লেখিকা নাজনীন নাহার

জন্মস্থান: শরিয়তপুর
জন্ম তারিখ: ৭ই নভেম্বর

লেখক জীবন

ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামের কোলাহলে। মেঠোপথ, গাঁয়ের গন্ধ, পানকৌড়ি, ডাহুক, বুনোহাঁস আর শাপলা শালুকের চলচিত্রে। নদী, দিঘি, পুকুর আর সবুজ বন বনানীর কোলেই তার জন্ম শৈশব। এস এস সির পূর্বেই ঢাকায় চলে আসা। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় লেখা নিয়মিত ছাপা হতো।

মুলত বেশ ছোটবেলায় সংসার জীবনে ঢুকে যান তিনি। সংসার, সন্তান আর লেখাপড়া। ডায়রীর পাতা ছাড়া আর লেখালেখিটা হয়নি সেভাবে তখন। যদিও এর মধ্যে কণ্ঠশীলন আবৃত্তি সংগঠন থেকে আবৃত্তির কোর্স শেষ করে সম্মান সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন, গ্রুপ থিয়েটারও করেছিলেন, বিটিভিতে দু’টো নাটকে অভিনয়ও করেছেন। হারমোনিয়াম, গিটার থেকে বাঁশি অবধি চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু সেভাবে কোনটাতেই পূর্ণ সময় দিতে পারিননি।
সংসারের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমফিল করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এল এল বি করেছেন। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে তিনি একজন প্রোমাস্টার। সেখানে একজন আইডেন্টিয়ার, আলোচক, কাউন্সিলর ও সাধারণ সেচ্ছাসেবক হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এতো কিছুর মধ্যে বই পড়াটা তার ভীষণ নেশার কাজ ছিল। রবীন্দ্র, নজরুল, মানিক বন্দোপাধ্যায়, হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, মৈত্রীয় দেবী, শংকর, সমরেশ, সুনীল তার পছন্দের লেখকদের মধ্যে অন্যতম। বুদ্ধদেব গুহর একক ষাটোর্ধ বই পড়েছেন তখন। আরজ আলী মাতাব্বর থেকে ম্যাক্সিম গোর্কি, অরুন্ধতী রায়, কাফকা সহ অনেকের লেখা গল্প উপন্যাসের পড়ার নেশা ছিল তার।

কবিতাও তাকে খুবই টানতো। কবিতার প্রতিটি লাইনের যে ভাবার্থ, যে গভীরতা তিনি সেখানেও ডুবতে খুব পছন্দ করতেন। লিখতে শুরু করেছেন তিনি কবিতা দিয়েই। মূলত তিনি কবিতারই মানুষ। টুকরো টুকরো অনুভূতিগুলোকে জমিয়ে রাখেন কবিতার কোলাজে। গুছিয়ে গল্প বলা, গল্প করা তার ভীষণ পছন্দ। জীবনের গল্প, মানুষের গল্প, সম্পর্কের গল্প সকল গল্প জুড়েই তার ভাবনা, বোধ উপলব্ধির বিস্তার। তার কাছে জীবন মানেই গল্প। গল্প মানেই জীবনের সাতকাহন। আর সেই উপলব্ধি থেকেই তার লেখা শুরু। তার লেখা এক একটি কবিতা এক একটি গল্পের স্বাক্ষর। তেমনই এক একটা গল্প এক একটা পরাবাস্তবতার দহন হয়ে পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে বেশ। তার লেখাতে পাঠক বরাবরই নিজের অংশভাগ খুঁজে পায়।

