তাবাসসুম নাজ
টরেন্টো, কানাডা।
উপন্যাস: রূপকথা নয় ( ৫ম পর্ব)
দুইদিন পরের কথা। রাজকুমার অভীক আজও বনের মধ্যে ঝর্ণার ধারে হতাশ মুখে বসে রয়েছে। গত দুইদিন সে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনি। সমস্ত গায়ে প্রচন্ড ব্যথা। আজ একটু ভালো বোধ করাতে বিরহকাতর রাজকুমার ফের বের হয়েছে। অভিসারে গিয়ে তার ভালো লাভ হলো! প্রেমিকার দেখা তো পেলই না, এক অদ্ভুতুড়ে ডিম দেখে ভয় পেয়ে হাত-পা ভাঙ্গার অবস্থা। সেই সাথে গোলাপের কাঁটার খোঁচা তো রয়েছেই। মনের দুঃখে রাজকুমারের গান গাইতে ইচ্ছে করল-
“এক মুঠো বিষ আজ আমার তিয়াস, প্রিয়া মেটাবে।“
এদিকে ঘোড়া বাহাদূরের মুখে তৃপ্তির ছাপ। তার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। দুর্দানার সাথে কতবছর পর দেখা হল, কথা হল। আহা, সারাজীবন যদি তারা এক আস্তাবলে পাশাপাশি থাকতে পারত! কিন্তু রাজকুমারের মুখের যা ছিরি, সাহস করে সে আর দূরদেশে যাবার কথা তুলতেও পারছে না। মনে হয় রাজকুমারের তার ট্রু লাভের সাথে দেখা হয়নি। দেখা হলে কি এমন প্যাঁচার মত মুখ করে বসে থাকে? ওরে বাবা, গান টান আবার গাইবে না তো? তাহলেই সাড়ে সর্বনাশ। তার আবার বদহজম হয়ে যাবে!
এমন সময় তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটল। রাজকুমার অভীক মুখ তুলে দেখে কালো শার্টপ্যান্ট আর কালো বুট পরা এক লম্বা সুদর্শন লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছে। দেখে রাজকুমার খুব বিরক্ত হল। মনের মত নিরিবিলিতে একটু বিরহ ফিল করাও যায় না। সব জায়গায় মানুষ! কি জামানা যে এসে পড়ল!
রাজকুমার খেঁকিয়ে উঠল- তুমি কে?
– তোমার ফেইরী গডফাদার!
রাজকুমার অভীকের বিরক্তি চতুর্গুণ হল। এক ফেইরী গডমাদারের জ্বালায় তার বিয়েটা চৌপাট হয়ে গেল। এখন গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত ফেইরী গডফাদারও এসে হাজির হয়েছে। জীবনটা তেজপাতা করে দিল এরা!
– আমার কোনো ফেইরী গডফাদারের প্রয়োজন নাই। তুমি বিদায় হও। বিরসমুখে বলে রাজকুমার।
– ঠিক তো? চলে যাব? এত তাড়াতাড়ি রাজকন্যা সুরমাকে পাবার আশা ছেড়ে দিলে? ভুরু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে ফেইরি গডফাদার।
রাজকুমার অভীক একটু থমকে যায়। তবে কি এর কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে?
– তুমি রাজকুমারী সুরমার কথা জানলে কিভাবে?
– সেটা জানা জরুরী না। যে প্যাঁচামুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ, সামান্যতম ঘিলু থাকলে তা বুঝে নিতে কারো অসুবিধা হবার কথা না। তুমি রাজকুমারীর ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস সেইটাই হচ্ছে কথা।
– আমি রাজকুমারী সুরমার ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস। সে আমার আসল ভালোবাসা, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা আমি ভাবতেও পারি না। গম্ভীরভাবে জবাব দেয় রাজকুমার।
– তো সে ব্যাপারে কোনো একশন না নিয়ে এখানে মেনিমুখ করে বসে আছ কেন? দুই একবার শুনলাম গানও গাইলে! ছিঃ ছিঃ এসব কি পুরুষ মানুষের কাজ? মর্দ বনো, মর্দ!
– কিভাবে মর্দ বনবো?
ঘৃণাভরে ফেইরি গডফাদার বলে
– সেটাও যদি তোমাকে বলে দিতে হয় তবে ঝর্ণার পানিতে ডুবে মরাই তোমার জন্য ভালো। তোমার আর বিয়ে করে কাজ নাই।
হতাশ মুখ করে রাজকুমার অভীক বসে থাকল। যা একটু সাহায্যের আশা ছিল, তাও গেল। উলটে তার প্রেস্টিজ পাংচার করে দিল এই ফেইরি গডফাদার!
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফেইরী গডফাদার আবার বলে
– এতটা হতাশ হবারও কিছু নাই। আমি তো আছি, তোমাকে সাহায্যের জন্য।
– সত্যি তুমি সাহায্য করবে আমাকে, ফেইরি গডফাদার?
– করব যদি তুমি আমাকে ফেইরি গডফাদার ডাকা বন্ধ কর। আমার নাম ধ্রুব। আমাকে ধ্রুব বলে ডাকবে।
ধ্রুব এবারে রাজকুমারের মুখোমুখি এক পাথরের উপরে বসে পড়ে প্রশ্ন করে- আসল প্রবলেমটা কি বলতো? তুমি রাজকুমারী সুরমাকে ভালবাসো। যা মনে হচ্ছে রাজকুমারী সুরমাও তোমাকে ভালবাসে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে রাজকুমার অভীক বলে- সব ফেইরী গডমাদারের দোষ! ওর জন্যই তো এ সর্বনাশটা হল।
– অ! তোমার তাহলে ফেইরি গডমাদারও আছে? আমি তাহলে এখানে কোন ঘোড়ার ডিমটা করছি?
নিস্পৃহমুখে বলে ফেইরি গডফাদার।
ধ্রুব উঠবার ভাব করতেই রাজকুমার অভীক তাড়াতাড়ি বলে উঠে
– আমার না! আমার না! রাজকুমারী সুরমার ফেইরি গডমাদার!
– তাই বল। তো কি করল সেই ফেইরি গডমাদার? তার কাজ তো সম্পর্ক জোড়া লাগানো, সম্পর্ক ভাঙ্গা না।
– আর বলো না, সেই তো সব নষ্টের গোড়া। আমার আর রাজকুমারী সুরমার বিয়েটা লেগেই গেছিল। ঠিক সেই সময়ে সে তার অনাহুত বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের বিয়েটা পন্ড করে দিল।
– এত ভনিতা না করে একটু খুলে বলবে ব্যাপারটা কি ঘটেছিল? তাহলে আমার বুঝতে সুবিধা হয়। কি করলে এই প্রেমের গিঁট খোলা যায় সেটারও একটা হদিস পাওয়া যায়। বিরক্ত দেখায় ধ্রুবকে।
রাজকুমার অভীক এবারে গুছিয়ে বসে
– ইয়ে, ছোটবেলা থেকেই আমার মনে একটা শখ ছিল। বিয়ে যখন করব, তখন আমার একটা শর্ত আছে। আমি একজন ‘প্রকৃত রাজকুমারী’কে স্ত্রী হিসেবে পেতে চেয়েছিলাম। সেজন্য এই দুই বছরেও আমার বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।
– আসল কথাটা বল! এই দুই বছরে কয়টা মেয়ে দেখেছ শুনি?
কাঁচুমাচু মুখ করে রাজকুমার অভীক বলে
– হিসাব রাখিনি!
– ন্যাক্কারজনক! তোমার লজ্জা হওয়া উচিৎ! আর তোমাকে সাহায্য করবার ইচ্ছাও আমার ক্রমশই কমে আসছে। ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে বলে ওঠে ফেইরি গডফাদার।
কাতরমুখে রাজকুমার অভীক বলে
– প্লীজ ধ্রুব। আমি আর একটাও মেয়ে দেখব না। রাজকুমারী সুরমাই আমার প্রকৃত প্রেম। ওকে না পেলে আমি…ওকে না পেলে আমি… রাজকুমার অভীক তার কথা শেষ করতে পারে না।
পরীক্ষা নেবার ভঙ্গীতে ধ্রুব বলে
– বল। বলে ফেল রাজকুমারীকে না পেলে তুমি কি করবে? দেখি তোমার প্রেমের দৌঁড় কদ্দূর।
মরিয়া হয়ে রাজকুমার বলে
– রাজকুমারী সুরমাকে না পেলে আমি চিরকুমার থাকব। হ্যাঁ, ঠিক তাই আমি করব। কখনো বিয়ে করব না।
– সত্যি বলছ তো? ভেবেচিন্তে বল। তুমি বিয়ে না করলে কিন্তু তোমার বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে। তুমি চাইলেও বিয়ে না করে থাকতে পারবে না।
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, সত্যি। আমি কসম খেয়ে বলছি, রাজকুমারীকে না পেলে আমি কাউকেই চাই না। আমার এ মন, এই দেহের উপর শুধু রাজকুমারীর অধিকার আছে! নাটকীয়ভাবে বলে রাজকুমার।
খুবই বিরক্ত হয় ধ্রুব। বলে
– মাবুদে এলাহী! লাফ দিয়ে দেহে গিয়ে পড়লে কেন? কথা হচ্ছিল প্রকৃত প্রেম নিয়ে। তো তুমি নিশ্চিত যে সেই তোমার প্রকৃত প্রেম?
