প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

কুমিল্লা জেলার মুরাদপুরে ১৭২ বছরের সাক্ষী (১৮৪৯ সালে নির্মিত) প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন ‘জানু মিয়া জামে মসজিদ’। এটি প্রাচীন কারু শিল্পের মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাসস।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর প্রতিষ্ঠাতা তার দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী। তিনি এ এলাকার জমিদার ছিলেন। তিনি ১৮৪৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরিবর্তিতে পর্যায়ক্রমে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৯৯০ সালে এটি সম্প্রাসারণ করা হয়। ৭ হাজার বর্গফুটের মসজিদটি সম্প্রসারণের পর এখন এর আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। মসজিদটি খান বাহাদুর আশরাফ আলী প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাতি প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহচর জানে আলম চৌধুরী (জানু মিয়া) এর নামে কালের আবর্তনে পরিচিত পেয়ে যায়। তার শিল্পী সত্ত্বার ফলেই এমনটি হয়েছে মনে করেন মসজিদটির বর্তমান মোতয়াল্লী ও তার নানা প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী।

এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আলী চৌধুরী বলেন, ১৮৪৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খান বাহাদুল আশরাফ আলী। এ প্রতিষ্ঠার পিছনে অনেক ইতিহাস আছে। তৎকালীন সময়ে দিল্লী থেকে কারিগর এনে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিলো। মসজিদের ভেতরে যত নকশা রয়েছে সবগুলো দিল্লির কারিগররাই করেছেন। পরবর্তীতে তার পুত্র আরবে রহমান মোতয়াল্লী হন। তিনি যতদিন জীবত ছিলেন ততোদিন তার নামে মসজিদটিকে বলা হতো। তার মৃত্যুর পর আরব রহমানের পুত্র জানু মিয়া মোতয়াল্লী হলে পরে জানু মিয়া মসজিদ নামকরণ হয় এবং এটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়। জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্যর কারণে এটা স্থায়ী হয়। জানু মিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেছেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটির ভিতরে ফার্সী ভাষায় কষ্টি পাথর দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও সন লিপিবদ্ধ রয়েছে। মসজিদটির ভিতরের টেরাকোটার অসাধারণ কারুকার্য এখনও পর্যন্ত সজ্জিত রয়েছে। পুরো মসজিদটি চুন আর পাথর দিয়ে নির্মিত। তৎকালীন যুগে প্রতিষ্ঠিত এই অপূর্ব মসজিদটির কারুকার্য এখনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। মসজিদটি মেহেরাব অন্যান্য মসজিদ থেকে অনেক ভিন্ন।

অন্যান্য মসজিদের মেহেরাব মসজিদের বাহিরের দিকে অথচ এই মসজিদের মেহেরাব মসজিদের ভিতরের দিকে আর মসজিদের দেয়াল ৫৬ ইঞ্জি প্রস্থ যার কারণে মসজিদের মেহেরাব ভিতরের দিকে আছে। ১০ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটির রয়েছে ৩ টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৩৬ ধরনের নকশা। মসজিদটিতে এক সাথে ২ হাজার ৫শ’ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।

Post navigation

10 thoughts on “প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন জানু মিয়া জামে মসজিদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *