি ছেড়ে উলানিয়ায় বসতি স্থাপন করেন। তাঁর ছেলে নয়া রাজা হলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরীর পরদাদা এবং তিনি তাঁর দুই ভাই হাসন রাজা ও কালা রাজার সাথে সুপারি, লবণ, চালের ব্যবসা করে কলকাতার মারোয়াড়িদের বিখ্যাত বণিক হুকুম চাঁদের সাথে মিত্রতা পান। তিন পরদাদারা লালগঞ্জ, আলিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রচুর টাকা সঞ্চয় করে ইদিলপুর জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর সম্পূর্ণ নাম হলো: আব্দুল গাফফার চৌধুরী ইবনে ওয়াহেদ রাজা চৌধুরী ইবনে ফজেল আলী ইবনে নয়া রাজা ইবনে মহম্মদ তকি।
শিক্ষাজীবন
আবদুল গাফফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। ১৯৪৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তাকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে। সেসময়ে আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বরিশাল শহরে তিনি কিছুদিন একটি মার্কসবাদী দল আরএসপি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র জীবনেই তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। বরিশালের সন্তান শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা তখন কলকাতার প্রধান পত্রিকাগুলোতে ছাপা হতো।
কর্মজীবন
১৯৫০ সালেই গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। এ সময়ে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তখন বেতন পেতেন ৭০ টাকা। মহিউদ্দিন আহমদ ও কাজী আফসার উদ্দিন আহমদ তখন ”দৈনিক ইনসাফ” পরিচালনা করতেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ‘ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। কনিষ্ঠ অনুবাদক হিসেবে মাসিক বেতন পেতেন ১শ’ টাকা। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি ‘মাসিক নকীব’ও সম্পাদনা করেন। একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত ‘দিলরুবা’ পত্রিকারও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। ওই বছরই তিনি প্যারামাউন্ট প্রেসের সাহিত্য পত্রিকা ‘মেঘনা’র সম্পাদক হন। ১৯৫৮ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুকের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুদিন পর সামরিক শাসন চালু হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি মওলানা আকরম খাঁ’র ‘দৈনিক আজাদ’-এ সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। এ সময়ে তিনি মাসিক ‘মোহাম্মদীর’ও স্বল্পকালীন সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং অণুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে ‘দৈনিক আওয়াজ’ বের করেন। সেটা বছর দুয়েক চলেছিল। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি ‘দৈনিক আজাদ’-এ ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে। ১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে’। ১৯৬৯ সালের পয়লা জানুয়ারি ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক ‘পূর্বদেশ’-এ যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
জীবনাবসান
আব্দুল গাফফার চৌধুরী ২০২২ সালের ১৯ মে (সকাল ৬:৪৯ মিনিটে) লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় ২১ মে এবং এদিন দুপুর ১:১৩ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। পরে ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়।
গ্রন্থতালিকা
- ডানপিটে শওকত (১৯৫৩)
- কৃষ্ণপক্ষ (১৯৫৯)
- সম্রাটের ছবি (১৯৫৯)
- সুন্দর হে সুন্দর (১৯৬০)
- চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান (১৯৬০)
- নাম না জানা ভোর (১৯৬২)
- নীল যমুনা (১৯৬৪)
- শেষ রজনীর চাঁদ (১৯৬৭)
- সম্পাদনা: বাংলাদেশ কথা কয় (১৯৭২)
- আমরা বাংলাদেশী নাকি বাঙ্গালী (১৯৯৩)
- পলাশী থেকে ধানমণ্ডি (২০০৭)
পুরস্কার ও সম্মাননা
- ইউনেস্কো পুরস্কার ( ১৯৬৩)
- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৭)
- একুশে পদক (১৯৮৩)
- বঙ্গবন্ধু পুরস্কার
- সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক ২০০৮, লন্ডন
- স্বাধীনতা পদক ২০০৯
- মানিক মিয়া পদক ২০০৯
- যুক্তরাজ্যের ফ্রিডম অব বারা (টাওয়ার হ্যামলেটস) উপাধি
- সংহতি আয়োজিত প্রবাসীদের পক্ষ থেকে সংবধর্না, ঢাকা ২০০৯