ছোট গল্প: ব্ল্যাক কফি

সমীর সরকার
হেমতাবাদ, উত্তর দিনাজপুর
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

ছোট গল্প:

ব্ল্যাক কফি

দেবাংশুর মতো বড় আমি কোনদিও হতে পারি নি ।ওর বড় হওয়াটা আমাদের বড় হতে শিখিয়েছে । কতটা বড় হয়েছি তা বোঝার জন্য আরও একটা দেবাংশু দরকার ছিল ।
যে যার মতো বেছে নিয়েছি জীবনের পথ ।আর সেই পথে গুনেছি শুধু মাইল ফলক । পাতা উল্টে ফেলেছি জীবনের প্রায় সব অধ্যায়ের। বাকী শুধু পড়ন্ত বিকেলের কয়েকটা পাতা!
অধ্যায়ের অধ্যবসায় আর বুঝি শেষ হলো না ! না হতে পারলাম ইতিহাসের পাতি হাঁস না নিজের জীবন চরিত !
তবে বিকেলের নরম রোদ যখন জানালার আশপাশে পায়চারি করে, এক পশলা ধূলো ঝড় হয়ে দেবাংশুর মতো ঝাপসা হতে খুব ইচ্ছে হয়! এই ভাবেই শেষ হয়ে আসে ঠোঁট ঝোলা কৌণিক সিগারেট আর ফিল্টারে লেগে থাকে দেহের কিছু অংশ এস্ট্রেতে ।

স্যার ফিরতে হবে এবার ।
ম-? হুম -। আসছি ।
জল দিলাম সদ্য নেভা চিতায় । উবছে ধোঁয়া । উবছে দেবাংশুর শেষ দিন ।
জানিনা কেন শ্মশানের পথ এত সরল !প্রতীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যায় বলেই কি এত বায়বীয়! নাকি পথটা দীর্ঘনিঃশ্বাসের তাই! তাকিয়ে থাকে চোখ, পুড়তে থাকে মন!

অর্জিশা তোমার জন্য কফি এনেছি । ঠান্ডাটাও আজ বেশ জমিয়ে পড়েছে ! গরম গরম ব্ল্যাক কফি ভালো লাগবে তোমার ।
থ্যাংকস নীলাদ্রি!
জানত নীলাদ্রি দেবাংশু খুব ভালো অভিনেতা ছিল! ওর “আর্মস এন্ড দ্য ম্যান “-এ ব্লান্সলির চরিত্রে অভিনয় দেখে সরাসরি গ্রীণ রুমে গিয়ে দেখা করে এসেছিলাম ।
হুমম …জানি অর্জিশা । আর তার কিছুদিন পরেই তোমাদের ভাব ! কলেজ ক্যান্টিন তখন তোলপাড় !
আর তার ঠিক পরের নাটকে তোমরা দু’জন । “ওথেলো”-তে । যেখানে দেবাংশু ওথেলো হয়ে তোমায় শুনিয়েছিল তার অতীত দিনের রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতা আর তুমি ডেসডিমনা হয়ে নিজের শেষটুকু সঁপে দিয়েছিলে তার কাছে!
হুম … নীলাদ্রি একদমই তাই । তবে অসাধারণ ছিল তোমার ডিরেকশান !
( কি করে বলি তোমায় অর্জিশা যে ক্যাসিওরা চিরকাল মাঝপথের মুসাফির হয়ে খিদমত্ করে যায়…!)
কি ভাবছ বলোত নীলাদ্রি?
না! তেমন কিছু না । জাস্ট ক্যাসিওর কথা ভাবছিলাম ! দেখ আজ বাইরেটা বড্ড ঝাপসা! কিছুই দেখা যাচ্ছে না ।
ঠিক বলেছ বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না!
বাইরেগুলো এমনি হয় তাই না নীলাদ্রি?
না অর্জিশা – তা সবসময় নাও হতে পারে ।
আবার হতেও তো পারে নীলাদ্রি! তবে নিজের ক্ষেত্রে বোধ হয় বাইরেটা সবথেকেসবথেকে বেশীই দেখা হয় ভেতরের তুলনায়!
May be or May not be!

নীলাদ্রি তুমি খুব ভালো করেই বুঝেছিলে যে কেন ওথেলো ডেসডিমনা কে হত্যা করেছিল ।
ঠিক বুঝতে পারা নয় । বলতে পার ভালো একটা ফিলিং ছিল । নইলে ডিরেকশানটা কি করে ভালো হতো?
হাহা! সেই তো! কি করে এত ভালো ডিরেকশান দিতে! একদম ঠিক বলেছ । দেবাংশুর ওথেলো হয়ে আমায় হত্যা করাটা হয়ত স্বাভাবিক ছিল কারন আমি ছিলাম অন্যের অর্জিশা । কিন্তু নীলাদ্রি তুমি? তুমি কি বুঝেছ আমায় আজও? হুম্! যদি এতটুকু বুঝতে তাহলে দেবাংশুর ফিঙ্গারপ্রিন্ট তোমার ব্ল্যাক কফির কাপে আত্মগোপন করত না !

থমকে দাঁড়ালো নীলাদ্রি দরজার মুখে । ভ্রূ দু’টো কুঁচকে, উত্তাল ঢেউ চোখে তাকিয়ে রইল একভাবে অর্জিশার দিকে । ঠোঁটের কোণে তখনও উবছিল সিগারেটের চিতার ধোঁয়া …।

Post navigation

2 thoughts on “ছোট গল্প: ব্ল্যাক কফি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *