সুরভী হাসনীন
ঢাকা।
গল্প: অনুরোধ ( পর্ব- এক )
খানিক আগের সুখস্মৃতি নিয়ে প্রায় আধ ঘুমন্ত রায়নাকে ধাক্কিয়ে জাগায় সায়মন।
— এই তাড়াতাড়ি ওঠো, ডিনার টাইম হয়ে গেছে।
দেখতে থাকা রঙিণ স্বপ্নটা সুতোর জাল ছিড়ে বেরিয়ে গেছে, হাতড়ে ধরি ধরছি করে জেগে উঠল রায়না। সায়মনকে অস্থির দেখাচ্ছে।
— মাত্র আটটা বাজে, ঘুরতে এসছি, এখনি ডিনার?
— তুমি জান না, আব্বা এ সময়ে খায়? বেড়াতে আসো অার জাহান্নামে যাও, আব্বা হার্টের পেশেন্ট, সময় মতন ঔষধ খেতে হয়? বোকা সাজছ কেনো?
গায়ে চাদর পেচিয়ে বিছানা ছাড়ে রায়না। ফ্রেস হতে হবে, গোছল এখন অসম্ভব। বাবা খাবেন মানে সর্বোচ্চ দশ মিনিট সময় হাতে আছে। তুমি যাও আমি আসছি বলে ফ্রেসরুমে ঢোকে । কোমেরর কাছটায় দশ আঙুলের দাগগুলো একটু আগেও আনন্দ দিয়েছে, এখন কেমন উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কক্সবাজারে হানিমুনে আসাটা বিয়ের পর প্রতিটা কাপলের জন্য স্বপ্ন। রায়নার ইচ্ছে ছিল একটা ইন্দো- মালয় ট্রিপের। বান্ধবীদের হানিমুন পিকগুলো দেখতো আর স্বপ্নের রাজকুমারের জন্য অপেক্ষার সাথে, চাকরির টাকা অল্প করে জমিয়েছে। বাবা চলে গেছে সেই ক্লাস টেনে থাকতে। ভাই – ভাবী, আম্মা আর রায়না মিলে ভালোই চলে যাচ্ছিল। পড়াশোনাটা টিউশন আর রেজাল্টের বৃত্তির টাকা দিয়ে চলে গেছে। বিয়েতে বাবার পেনশন আর মায়ের গহনা, সাথে ভাইয়ার সাহায্যে নিজের টাকাগুলো একরকম পরে ছিল।
দেখাশোনার বিয়ে, তাই বিয়ের আগে জানাশোনায় শোনা বেশি বলা কম। রায়না ভাবত বিয়ের পর ও বলবে, নিজের ইচ্ছে, অনিচ্ছে, আশা সব কিছু। বাস্তবতার চাপে প্রেম নামের জিনিষটা কখনো ছোঁয়নি, অনুভূতি গুলো বরাবর সরিয়ে রেখে নিজেকে তৈরী করেছে রায়না। বিয়ের পর সায়মনের হাত ধরে অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো বাস্তবে রূপ দিবে। এতদিনের জমানো কথাগুলো বলবে নিজের মানুষটার সাথে। বাসর রাতে টুকটাক কথা, নতুন অভিজ্ঞতা আর ক্লান্তিকর ঘুমের পর প্রথম সকালটা ভেজা চুল ছুঁইয়ে জাগাতে যায় সায়মনকে।
— ওকি বৌমা, কি করছ তুমি? সায়মন একদম ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না, সেখানে পানি ফেলছ কেনো ওর মুখের ওপর?
ছিঁটকে উঠে সরে বসে, অবাক হযে যায়। উনি সাত সকালে এখানে, এই রুমে কি করছে।
— মা, আপনি? দরজা বন্ধ ছিল না, মানে আমি তো সকালে দরজা খুলিনি।
— আমার কাছে রুমের চাবি আছে, সায়মন কখনো সকাল আটটার পর ঘুমায় না, আজ এত বেলা হয়ে গেল, ছেলে আমার অভুক্ত।
— আমি ডেকে দিচ্ছি মা। আপনি…
— তুমি যাও রান্নাঘরে, আজকের পায়েসটা তুমি করে নামাবা, আমাদের বাড়িতে বউ একটা কিছু পরের দিন রান্না করে। তা রান্না পারো? নাকি বেয়াইন সাহেবাই আদর করে খাইয়েছে তোমাকে!
