-অমিয় চক্রবর্তী হাত থেকে তার পড়ে যায় খসেঅবশ্য আধলা ধুলোয়।চোখ ঠেলে খোলা অসাড় শূন্যে।প্রাণ, তুমি আজো আছ ঐ দেহে,আছ মুমূর্ষু দেশে।কঙ্কাল গাছ ভাদ্রশেষের ভিখারী ডালটা নাড়ে,কড়া রোদ্দুর প্রখর দুপুরে ফাটে।হাতের আঙুলে স্নেহ দিয়েছিলেচোখে চেনা জাদু আপন ঘরের বুকে –বাঙলার মেয়ে,…
Tag: অমিয় চক্রবর্তী
অমিয় চক্রবর্তী
অমিয় চক্রবর্তী (জন্ম: এপ্রিল ১০, ১৯০১ – মৃত্যু: জুন ১২, ১৯৮৬) বাঙালি সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। বাংলা আধুনিক কবিতার ইতিহাসে তিরিশের দশক এবং বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাশ ও বিষ্ণু দে‘র সঙ্গে কবি অমিয় চক্রবর্তীর নাম অবিনাশী বন্ধন ও সমসাময়িকতার বিস্ময়ে জড়িয়ে আছে। শীর্ষস্থানীয় আধুনিক কবি এবং সৃজনশীল গদ্যশিল্পী অমিয় চক্রবর্তী শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জন্ম ও পরিবার
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ ১০ এপ্রিল তারিখে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের অন্যতম কবি অমিয় চক্রবর্তীর জন্ম হয়েছিল মামা বাড়িতে, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরে। তার পুরো নাম অমিয় চন্দ্র চক্রবর্তী।, তার পিতা দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী উচ্চ শিক্ষিত; তিনি ইংরেজিতে এম. এ. এবং বি.এল. পাস করে আসামে গৌরীপুর এস্টেটের দেওয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।তার মা অনিন্দিতা দেবী ছিলেন সাহিত্যিক — তিনি “বঙ্গনারী” ছদ্মনামে প্রবন্ধ-নিবিন্ধ প্রকাশ করতেন। তিনি সংস্কৃতে পারদর্শী ছিলেন আর চার সন্তানকে সংস্কৃত শিখিয়েছিলেন নিজেই। গৌরীপুরের সংস্কৃত টোল থেকে প্রখ্যাত পণ্ডিতকে তিনি নিযুক্ত করেছিলেন কালিদাস, ভবভূতি, ভারবি প্রমুখের রচনা পাঠের সুবিধার্থে। এভাবেই অমিয় চক্রবর্তী শৈশবেই ব্যাকরণে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।
শিক্ষাজীবন
অমিয় চক্রবর্তীর বয়স যখন অল্প তখন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অরুণ চক্রবর্তী আত্মহত্যা করে।ভাইয়ের মৃত্যুতে তীব্র শোকে আক্রান্ত হন অমিয় চক্রবর্তী। তার স্বভাবে চিরস্থায়ী পরিবর্তন আসে; চঞ্চলতা ও ক্রীড়ানুরাগ তিরোহিত হয়ে আসে অন্তর্মুখীনতা; তিনি স্বল্পবাক ও ভাবুক হয়ে ওঠেন। এরপর কলকাতায় এসে হেয়ার স্কুলে ভর্তি হলেন আর থাকতেন মামার বাড়িতে। উচ্চ শিক্ষিত মামাদের সংস্পর্শে তরুণ অমিয় চক্রবর্তীর মানস জগৎ আলোকিত হয়ে ওঠে। তার বড় মামা নিখিলনাথ মৈত্র হয়ে উঠেন তার “চিন্তা-কল্পনার প্রধান অধিনায়ক।” সঙ্গীত ও সাহিত্যে তার বিশেষ অণুপ্রেরণা ছিল। বন্ধুস্থানীয় সেজ মামা সোমনাথ মৈত্রের প্রভাবও ছিল বেশ। তিনিই অমিয় চক্রবর্তীকে বীরবল ও সবুজপত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তার ভাষায় : “সবুজ পত্রের আসরে এবং পরে বিচিত্রার সভ্যরূপে সাহিত্যে সঙ্গীতের প্রেরণা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হল।”
রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য
পৃথিবীর নানা মনীষার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগাযোগ ছিল তার এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ১৯২৬ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।এ সময় তিনি শান্তিনিকেতনে থাকতেন। তার কাজ ছিল, বিদেশী অতিথিদের পরিচর্য করা, ক্লাস নেওয়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নানা গ্রন্থ-তথ্য সংগ্রহরে দিয়ে সাহায্য করা, তার বিদেশ যাত্রার সঙ্গী হওয়া ইত্যাদি।
বিশ্বপথিক অমিয় চক্রবর্তী
শিবনারায়ণ রায় ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তার “কবির নির্বাসন ও অন্যান্য ভাবনা” নামক বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি অমিয় চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করেছেন এই লিখে: “কবি ও মনীষী সহৃদয় বিশ্বনাগরিক অমিয় চক্রবর্তী শ্রদ্ধাভাজনেষু”।, আক্ষরিক অর্থেই কবি অমিয় চক্রবর্তী ছিলেন একজন বিশ্বনাগরিক। পৃথিবীর নানা দেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনও জীবিকার তাগিদে, কখনও-বা নিছক পরিব্রাজক হিসেবে। ভ্রমণে আমৃত্যু ছিলেন অক্লান্ত।
সঙ্গীত
ছেলেবেলা থেকেই সঙ্গীতে ছিল তার বিশেষ আকর্ষণ। তার শৈশব কেটেছে আসাম-গৌরীপুরে। গৌরীপুরে যাত্রা-নাটক আর জারি-সারি, বাউল-কীর্তণের আসরে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। অন্যদিকে মামার বাড়িতে ইয়োরোপীয় সঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ইয়োরোপীয় ধ্রূপদী সঙ্গীতের সঙ্গে তার এই পরিচয় ছিল অসামান্য। রাশিয়ার ববোডিন, জার্মানির প্রাতিভ এবং পিয়ানো, ভায়োলিন ও অর্কেষ্ট্রার শ্রেষ্ঠ কম্পোজারদের সঙ্গীতের সঙ্গে-সঙ্গে ভারতীয় মার্গসংগীতের নিত্য শ্রোতা ছিলেন তিনি। তারপর এক সময় গান লিখতে শুরু করেন। আর তাতে কখনও কখনও তিনি নিজেই সুরারোপ করেছেন।
প্রবন্ধ-নিবন্ধ
অমিয় চক্রবর্তী যে সব পত্র-পত্রিকায় কম-বেশি নিয়মিত লিখেছেন তার মধ্যে রয়েছে কবিতা, বিচিত্রা, উত্তরসূরী, কবি ও কবিতা, পরিচয়, প্রবাসী প্রভৃতি। এর মধ্যে এক “কবিতা” পত্রিকাতেই অমিয় চক্রবর্তীর বেশ ক’টি গদ্য রচনা প্রকাশিত হয়েছিল: ‘এজরা পাউন্ড : কবিতা’র দরবারে পত্রাঘাত’ (পৌষ ১৩৫৫), ‘এলিয়টের নতুন কবিতা’ (পৌষ ১৩৫০), ‘জয়েস প্রাসঙ্গিকী’ (কার্তিক, ১৩৪৮), ‘মার্কিন প্রবাসীর পত্র’ (পৌষ, ১৩৬০), ‘রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি’ (আশ্বিন, ১৩৪৮), ‘শেষের কবিতা’র লাবণ্য’ (আশ্বিন, ১৩৫৩) এবং ‘সমালোচকের জল্পনা’ (আশ্বিন, ১৩৫০)।, এছাড়া বুদ্ধদেব বসুর “নতুন পাতা” এবং সমর সেনের “গ্রহণ ও অন্যান্য কবিতা” গ্রন্থদ্বয়ের সমালোচনাও প্রকাশিত হয়েছিল (যথাক্রমে পৌষ ১৩৪৭ এবং কার্তিক ১৩৪৭ সংখ্যায়)। “কবিতা” পত্রিকায় চৈত্র ১৩৬২ সংখ্যায় বুদ্ধদেব বসুকে লেখা একটি খোলা চিঠি মুদ্রিত হয়েছিল ‘ছন্দ ও কবিতা’ এই শিরোনামে ।
‘কাব্যাদর্শ’ শীর্ষক প্রবন্ধটি মুদ্রিত হয়েছিল ত্রিকালী পত্রিকায় ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। ‘দুটি ইংরেজি কবিতা’ প্রকাশিত হয়েছিল পরিচয় পত্রিকায়, বৈশাখ ১৩৪২ সংখ্যায়। ‘প্রমথ চৌধুরী – ক্ষুদ্র অর্ঘ্য’ প্রকাশিত হয়েছিল “বিশ্বভারতী পত্রিকা”-এর শ্রাবণ-আশ্বিন ১৩৭৫ সংখ্যায়। “পারাপার”-এর অন্তর্ভুক্ত ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি নিয়ে কবি নরেশ গুহ একটি আলোচনা লেখেন কবিতা-পরিচয় পত্রিকায়, আষাঢ় ১৩৭৩ সংখ্যায়। এই আলোচনার সূত্রে, মনুজেশ মিত্র, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত এবং সুতপা ভট্টাচার্য সমালোচনা করেন। অমিয় চক্রবর্তী নিজেও এ ব্যাপারে তার বক্তব্য প্রকাশ করেন। একই পত্রিকায় পরবর্তীতে প্রকাশিত ঐ লেখাটিতে তিনি লেখেন, “ ‘বৃষ্টি’র আলোচনায় দু-একটি প্রশ্ন আছে, তার উত্তরে কিছু বলতে চাই।”
দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার জন্য অমিয় চক্রবর্তীর অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পত্রাকারে রচিত। এ-প্রকৃতির রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মার্কিন প্রবাসীর পত্র’ এবং ‘ছন্দ ও কবিতা’। “কবিতা” পত্রিকায় বরিস পাস্টেরনাক ও তার ড.জিভাগো নিয়ে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন অমিয় চক্রবর্তী। এ-ছাড়া পত্রাকারে রচিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের মধ্যে রয়েছে ‘ইয়োরোপে রবীন্দ্রনাথ’।, শ্রীযুক্ত সোমনাথ মিত্রকে লেখা এ প্রবন্ধলিপিটি “প্রবাসী” পত্রিকার কার্তিক ১৩৩৭ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। “মস্কো-এর চিঠি’’ নামে দু’টি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল বিচিত্রা পত্রিকার বাংলা ১৩৩৮ সনের যথাক্রমে মাঘ ও ফাল্গুন সংখ্যায়। “প্রবাসী” পত্রিকায় আরও তিনটি পত্রাকার প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল; যথা (ক) ‘ফিনল্যান্ডের চিঠি’, কার্তিক, ১৩৪৩ সংখ্যায, (খ) ‘প্যালেষ্টাইন প্রাসঙ্গিক’ কার্তিক, ১৩৪৪ সংখ্যায এবং (গ)‘প্যালেষ্টাইনে হেরফের’, অগ্রহায়ণ, ১৩৪৪ সংখ্যা। এই ধাঁচের লেখাগুলো সম্পর্কে সুমিতা চক্রবর্তীর মন্তব্য এরকম: “ … ভ্রমণমমূলক প্রবন্ধগুলিতে অমিয় চক্রবর্তীর মানসিক গঠনের একটা মৌলিক প্রাথমিক সূত্র পাওয়া যায়।”
সমালোচনা
বুদ্ধদেব বসু অসংকোচে অমিয় চক্রবর্তীকে ‘কবির কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছিলেন। আর আবু সয়ীদ আইয়ুব অমিয় চক্রবর্তীকে তার ‘প্রিয়তম কবি’ বলেছেন। কিন্তু অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে সমকালীন সাহিত্য আবহাওয়া সর্ম্পকেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। এ সম্পর্কে শিবরারায়ণ রায় লিখেছেন : “তিরিশ এবং চল্লিশের দশকে বাংলা সাহিত্যে বহুজনিক প্রতিভার সেই একই সঙ্গে প্রস্ফুটন আজও অপ্রতিম। বঙ্কিমের পরে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে রবীন্দ্রনাথ এই সাহিত্যের বস্তুত: একচ্ছত্র সম্রাট; তাঁর অনিঃশেষ প্রতিভা তাকে নানা ভাবে পরিপুষ্ট এবং চালিত করে এসেছে; শরৎচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী এবং নজরুল ইসলাম তাঁর সমকালের শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী লেখক হওয়া সত্ত্বেও সাহিত্যে পর্বান্তর ঘটান নি। রবীন্দ্রপ্রতিভার বর্ণাঢ্য সূর্যাসকালে সাময়িকভাবে হলেও নতুন পর্ব সচিত হয়; গদ্যে-পদ্যে যুগপৎ দেখা দেয় অনেকগুলি প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। বিষয় নির্বাচনে, প্রতিন্যাসে, রীতিসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাঁদের মৌলিকতা আজ প্রশ্নাতীত। কবিতায় জসীমউদদীন, জীবনানন্দ, সুধীন্দ্র, অমিয়, বুদ্ধদেব, বিষ্ণু, সমর সেন; কথাসাহিত্যে প্রেমেন্দ্র, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, অন্নদাশঙ্কর, মানিক, ধূর্জটিপ্রসাদ প্রত্যেকের সাহিত্যসৃষ্টি নিজস্বতার দ্বারা চিহ্নিত এবং সমবেতভাবে নতুন পর্বের স্বাক্ষরবাহী।”
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি
কাব্য
- কবিতাবলী (১৩৩২ বঙ্গাব্দ)
- উপহার (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ)
- খসড়া (১৯৩৮)
- এক মুঠো (১৯৩৯)
- মাটির দেয়াল (১৯৪২)
- অভিজ্ঞান বসন্ত (১৯৪৩)
- দূরবাণী
- পারাপার (১৯৫৩)
- পালাবদল (১৯৫৫)
- ঘরে ফেরার দিন (১৯৬৪)
- হারানো অর্কিড
- পুষ্পিত ইমেজ
- অমরাবতী
- অনিঃশেষ
গদ্য রচনা
- চলো যাই (১৯৬০)
- সাম্প্রতিক
- পুরবাসী
- পথ অন্তহীন
- অমিয় চক্রবর্তীর প্রবন্ধ সংগ্রহ
সম্মাননা
- ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০) – চলো যাই গদ্যগ্রন্থের জন্য
- পদ্মভূষণ (১৯৭০)
- সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার (১৯৬৪) – ঘরে ফেরার দিন কাব্যগ্রন্থের জন্য
বৃষ্টি
– অমিয় চক্রবর্তী কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে।ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে।শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার।লুটোয় পাথরে জল, হাওয়া তমস্বিনী;আকাশে বিদ্যুৎজ্বলা বর্শা হানেইন্দ্রমেঘ;কালো দিন গলির রাস্তায়।কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে।নিবিষ্ট ক্রান্তির স্বর ঝরঝর বুকেঅবারিত।চকিত গলির প্রান্তে লাল আভা…
কোথায় চলছে পৃথিবী
– অমিয় চক্রবর্তী তোমারও নেই ঘরআছে ঘরের দিকে যাওয়া।সমস্ত সংসারহাওয়াউঠছে নীল ধূলোয় সবুজ অদ্ভূত;দিনের অগ্নিদূতআবার কালো চক্ষে বর্ষার নামে ধার।কৈলাস মানস সরোবরঅচেনা কলকাতা শহর—হাঁটি ধারে ধারেফিরি মাটিতে মিলিয়েগাছ বীজ হাড় স্বপ্ন আশ্চর্য জানাএবং তোমার আঙ্কিক অমোঘ অবেদনআবর্তননিয়েকোথায় চলছে পৃথিবী।আমারও নেই…
বড়োবাবুর কাছে নিবেদন
– অমিয় চক্রবর্তী তালিকা প্রস্তুতকী কী কেড়ে নিতে পারবে না-হই না নির্বাসিত-কেরানি।বাস্তুভিটে পৃথিবীটার সাধারণ অস্তিত্ব।যার এক খন্ড এই ক্ষুদ্র চাকরের আমিত্ব।যতদিন বাঁচি, ভোরের আকাশে চোখ জাগানো,হাওয়া উঠলে হাওয়া মুখে লাগানো।কুয়োর ঠান্ডা জল, গানের কান, বইয়ের দৃষ্টিগ্রীষ্মের দুপুরে বৃষ্টি।আপন জনকে ভালোবাসা,বাংলার…
ওক্লাহোমা
– অমিয় চক্রবর্তী সাক্ষাত্ সন্ধান পেয়েছ কি ৩-টে ২৫-শে?বিকেলের উইলো বনে রেড্ এরো ট্রেনের হুইসিলশব্ দ শেষ ছুঁয়ে গাঁথে দূর শূণ্যে দ্রুত ধোঁয়া নীল ;মার্কিন ডাঙার বুকে ঝোড়ো অবসান গেলো মিশে ||অবসান গেল মিশে ||মাথা নাড়ে ‘জানি’ ‘জানি’ ক্যাথলিক গির্জাচুড়া…
বিনিময়
– অমিয় চক্রবর্তী তার বদলে পেলে—সমস্ত ঐ স্তব্ ধ পুকুরনীল-বাঁধানো স্বচ্ছ মুকুরআলোয় ভরা জল—ফুলে নোয়ানো ছায়া-ডালটাবেগনি মেঘের ওড়া পালটাভরলো হৃদয়তল—একলা বুকে সবই মেলে ||তার বদলে পেলে—শাদা ভাবনা কিছুই-না-এরখোলা রাস্তা ধুলো-পায়েরকান্না-হারা হাওয়া—চেনা কণ্ঠে ডাকলো দূরেসব-হারানো এই দুপুরেফিরে কেউ-না-চাওয়া |এও কি রেখে…
রাত্রি
– অমিয় চক্রবর্তী অতন্দ্রিলা,ঘুমোওনি জানিতাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়েবলি, শোনো,সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায়—সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি—কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন,আলাদা নিশ্বাসে—এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁইকী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা—অতন্দ্রিলা,হঠাত্ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না,দেখি তুমি নেই ||
পিঁপড়ে
– অমিয় চক্রবর্তী আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুককেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা —স্তব্ ধ শুধু চলায় কথা বলা —আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ঐ ভুবন ভ’রে রাখুক,আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক ||ভয় করে তাই আজ…
সাবেকি
– অমিয় চক্রবর্তী গেলোগুরুচরণ কামার, দোকানটা তার মামার,হাতুড়ি আর হাপর ধারের ( জানা ছিল আমার )দেহটা নিজস্ব |রাম নাম সত্ হ্যায়গৌর বসাকের প’ড়ে রইল ভরন্ত খেত খামার|রাম নাম সত্ হ্যায় ||দু-চার পিপে জমিয়ে নস্য হঠাত্ ভোরে হ’লো অদৃশ্য—ধরনটা তার খ্যাপারই—হরেকৃষ্ণ…