লেখক জীবন
২৫ আগস্ট ১৯৮৩ খ্রীষ্টাব্দে রমজানের ঈদের দিন সাভারের নিজ পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন লেখিকা সেলিনা হোসেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া তিনি দেশ, মাটি ও মানুষকে অন্যভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। পিতা মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ সোলাইমান হোসেন এবং মা সাজেদার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় আর বোনদের মধ্যে বড় তিনি। বাড়ীর প্রথম মেয়ে সন্তান হওয়াতে বাড়ীতে তাঁর আদরটাও ছিল বেশী। চার পুরুষে কোনো মেয়ে না থাকায় দাদাদাদির আদরের মনি ছিলেন তিনি।
উপযুক্ত সময়ে বিয়ে হয় তাঁর। দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জননী তিনি। সাধারণ গ্রাম বাংলার অবারিত দিগন্তের মতোই কেটেছে তাঁর শৈশব। সকল ভাইবোন মিলে সারিবদ্ধভাবে অনেক দুরের মক্তবে যেতেন আরবী পড়তে। সেটা ছিল খুব কষ্টের, আবার খুব আনন্দেরও। মাত্র তিন বছর বয়সে মেজো ভাইয়ার হাত ধরেই সাভার বংশাই নদীতে তার সাঁতারে পারদর্শী হন। দাড়িয়া বান্দা, গুল্লাছুট, রিং, বৌচি, ডাংকটি, কানামাছি, রেকেট ছিল তার খুব পছন্দের খেলা। গাছে গাছে চসে বেরিয়ে সময় কেটেছে তাঁর। দুরন্তপনা আর নিসর্গের সাথে ভালোবাসায় আপ্লুত ছিল তার অন্তর্জগত। ভয়-শংকা-জড়তা মাড়িয়ে ছুটেছেন দিগন্তের পানে। তিমি বেশ ডানপিটে ও সাহসী ছিলেন ছেলেবেলা থেকেই। সাত বছর বয়সে ওয়াল টপকাতে গিয়ে পড়ে মুখের সকল দাঁতে প্রচন্ড আঘাত পান। সেদিন তিনি কেঁদেছিলেন ভয়ে, ব্যাথায় নয়।
লেখাপড়া শুরু চাইল্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। গর্বের বিষয় হল, পরবর্তীতে ঐ স্কুলেই চাকরিরত ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্কুলে সবধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন- নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদিতে অংশ নিতেন। খেলায় ভীষণ পটু ছিলেন তিনি। ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। স্কুলে মিলাদ মাহফিলে রচনা প্রতিযোগিতায় প্রায়ই প্রথম হতেন। স্কুল জীবনের বিশাল প্রাপ্তি এসব পুরস্কার এখনো সংগ্রহে রেখেছেন তিনি পরম মমতায়।
সাভার গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশের পর সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর উচ্চ শিক্ষার জন্যে দেশের বাইরে যাবার চেষ্টা করেন তিনি। মনোনীতও হন। কিন্তু পরিবেশ আমার অনুকূলে না থাকায় আর মাইল্ড স্ট্রোক করে পেরালাইসড হয়ে পরায় আর যাওয়া হলো না। সে যাত্রায় সকলের দোয়ায় বেঁচে গেলেও দেশের বাইরে যাবার জন্য আবারও চেষ্টা করেন এবং সফলও হন তিনি। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ স্নেহময়ী মায়ের চির বিদায়ে আর বাইরে গিয়ে পড়া সম্ভব হয়নি।
মানুষের সেবা করতে ভীষণ ভীষণ ভালো লাগে তার। যখন যেভাবে পেরেছেন মানুষের সেবা করেই গেছেন। মায়ের উৎসাহে সব রকমের হাতের কাজ শিখেছেন। শিখেছেন বটিকের কাজ। ঐ সময় এলাকায় অন্য কেউ বাটিকের কাজ জানতো না। সুইসোতর কাজ দিয়ে শুরু আর বৌ সাজানো দিয়ে শেষ। পার্লার কাজ জানেন তিনি। কাজ করেছেন ব্লক বাটিকেরও। দীর্ঘদিন আড়ং আর গ্রামীণ শো-রমের সাথে ডিজাইনের কাজ করেছেন। এলাকার স্থানীয় মেয়েদের হাতের কাজ বিনামূল্যে শিখিয়ে তাদের সাবলম্বী করেছেন। সবসময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্যে কিছু করার চেষ্টা করাটাই তার ভালো লাগতো।
মা মারা যান তার ছোট বয়সে আর কয়েক বছর আগে দুই ভাইও পরপর আমার মারা যান। এখন তার ছোট একটি বোন আর একটি ভাই আছেন। তাই ঘটনাগুলো তার জীবনের অনেক কিছুই এলোমেলো করে দেয়। বড় ভাই মারা যাবার পর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন, দীর্ঘদিন কথা বলতে পারেননি। মেজো ভাইয়া মারা যাবার পর রাস্তায় পড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক করেন। এখন লেখালেখি করতে পারছেন তার স্বামীর ঐকান্তিক সহযোগিতা আর সন্তানদের মমতার ছোঁয়ায় এবং শুভাকাঙ্খিদের অনুপ্রেরণায়।
এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই তাঁর একক বই প্রকাশিত হবে একুশে বইমেলায়, সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু কোনো একটা কারণে তখন বইটি ছাপা হলো না। সেই ইচ্ছেটা অবশেষে পূর্ণতা পেলো সাথে আরও ১০টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ।
লেখিকা সেলিনা হোসেনের প্রকাশিতব্য একক কাব্যগ্রন্থ “আরাধ্য”, খুব তাড়াতাড়ি পাঠকের হাতে পৌঁছে যাবার অপেক্ষায়।
তাঁর ১০টি যৌথ কাব্য গ্রন্থের মধ্যে ঝিনুকে এঁকেছি মুখ, স্বপ্নের ডাক বাংলা, শুধু কাব্যের জন্য, কবিতঞ্জলি, অন্তরের অগ্নিশিখা, ডাক বাংলা কাব্যকুঞ্জ, কবিতার কন্ঠ, সৃষ্টি কাব্য অন্যতম। সংকলন আসছে – সাহিত্যতরী, দীপ্ত, উঠোন, সীমান্ত, বিহঙ্গ, বাঙালির শব্দ বুনন, শব্দের খড়কুটো।
প্রতিটি প্রকাশিত গ্রন্থের ঘ্রাণ একেকটি সন্তানের শরীরের ঘ্রাণের মতো অনুভব করে গর্বিত হন তিনি। এটা তার ভালোবাসার একটি অপূর্ব অংশ, মন খুলে কথা বলার একটি অনন্ত উদ্যান।
পরিশেষে লেখিকার বক্তব্য:
প্রথমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার স্বামীর প্রতি। তাঁর ভালোবাসার হাত না থাকলে এত পথ পাড়ি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। ঋনী রইলাম আমার শুভাকাঙ্ক্ষিদের প্রতি যারা লেখাগুলো পড়ছেন ও ভালবেসেছেন। ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে নেই, তা আমিও করবো না। আল্লাহর রহমতে সকলকিছুই সামলে নিয়ে আমি যেন নিয়মিত লেখালেখি করতে পারি আপনাদের সকলের কাছে এই দোয়া চাই।
ছেলেবেলা থেকেই আমি মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তিতে আসক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে সার মাহিদুল ইসলামের কাছেই আবৃত্তিতে তালিম নেবার সৌভাগ্যবান হই বন্ধু সৈকতের সহায়তায়। বন্ধুত্বের বন্ধনি কৃতজ্ঞতা রইল সৈকতের জন্য আর আজীবন কৃতজ্ঞ রইলাম মাহিদুল ইসলাম সারের প্রতি।
অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা ও ফেসবুক সাহিত্য গ্রুপ অচিনপুর এক্সপ্রেসে পথ চলার সাথে আমি যুক্ত হয়েছি। এটি আমার ভালোবাসার একটি অন্যতম স্থান, উৎসাহের একটি আনন্দময় কক্ষ। মনের কথাগুলো সাবলীলভাবে আমি বলতে পারি সেথায়, সকলেই ভীষণ আন্তরিক ও সহায়ক। “লেখক পোর্টফোলিও পেজ” তৈরীর যে চমৎকার উদ্যোগ অচিনপুর এক্সপ্রেস পত্রিকাটি নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। অন্যকেউ এত বড় দায়িত্ব নেবার সাহস এখনও নিতে পারেনি। যথেষ্ট সময় ও ধৈর্যের সাথে কাজটি সম্পন্ন করতে হয়। এত সুন্দর একটি আয়োজনে সাথে রাখবার জন্যে আমি পত্রিকা ও গ্রুপের সকলের নিকট আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ, তাদের ভালোবাসায় আমি সিক্ত ও সম্মানিত। আল্লাহর উপর বিশ্বাস আর নিজের উপরে ভরসা করে সম্মুখে হেঁটে যেতে চাই মাইলের পরে মাইল।
সেলিনা হোসেন
১৬-০২-২০২১