“দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!” কবি নজরুল ইসলামের “কাণ্ডারী হুশিয়ার” এর প্রথম পংক্তি দুটি যে মরুর সাথে মিলে যায় তা হল মেক্সিকোর “জোনা ডেল সিলেনসিও” বা “জোন অফ সাইলেন্স” বা “নীরব ভূমি”। পৃথিবীর বুকে এক রহস্যের ভান্ডার খুলে বসে আছে মেক্সিকোর এই মরুটি যার প্রতি কদমে রয়েছে শিহরিত প্রহেলিকা।
কুখ্যাত বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল আর জোন অব সাইলেন্স একই অক্ষাংশে অবস্থিত। সেন্ট্রাল মেক্সিকোর মাসিপি মরুভূমির দশ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এই মরু। এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আপনার মনকে ভৌতিক অনুভূতিতে ছেয়ে দিবে।
আচ্ছা ভয়ে গায়ে কাঁটা দেবার জন্য আপনার কি কি দরকার? ঘুটঘুটে অন্ধকার, ভুতুড়ে পরিবেশ, কচকচ শব্দ, আগুনের বৃষ্টি… তাতেও ভয় পাবেন না! ঠিক আছে, টেপ রেকর্ডটা বাজতে বাজতে হঠাৎ থেমে গেল, চলন্ত গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল আচমকা, আপনার হাতের মোবাইলটি কাজ করছে না কোনভাবেই, এ মরুর উপর থেকে প্লেন নিয়ে যেতে পাইলটদেরও বিভ্রান্তিকর লাগে, একবার ইউএস এয়ারফোর্সের একটি নিক্ষেপিত মিসাইল দিক পরিবর্তন হয়ে এ মরুতে পড়ে এবং পরে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। বলা হয়ে থাকে মরুটি টেনে নিয়ে মিসাইলটি ধ্বংস করে দিয়েছে… এবার কি একটু ভয় লাগছে?
আরও আছে, এখানে পোকা-মাকড় যা দেখবান তা স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৩ গুন বড়, মরু ক্যাকটাসগুলো দৈত্যাকৃতির ও টকটকে লাল রঙের যেন তাদের রক্তের শরীর, এখানকার বেটে হরিনগুলোর সিং মানুষের কব্জির মতো মোটা, বিছাগুলো অন্তত ১ ফুটের কম নয়-এগুলোর মাথা টকটকে লাল, পাথরগুলোও এমন ভুতুড়ে যে কম্পাসের কাঁটা এখানে এসে ঘুরতে থাকে, কোনো মানুষ বসতি গড়ার শখও পর্যন্ত করেনি এখানে। এবার বলুল তো, কবে যেতে চান সেখানে?
মরুভূমির আশপাশের মানুষ প্রতি রাতে আকাশে অদ্ভুত এক ধরনের আলো এদিক ওদিক ছুটে চলতে দেখে। এই মরুভূমির নিকটবর্তী শহর সেবালোসের কেউ কেউ এখানে ফ্লাইং সসার দেখেছে বলে দাবি করেছে। হঠাৎ করে ভিন্নরকম দেখতে তিনজন মানুষ এসে পানি খেতে চায় বলে লোকমুখে শোনা যায়। পানি ছাড়া তারা অন্য কোন খাবার চায় না। এই ভুতুড়ে মরুর রহস্যের আজও কোনো কুল-কিনারা হয়নি। আদৌ কোনদিন এই রহস্যের সমাধান হবে কিনা তাও কেউ জানে না।
তাহলে চলুন ঘুরে আসি মেক্সিকোর “জোন অফ সাইলেন্স” থেকে…
আরিফুর রহমান, সম্পাদক অচিনপুরএক্সপ্রেস.কম