স্বর্ণের চেয়ে দামী বমি

গা ঘিনঘিন করে যে কয়টা নাম শুনলে তার মধ্যে অন্যতম হল বমি। কেউ হয়তো এখনই ওয়াক তুলছে। আমারও তেমনই অবস্থা। তবে সে বমি যখন হয়ে ওঠে কোটি টাকার বস্তু, তখন কিন্তু নড়ে চড়ে বসতেই হয়। দুর্গন্ধ দূর করবার জন্য আমরা যে সুগন্ধী অতি মূল্যে কিনি, তা নাকি তৈরী হয় বমি থেকে। ছি কেমন একটা ব্যাপার তাই না? তাহলে কি আমরা বমি গায়ে মেখে খুশি মনে পার্টি-সার্টি করি? বিষয়টা ভাববারই বটে…

আপনার আমার বা যে কোন প্রাণীর কথা বলছি না, আমি বলছি তিমি মাছের বমির কথা, যা কিনা মহামূল্যবান বস্তু। আর এর আর্থিক মূল্য কোটি টাকার বেশী। সাগরে মাছ শিকারীরা তাই তিমির থেকে বেশী খুঁজেন তিমির বমি।

তিমির বমিকে ইংরেজিতে ‘অ্যাম্বারগ্রিস’ (Ambergris) বলে ডাকা হয়। সাধারণত স্পার্ম হোয়েলের থেকে এটি পাওয়া যায়। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর সাগরে এই অমূল্য বমি পাওয়া যায় মাঝে মাঝে। মোমের মতো তরল এই বমি তিমির শুক্রানুর সঙ্গে মিশে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে নিঃসৃত হয়৷ তরল অবস্থায় এর থেকে বিকট গন্ধ বের হয়৷ কিন্তু শুকিয়ে গেলেই এর সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে৷ সুগন্ধীর বাজারে এই কারণেই মহামূল্যবান তিমির বমি৷ এটি অত্যন্ত দামি সুগন্ধী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশ্বের সুগন্ধী প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছে তিমির বমির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

খালিদ আল সিনানি নামের মধ্য তিরিশের এই ওমানি জেলে ও তার দুই সঙ্গী কুরায়াত প্রদেশের সমুদ্র উপকূলের কাছে মাছ ধরতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ তিমির বমি ভাসতে দেখেন। এই ভাসমান বমি থেকে তখন প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিলো। গত ২০ বছর ধরে দিন এনে দিন খেয়ে চলছিলো খালিদ সিনানির দরিদ্র জীবন। এবার তার ও তার দুই সঙ্গীর কপাল খুলে গেল। দরিদ্র জেলে থেকে তারা এখন রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি।তারা পেয়েছিল ৮০ কেজি পরিমাণ বমি যার বাজার মূল্য ছিল ২.৫ মিলিয়ন ডলার, মানে ১৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।

আর কি চাই বলুন? কপালে থাকলে কী না হয়? তাহলে কি এবার সাগরে যাবো তিমির বমি খুঁজতে!

আরিফুর রহমান (সম্পাদক, অচিনপুর.কম)

Post navigation