উত্তর না দিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়ায় রায়না। হলে থাকত, তাতে আসা যাওয়ার ভাড়া বেঁচে যেতো। রাত করে টিউশন থেকে একসাথে ফিরত হলের সিনিয়র জুনিয়র সহ। রান্না করা, বাজার করা সবই সে করতে পারে। পাশ করার পরই চাকরিটা হয়েছে। মুক্ত স্বাধীন একটা জীবন থেকে এ কোথায় আসল ভাবতে গিয়ে পায়েস লেগে গেছে হাড়ির তলায়। পরিবেশনের আগে হাড়ি ধুয়ে গুছিয়ে রাখল। ময়নার মা দীর্ঘ দিনের কাজের লোক, চুপচাপ নতুন বউয়ের কাজ দেখছে। বাটি করে একটু পায়েস ময়নার মাকে দিয়ে টেবিলে পা চালায় রায়না। সায়মন বসেছে, সাথে বড় ভাই ভাবী, শ্বশুর। সবাই পায়েস খেয়ে ভালো বললেও শ্বাশুড়ির মুখ ভার। ময়নার মাকে দেয়া বাটিটা উনি টেবিল থেকে দেখতে পেয়েছেন।
— এসেই কাজের লোককে দরদ দেখাচ্ছে, এতো ঘাঘু মেয়েরে বাবা।
— আম্মা থামো, নতুন বউ, শুনতে পাবে মেয়েটা, কষ্ট পাবে।
পায়েসের বাটি টেবিলে রাখতে গিয়ে শ্বাশুড়ি আর ভাসুরেরে কথা গুলো কানে এসেছে রায়নার। শ্বশুরকে দিয়ে শ্বাশুড়িকে দিতে যায়,
— থাক, আমি নিব, আর শোন, ময়নার মাকে কিছু দিতে হলে আমাকে জানিয়ে দিবা, সব আইটেম সবার জন্য না। বাসার কিছু নিয়ম কানুন আছে। মেনে চলবা,
রায়না যদিও মাথা নেড়ে, তবু মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। সামান্য একটু পায়েস, সেটার জন্যও কথা শোনা!
— কোথায় তুমি? আরে এতক্ষণ বাথরুমে থাকলে খেতে যাবে কখন?
দরজায় সাময়নের ধাক্কাতে বাস্তবে ফেরে রায়না। কামিজ গলিয়ে চোখে হালকা কাজল আর লিপগ্লস দেয়। সায়মনকে আগেই বলে রাখা, ওরা খাবারের পর বার্মিজ মার্কেট ঘুরবে। লিফটে পাশের রুমের কাপলটার খুনসুটিটা বেশ লাগছে। নেমে সায়মনের হাতটা জড়ায়। টেবিলের কাছে পৌঁছে সায়মন মায়ের পাশে বসে পড়েছে, ভাই-ভাবি ও পাশাপাশি। কোনার খালি চেয়ারটায় বসে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে রায়নার।
— লবস্টার দুটো, দুটো রূপচাঁদা, আর রায়না তুমি?
ওয়েটারকে একটা কোয়াটার চিকেন গ্রিলের অর্ডার দিয়ে লাইভ গানে মন দেয় রায়না, ঐ তো পাশের টেবিলে কাপলটা একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে গান শুনছে। খুনসুটি করছে, মেয়েটার দুহাত ভরা মেহেদী। নিজের হাত দুটো দেখে রায়না। বিয়ের তৃতীয় দিন ফিরানীতে গিয়ে হানিমুনে যাবার প্লান শেয়ার করল সায়মনকে। ফিরানী, ভাবতে গিয়ে হাসি এলো রায়নার। আম্মা ফোন করে সায়মনকে নিতে আসছেন জানালেন, আর তারপরই সায়মনের তলব পরল মায়ের রুমে। যে ছেলেটা হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, সেই ফিরল গম্ভীর মুখে।
— শোন রায়না, এসব ফিরানী টিরানীতে রাতে থাকতে পারব না। গিয়ে খেয়ে চলে আসব।
— কি বল এসব? আম্মা কত আশা করে আছে, আমিও বাসায় গিয়ে কটা দিন থাকব।
— আমার নিজের বিছানা ছাড়া রাতে ঘুম হয় না। আর কয়েক দিন থাকবা মানে? ছুটি নিয়েছি দুজন সাত দিনের, এর মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দাওয়াত সারতে হবে। তোমার ওখানে গিয়ে বসে থাকলে আম্মা- আব্বাকে নিয়ে যাবে কে? ভাইয়াদের গাড়িতে উঠলে আম্মার দম আটকায়।
— তুমি চলে এসো, আমি ওখান থেকে যাব।
কথা বাড়ায় না সায়মন, তবে বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা ওর পছন্দ হয়নি। মুখ গোমড়া করে রেডি হয়। পরিষ্কার বুঝে রায়না, শ্বাশুড়ির নিষেধ, শ্বশুরঘরে গিয়ে রাতে থাকা যাবে না। মনটা খারাপ করে কাজল দেয়, চোখটা ভেজা লাগে, কাজল লেপ্টে যায়। সেটাই কোনমতে মুছে মায়ের ঘরে বিদায় নিতে যায়।
— মা, আসছি।
– কখন আসবে তোমরা। ড্রাইভার ছেড় না, সায়মন আবার খাবার পর ড্রাইভ করতে পারে না।
— সাদেক ভাইয়ের গাড়ি নিচ্ছি না তো মা, অাম্মা আসছেন, নিয়ে যাবেন।
— তোমার মা আসবেন? নিয়ে যেতে? মানেটা কি? দেখা করতে যাচ্ছ, থাকতে তো যাচ্ছ না।
— আমি কয়দিন থাকব মা। ও চলে আসবে।
— বিয়ের পর স্বামী- স্ত্রী আলাদা থাকা ঠিক না। তুমিও চলে আসবা। মায়ের বাড়ি গিয়ে থাকার জন্য তো আর বিয়ে কর নাই।
রাগে গজগজ শ্বাশুড়ির স্বর পেছনে ফেলে নিচে নামে রায়না। সায়মন গেছে আবার বিদায় নিতে। আম্মা নিতে আসছে শুনে একবারও বল্ল না, বেয়াইন আসছে, নাস্তা পানি দাও, বসাও। এরা মানুষ! শ্বাশুড়ির না হয় বলার ইচ্ছে নেই, কিন্তু সায়মন?
আম্মার বাড়ি গিয়ে পাঁচ দিন জোর করে থেকে ফিরেছিল রায়না। এরমধ্যে কয়েক দফা ঝগড়া হয়ে গেছে সায়মনের সাথে। শ্বাশুড়ি ফোন করে দোষ দিয়েছেন রায়নাকে, রায়নার জন্য নাকি সায়মন মন খারাপ করে খাচ্ছে না। সেসব দিনের কথা ভেবে, আবারও চোখ ভার হয়ে ওঠে।
— ম্যাম, ড্রিংক্স?
— নো থ্যাংক্স, একটা সুগার ফ্রি ব্ল্যাক কফি।
রায়না খাওয়ায় মন দেয়। চিকেনটা বেশ হয়েছে। সাথে গার্লিক বাটার নানের মিক্সিটা অসাধারণ জমেছে। হালকা টক ঝাল ফ্লেভার্ড স্যালাডটা জমে গেছে পুরো। সাময়নের দিকে তাকিয়ে হাসে রায়না। লবস্টারটা দেখতেই বড়, ভেতরে মাল মশলা একদম নেই। শ্বাশুড়ি মাও খেতে পারছেন না।
— আম্মা কি খাচ্ছো? চিংড়ীটা বোধহয় স্যুট করছেনা তোমার। চিকেন নিলেই পারতে।
— রায়না, আম্মার সাথে একটু শেয়ার করো, দেখছ তো আম্মা খেতে পারছে না।
–না, থাক, বউ আবার মন খারাপ করবে, আমি বিস্কুট খেয়ে নেবো। মামুন একটা বিস্কুট কিনে দিস তো বাবা।
— মা, আপনি নিন, আমার খাওয়া শেষ।
না খেয়েই উঠে যায় রায়না। কফিটা রুমে লবিতে দিতে বলে সায়মনকে ফোন দেয়।
— খাওয়া শেষ হলে চল, মার্কেটে যাব।
— আমরা কালকে সকালে যাই, আম্মার শরীরটা ভালো লাগছেনা।
— উনি তো যাবে না আমাদের সাথে, তুমি ওনাকে রুমে দিয়ে আসো। আর ভাইয়া, ভাবী, বাবা সবাই আছেন।
— এসে কথা বলি, এখন থামো।
— আমি লবিতে বসে আছি, তুমি আসো।
ফোন কেটে দেয় রায়না, রাগ হচ্ছে এখন। সেদিন হানিমুনের কথা বলতেই সায়মন রেগে উঠেছিল। ওদের পরিবারে নাকি হানিমুনের চল নেই, বড় ভাই ভাবী যায়নি, তাছাড়া এভাবে একা একা গেলে আম্মা মন খারাপ করবে। আর গেলে, দেশের মধ্যে কক্সবাজার হলে, আব্বা-আম্মা সবাই সহ তবেই হানিমুনে যাওয়া সম্ভব। আকাশ থেকে পরেছিল রায়না। খুব রাগ হয়েছিল, ভেবেছিল বোধহয়, বাকিরা হয়ত শোনার পর লজ্জায় রাজি হবে না, কিন্তু কোথায় কি? উল্টো রায়নাকে তার শ্বাশুড়ির জন্য নতুন জামা কিনতে হল, সানগ্লাস। কক্সবাজার গিয়ে ছবি তুলবেন উনি, পুরনো জামা হলে চলবে নাকি! অফিস ছুটির পর ঘুরে ঘুরে নিজের জন্য আর তেমন কিছু কেনা হয়নি রায়নার। শ্বাশুড়ির জামা, ম্যাচিং জুতা, বড় ব্যাগ, শুকনা খাবার, এসব কিনে গুছিয়ে দিতে হয়েছে। বড় ভাবীতো শ্বাসকষ্টের রোগী, বেশি ঝাড়াপোছা করতে পারবে না, আর উনিতো চাকরিও করে না। ব্যাস, সব ভার রায়নার উপর। কেবল খরচের বেলায়, শ্বশুর আর শ্বাশুড়ির খরচটাও তাকে সমান তিন ভাগের এক ভাগ দিতে হল। সবটা মেনেও এসেছে রায়না। একটু বদলির আশায়, ভালো স্মৃতির আশায়। যদি সায়মন কিছুটা হলেও বুঝে, নিজেদের জন্য একান্ত সময় দরকার।
রায়না লবি ছেড়ে সবাইকে রুমের দিকে যেতে দেখেও বসে রইল। সায়মন তর মাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এক হাতে মায়ের ব্যাগ, অন্য হাতে ওনার হাত। অথচ উনি দিব্যি সুস্থ সবল মানুষ। রোগ বালাই নেই, পেট ভরে খান, শুধু ছেলেদের দেখলেই দুনিয়ার অরুচি, মাথা ব্যাথা, শরীর খারাপের বহর শুরু হয়। বড় ভাইয়ের কাছে পাত্তা নেই। আর কি যেনো একটা সঞ্চয় পত্রের নমিনী করা সায়মন। রায়না চেষ্টা করেও বিষয়টা জানতে পারেনি।
— তুমি কোথায়? রুমে আসো। ঘুম পাচ্ছে।
— মার্কেটে যাব, নিচে আস।
— রায়না, তুমি বেশি জিদ করছ, রাত হয়ে গেছে। কালকে সকালে যাব।
— তুমি প্রমিজ করেছিলে কিন্তু, আমাকে, এখন সবটা বদলে নিজের ইচ্ছা চাপাচ্ছ। এভাবে হলে হানিমুনে আসছ কেন?
— রুমে আস প্লিজ, এখানে কথা বলি।
সেল কেটে লিফটো ওঠে রায়না, চারপাশে কোথাও নিউলি ম্যারিড কাপলের সাথে কোন ফ্যামিলি কি এসছে? ওর সাথেই কেনো এমন হলো। তবুও যদি বাকিরা একটু বুঝত। সায়মনের ভাই কিছুই বলেন না। কোন দায়িত্ব নিতে চান না। তবে ভাবিকে মা ঘাটায় না। ভাইয়া এ ব্যাপারে যে সহ্য করে না, এটা স্পষ্ট বোঝে ও। সায়মন কেন যেন মাকেই সাপোর্ট দেয়। আর শ্বশুরের জন্য মায়া হয় রায়নার। ডায়াবেটিক পেসেন্ট, হাঁটাচলায় সমস্যা, বউয়ের কথা না শুনে উপায় নেই। এক রকম বাধ্য হয়েই মেনে নেন সব।
–সুইট গার্ল, এইতো লক্ষী বউ আমার।
— এটা ঠিক না সায়মন। আমরা হানিমুনে আসছি।
— কাল সকালেই নিয়ে যাব। এখন ঘুমাতে এসো।
সায়মনের আলতো আদরে মন খারাপটা দূর হয়ে যেতে থাকে রায়নার। খুব সাবধানে গ্রীবা চুমে নিচে নামে সায়মন। রাত পোশাকের দুরন্ত ভাঁজে রায়নাকে অপ্সরীর মত লাগে বেড সাইড ল্যাম্পের মায়াবী হলদে আলোয়। দু” মুঠোয় ভরে নেয়া একান্ত নিজস্ব সম্পদের মাঝে মুখ ডুবায়। রায়না একটু অবাক হতে গিয়েও থেমে গেছে। একটা যৌথ আনন্দের তিক্ত অম্ল সুধার সুখানুভিতি নিয়ে জড়িয়ে যেতে থাকা আবেশে চোখ মুদে শুধু উপভোগ করে যায় ভালোবাসার সময়টা।
চলবে
অচিনপুর ডেস্ক/ জেড. কে. নিপা
BANDIT4D Situs Game Slot Online Gacor Terpercaya Dan Aman 2023
BANDIT4D Kumpulan slot Gacor 4D terbaik dan terpercaya Mudah Maxwin
SPAM4D Situs Mudah Menang Hari Ini
SPAM4D Situs Slot Gacor Gampang Menang Maxwin Hari Ini
SPAM4D Situs Slot Gacor Hari Ini
SPAM4D Situs Mudah Menang Hari Ini
SPAM4D Pola Slot Gacor Hari Ini
SPAM4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
SPAM4D Situs Slot Gacor Hari Ini
SPAM4D Pola Slot Gacor Hari Ini
POL4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
POL4D Pola Slot Gacor Hari Ini
BINGO4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
KLIX4D Situs Slot Gacor Hari Ini
BINGO4D Situs Slot Gacor Hari Ini
KLIX4D Situs Slot Gacor Gampang Menang Maxwin Hari Ini
KLIX4D Situs Slot Gacor Hari Ini
YOI4D Situs Slot Gacor Hari Ini
YOI4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
YOI4D Situs Mudah Menang Hari Ini
POL4D Situs Mudah Menang Hari Ini
POL4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
POL4D Situs Mudah Menang Hari Ini
POL4D Situs Mudah Menang Hari Ini
POL4D Angka Keluaran Togel Hk, SGP , SDY
POL4D Situs Slot Gacor Gampang Menang Maxwin Hari Ini
POL4D Situs Slot Gacor Hari Ini
POL4D Pola Slot Gacor Hari Ini
POL4D Pola Slot Gacor Hari Ini
POL4D Situs Slot Gacor Hari Ini
An interesting dialogue is price comment. I feel that you must write more on this matter, it might not be a taboo topic however typically people are not enough to talk on such topics. To the next. Cheers
Wonderful goods from you, man. I have understand your stuff previous to and you’re just too magnificent. I actually like what you’ve acquired here, certainly like what you’re stating and the way in which you say it. You make it entertaining and you still care for to keep it sensible. I cant wait to read far more from you. This is really a terrific website.
I really appreciate this post. I’ve been looking everywhere for this! Thank goodness I found it on Bing. You have made my day! Thank you again!
Some truly prize articles on this internet site, saved to bookmarks.
Hello! I could have sworn I’ve been to this website before but after checking through some of the post I realized it’s new to me. Anyways, I’m definitely delighted I found it and I’ll be bookmarking and checking back often!
Throughout this awesome design of things you’ll get an A+ for hard work. Where exactly you actually lost me personally ended up being on all the specifics. As people say, the devil is in the details… And it couldn’t be more accurate here. Having said that, permit me say to you what did deliver the results. The writing is definitely extremely convincing and that is possibly why I am making an effort in order to comment. I do not really make it a regular habit of doing that. Second, even though I can certainly notice the leaps in logic you come up with, I am definitely not sure of just how you appear to connect your points which in turn make the actual conclusion. For right now I will, no doubt subscribe to your position but hope in the foreseeable future you connect your facts better.
Hey there would you mind stating which blog platform you’re working with? I’m going to start my own blog in the near future but I’m having a tough time deciding between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S Sorry for being off-topic but I had to ask!
242048 672940I gotta bookmark this web site it seems really beneficial extremely valuable 445811
892424 817684But a smiling visitor here to share the love (:, btw great pattern . 741863
Can I just say what a relief to find someone who actually knows what theyre talking about on the internet. You definitely know how to bring an issue to light and make it important. More people need to read this and understand this side of the story. I cant believe youre not more popular because you definitely have the gift.
Thanks for sharing excellent informations. Your web site is so cool. I’m impressed by the details that you’ve on this web site. It reveals how nicely you understand this subject. Bookmarked this website page, will come back for more articles. You, my friend, ROCK! I found just the information I already searched all over the place and just couldn’t come across. What a perfect site.
Some times its a pain in the ass to read what website owners wrote but this website is really user pleasant! .