১৩৫০ – অমিয় চক্রবর্তী

-অমিয় চক্রবর্তী হাত থেকে তার পড়ে যায় খসেঅবশ্য আধলা ধুলোয়।চোখ ঠেলে খোলা অসাড় শূন্যে।প্রাণ, তুমি আজো আছ ঐ দেহে,আছ মুমূর্ষু দেশে।কঙ্কাল গাছ ভাদ্রশেষের ভিখারী ডালটা নাড়ে,কড়া রোদ্দুর প্রখর দুপুরে ফাটে।হাতের আঙুলে স্নেহ দিয়েছিলেচোখে চেনা জাদু আপন ঘরের বুকে –বাঙলার মেয়ে,…

বৃষ্টি 

– অমিয় চক্রবর্তী কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে।ফাল্গুন বিকেলে বৃষ্টি নামে।শহরের পথে দ্রুত অন্ধকার।লুটোয় পাথরে জল, হাওয়া তমস্বিনী;আকাশে বিদ্যুৎজ্বলা বর্শা হানেইন্দ্রমেঘ;কালো দিন গলির রাস্তায়।কেঁদেও পাবে না তাকে অজস্র বর্ষার জলধারে।নিবিষ্ট ক্রান্তির স্বর ঝরঝর বুকেঅবারিত।চকিত গলির প্রান্তে লাল আভা…

কোথায় চলছে পৃথিবী

– অমিয় চক্রবর্তী তোমারও নেই ঘরআছে ঘরের দিকে যাওয়া।সমস্ত সংসারহাওয়াউঠছে নীল ধূলোয় সবুজ অদ্ভূত;দিনের অগ্নিদূতআবার কালো চক্ষে বর্ষার নামে ধার।কৈলাস মানস সরোবরঅচেনা কলকাতা শহর—হাঁটি ধারে ধারেফিরি মাটিতে মিলিয়েগাছ বীজ হাড় স্বপ্ন আশ্চর্য জানাএবং তোমার আঙ্কিক অমোঘ অবেদনআবর্তননিয়েকোথায় চলছে পৃথিবী।আমারও নেই…

বড়োবাবুর কাছে নিবেদন 

 – অমিয় চক্রবর্তী তালিকা প্রস্তুতকী কী কেড়ে নিতে পারবে না-হই না নির্বাসিত-কেরানি।বাস্তুভিটে পৃথিবীটার সাধারণ অস্তিত্ব।যার এক খন্ড এই ক্ষুদ্র চাকরের আমিত্ব।যতদিন বাঁচি, ভোরের আকাশে চোখ জাগানো,হাওয়া উঠলে হাওয়া মুখে লাগানো।কুয়োর ঠান্ডা জল, গানের কান, বইয়ের দৃষ্টিগ্রীষ্মের দুপুরে বৃষ্টি।আপন জনকে ভালোবাসা,বাংলার…

ওক্লাহোমা

– অমিয় চক্রবর্তী সাক্ষাত্ সন্ধান পেয়েছ কি ৩-টে ২৫-শে?বিকেলের উইলো বনে রেড্ এরো ট্রেনের হুইসিলশব্ দ শেষ ছুঁয়ে গাঁথে দূর শূণ্যে দ্রুত ধোঁয়া নীল ;মার্কিন ডাঙার বুকে ঝোড়ো অবসান গেলো মিশে ||অবসান গেল মিশে ||মাথা নাড়ে ‘জানি’ ‘জানি’ ক্যাথলিক গির্জাচুড়া…

বিনিময় 

– অমিয় চক্রবর্তী তার বদলে পেলে—সমস্ত ঐ স্তব্ ধ পুকুরনীল-বাঁধানো স্বচ্ছ মুকুরআলোয় ভরা জল—ফুলে নোয়ানো ছায়া-ডালটাবেগনি মেঘের ওড়া পালটাভরলো হৃদয়তল—একলা বুকে সবই মেলে ||তার বদলে পেলে—শাদা ভাবনা কিছুই-না-এরখোলা রাস্তা ধুলো-পায়েরকান্না-হারা হাওয়া—চেনা কণ্ঠে ডাকলো দূরেসব-হারানো এই দুপুরেফিরে কেউ-না-চাওয়া |এও কি রেখে…

রাত্রি

– অমিয় চক্রবর্তী অতন্দ্রিলা,ঘুমোওনি জানিতাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়েবলি, শোনো,সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায়—সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি—কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন,আলাদা নিশ্বাসে—এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁইকী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা—অতন্দ্রিলা,হঠাত্ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না,দেখি তুমি নেই ||

পিঁপড়ে

– অমিয় চক্রবর্তী আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুককেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা —স্তব্ ধ শুধু চলায় কথা বলা —আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ঐ ভুবন ভ’রে রাখুক,আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক ||ভয় করে তাই আজ…

সাবেকি

 – অমিয় চক্রবর্তী গেলোগুরুচরণ কামার, দোকানটা তার মামার,হাতুড়ি আর হাপর ধারের ( জানা ছিল আমার )দেহটা নিজস্ব |রাম নাম সত্ হ্যায়গৌর বসাকের প’ড়ে রইল ভরন্ত খেত খামার|রাম নাম সত্ হ্যায় ||দু-চার পিপে জমিয়ে নস্য হঠাত্ ভোরে হ’লো অদৃশ্য—ধরনটা তার খ্যাপারই—হরেকৃষ্ণ…