স্বর্গের নদী

স্বর্গের নদী চিন্তা করলেই মনের মাঝে ভাল লাগা অনুভূত হয়। যে নদী স্বপ্নে আসে রাজকন্যার সাথে। রাজকন্যা রাজকীয় নৌকাতে ভ্রমণে যায় সে নদীতে। সে নদীর নানান রঙ থাকে, ধাপে ধাপে নতুন নতুন রঙ উদ্ভাসিত করে মন-মন্দির। কল্পনাতে এমন নদী আমরা ভাবি। সে নদীর সামনে বসলে কবিরা তাদের কাব্যে নদীর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে করতে বিমোহিত হয়। এমন একটি নদী বাস্তবে রয়েছে পৃথিবীতে, যাকে স্বর্গের নদীর সাথে তুলনা করা হয়।

কানো ক্রিস্টালস

নদীর নাম “কানো ক্রিস্টালস” বা “ক্রিস্টালস চ্যানেল”। নদীটি কলোম্বিয়ার সেরানিয়া ডে লা মার্কারেনা রাজ্যে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ১০০ কি. মি. এবং চওড়া মাত্র ২০ মিটার। তরল রংধনুর রঙে সজ্জিত এ নদীটি বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নদী হিসাবে বিখ্যাত। তাই নদীটি রেইনবো রিভার নামেও পরিচিত।

কোর্য়াজাইট পাথর দিয়ে এ স্থানটি সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় বারো কোটি বছর পূর্বে। একে পৃথিবীর প্রাচীনতম ভুতাত্ত্বিক গঠন বলে মনে করা হয়। ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল ও কলোম্বিয়ার গা ছুঁয়ে চলে গেছে এই নয়ন জুড়ানো নদীটি। এ অঞ্চলের নিরক্ষীয় বনাঞ্চল গোটা পৃথিবীর ১৫ শতাংশ স্বাদু জল ধারণ করে।

নদীটি জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সবুজ, হলুদ, কালো, লাল ও নীল রঙে সজ্জিত থাকে। মনোমুগ্ধকর এ নদীর সাথে একটি সেল্ফি না তুললে যেন জীবনটাই বৃথা। সেখানে গেলে নদীটির অদ্ভুত রং যে কারো মন কেড়ে নিবে। সূর্যের আলোর তীব্রতার উপর ভিত্তি করে এর রং বদলায়।

সর্বশক্তিমান প্রকৃতির ভালবাসা যেখানে দিয়েছেন সেখানে অকৃপণ দিয়েছেন। প্রতি বছর জুলাইয়ে বর্ষাকাল শেষ হলে নদীর জলের স্তর নেমে যায়,
তখন নদীর জলজ উদ্ভিদ ‘মাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা’ ফোটে। উদ্ভিদগুলো দ্রুত বয়ে চলা নদীর জলে পাথরকে আঁকড়ে ধরে। এ মৌসুমে নদীর মাঝে ফুটে ওঠা ফুলের রংয়ে চোখদুটো জুড়িয়ে যায়।

নদীটির জল এতো বেশী স্বচ্ছ যে অনেক গভীর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়, চেহারা হুবহু ফুটে ওঠে পানিতে। বর্তমানে এই নদীর চারপাশ মিলিটারি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

আরিফুর রহমান (সম্পাদক,অচিনপুর.কম)

Post navigation