এভাবেই ইতিমধ্যে তার তিনটি একক কাব্যগ্রন্থঃ মৌনতা, নীলাদ্রি প্রণয়, সভ্যতার বায়োগ্রাফি প্রকাশিত হয়েছে। একটি একক গল্পগ্রন্থঃ অনন্ত অপেক্ষা ও একুশটি গল্প নিয়ে একটা অনুগল্প গ্রন্থ অভিতাপ ইতিমধ্যে পাঠকদের হাতে পৌঁছে গেছে। একটি অনুকাব্য অনুকথার বইঃ দ্বীপ্ত সায়র এবং বেশ কিছু যৌথ কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। গল্প কবিতা লেখায় তার কাছে মানুষ, সমাজ, সম্পর্ক, প্রেম, দুঃখ, দহন, ধর্ম, কুসংস্কার, রাষ্ট্র ও ক্ষমতা প্রাধান্য পায়। “চিঠির কোলাজ” তার ভিন্নধর্মী একটি বই। যেখানে চিঠি লেখার যুগ বিলুপ্তপ্রায় সেখানে দারুণ দারুণ সব পাঠক প্রিয় একক ও সিরিজ চিঠিগুলো নিয়ে তার নতুন বই “চিঠির কোলাজ”। এই গ্রন্থটি প্রকাশের মূলে কাজ করেছে চিঠির পাঠকপ্রিয়তা। ইতিপূর্বে তার লেখাগুলো যেভাবে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। “চিঠির কোলাজ” গ্রন্থটিও সেভাবেই পাঠকদের মনের সাহিত্য তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। আগামীর বইমেলাকে সামনে নিয়েই এসেছে চিঠির কোলাজ। আরও আসছে আগামীর বইমেলায় তার লেখা প্রথম উপন্যাস “জলময়ূর“।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি প্রকাশনার সাথেও যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত কিছু সম্পাদনার কাজও করেছি। ইতিমধ্যে তার যৌথ সম্পাদনায় সাহিত্য মেগাজিন ও কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রায় নয়টি যৌথ বই প্রকাশিত হয়েছে। আরও অনেকগুলো যৌথ বই প্রকাশের পথে। পাশাপাশি তিনি কিছু সৌখিন ইচ্ছের সাথে বসবাস করেন। তা হলোঃ ফটোগ্রাফি, পেন্সিল স্কেচ, চিঠি লেখা।

পরিশেষে লেখিকার বক্তব্য:

অনলাইন সাহিত্য গ্রুপগুলোর মধ্যে অচিনপুর এক্সপ্রেস এর পথ চলার সাথে আমি যুক্ত হয়েছি। এই সাহিত্য গ্রুপ আমার ভালোবাসার একটি সাহিত্য গ্রুপ। আমার অনুপ্রেরণার অংশ। যেন আমার একটা আপন ঘর। এখানকার সকলেই খুব আন্তরিক। চমৎকার একটা সাহিত্য সংস্কৃতির প্লাটফর্ম প্রিয় অচিনপুর এক্সপ্রেস। অচিনপুর এক্সপ্রেস এর মতো একটা প্লাটফর্মে নিজেকে নিয়ে উপস্থাপন করার মতো কতটুকু যোগ্যতা আছে আমার জানা নেই। তবে এক্ষেত্রে বড়ো যোগ্যতা হলো আমার জন্য এই পরিবারের ভালোবাসা। শুকরিয়া অচিনপুর এক্সপ্রেস। শুকরিয়া অচিনপুর এক্সপ্রেস এর সম্মানিত প্যানেল এবং সদস্যগণ। আপনাদের ভালোবাসা ও সম্মানে আমি ঋণী।
আমি যেন আপনাদের এই ভালোবাসা ও সম্মানের ঋণ আমার লেখা ও আচরণের মাধ্যমে কিছুটা শুধতে পারি। এ পর্যন্ত আমি কী বা কতটুকু লিখতে পেরেছি গুছিয়ে বলতে পারব না। আল্লাহর উপর বিশ্বাস আর নিজের প্রতি আস্থা আমার প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে, আমার লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো শক্তি আর প্রেরণা। প্রেরণা আমার লেখার সকল সম্মানিত পাঠকগণ।
আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার প্রিয় পাঠক সুহৃদ বন্ধুদের।তাদের ভালোবাসায়ই আজ আমি এইটুকু। আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছি। আমার মৃত্যুর পরেও যেন আমার লেখা একটা লাইনের মধ্যে হলেও আমি আপনাদের সকলের মনে বেঁচে থাকতে পরি অনাদিকাল। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসা।

“পৃথিবী বইয়ের স্বাদে ডুবুক”।

নাজনীন নাহার
.০২.২০২

1,275 thoughts on “লেখিকা নাজনীন নাহার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please visit...