– আমি কসম খেয়ে বলছি, সেই আমার ট্রু লাভ। আমার প্রকৃত প্রেম।
– ধুত্তোরি! কথায় কথায় আবার কসম খাওয়ার কি হল? ধ্রুবর বিরক্তি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। এটা সে কিসের মধ্যে পড়ল! যত্তসব গ্রাম্য ব্যপার!
মনমরা হয়ে বসে থাকে রাজকুমার অভীক।
ধ্রুব কি তাকে সহায্য করবে, না করবে না, তা তো এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
বিরক্তি দমন করে ধ্রুব এবারে প্রশ্ন করে
– তো দুজনে যখন দুজনের ট্রু লাভ তো রাজকুমারীর ফেইরী গডমাদার আপত্তি তুলল কেন? তার তো খুশী হবার কথা।
– ঠিক কি না বলতো? তার তো খুশী হবার কথা। উল্টো সে যে মেজাজটা দেখালো, আমি তো ভয়ে কাঁপতে থাকলাম। রাগের চোটে সে রাজকুমারীকে নিয়ে গটগট করে প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
– বেরিয়ে গেল? তারমানে রাজকুমারী তোমাদের প্রাসাদে ছিল? আর তোমাদের বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল? এত আবোলতাবোল বকলে আমি বুঝব কি করে? একটু গুছিয়ে বলবার ক্ষমতাও কি তোমার নাই নাকি? আশ্চর্য কথা!
ধমক খেয়ে রাজকুমার অভীক এবারে শুরু থেকেই আরম্ভ করে।
– একরাত্রে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন সময়ে রাজকুমারী সুরমা আর তার ফেইরী গডমাদার দূর্ঘটনার কবলে পড়ে আশ্রয়ের আশায় আমাদের প্রাসাদে এসে উপস্থিত হয়। রাজকন্যাকে অবশ্য সে সময়ে আর রাজকন্যা বলে চেনার উপায় ছিল না। তার জামাকাপড় ছিঁড়ে একাকার, সমস্ত গায়ে কাদা, সর্বাঙ্গ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। কিন্তু তার মুখটা ছিল একটা অর্ধফুটন্ত গোলাপের মত। পানপাতার মত মুখ, দীঘির মত চোখ, মুক্তার মত হাসি, মরালের মত গ্রীবা, লতার মত তনু …
– তুমি থামবে? রাজকুমারীর শারীরিক বর্ণনা দিতে আমি একবারও বলেছি তোমাকে? কথা না বাড়িয়ে তারপরে কি হল তা বল।
– ওহ! অপ্রস্তুত হয়ে যায় রাজকুমার।
তারপরে শুরু করে
– রাজকুমারী নিজের পরিচয় দিয়ে সে রাতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করে। এদিকে তখনো আমি ‘প্রকৃত রাজকন্যা’ ছাড়া বিয়ে করব না এই সিদ্ধান্তে অটল আছি। সেজন্য আমার মা রাণী উর্মিলা এক ফন্দি আঁটে। মার আবার খুব বুদ্ধি কি না। অনেকে বলে বাবার থেকেও বেশি। কিন্তু মেয়ে, তাই সিংহাসনে বসতে পারে না। আচ্ছা! আচ্ছা! আমি আসল কথায় ফিরে যাই!
তো রাজকুমারীর শোবার জন্য ২০টি তোষোক ও ২০টি লেপ দিয়ে এক রাজকীয় শয্যা প্রস্তুত করা হল। আর সেই শয্যার নীচে গুঁজে দেয়া হল এক মটরের দানা।
পরদিন সকালে সবাই নাস্তা খেতে বসলে রাণীমা রাজকুমারীর ঘুম কেমন হয়েছিল জানতে চাইলে রাজকুমারী জানায় যে সে সারারাত ঘুমাতে পারেনি। কারণ বিছানা এত শক্ত ছিল যে তাতে তার আরামের ব্যাঘাত ঘটেছিল। তাতে মা বুঝে ফেলে যে রাজকন্যা সুরমা আসলেই একজন ‘আসল রাজকুমারী’। কারণ একমাত্র ‘আসল রাজকুমারী’ এত লেপ তোষক ভেদ করে সামান্য একটা মটরের অস্তিত্ব ঠিক টের পাবে। আর সেটা তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে।
যাহোক, রাণীমা যখন তাকে ‘প্রকৃত রাজকুমারী’ বলে চিহ্নিত করে ফেলল, তখন আমার আর আপত্তি করবার মত কিছু থাকল না। এমনিতেও আমি আপত্তি করতাম না। কারণ ততক্ষণে আমি আর রাজকুমারী দুজনেই দুইজনের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছি। এমন যখন অবস্থা, যখন আমাদের দুজনের বিয়ের কথা প্রায় পাকা হয়ে যায় যায়, ঠিক তখনি রাজকুমারীর ফেইরী গডমাদার একেবারে রণচন্ডী মূর্তি ধরে বসল। সে কিছুতেই বিয়েতে রাজী না। কারো কথায় সে কান দিল না। রাজকুমারীকে সাথে করে তখুনি রাজপ্রসাদ ছেড়ে রওনা দিয়ে দিল।
-হুম।
ধ্রুবকে চিন্তিত দেখায়।
গালে হাত ঘষতে ঘষতে সে বলে
– এই ফেইরী গডমাদারটিকে তো কঠিন চিজ বলে মনে হচ্ছে।
মনমরা হয়ে রাজকুমার উত্তর দেয়
– কঠিন বলে কঠিন! তার যুদ্ধংদেহী রূপ দেখে তো আমারই হাঁটু কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছিল!
-হুম।
ধ্রুব আবারো অন্যমনস্কভাবে বলে।
– কিন্তু কেন ফেইরী গডমাদারের এত আপত্তি এই বিয়েতে সে ব্যাপারে কি সে কিছু বলেছে? মানে, তার যা কাজ, সেটা না করে ঠিক উল্টাটা করছে। এর কি কারণ থাকতে পারে?
– ফেইরী গডমাদার বলেছে রাজকুমারী সুরমাকে নাকি অপমান করা হয়েছে!
– অপমান?
আশ্চর্য হয়ে বলে ধ্রুব।
-রাজকুমারীকে আবার কে অপমান করল?
– আমরা সবাই নাকি তাকে অপমান করেছি!
-ইন্টারেস্টিং! কিভাবে অপমান করলে সে ব্যাপারে কিছু বলেছে?
– ফেইরী গডমাদারের মতে বিপদে পড়ে যে অতিথি আশ্রয় চেয়েছে, তার পরীক্ষা নিয়ে নাকি তাকে আমরা চরম অপমান করেছি। মানে সে ‘প্রকৃত রাজকুমারী’ কি সে পরীক্ষা নিয়ে।
– আশ্চর্য তো! এই ফেইরী গডমাদারটিকে আমার খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে। আর কিছু কি কারণ দেখিয়েছিল সে?
– হুম। বলেছিল যে আমি নাকি আলুপটলের মত রাজ্যের সব মেয়ে দেখে শেষ করে ফেলেছি!
– সেইটা অবশ্য তুমি করেছ। এ ব্যপারে আমি ফেইরী গডমাদারের সাথে সম্পূর্ন একমত। কাজটা করা উচিৎ হয়নি তোমার।
কাঁদোকাঁদো মুখে রাজকুমার অভীক এবারে বলে
– বললাম তো আমি আর একটাও মেয়ে দেখব না। রাজকুমারী সুরমাই আমার ধ্যান জ্ঞান স্বপ্ন।
ধ্রুব অনেকক্ষণ ধরে পাথরের উপরে বসে ভাবতে থাকে। বহুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে সে রাজকুমারকে বলে
– যা বুঝতে পারলাম, সমস্ত কিছুর জন্য দায়ী তুমি!
– আ- আমি? আমি কি করলাম? আমি তো রাজকুমারীকে বিয়ে করতে চেয়েছি মাত্র। সেটা কি আমার দোষ?
– না, সেটা তোমার দোষ না। তোমার দোষ হচ্ছে ‘প্রকৃত রাজকুমারী’র ধুয়া তুলে ফালতু আছড়াআছড়ি করা। যার জন্য রাণীমা এই অদ্ভুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হলেন। এমন কথা আমি সাতজন্মে শুনিনি। ফেইরী গডমাদারকে এজন্য আমি পুরোপুরি দোষ দিতে পরছি না।
হ্যাঁ, রাগ দেখিয়ে গ্যাঁটগ্যাঁট করে বেড়িয়ে পড়া হয়ত একটু বাড়াবড়ি হয়েছে। মনে হয় নারী স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে খুব লম্ফঝম্প করে! তারপরেও পুরোপুরি দোষ তাকে দেওয়া যায় না।
আবার অনেক্ষণ ভাবে ধ্রুব। তারপরে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারী করতে করতে বলে
– তাহলে এই বিয়েতে সবাই রাজী একমাত্র ফেইরী গড মাদার ছাড়া? যদি তাই হয়, তবে তাকেই আমাদের কনভিন্স করতে হবে। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তুমি রাজকুমারীকে ছাড়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করবে না আর অপরপক্ষে রাজকুমারীও তোমার জন্য দিওয়ানা।
– আ…আমাদের? আমাকেও তাকে বোঝাতে হবে? প্লীজ ধ্রুব, তাকে আমি খুব ভয় পাই। আমি তার সামনে গেলে কথা গুলিয়ে ফেলব, কি বলতে কি বলে ফেলব। আমি পারব না!
– কাপুরুষ! ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ধ্রুব। এত ভয় তো প্রেম করতে গেছিলে কেন?
– প্লীজ, ধ্রুব।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই না হয় তার মুখোমুখি হব। একটা না একটা উপায়ে তাকে বোঝাতে হবে যে তুমিই রাজকন্যা সুরমার উপযুক্ত পাত্র।
– হ্যাঁ, তুমি ফেইরী গডমাদারকে বোঝাও। আমিও এই সুযোগে রাজকন্যা সুরমার সাথে আলাপ করে দেখি আর কোনো উপায় বের করা যায় কিনা। সে হয়ত বলতে পারবে কিভাবে ফেইরী গডমাদারকে হাত করা যায়।
– মিথ্যাবাদী! বললেই হয় যে তুমি রাজকুমারীর সাথে দেখা করতে চাও!
ধরা পড়ে গিয়ে রাজকুমারের মুখ আরক্ত হয়ে উঠে। সে আমতা আমতা করে বলে
– ইয়ে, রাজকুমারীর সাথে দেখা হলে মন্দ হয় না।
– তাহলে চল। আর দেরী না করে আমরা রাজকুমারী সুরমা আর তার ফেইরী গডমাদারের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি।
বাহাদূর এতক্ষণ কান খাড়া করে সবকিছু শুনছিল। দূর্দানার সাথে ফের দেখা হবার সম্ভাবনা উদয় হতেই তার মনে পুলকের সুবাতাস বইছিল। এই তো চাই! দূর্দানার সাথে আবার দেখা হচ্ছে তাহলে!
রাজকুমার অভীক ও ধ্রুব উঠে দাঁড়াতেই বাহাদূরও গা ঝাঁড়া দিয়ে উঠে পড়ল। তারপরে রাজকুমার ও ধ্রুবকে পিঠে করে দূরদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল।
চলবে…
https://ochinpurexpress.com/%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4/%e0%a6%b0%e0%a7%82%e0%a6%aa%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a7%9f-%e0%a7%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac/
https://ochinpurexpress.com/%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4/%e0%a6%b0%e0%a7%82%e0%a6%aa%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a7%9f%e0%a7%ac%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac/
অচিনপুর ডেস্ক /এসএসববি