ভিন্ন রঙের রক্ত

সচরাচর আমরা লাল বর্ণের রক্ত দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু কিছু প্রাণীর এবং মানুষের রক্ত নানা কারণে অথবা কোনো কারণ ছাড়াই ভিন্ন বর্ণের হতে পারে। রক্তের লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির জন্য তা লাল দেখায়। হিমোগ্লোবিন হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাস সম্বন্ধীয় একধরনের লৌহসমৃদ্ধ রঞ্জক প্রোটিন। এই রঞ্জক প্রোটিন কোষ-কলায় অক্সিজেন পরিবহন করে। মানুষের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দেখতে উজ্জ্বল লাল এবং অক্সিজেন বিহীন রক্ত গাঢ় লাল অথবা গাঢ় তামাটে বর্ণের হয়ে থাকে। মানুষের রক্ত যদি লাল না হয়, তবে ধরে নেয়া যায় তার স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। যদি মানব রক্তের হিমোগ্লোবিনের কোনো প্রকার অস্বাভাবিক গঠন দেখা যায়, তবে রক্ত বাদামী অথবা সবুজ হতে পারে।

সবুজ রক্ত

নিউগিনি এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রাপ্ত এক শ্রেণির স্কিন্কস এর রক্ত পীতাভ সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। স্কিন্কসের আওতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গিরগিটি। সবুজ রক্ত বিশিষ্ট গিরগিটির রক্তে প্রচুর পরিমাণ বিলিভারডিন থাকে। বিলিভারডিন বা সবুজ পিত্তরস সাধারণত হিমোগ্লোবিনের ভাঙনের ফলে উৎপন্ন হয়। এই রস অতিরিক্ত উৎপন্ন হলে তা বিষাক্ত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এরূপ হলে তাকে জন্ডিস বলা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে গিরগিটি মানুষের চেয়ে ৪০ গুণের অধিক পরিমাণ বিলিভারডিন ধারণ করেও সুস্থ রয়ে গেছে। অর্থাৎ মানুষের জন্য যা মারাত্মক বিষাক্ত, তা এই সবুজ রক্তের গিরগিটির জন্য অতি স্বাভাবিক বিষয়।

নীল রক্ত

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, অনেক প্রাণীর রক্ত নীল বর্ণের হয়ে থাকে। আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী (মাকড়শা, হর্স স্যু ক্র্যাব বা কাঁকড়া, লবস্টার), কিছু ক্রাস্টেশিয়ান উপপর্বের প্রাণী, অধিকাংশ শামুকজাতীয় প্রাণী বা মলাস্কা পর্বের প্রাণীর (অক্টোপাশ, স্কুইড, কাটলফিশ, শামুক, স্লাগ, ঝিনুক ইত্যাদি) রক্তের বর্ণ নীল হয়ে থাকে। এ সকল প্রাণীর রক্তে অনেক বেশি পরিমাণ কপার থাকে। সাধারণত মানুষের ক্ষেত্রে লৌহের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হলেও এসব প্রাণীর ক্ষেত্রে কপার ও অক্সিজেন মিলিত হয়। কপার অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে নীল বর্ণের রক্ত তৈরি করে। কপারযুক্ত এই প্রোটিনকে বলা হয় হিমোসায়ানিন। হিমোসায়ানিন বিশিষ্ট রক্তের প্রাণীদের বাহ্যিকভাবে সাধারণত বেগুনি দেখায়।

স্বচ্ছবর্ণের রক্ত

অ্যান্টার্কটিকার ওসেলেটে আইসফিশ নামক এক প্রকারের প্রাণীর ক্ষেত্রে হঠাত্ করে এই অদ্ভূত ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বিজ্ঞানীরা। আর ব্যাপারটি হচ্ছে এই যে, এদের সবারই রক্তের রঙ স্বচ্ছ। অনেকটা আগ্রহী হয়েই কারণ জানতে গবেষণা শুরু করা হয় এদেরকে নিয়ে আর জানা যায় যে, অক্সিজেন বহনের জন্যে কোনরকম হিমোগ্লোবিন আর হিমোসায়ানিন শরীরের নেই বিধায় এদের রক্তেরও কোন রঙ নেই ( পপসাই )। তাহলে অক্সিজেন পায় কোথেকে আইসফিশেরা? সাধারনত গরম পানির চাইতে ঠান্ডা পানিতে অক্সিজেন আটকে থাকে। আর প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতে থাকার কারণেই তাই আলাদা করে কোন অক্সিজেন সরবরাহকারী উপাদানের দরকার পড়েনা এই প্রাণীগুলোর।

রক্ত (Blood) হল উচ্চশ্রেণীর প্রাণিদেহের এক প্রকার কোষবহুল, বহু জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত সামান্য লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃৎপিন্ড, ধমনী, শিরা ও কৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্ত একধরনের তরল যোজক কলা। রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। রক্ত হল আমাদেরে দেহের জ্বালানি স্বরূপ। মানবদেহে শতকরা ৭ ভাগ রক্ত থাকে (গড়ে মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে)। রক্তের PH সামান্য ক্ষারীয় অর্থাৎ ৭.২ – ৭.৪। মানুষের রক্তের তাপমাত্রা ৩৬ – ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (গড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)।

আরিফুর রহমান / সম্পাদক, অচিনপুর এক্সপ্রেস

, ,

Post navigation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *