মুনিরুল ইসলাম চঞ্চল
ঢাকা।
কবিতাঃ অনন্তের শেষ ট্রেন
অদৃশ্য এক কৃষ্ণগহ্বরে ক্রমশ ধাবিত সব নগর, বন্দর, জনপদ
তবুও আশার সূর্য নিরন্তর প্রদক্ষিণ করে বেদনার ছায়াপথ।
অনাদিকাল হতে অনন্ত আকাশে উদ্বাহু নৃত্য করে বিবর্তনের পেন্ডুলাম,
পোড়া হৃদয়ের মাঝে প্রেমের ফসিল খুঁজে খুঁজে
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রেমিক বাঁধায় তুলকালাম।
প্রহরে প্রহরে ক্রমশ প্রলম্বিত ছায়ারা ঘোষণা করে আসন্ন সায়াহ্ন,
অযাচিত প্রত্যাশার কষাঘাতে ন্যুব্জ জীবন
আনে যৌবনের অকাল অপরাহ্ন।
মহাকালের অন্তঃনীলে ভেসে ভেসে,
পরিযায়ী সময়ের ডানায় ভর করে আসে
ব্রহ্মাণ্ডের সফেদ-শুভ্র বৈধব্য।
গ্রহান্তরের মাঝে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের ক্যানভাসে,
প্রকৃতির আঁকা ছবিতে
‘পৃথিবী’ ও ‘মানুষ’, সদা সুন্দর ও অনবদ্য।
অরোরা বোরিয়ালিসের মহাজাগতিক আলো গায়ে মেখে,
তীর্থযাত্রী স্বপ্নরা সপ্তর্ষিমণ্ডল বরাবর পুণ্যস্নানে নগ্ন,
আজন্ম রিপুতাড়িত পুণ্যলোভী পণ্ডিত ও পতিত পাপী
পার্থিব প্রার্থনায় হয় মগ্ন।
বেদনার বালুচরে বন্ধুহীন বন্ধুর পথে পড়ে থাকে
বোধ ও বোধিস্বত্ত্বের পদছাপ,
বিষণ্ণ বিকেলের লালচে আভাকে,
প্রেম ও পুণ্য জ্ঞানে পকেটে পুরে
নির্লোভ প্রেমিক সন্ত মেটায় মনস্তাপ।
কক্ষচ্যুত নক্ষত্রের আহ্বানে নিয়মের সারিতে দাঁড়ায়
প্রেমিক, পুরুষ ও ভাবুক,
সময়ের ছিন্ন আস্তিনে অভিজ্ঞতার ঘাম মুছে,
ক্লান্ত পদে হেঁটে চলে
নগরের সব বয়োজ্যেষ্ঠ শামুক।
জ্ঞানের দিগন্তরেখায় কড়া নাড়ে মরচে পড়া মহাকাল,
মুহুর্মুহু গগনবিদারী বজ্রপাতে বেজে উঠা শেষ গন্তব্যের ট্রেনের হুইসেলে,
অনন্ত নক্ষত্রবীথি গুটায়
জগৎ ও জীবনের জাল।
ভুলে সব আক্ষেপ, অভিযোগ, উৎকণ্ঠা, অনুযোগ
মানুষেরা নিমিষেই সব সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট,
অনন্তপানের শেষ ট্রেনের সারি সারি সাড়ে তিন হাত প্রকোষ্ঠ
প্রতিজনে সমহারে বরাদ্দ।
অতঃপর, ব্রহ্মাণ্ডের যাদুর বাঁশির শেষ সুরের টানে
মহাকালের শেষ ট্রেন বিরামহীন ছুটে চলে
অদৃশ্য এক কৃষ্ণগহ্বর পানে।
পেছনে পড়ে থাকে
‘পৃথিবী’ নামের এক নীলচে গ্রহের ধ্বংসাবশেষ
অথবা ‘মানুষ’ নামের এক প্রজাতির ভ্রম।
অনন্ত পথের যাত্রীরা সব ল্যাম্পপোস্ট,
চারিদিকে শুধু কালো আর কালো
আঁধার কাটাতে নিজের মাঝে নিত্য খোঁজা,
একটুখানি পুণ্য কিংবা একটুখানি মানবতার আলো।
অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে ক্লান্ত প্রেমিক সন্ত,
হঠাৎ করেই বুক পকেটে খুঁজে পায়
বিষণ্ণ বিকেলের একটুকরো লালচে আলো
পৃথিবীতে অথবা ভ্রমে যাকে সে প্রেম বলেই জানতো।
অচিনপুর ডেস্ক/ জেড. কে. নিপা