ঠান্ডা মাথার খুনী

লেখক: রাহুল দেব বিশ্বাস

থ্রীলার: ঠান্ডা মাথার খুনী’

প্রেক্ষাপট
ঘটনাটি ঘটেছিল নব্বইয়ের দশকে। চরমপন্থী দলের অভয়াশ্রমে পরিনত হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ খুলনার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল। এই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার প্রধান উৎস ছিল বাগদা চিংড়ির চাষ। এই ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল শত শত বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ির বড় বড় ঘের। একে তো লবনাক্ত অঞ্চল তার উপর উন্নয়নের ছোঁয়া একেবারে লাগেনি। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে চলাচলের রাস্তা বলতে ছিল সরু একটা মেঠোপথ। বর্ষা মৌসুমে উপজেলা সদর থেকে এই অঞ্চল একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো যে কারনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদচারণা খুব একটা ছিল না। আর এই সুযোগে চরমপন্থী সংগঠনগুলোর বিস্তার ঘটেছিল। উল্লেখ করা যায় এমন দুইটি সংগঠনের একটি “পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি” ও অন্যটি “পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি”। বামপন্থী মতাদর্শে দিক্ষা নিয়ে মাওবাদী ও মার্ক্সবাদী লেবাসধারী হয়ে এরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। এদেরকে এই অঞ্চলের লোকে বলত “রাইতে পার্টি”। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এরা ভয়াবহ এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারি, পার্টিতে পার্টিতে পরষ্পর বিরোধী ক্রোন্দল,সর্বপরি ক্ষমতার লড়াই এদেরকে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিনত করেছিল।
এক
সর্বহারা পার্টির লিডার ছিল নেবু লাল চাঁন ওরফে বড় ওস্তাদ ওরফে বড় বাবু। বড় বাবুর প্রচন্ড প্রতাপে সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। এলাকার কোন বিচার সালিশে তার কথাই ছিল শেষ কথা। দলের ভিতরে বড় বাবুর এই একচেটিয়া আধিপত্য অনেকে সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু জীবনের ভয়ে কেউ টুঁ শব্দটিও করতে সাহস দেখাতো না। বড় বাবুর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল লাবু খাঁ ওরফে গেবু। নিরেট মূর্খ,হিংস্র,গোয়ার প্রকৃতির এই লোকটি পার্টির সব সীদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতো। পার্টির পথের কাঁটা যারা ছিল তাদেরকে সে শ্রেণী শত্রুর নামে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করতো। তারপর এইসব নিহত মানুষের রক্ত দিয়ে পাকা দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে রেখে যেত পার্টির সংগ্রামী স্লোগান! গেবু ছিল এক হিংস্র নরপিশাচ। লোকে ওকে সর্বহারা পার্টির ঘাতক হিসেবে চিনতো। কোন সুন্দরী মেয়ে চোখে পড়লে প্রথমে তার অভিভাবককে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো আর তাতে অভিভাবক রাজি না হলে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করতো। গেবু ডজন খানেক বিয়ে করেছিল।
এদের মধ্যে একটি মেয়েও তার সাথে সংসার করেনি কেবলমাত্র জায়া ছাড়া। জায়া গেবুকে সবসময় চোখে চোখে রাখতো। গেবুও জায়াকে ভীষণ ভালোবাসতো।
জায়া মেয়েটির জীবনে একটি গল্প ছিল। যে গল্পটা মূর্খ গেবু কোনদিন শুনতে চাইনি। ওর পছন্দ ছিল জায়ার রূপ আর ঝকঝকে, টসটসে শরীর! এর বেশি আর কিছু নয়। জায়ার ভেতরটা বোঝার মতো ফালতু সময় গেবুর কোনদিনও হয়ে ওঠেনি। তাহলে গেবু জায়াকে এতোটা ভালোবাসে কেন?
এর ঠিক কোনো উত্তর নেই। তবে এ কারনে হতে পারে- অন্যরা ওকে ছেড়ে চলে গেলেও জায়া ওকে ছেড়ে চলে যায়নি।
কিন্তু জায়া কেন গেবুর মতো অসহ্য এক পুরুষকে ছেড়ে চলে যায়নি? এই কেনটাই যত খটকা লাগালো!
দুই
জায়া তখন কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ত। স্কুল জীবনেই জায়া টিংকু নামের একটি ছেলের প্রেমে পড়ে। টিংকুর বাড়ি ছিল কলেজের পাশের গ্রামে। টিংকু তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুলনাতে কোচিং করছে। কলেজের এক বন্ধুর ঠিকানায় টিংকু জায়াকে সপ্তাহে কমপক্ষে তিনটা চিঠি লিখতো। আর জায়া কলেজ ছুটির দিনও নানা অজুহাতে কলেজে এসে বন্ধুর কাছ থেকে চিঠিগুলো সংগ্রহ করতো। গোল গোল অক্ষরে লাল,নীল,বেগুনী কালিতে লেখা চিঠিগুলো ছিল যেন অনন্ত প্রেমের কোন মহাকাব্যিক বর্ণনা! জায়া কলেজের পাশে এক বান্ধবীর বাড়িতে বসে সব চিঠির জুতসই উত্তর দিয়েই তবে বাড়ি ফিরতো। ওইসব চিঠির ভিতরে ওদের কত কথাই না হত! ওরা একে অন্যকে কথা দিয়েছিল! জায়া এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই কোচিং করতে খুলনাতে চলে আসবে। তারপর সারা খুলনা শহরজুড়ে ওরা দুজনে চুটিয়ে প্রেম করে বেড়াবে। সেদিন ওরা মনে মনে কত আশা, কত স্বপ্নের জাল বুনেছিল!
কিন্তু বেশি কিছু আশা করা ভুল! যেটা খুব শীঘ্রই ওরা হাড়ে হাড়ে টের পেলো। চিলের মতো ছো মেরে টিংকুর ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে গেলো ঘাতক গেবু। ওর কুদৃষ্টি জায়ার উপরে পড়ল। জায়ার ছোট বোনের কথা ভেবে সেদিন ওর বাবা নিরবে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছিল।
গেবু তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘শশুর মশাই, আপনার বড় মেয়েকে সসম্মানে আমার সাথে বিয়ে দেন নইলে আপনার মেয়ে দুটোর রক্তাক্ত লাশ পাবেন বাঁশবাগানে।’
জায়ার বাবা ভালো করেই জানে এই কুত্তা কতটা ভয়ংকর! সেদিন গেবুর প্রস্তাবে রাজী হওয়া ছাড়া নিরুপায় বাবার সামনে মেয়ে দুটোর জীবন বাঁচানোর আর কোন রাস্তা খোলা ছিল না।
গেবুর সাথে জায়ার বিয়ের পরের দিনই ভদ্রলোক স্ট্রোক করে মারা যান!
গেবুর সাথে জায়ার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে টিংকু সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিলো। দুই-তিন দিন ধরে সে কিছুই মুখে দেয়নি। প্রতিশোধের আগুন ওর বুকের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল। সে আগুন যে সহসা নিভার না।
এ ঘটনার পর টিংকু খুলনা ছেড়ে সোজা বাড়ি চলে আসে আর সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
তিন
টিংকু সর্বহারা পার্টিতে যোগ দিয়েছে প্রায় নয় মাস হয়ে গেছে। এই পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড লাবু খাঁ ওরফে দেবুর সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। পার্টির যত ছোটখাটো অপারেশন সেগুলো গেবু টিংকুর উপর দায়িত্ব দিয়েছে। গেবু টিংকুকে অপারেশনে পাঠিয়ে খুব নিশ্চিন্ত হয়। বেশ কয়েকটি লোমহর্ষক অপারেশন সফলভাবে হ্যান্ডেল করে টিংকু গেবু ও পার্টির নিকট একটি আস্থার জায়গা ইতোমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে।
এদিকে টিংকুর বুঝতে বাকি নেই যে গেবুর আসল উদ্দেশ্য কী! গেবুর একটাই চাওয়া আর তাহলো যে কোন উপায়ে পার্টির একচ্ছত্র নেতৃত্বে আসা, পার্টির লিডার হওয়া।
গেবুর সাথে বড় বাবুর পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। গেবু বড় বাবুর একমাত্র শ্যালক। সে আরেক দুঃখের কাহিনী। বড় বাবু তখন সদ্য পার্টির নেতৃত্বে আসা টগবগে যুবক। একদিন চোখ পড়ে গেল গেবুর বড় বোনের উপর।
ঐ তল্লাটের মানুষ বলতো,’গেবুর বড় বোন নাকি হেমা মালিনীর মতো দেখতে ছিল! যেমন রূপে, তেমনি গুনে!’
বড় বাবুর সাথে বিয়ে হয়। জোর করেই বিয়ে হয়। কিন্তু বেশিদিন মেয়েটি সংসার করতে পারেনি। একদিন সে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে!
উঠোনে পড়ে থাকা বড় বোনের নিথর দেহ ছুঁয়ে গেবু সেদিন বোনের মৃত্যুর বদলা নেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল।
