কুমারীর জ্যান্ত লাশ

এম,সাফায়েত হোসেন
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

কবিতা: কুমারীর জ্যান্ত লাশ

প্রতিটি ধলপ্রহর আসে
আকাশ সমান শঙ্কার চাদর মুড়ে
কুমারীর আঙিনায়, করিডোরে,বারোমাসে।
কংক্রিটের জঙ্গলে কুমারীর একটা জ্যান্ত
লাশ হেঁটে চলে,
মাঝ রাস্তায় ছুটে চলে,যন্ত্রদানব
দানবীয় হুঙ্কার তোলে।
কখনো যায় ভুলে সে জীবনের বিশুদ্ধ ধারাপাত,
আর জীবনের অলিগলি, জানা অজানা সহস্র পথ।
নরপশুদের অভয়ারণ্য, জনারণ্য রাজপথে,
শ্বাপদ সংকুল প্রতিটি পদক্ষেপ, সতর্কতা সংকেত
এক অজানা শঙ্কা কি আছে ওঁৎপেতে?
কখন যে ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ামৃগের ওপর
বেপরোয়া নরশার্দূলের দল,
তাইতো সে এতো হতবিহ্বল,নিজেকে বাঁচাতে
সম্পর্কের নকশী কাঁথা বুনে চলে অহরহ
পথে পথে নগরীর রাস্তায়,
রিক্সা চালক, অধম বালক, বাস চালক, হেল্পার,
তার কত কালের আপন,
সাময়িক পরমাত্মীয়,
মামা কিংবা ভাই বনে যায়।
এতো সম্পর্কের বিস্তার; তবু পায় কি নিস্তার?
সব সম্পর্কের সীমারেখা টপকে লোভাতুর হাতগুলো
ছুঁয়ে দেয় কুমারীর পেলব শরীর।
শরীরের পবিত্রতা তার লক্ষ্মীবধূর জমিয়ে রাখা
লক্ষ্মীর ভাণ্ডে রক্ষিত পবিত্র এক মুষ্টি চাল।
হৃদয় যেন তার পবিত্র কাবাঘর
সতীত্ব তার রক্ষিত ঐশী কিতাব।
ভবের স্বভাব বুঝে ওঠার আগে
সেই কিতাবের পাতা উল্টায় গভীর নিশিতে তথাকথিত এক স্বজন,
বীজগণিতের নম্বর কেটে দেয়ার ছলছুতোয়
তার সতীত্বের পবিত্র কাবাঘরে ঢুকে পড়ে গণিতের শিক্ষক।
তবু ও সে অতীতের নাপাক রাতের গর্ভ থেকে
প্রসূত নব উদ্যমী এক অনন্য মানবী।
শিক্ষার আলোকিত আভায় দীপ্ত হয়,
প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে সভ্যতার ফুল ফোটাতে।
তাই তো সে জীবনের হাতছানিতে,
নগরীর পথে পথে
একলা পথিক
একলা ছোটে
একলা হাঁটে
একলা চলে
একলা সম্পর্ক গড়ে তোলে, অবলীলায়।
কিন্তু কোন সম্পর্কের উপঢৌকন তার রক্ষাকবচ হয় না,
তা শুধুই রয় কালো বর্ণমালায় লিখিত কিতাবের প্রপঞ্চ,
নির্জন রাস্তায় ফাঁকা পরিবহণ পরিণত হয়,
ধ্রুপদীর বস্ত্রহরণের উন্মুক্ত নিরাপদ মঞ্চ।

শত শঙ্কা, শত ডরে,কুমারী ভাবনায় তিলে তিলে মরে,
অজান্তে তার উদোম দেহ খানি, কখন আবার উন্মুক্ত বাতাসে উড়ে।
দ্বিপদী জানোয়ারগুলো কুমারীর দেহের শুভ্রতার প্রচ্ছদে উপর্যুপরি বিষ ঢালে,
ইজ্জতের ইমারত থেকে একটি একটি ইট
খসে পড়ে,
বিবেকের জেলখানায় আত্মগ্লানির রশিতে
তার সম্ভ্রমে ফাঁসির মহরত চলে।
সব শেষ হলে,
জনসমুদ্র জলে
নিরন্তর ভেসে চলে
রিক্ত কুমারীর লহুসিক্ত জলজ্যান্ত লাশ,
এই তো তার স্বপ্নে লালিত
কিশোরী থেকে রমনী হওয়া রুদ্ধশ্বাস
অব্যক্ত যন্ত্রণার ইতিহাস।

অচিনপুর. কম/ শারমীন সুলতানা ববি

Post navigation

7 thoughts on “কুমারীর জ্যান্ত লাশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *