আশির আহমেদ
কিয়ুউশু, জাপান।
নন-ফিকশন: জাপান-কাহিনিঃ জাপানি ভাষা
একটা বিদেশি ভাষা শিখতে কতদিন লাগে?
তিনটি মাত্র জাপানি শব্দ পুঁজি নিয়ে জাপানে এসেছি। আবুনাই মানে বিপদজনক, ওহাইয়ো গোজাইমাস মানে শুভ সকাল। আরেকটা যে কি ছিল মনে করতে পারছিনা। আন্ডারগ্রেডে ঢোকার আগে ভাষা শেখা কম্পালসারি। ৬ মাসে সম্পূর্ণ নুতন একটা ভাষা শিখে এই ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বো। সম্ভব? বলেন না, সম্ভব?
দেশে ১২ বছর ইংরেজী শিখলাম। ফলাফল কি দাঁড়াল? কথা বলতে গিয়ে দেখি শব্দ খুঁজে পাইনা। শব্দ পেলে বাক্য মেলাতে পারিনা। একই বাক্যের মধ্যে “আই মিন”, “য়ু নো”,“হাউ ক্যান আই সে” জাতীয় শব্দমালা লাগিয়ে দেই। কাঁধ দুটো মৃদু ঝাঁকুনি দেই। তাতে নেইটিভ নেইটিভ ভাব আসে। কিন্তু কথোকপথন চলে না। ওদিককার কথা অনেকটাই বুঝি, কিন্তু এদিক থেকে কিছুই বের হয়না। যে যত বেশী “আই মিন”, “য়ু নো”,“হাউ ক্যান আই সে” এই শব্দ গুলো লাগিয়ে কথা বলবে, ধরে নেবেন তার স্পিকিং লেভেল ততটা সবুজ-সাথী লেভেলের।
একটা ভাষায় বাহাদুর হবার জন্য সেই ভাষায় লিখিত(রাইটিং), পড়িত(রিডিং), শুনিত(লিসনিং), বলিত (স্পিকিং) সব গুলো স্কিলই সমভাবে জরুরী। দেশে ইংরেজী লিখতে শিখেছি, পড়তে শিখেছি, ইংরেজী সিনেমার কল্যাণে শুনতে শিখেছি, কিন্তু বলতে শিখিনি। রেপিড স্পিকিং ইংলিশ নামে একটা বই ফুটপাতে, নীলক্ষেতে দেখেছি। কোনদিন কেনার চিন্তাও করিনি।
“হেইয়া কিন্না অইবে ডা কি কন দেহি? সিলেবাসে আছে না পরীক্ষায় আইবে? এইসব বই কেনার পয়সা কি গাঙ্গে দিয়া বাইয়া আইবে? ”
সব আশঙ্কা দুর করে দিয়ে ছয় মাসে সত্যি সত্যি জাপানি ভাষাটা শেখা হয়ে গেল। একেবারে রক্ত মাংসের সাথে মিশেও গেল। “Red” বল্লে যদ্দুর “লাল” মনে হয়, “আকা” বললে আরো “লাল” ত্ব খুজে পাই। তিন বন্ধু একসাথে জাপানে এসেছি। বয়স আমাদের ১৮-১৯। একজন সারা দিনরাত পড়াশুনা করে। আর আমরা দুজন সুযোগ পেলেই ঘোরাঘুরি করি। টোকিও শহরটা আমাদের পছন্দ হলো। য়ামানোতে লাইন নামে একটা সার্কুলার ট্রেন আছে। সর্বমোট ২৯ টা স্টেশন। এক স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করলে ৫৫-৬৫ মিনিটের মাথায় আবার সেই স্টেশনে ফেরা যায়।
লোকে বলে ভাষা শেখার জন্য সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো ঐ ভাষাভাষীর একটি বয়/গার্ল ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলা। টোকিও তে জাপানি ভাষা শেখার জন্য আমার দ্বিতীয় থিওরীটা হচ্ছে য়ামানোতে লাইন ব্যবহার করা। প্রুভেন মেথড।
আমাদের টেকনিকটা ছিল নিম্নরূপ-
য়ামানোতে লাইনে একেক দিন একেক স্টেশনে নামবেন। নেমেই আধা ঘন্টা রেন্ডম ভাবে (ব্রাউনিয়ান মোশনে) হেঁটে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। যখন থামবে কোলাহল -বুঝবেন যথেষ্ট হারানো হয়েছে, এখন ফিরবার পালা। এবাউট টার্ন। তারপর লোকজনকে জিজ্ঞেস করে করে স্টেশনে ফিরবেন। অচেনা লোকদের সাথে কথা হবে। নুতন শব্দ আবিষ্কার করবেন- ভোকাবুলারি বাড়াবেন। সত্যিকারের উচ্চারণ, বাচণভঙ্গি সবই ধরতে পারবেন। একটা ভাষা কে রক্ত মাংসের সাথে মিশাতে হলে শুধু বই পড়লে হবে না।
জাপানিরা ছবি তোলার সময় কিভাবে পোজ দেয় দেখেছেন? দুই আংগুলে ভি সাইন বানিয়ে বলবে চি-জ। এগুলো কি বইয়ে লেখা থাকে?
এই পদ্ধতি অবলম্বন করে দুইমাসের মাথায় আমরা পুটুস -পাটুস কথা বলা শুরু করলাম। বাক্য শেষ করতে না পারলে “আনো আনো” বলে টান দেই। যারা কথায় কথায় “আনো আনো” বলবে, ধরে নেবেন এরা এখনো কিন্ডার-গার্টেন লেভেলের।
কত মজার ঘটনা ঘটলো কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি।
(১) একবার য়োকোহামাতে পথ হারিয়ে ফেল্লাম। পুলিশকে জিজ্ঞাস করলাম, “য়োকোহামা একি ওয়া ইকুরা দেস কা?” য়োকোহামা স্টেশনের দাম কত। উনি যা বুঝার বুঝে নিলেন, আমাদের য়োকোহামা স্টেশন দেখিয়ে দিলেন। আমরা যে আরব দ্যাশের শেখের বাচ্চা না, তা আমাদের সুরত দেখেই বুঝে নিয়েছেন।
(২) শীতের জ্যাকেট কিনবো। তখনো চাইনিজ প্রোডাক্ট জাপানের মার্কেটে ঢুকেনি। ২৫,০০০ ইয়েনের নীচে কোন জ্যাকেট পাচ্ছি না। এক দোকানের সাইন বোর্ডে লেখা জ্যাকেট ২১০০ ইয়েন। দৌড়ে গিয়ে বল্লাম দুইটা দেন। জিজ্ঞেস করলেন, কালার কি? ইশারায় বোঝালাম কালার পরে হবে আগে সাইজ দেখান। পরে বুঝলাম ওটা লন্ড্রী শপ। ধোয়ার মূল্য ২১০০ ইয়েন। মহিলা আমাদের অন্য একটা জ্যাকেটের দোকান দেখিয়ে দিলেন।
(৩)আরেকবার এই ঢাকা এয়ারপোর্টেই এক মহিলা ইমিগ্রেশন অফিসার আমার ল্যাংগুয়েজ টেস্ট নিলেন। আমি কেন মাত্র ৩ দিনের জন্য দেশে গেলাম সধমক ময়মনসিংহ টোনে জেরা করলেন। মনে মনে বলি “মুই ছুডিডা যদি ফাইতাম, ৩ দিন ক্যান, ৩ মাস ঠ্যাং এর উফরে ঠ্যাং দিয়া দ্যাশে কাডাইয়া দেতাম”। খালাম্মা আমার কৈফিয়ত না শুনেই জিজ্ঞাস করলেন, “বলেন, ‘ছুটি’র জাফানি কি বলেন।”
আমি নিশ্চিৎ ছিলাম, উনি জাপানির “জ” ও জানেন না।
আমিও ময়মনসিংহ টোনে জবাব দিলাম, “শি-রানাই”। উনি পাসপোর্টে সিল দিলেন। বুঝলাম, পাস।
আসলে “শিরানাই” মানে হলো “জানিনা”।
(৪) যাদের ফ্যামিলি নামে আহসান আছে এদের জাপানে আসা ঠিক না। আহসান এর জাপানি উচ্চারণ হবে আহো সান। আহো মানে হলো স্টুপিড আর সান হলো সাহেব। কি দাড়ালো- স্টুপিড সাহেব? আরেকটা হলো খায়ের। এটার উচ্চারন হবে খায়েরু। তার মানে হলো ব্যাঙ। খায়েরুল আহসান নামের এক ছোট ভাই এসেছিল জাপানে। সে তার নামের অর্থ বুঝে উঠার আগে, ৩ মাসের মধ্যেই জাপান ত্যাগ করলো।
(৫) ১৯৯৯ সালে আমি সবে পি,এইচ,ডি শেষ করে তোহকু বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেছি। আমার ভাগে মাস্টারস এর দুটো ছাত্র এসে পড়লো। ওদের গাইড করতে হবে। একটার নাম হাগা আরেকটা মুতো। এই হাগা-মুতোকে সামনে রেখে গবেষনায় কিভাবে কন্সেন্ট্রেইট করি,বলেন?
জাপানে এসে শুধু যে জাপানি ভাষা শিখেছি তা নয়। স্পোকেন ইংরেজী শিখলাম, জার্মান শিখলাম আর শিখলাম বরিশাইল্যা (আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাষা)। পার্ট টাইমে ভাষা শিখানো শুরু করলাম- বাংলা শিখালাম জাপানিদের, জাপানি শিখালাম ভারতীয় আর পাকিস্তানীদের, আর ইংরেজী শিখালাম কত্তোজনকে। বাংলা যে এতো মধুর এতো সায়েন্টিফিক একটা ভাষা তা শেখাতে গিয়ে টের পেয়েছি।
অচিনপুর. কম/ শারমীন সুলতানা ববি
This is my first time pay a quick visit at here and i am really happy to read everthing at one place
I’m always impressed by the level of research and detail you put into your articles. It shows how committed you are to providing high-quality content.
This is a well-written article that provides a fresh perspective on the topic. I appreciate the way you presented the information in a way that is easy to understand and thought-provoking.
Your writing is so engaging and easy to read. It’s clear you have a talent for communicating complex ideas in a simple and approachable way.
62019 89836This design is steller! You obviously know how to keep a reader amused. Between your wit and your videos, I was almost moved to start my own blog (well, almostHaHa!) Great job. I genuinely enjoyed what you had to say, and far more than that, how you presented it. Too cool! 309547
I appreciate the time and effort you put into researching this topic. It’s clear you are passionate about providing accurate and helpful information.