এই ঘটনার পর অনেক দিন কেটে গেছে। বড় বাবুর সাথে গেবুর সম্পর্ক অনেক আগেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। বড় বাবু এতো দিনে হয়তো ভুলতে বসেছে অতীতের ওইসব ঘটনা। কিন্তু গেবু ভুলে যায়নি এর কোনো কিছুই। সে তার প্রতিজ্ঞা থেকে এক চুল পরিমান সরে আসেনি। আর সেকথা এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো জানে টিংকু। টিংকু গেবুর আস্থাভাজন হওয়ার কারণে গেবুর আস্তানায় এখন তার অবাধ যাতায়াত। জায়ার সাথে তার মাঝেমধ্যে দেখা হয়। কিন্তু সে গেবুর সামনে জায়ার সাথে পারলে কোন কথাই বলে না। সে এমন ভাব নিয়ে থাকে যেন সে জায়াকে এর আগে কোনদিন দেখেনি! বস এর বউ হওয়ার কারণে যতটুকু না বললেই নয়,ব্যাস্ ততটুকুই।
কিন্তু বস এর আড়ালে কী চলে, কে জানে!
চার
গেবু সেদিন টিংকুর সাথে এক গোপন বৈঠক করে। সে টিংকুকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তার পরিকল্পনার কথা। ওর একটাই চাওয়া। সে চায় পার্টির নেতৃত্ব। আর সেজন্য প্রয়োজন পথের কাঁটা বড় বাবুকে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু এই কাজটি করা সহজ নয়।
গেবু টিংকুর কাঁধে হাত রেখে বলল,’বড় বাবু তোমার কাজের খুব প্রশংসা করে। সে বলে, তুমি নাকি তার মতো দুর্ধর্ষ ও সাহসী! বড়ো বড়ো অপারেশনে করার মতো বুকের পাটা নাকি তোমার আছে!
গেবু টিংকুর মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,পারবে তুমি বড় বাবুকে মার্ডার করতে? তুমি হবে পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড!’
টিংকু মাথা উঁচু করে গেবুর লাল টকটকে চোখে চোখ রেখে আস্থার সঙ্গে বলল, ‘কাজটি আমিই করবো। আর এটা হবে আজ রাতেই। আপনি ভারী অস্ত্রের ব্যবস্থা করেন।’
গভীর রাত। বড় বাবু গ্রাম্য একটি সালিশ সেরে পার্টির আট, দশজন সশস্ত্র সদস্যের অতন্দ্র পাহারায় নিজের ডেরায় ফিরছে। কিছুদূর হেঁটে সামনের একটি বাঁশবাগান পেরোলেই বড় বাবুর আস্তানা।
বড় বাবু পথে হঠাৎ থেমে গিয়ে গম্ভীর গলায় তার পাহারায় থাকা সদস্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তোরা এবার যে যার মতো বাড়ি চলে যা। বুঝতে পারছি তোদের অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। আর অল্প একটু পথ আছে। বাকি পথটুকু আমি একাই যেতে পারবো।’
বড় বাবুর হুকুম বলে কথা। অমান্য করার সাহস কারোর নেই। কি আর করা, অগত্যা তাকে পথে রেখে সবাই চলে গেল। এই সুযোগটির অপেক্ষায় টিংকু গভীর রাত অব্দি মশার কামড় খেয়ে বাঁশবাগানে ঘাপটি মেরে ছিল। গেবু বড় বাবুকে মার্ডার করার জন্য টিংকুকে একে৪৭ দিয়ে পাঠিয়েছে।
এদিকে রাত যত বাড়ছে গেবুর ছটফটানি ততটাই বাড়ছে। ঘরে বসে গেবু ভাবছে এতো দেরি হচ্ছে কেন? তাহলে কি টিংকু ফেল মারলো! সর্বনাশ! না,না.. ওতো ফেল মারার ছেলে না!
গেবু হাবিজাবি ভাবছে আর একবার ঘরের দরজা খোলে আর একবার বন্ধ করে। বড় বাবুর মৃত্যু সংবাদ শোনার জন্য যেন তার আর তর সইছে না! বড় বাবুর লাশ আঁকড়ে ধরে সে আর কখন মায়াকান্নায় ভেঙে পড়বে! চিৎকার করে সবাইকে বলবে,দলের এই দু:সময়ে আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আসুন,আপনারা আবার আমার নেতৃত্বে সংগঠিত হবেন। বড় বাবুর হত্যাকারী ওই পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির শয়তানদের একটা একটা করে আমরা মেরে ফেলবো। ওদের রক্ত দিয়ে আমরা হোলি খেলবো!
গেবু যখন পাগলের মতো দলের নেতৃত্ব আর বড় বাবুর মৃত্যুর কথা ভাবছে ঠিক তখনই দরজার সামনে সারা শরীরে রক্ত মাখা অবস্থায় যমদূতের মতো এসে দাঁড়িয়েছে টিংকু।
গেবু ইশারায় জানতে চাইলো,’কাজ কি শেষ?’
টিংকু মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল,’হ্যাঁ,বড় বাবু ফিনিশ!’
গেবু মহাখুশিতে টিংকুকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
টিংকু গেবুর বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল, ‘আমার কাজ তো শেষ কিন্তু আমার জায়ার কাজ একটু বাকি আছে বস। পিছনে দেখুন!’
অভিজ্ঞ গেবুর বুকের ভিতরটা ভয়ে মোচড় দিয়ে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে দেখতে পেল জায়া তার হাতের পিস্তলটি গেবুর মাথার উপর তাক করে আছে। তারপর ঠাস করে একটা শব্দ হলো।
টিংকু বলল,’চলো শালাকে এবার দুলাভাইয়ের পাশে চিরনিদ্রায় শুইয়ে রেখে আসি।’

,

Post navigation

741 thoughts on “ঠান্ডা মাথার খুনী

  1. I think what you published was very logical. But, what
    about this? what if you added a little content? I am not saying your information is not solid, however what if you added a headline that makes people desire
    more? I mean ঠান্ডা মাথার
    খুনী – অচিনপুর এক্সপ্রেস is kinda plain. You ought to
    peek at Yahoo’s front page and watch how they create post
    titles to grab people to click. You might add a video or a related picture or two to grab people interested about everything’ve written. In my opinion, it would
    make your posts a little livelier.

  2. Might I like to recommend this absolute traditional about an unfaithful lover and nerve-racking relationship, depicted via Robert Plant’s absolutely insane (and sexy) vocals. One, I stan a lover who knows the place the clitoris is and what to do with it. Add this observe twice, if only to verify your companion knows exactly how good they’ve acquired it by being with you. Because being the focal point can feel so good, blast this whenever you need your accomplice to “focus” on pleasing you (so, like, each time?). ” Others dig deeper: “Did you feel peer stress to have sex when you probably did it for the primary time? We get our first glimpse of Fizbo in Season 1, with Cam’s disastrous try to liven up Luke’s birthday celebration. Though Arya is supposed to be 18 years old this season – which HBO conspicuously confirmed through Twitter on Sunday morning – she was simply 11 years outdated when launched on the first season.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *