সূর্য নক্ষত্র নারী – ১

__জীবনানন্দ দাশ

তোমার নিকট থেকে সর্বদাই বিদায়ের কথা ছিলো
সব চেয়ে আগে; জানি আমি।
সে-দিনও তোমার সাথে মুখ-চেনা হয় নাই।
তুমি যে এ-পৃথিবীতে র’য়ে গেছো।
আমাকে বলেনি কেউ।

কোথাও জলকে ঘিরে পৃথিবীর অফুরান জল
র’য়ে গেছে;-
যে যার নিজের কাজে আছে, এই অনুভবে চ’লে
শিয়রে নিয়ত স্ফীত সুর্যকে চেনে তারা;
আকাশের সপ্রতিভ নক্ষত্রকে চিনে উদীচীর
কোনো জল কী ক’রে অপর জল চিনে নেবে অন্য নির্ঝরের?
তবুও জীবন ছুঁ’য়ে গেলে তুমি;-
আমার চোখের থেকে নিমেষ নিহত
সূর্যকে সরায়ে দিয়ে।
স’রে যেতো; তবুও আয়ুর দিন ফুরোবার আগে।
নব-নব সূর্যকে কে নারীর বদলে
ছেড়ে দেয়; কেন দেব? সকল প্রতীতি উৎসবের
চেয়ে তবু বড়ো
স্থিরতর প্রিয় তুমি;- নিঃসূর্য নির্জন
ক’রে দিতে এলে।
মিলন ও বিদায়ের প্রয়োজনে আমি যদি মিলিত হতাম
তোমার উৎসের সাথে, তবে আমি অন্য সব প্রেমিকের মতো
বিরাট পৃথিবী আর সুবিশাল সময়কে সেবা ক’রে আত্মস্থ হতাম।
তুমি তা জানো না, তবু, আমি জানি, একবার তোমাকে দেখেছি;-
পিছনের পটভূমিকায় সময়ের
শেষনাগ ছিলো, নেই;- বিজ্ঞানের ক্লান্ত নক্ষত্রেরা
নিভে যায়;- মানুষ অপ্রিজ্ঞাত সে-আমায়; তবুও তাদের একজন
গভীর মানুষী কেন নিজেকে চেনায়!
আহা, তাকে অন্ধকার অনন্তের মতো আমি জেনে নিয়ে, তবু,
অল্পায়ু রঙিন রৌদ্রে মানবের ইতিহাসে কে না জেনে কোথায় চলেছি!

,

Post navigation

6 thoughts on “সূর্য নক্ষত্র নারী – ১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *