জীনাতুল কুবরা নিপা
কুয়ান্তান, মালয়েশিয়া।
প্রবন্ধঃ অমর একুশের অঙ্গীকার
“মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।”
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতার উক্ত পঙতিগুলোতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত,পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ঘোষণা দেয় পূর্বপাকিস্তানি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
এই একতরফা ঘোষণায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি জনগণ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার। আহত হন অনেক ছাত্র-যুবা। শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ। ভাষার জন্য জীবন দান ইতিহাসে বিরল। মূলতঃ ভাষা আন্দোলনই আমাদের ভেতর বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে যার জন্য পরবর্তীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম হতে দেখি।
মাতৃভাষা একটি জাতির স্বকীয়তার প্রতীক। এই ভাষাই আমাদের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করেছে, আমরা স্বাধীন দেশে মাতৃভাষায় মাথা উঁচু করে কথা বলি, মত প্রকাশ করি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘোষিত হয়। এদিন এই দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশনে এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের সব সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় একুশে ফেব্রুয়ারি রাত বারটা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাদিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এসময় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?” গানটি বাজতে থাকে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে UNESCO র ৩০ তম অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। পরের বছর ২০০০ সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি অঙ্গীকারের নাম, এই অঙ্গীকার বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করে শহীদদের রক্তের প্রতিদান দেওয়ার।
অচিনপুর/ জেডকে