আফতাব হোসেন
ইংল্যান্ড।
এ আমার কবিতা নয়, এ আমার হাহাকার, এ আমার অক্ষমতা। যা লেখা দরকার, যা লিখতে চাই, তা লিখতে পারি না।
কবিতা: অধরা, তোমায় দিলাম ছুটি
একদিন অধরা দুচোখে ভ্রুকুটি হেনে বলেছিল,
আমাকে নিয়ে আর কত লিখবে কবি?
সেই তো পিঠময় এলো চুল, মেঘেদের আনাগোনা,
কাজল দিঘিতে অবোধ বালকের স্বপ্নের জাল বোনা।
সেই তো গোলাপ পাপড়ি ঠোঁট, থরোথরো কম্পন,
কপোলে কালো তিল ছুঁয়ে দিতে, দ্বিধা আনচান মন।
আর কত আঁকবে এই শরীরের বাঁক, আর কত ভাবে?
পাহাড় উপত্যকা পেরুলেই তো অরণ্য, আর কত নীচে যাবে?
অধরা, তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো লিখি,
তোমার ভেতরেই আমি একটা পৃথিবী দেখি।
তোমার বুকের জমিনেই চলে কবিতার চাষবাস,
ঐ শরীরের চড়াই উৎরাই আনে প্রেমের জলোচ্ছ্বাস !
খুব রেগে গিয়েছিল অধরা;
ছিঃ! এ কেমন কথা কবি?
তোমার কাছে নারীর শরীরটাই কি সবই?
তাই যদি হবে,
চুপ কেন তবে?
কাঁটাতারে যখন ঝুলে থাকে ছোট্ট ফেলানীর লাশ,
হিংস্র হায়েনা যখন কেড়ে নেয় সুমাইয়ার অন্তর্বাস!
না ফোঁটা শিশুর বুক খুবলে খায় বুড়ো শকুনের দল,
তোমার চোখে কি তখনও আসে না এক ফোঁটা জল?
বিব্রত আমি, আমতা আমতা করি,
না, মানে, অধরা, আমি তো প্রেমের কবি,
কবিতার ক্যানভাসে আঁকি শুধু তোমার ছবি।
নারী ও প্রকৃতি,
প্রেম ও স্তুতি,
এই নিয়েই তো বেশ বেঁচে আছি।
কেন তুমি রেগে যাচ্ছ মিছেমিছি?
অবজ্ঞার হাসি হাসে অধরা।
হাসালে কবি!
শ্বাস নিলেই কি বেঁচে থাকা বলে?
ছন্দে বা অ-ছন্দে যাই লেখো,
তারেই কি কবিতা বলা চলে?
শুধু নারী নয়, শুধু প্রকৃতি নয়,
কবিতা হোক সমাজের দর্পণ,
কলম শানিত বেয়োনেট,
অশ্রু নয়, হোক রক্তের প্রস্রবণ।
কী বলছ তুমি?
নিরীহ নির্বিবাদী মানুষ আমি!
হিংসা, হানাহানি কবির কর্ম নয়,
দেখো, আমি ভালোবেসেই পৃথিবী করব জয়।
নাগিনীর মত ফণা তোলে অধরা;
ভালোবাসতে চাও?
তবে ভরাট এ বুক থেকে মুখ তুলে নাও।
এসিডে ঝলসানো শারমিনদের শরীর দেখেছ কখনো?
মরাল গ্রীবা, উন্নত বুক, গলিত বিকৃত জমাট লাভা যেন!
বজ্রাঘাতে পোড়া মাঠে তবু থাকে দুএকটা দূর্বাঘাস,
একটাও লোমকুপহীন ও বুকে এখন শুধুই দীর্ঘশ্বাস !
পারবে? বন্ধ্যা ও বুকে ফলাতে কবিতার ফসল?
আছে তোমার কলমে অতটা বীর্য, অতটা ভালোবাসার জল?
হঠাৎ যেন ওঠে এক কালবোশেখি ঝড়,
উড়িয়ে নেয় স্বপ্নে গড়া আমার বাড়ী ঘর,
বিরান সে ভূমি হতে কবিতারা চলে যায় ফিরে,
বীর্যহীন কলম হাতে আমি বসে থাকি নত শিরে।
দেখে করুণা হয় অধরার;
কী? পারবে না তো?
তবে কী ভেবে কর গর্ব এতো?
কবির প্রেম কি শুধু নারীতেই হতে হবে?
মানবতার বানী কি নিভৃতেই কাঁদবে তবে?
আয়েসি জীবনের বিলাসী অবসরে,
কিংবা বটমূলে গাঁজার আসরে,
দুখানা প্রেমের পদ্য লিখেই কবির খেতাব নিতে চাও?
আর সুযোগ বুঝে সুবিধামত বুদ্ধিজীবীর মুখোশ লাগাও।
দোহাই তোমার ,
সস্তা বাহবা পেতে নারীর শরীরকে পণ্য কর না আর,
শিহরণ জাগাতে আর শুনিও না রতি-হীন শীৎকার।
মিথ্যে বলেনি অধরা;
মুখোশের আড়ালে আমার আমিরে কতটুকুই বা জানি?
শাড়ির আঁচল উড়লেই ভাবি প্রেমের হাতছানি।
ভুলে গিয়েছিলাম,
অধরা, তুমি প্রথমে একজন মানুষ, তারপর এক নারী,
কবিতার নামে বিবস্ত্র করেছি, সম্ভ্রম নিয়েছি কাড়ি।
আজ আমি জেনে গেছি,
বিকলাঙ্গ এই মনের সাথে কবিতার হবে না প্রণয় জুটি,
অ-কবির হাত হতে তাই, অধরা, তোমায় দিলাম ছুটি।
অচিনপুর ডেস্ক /এসএসববি